করিম চাচার স্বপ্ন (গল্প: পর্ব ১ )
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:০৫:২৯ রাত
ঐতো, ঐতো দেখা যায় শাহানাদের বাড়ি।
এই রাস্তার শেষ মাথায় গেলেই একটা মাঠ।মাঠের মধ্য দিয়ে একটা সরু রাস্তা সোজা গিয়ে উঠেছে শাহানাদের গ্রামে।গ্রামের প্রথম বাড়িটা শাহানাদের।তাদের বাড়ির পুকুর পাড় ঘেসে রাস্তাটি গ্রামে ঢুকেছে।বড় কোন গাড়িতো দুরে থাক এই সরু রাস্তায় একটা রিক্সাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
ঐতো দেখা যাচ্ছে শাহানাদের পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে থাকা সুপারির গাছ গুলো।বিস্তৃর্ণ মাঠের পরে সুপারি গাছ গুলো দাড়িয়ে থাকায় খোলা বাতাসের আদ্র ঝাপটা সুপারির গাছ গুলোকে প্রতিনিয়ত দোল খাওয়াচ্ছে।দুর থেকে দেখলে মনে হয় গাছ গুলো যেন মাথা হেলিয়ে দোলিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে।
ঐতো আর বেশি দুর না।আর মাত্র কিছু সময়ের ভিতর শাহানার সাথে দেখা হবে।শাহানা দেখতে কেমন হয়েছে,সে কিভাবে আমাকে গ্রহন করবে,সে কি আমাকে দেখে আনন্দের আতিশয্যে দু'ফোটা চোঁখের পানি ফেলবে আমার সামনে দাড়িয়ে। নাকি লজ্জা রাংগা মুখ নিয়ে দৌড় দিয়ে আমার সামনে থেকে পালাবে ঐ দিনের মত।
কত কিছুই চোঁখের সামনে ভেসে উঠছে। রাস্তাটাও যেন শেষ হচ্ছে না। অথচ এই রাস্তা দিয়ে কত হেটেছি,নিমিষেই এই সরু রাস্তা পার হয়ে বড় রাস্তায় গিয়ে উঠতাম এক সময়।যেদিন প্রথম এই সরু রাস্তায় পা দিয়েছিলাম মনের মাঝে প্রশ্ন জেগেছিলো এই রাস্তা দিয়ে মানুষ কিভাবে যাতায়াত করে। কিন্তু এর পরেতো নিজেই কত হেটেছি। আজ কেন রাস্তাটি শেষ হচ্ছেনা।
মনে পড়ে, যেদিন করিম চাচার সাথে এই বাড়িতে এসেছিলা সেদিনের কথা। আমি তখন মাত্র ৮ম শ্রেনীতে পড়ি।এই বাড়িতে করিম চাচার হাত ধরে এসেছিলাম লজিং মাষ্টার হিসাবে। সেদিন শাহানা আমাকে দেখেই একটা দৌড় দিয়েছিলো। সে তখন মাত্র তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ত। আমি জানিনা, আমাকে দেখে সে কেন দৌড় দিয়েছিলো। কিন্তু আমি দেখেছি একরাশ লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে সে দৌড় দিয়েছিলো। গ্রামের সব বালিকারাই এরকম।কোন অপরিচিতজনদের দেখলেই একটা দৌড় দেয়।
করিম চাচা সেদিন বলেছিলেন, তার এই মেয়েটাকে আমার পড়াতে হবে। আমিতো জানি লজিং বাড়িতে থাকতে গেলে কাওকে না কাওকে পড়াতে হবে। করিম চাচা সেদিন আরোও কত কিছু বলেছিলেন।বলেছিলেন, শাহানার বড় দুজন সন্তান তার খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছে। শাহানার ছোট তাদের একটা ছেলে আছে কিন্তু সে প্রতিবন্ধি। শাহানার থেকে মাত্র এক বছরের ছোট।কিন্তু সে এখনো উঠে দাড়াতে পারেনা। তার পা দুটি অচল।দিন দিন পা দুটি শুকিয়ে ছিকন হয়ে যাচ্ছে। শহরে নিয়ে যে বড় কোন ডাক্তার দেখাবেন সে সামর্থ তার নাই। এক সাথে অনেক টাকা লাগবে, তিনি সেটা কোথায় পাবেন।
তার যা আছে এই কিছু জমি জমা,যা দিয়ে তিনি ক্ষেত কৃষি করে তার পরিবার চালাচ্ছেন। এর থেকে বাচিয়ে যে তিনি কিছু একটা করবেন সে সুযোগ তার নাই। এই ছেলেটা প্রতিবন্ধি না হলে তার আর কোন আক্ষেপ ছিলোনা। বড় লোক হওয়ার কোন স্বপ্ন নেই করিম চাচার। ক্ষেত কৃষি করে ছোট্ট পরিবারে তারা সুখেই আছেন।করিম চাচার এখন একটি মাত্র স্বপ্ন শাহানাকে তিনি মানুষের মত মানুষ করতে চান।
চলবে.....................।
বিষয়: সাহিত্য
২১৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন