প্রবাসের ঈদ
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৫:২৫:২২ বিকাল
ঈদ গিয়েছে প্রবাসে ১৫ তারিখে, আর আমার প্রিয় বাংলাদেশে ১৬ তারিখে।ঈদ গিয়েছে তো কি হয়েছে ? ঈদের রেশ হয়তো এখনো আছে বাংলাদেশে। শুধু বাংলাদেশে ঈদের রেশ আছে এজন্য বললাম যে প্রবাসে ঈদের দিনেও অনেকে ঈদ করতে পারেননা, আর কিভাবে ঈদের ৫ দিন পর রেশ থাকবে।
জানি রাজনৈতিক অস্তিরতায় বড়ই শংকার মধ্যে আপনাদের, আমাদের ঈদ কেটেছে।রাজনৈতিক শংকাটা এখনো কাটছেনা, আর কবে কাটবে সেটাও কেও বলে দিতে পারছেনা। এমনকি সামনের দিনগুলো যে আরোও কঠিন হয়ে আসছে,কি হচ্ছে,কি হবে, কি আছে এই দূর্ভাগা বাংলাদেশের ভাগ্যে, সেজন্যও দেশে বিদেশের সকলেই আমরা খুবই উদ্বিঘ্ন। যাক এখানে আর রাজনীতি টেনে আনছিনা।শুধু দোয়া করি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আল্লাহ যেন সুমতি দেন, যাতে করে সহসাই আমরা এ অস্তিরতা কাটিয়ে উঠতে পারি।
এক ভাইকে তার একটা পোষ্টে ঈদ মোবারক জানিয়ে কমেন্ট করেছিলাম,তিনি জবাবে বললেন, ঈদ কেমন কেটেছে জানতে চান। তাই প্রবাসের ঈদ শিরোনামে আমার এই পোষ্ট। এখানে শুধু আমি আমার কথা বলবোনা, বলবো প্যারিস প্রবাসীদের কথা ।
এই প্যারিসে আমি ২০০৫ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মোট ১৮ টি ঈদ করেছি। দেখেছি এখানকার বাংলাদেশীরা কিভাবে ঈদ করেছে, আর এখন করছে। এখানে মুসলমানদের ধর্মীয় কোন দিনে সরকারি ছুটি নেই।যদিও আমাদের দেশে এবং অনেক মুসলমান দেশে ৩ গন্ডা খ্রীষ্টানদের বড়দিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর সরকারি ছুটি দেয়া হয়। এখানে সরকারিভাবে ছুটি না থাকলেও আপনি চাইলে ছুটি নিতে পারবেন, এধরনের সুযোগ আছে।তাই অনেকে সুযোগ নেন, আবার অনেকেই বলা যায় বেশিরভাগই সুযোগ নেন না।কারন,মালিকপক্ষ একদিনের বেতন হয়তো কেটে দিতে পারে। তাই অনেককেই দেখছি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে কাছাকাছি কোন মসজিদে ঈদের নামাজটা আদায় করেই ভুদৌড় কাজের প্লাসে।দুই আড়াইটার দিকে কাজ থেকে বাসায় এসে মা,বাবা,ভাই-বোন ও আত্বিয়দের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে, ঈদের সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে কিছু একটা মুখে দিয়ে আবার কাজে দৌড়।
আবার অনেকেই আছেন,যারা ছুটি নেন কিংবা কাজ নেই,তারা ঈদের নামাজ আদায় করে কোন বন্ধুর বাসায় কিছুটা সময় কাটিয়ে, দেশে ফোন করে ঈদের সালাম শুভেচ্ছা জানিয়ে লম্বা একটা ঘুম দেন।কারন তার ম্যাচের অনেকেই কাজে চলে গেছে সে একা একা কি করবে।হা আমি ব্যাচলরদের কথাই বলছি। এখন একটু পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যেকের নিজ নিজ এলাকার কিছু মানুষজন হয়েছে,তাই অনেককেই এখন দল বেধে বেড়াতে দেখা যায়। এই ম্যাচ থেকে সেই ম্যাচে যাচ্ছে, কানে কিন্তু তার মোবাইলটা লেগেই আছে।সে এই চলার ফাকে দেশেও কথা বলছে।
যারা পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন তারা একটু দেশের মত করে একদিন হলেও ঈদ কাটাতে চেষ্টা করেন।যেমন ঘরে ঈদের সন্দেশ,সেমাই, পায়েশ,পিঠা,বিরানি সহ মজার মজার রান্না করা হয়।কিছু বন্ধু বান্ধবদের দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়। এক ফ্যামেলি অন্য ফ্যামেলিতে গিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।আসলে ঈদের আনন্দ একা একা করা যায়না, ভাগাভাগির মধ্যেই যেন মজা।পরিবার নিয়ে যারা থাকেন তারা অন্তত ঈদের দিন ছুটি কাটানোর চেষ্টা করেন। আর না পারলেও সকালের পিরিয়ডটা ছুটি কাটান।যদিও এবারের কুরবানি ঈদে একটা লক্ষনীয় বিষয় ছিলো, অনেক পরিবারই তাদের সন্তানদের স্কুলের ছুটি বন্ধ করেন নি।যা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমি মনে করি। ছুটি নেয়ার সুযোগ ছিলো।এভাবে আমাদের ধর্মীয় দিন গুলোতে বিশেষ করে দুই ঈদের দিনে আমাদের সন্তানেরা যদি স্কুলে থাকে তাহলে কিভাবে জানবে আমাদের সংস্কৃতিকে। এক সময় তারা হারিয়ে যাবে বিদেশী সংস্কৃতির অতল গহবরে।
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, এখানে আমরা বাংলাদেশের মত করে কুরবানি দিতে পারিনা। এখানে যে সমস্ত গোস্তের দোকান আছে তাদের সাথে কন্টাক্ট করে কুরবানী দিতে হয়।তারা একটা নির্দিষ্ট স্হানে ঈদের দিন বা পরদিন গরু জবাই করবে। আপনার অংশ আপনাকেই নিয়ে আসতে হবে। এখনো খুব বেশি বাংলাদেশী এখানে কুরবানী দিচ্ছেন না।আর যারা দিচ্ছেন তারা একটা গরুতে এক এক নাম করেই কুরবানী দিচ্ছেন। অনেকেরই একা কুরবানী দেয়ার সামর্থ আছে, কিন্তু কুরবানী দেয়ার সংস্কৃতিটা এখানকার বাংলাদেশীদের মধ্যে গড়ে উঠেনি।তাই এক নাম দিয়েই কান্ত হন।
প্যারিসে বাংলাদেশীদের ব্যাবস্হাপনায় দুটি মসজিদ আছে। একটি পুরো বিল্ডিং বাংলাদেশীদের নিজস্ব এবং একটি ভাড়ায় চালিত হচ্ছে।দুটি মসজিদেই ঈদের নামাজ অনুষ্টিত হয়েছে। নিজস্ব কেনা মসজিদে পুরুষ মহিলা একসাথে প্রায় হাজার এগারোশত মানুষে নামাজ আদায় করতে পারে।সেখানে ঈদের ৩ টি জামায়াত অনুষ্টিত হয়। আর অপরটিতে একসাথে তিনশত বা সাড়ে তিনশত মানুষ নামাজ পড়তে পারে সেখানে ৫ টি ঈদের জামায়াত অনুষ্টিত হয়েছে । আরো কিছু মসজিদে বাংলাদেশী ইমাম থাকায় সেখানেও বাংলাদেশীরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তাছাড়া অনেকেই তাদের বাসার কাছাকাছি মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
২৬০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন