আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ ও এক পাগলের গল্প এবং আমাদের জন্য শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:২১:৫৭ দুপুর
আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ (৭৬৩-৮০৯খ্রি.) এর শাসন আমলে (৭৮৬-৮০৯খ্রি.) বাহলুল নামে এক পাগল ছিল। যে অধিকাংশ সময় কবরস্থানে কাটাতো। কবরস্থানে থাকা অবস্থায় একদিন বাদশাহ হারুনুর রশীদ তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
বাদশাহ তাকে ডাক দিলেন: বাহলুল! ওই পাগল! তোর কি আর জ্ঞান ফিরবে না?
বাহলুল বাদশাহর এ কথা শুনে নাচতে নাচতে গাছের উপরের ডালে চড়লেন এবং সেখান থেকে ডাক দিল- হারুন! ওই পাগল! তোর কি কোনদিন জ্ঞান ফিরবে না?
বাদশাহ গাছের নিচে এসে বাহলুলকে বললেন, আমি পাগল নাকি তুই, যে সারা দিন কবরস্থানে বসে থাকে?
বাহলুল বলল, আমিই বুদ্ধিমান।
বাদশাহ : কীভাবে?
বাহলুল রাজপ্রাসাদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, আমি জানি এই রঙ্গীলা দালান ক্ষণিকের আবাসস্থল, এবং এটি (কবরস্থান) স্থায়ী নিবাস; এজন্য আমি মরার পূর্বেই এখানে বসবাস শুরু করেছি। অথচ তুই গ্রহণ করেছিস ঐ রঙ্গশালাকে আর এই স্থায়ীনিবাসকে (কবর) এড়িয়ে চলছিস। রাজপ্রসাদ থেকে এখানে আসাকে অপছন্দ করছিস যদিও তুই জানিস এটাই তোর শেষ গন্তব্য। এবার বল, আমাদের মধ্যে কে পাগল?
বাহলুলের মুখে এ কথা শোনার পর বাদশাহর অন্তর কেঁপে উঠল, তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁর দাড়ি ভিজে গেল।
তিনি বললেন: খোদার কসম! তুমিই সত্যবাদী। আমাকে আরও কিছু উপদেশ দাও!
বাহলুল: তোমার উপদেশের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। তাকে যথার্থভাবে আকড়ে ধর।
বাদশাহ: তোমার কোন কিছুর অভাব থাকলে আমাকে বল, আমি তা পূরণ করব। বাহলুল: হ্যা, আমার তিনটি অভাব আছে, এগুলো যদি তুমি পূরণ করতে পার তবে সারা জীবন তোমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করব।
বাদশাহ: তুমি নিঃসঙ্কচে চাইতে পার।
বাহলুল: মরণের সময় হলে আমার আয়ূ বৃদ্ধি করতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: আমাকে মৃত্যুর ফেরেশতা থেকে রক্ষা করতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: আমাকে জান্নাতে স্থান করে দিতে হবে এবং জাহান্নাম থেকে আমাকে দূরে রাখতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: তবে জেনে রাখ, তুমি বাদশাহ নও বরং তুমি অন্য কারও অধীনস্থ। অতএব তোমার কাছে আমার কোন চাওয়া বা প্রার্থনা নেই।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, এই গল্পটা কতটুকু সত্য আমি জানিনা। আমি এটা ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে শুধুমাত্র কপি করেছি। এই গল্পে আমাদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। একটি বার চিন্তা করুন, মাত্র একটি বার চিন্তা করে দেখুন এবং এই গল্পের সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেখুন। আমি,আপনি, আমরা এমনকি একজন নাস্তিকও জানে এবং কোন কৈফিয়ত ছাড়াই মেনে নেয় যে আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে, হতে হবে কবরের বাসিন্দা।কিন্তু আমরা সব সময় মৃত্যুকে ভুলে থাকি,ভুলে থাকি স্হায়ী আবাসকে।
আমাদের কত ক্ষমতা! ক্ষমতার জোরে আমরা কতকিছু করি। অথচ গল্পের ৩ টি চাওয়ার মত আরোও কিছু ছোটখাট জিনিষ আছে যা আমরা কেও কোনদিন পুরণ করতে পারিনি এবং পারবোওনা । অতচ...................... ।
এই গল্পের অন্যতম শিক্ষা হলো আমরা সকলেই একজনের গোলাম। আর তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা।
বিষয়: বিবিধ
৩৩১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন