সম্মানিত ব্লগার আফরোজা হাসানের "প্রবাস প্রতারনা" র প্রাসংগিক ভাবনা।

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৮ জুলাই, ২০১৩, ০২:০৭:৫৪ রাত

প্রথমেই আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সম্মানিত ব্লগার আফরোজা হাসানের কাছে ।কেননা তার ঐ "প্রবাস প্রতারনা" পোষ্ট পড়ে এ বিষয়ে আরোও কিছু প্রাসংগিক লিখতে বসেছি।তাঁর পোষ্টের বিরুধীতা করার জন্য নয়,কিন্তু এমন কিছু বাস্তবতা তুলে ধরবো যে কারনে কিছু কথা তাঁর লেখার বিরুদ্ধে যেতে পারে।আশা করি তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং বাস্তবতা মেনে নেবেন। আমার বিশ্বাস এ বাস্তবতায় তিনি নিজেও পড়েছেন বা দেখেছেন।

তিনি তার লেখায় দু'টি গল্প তুলে ধরেছেন,যা চরম সত্য।প্রথম গল্পটি হলো, একদিন পার্কে এক বাংলাদেশী মহিলার সাথে তার দেখা হয়েছে ।তিনি মহিলাকে তার বাসায় নিয়ে যান এবং মহিলাটি তার কষ্টের কথা তুলে ধরে।

মহিলার কষ্ট হলো, সে কিছুদিন হলো স্পেনে এসেছে, এখানে একটা বাসায় সাবলেট করে থাকে,তার স্বামী রেষ্টুরেন্টে কাজ করে, তাই তিনি ঠিকমত স্বামির কাছে সময় পাচ্ছেন না,সবসময় একা একা থাকেন,তার খুব কষ্ট হচ্ছে।অথচ বিয়ের আগে লোকটি বলে ছিলো স্পেনে তার ভালো অবস্তা। এখানে এসে তিনি কিছুই পাননি।


আর দ্বিতীয়টি হলো, তিনি(আফরোজা হাসান) নিজে দেশে যাওয়ার পর একটা বিয়ের দাওয়াত পেয়েছেন।বর স্পেনে থাকে এবং তাদের সুপার মার্কেটের স্টাপ বয়,যার মাসিক বেতন মাত্র ৭০০ ইউরো।জানার পর তিনি কনে পক্ষকে জানিয়ে দিলেন বরের অবস্তা এবং বিয়ে ভেংগে গেলো।

তিনি তাঁর পোষ্টের শেষে বুঝাতে চেয়েছেন যে,প্রবাসীরা প্রতারনা করছে দেশের মানুষের সাথে।অর্থ্যাৎ মিথ্যা বলে প্রবাসীরা বিয়ে করছে যা ঠিক না।আমিও তাঁর কথার সাথে একমত।

এবার আসুন একটু বাস্তবতায় যাই।

প্রথমেই বিয়ে প্রসংগ :

আসলেই কি বিয়ে করতে গিয়ে প্রবাসীরা দেশের মানুষের সাথে প্রতারনা করছে ? আপনি যদি একটু প্রবাসী বরের সাথে বিয়ের কেস ষ্টাডি করেন,দেখবেন শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশী বিয়েতে প্রবাসীরা প্রতারনা করছে না। বরং কনে পক্ষ ইচ্ছে করে প্রতারনার শিকার হচ্ছে।আমি কিন্তু ইউরোপ প্রবাসীদের কথা বলছি।ইউরোপের একটা বরের সাথে একটা পরিবার তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য কতকিছু করে থাকেন।অনেক ক্ষেত্রেই বর কি করে তার কোনো খোঁজ নেয়া হয়না,বর ইউরোপে আছে এটাই বড়।খুব বেশী খোঁজ নিলেও শুধু এতটুকু জানতে চান, বর ইউরোপে লিগেল আছে কিনা। ব্যাস এতটুকুই।

তা নাহলে এখন দুনিয়া এত ছোট হয়ে এসেছে যে,একটা মানুষ কোথায় কিভাবে আছে, কি করে এই খবর নেয়া কঠিন কোনো বিষয় না। মানুষ কেন ভালো করে খোঁজ খবর নেয় না। আসলে মানুষ খোঁজ খবর নিতে চায়না,কেননা বর ইউরোপীয়ান।

তার পর ইউরোপে অবস্তান প্রসংগ :

আসলেই ইউরোপে বাংলাদেশের মানুষ একটা কঠিন জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।যে স্বপ্ন আর আশা নিয়ে মানুষ ইউরোপে আসে তার বাস্তবায়ন মাত্র কতজন মানুষ ছাড়া সবার জন্য হয়ে উঠেনা।একজন মানুষ ইউরোপে আসার পর ৩ টি সমস্যার মুখোমুখি হয়। প্রথমত, ৯০ ভাগ মানুষ অবৈধ ভাবে ইউরোপে আসে এবং অনেকদিন তাকে অবৈধ থাকতে হয় এবং বৈধ হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হয়। দ্বিতীয়ত, যে দেশে আসলো সে দেশের ভাষা জানেনা। আর তৃতীয়ত, কোনো ধরনের কাজ জানা নেই। এই তিনটি কারনে তাকে ইউরোপে ঠিকে থাকার জন্য সংগ্রাম চালাতে হয়।

এই জীবন সংগ্রামে মানুষ এক সময় জয়ী হয়। বর্তমানে অনেক বাংলাদেশী ইউরোপে প্রতিষ্টিত হয়েছেন।অনেকেই ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেছেন।যেমন আমাদের আফরোজা আপুরাও সুপার মার্কেটের মালিক হয়েছেন।কিন্তু সত্য কথা হলো এখানে এসেই কেও প্রতিষ্টিত হয়ে যান নি।সিনিয়র প্রবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, অনেকেই বাদাম বিক্রি করেছেন, অনেকে ফুটপাতে খেলনা সামগ্রী, শীতের কাপড় বিক্রি করেছেন, অনেকে ফুল বিক্রি করেছেন। আবার অনেকে রেষ্টুরেন্টে বা টেক্সি ফোনের দোকানে চাকুরী করেছেন।

এই প্যারিসে আমার পরিচিত অনেক বাংলাদেশী আছেন যারা নিজেরাই অকপটে বলে ফেলেন তাদের প্রথম জীবনের কথা। অথচ তারা আজ প্যারিসে প্রতিষ্টিত। প্যারিসে বাংলাদেশী প্রতিষ্টিতদের মধ্যে অন্যতম অনেকেই প্রথম জীবনে বাদাম বিক্রি করে টাকা পয়সার মালিক হয়ছেন।গাড়ি-বাড়ীর মালিক হয়েছেন, অথচ তারাও এক সময় সাবলেট করেছেন।

তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসায়ী হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, আমাদের বাংলাদেশী ও ইন্ডিয়ান মালিকানাধিন ব্যবসা প্রতিষ্টানে শ্রমিকের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয়না বা দিতে চান না। এই যেমন ধরুন আমাদের আফরোজা আপুদের সুপার মার্কেটে দিনে ৬ ঘন্টা, সপ্তাহে সম্ভবত ৬দিন (৭দিনও হতে পারে) কাজ করিয়ে মাসে দেয়া হয় ৭০০ ইউরো। অথচ এখানে শ্রমিকের প্রাপ্য হলো অন্তত ১১শ ইউরো। এভাবে শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিষ্টানে এরকম করা হয়ে থাকে।অনেক ক্ষেত্রেই প্রাপ্যের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পারিশ্রমিক দেয়া হয়, আর বাকিটা দেয়া হয়না।

প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে তিনি কেন এই বেতনে কাজ করছেন? বর্তমান সময়ে এর চেয়ে যে আর উপায় নাই। কারন পুরো ইউরোপেই চরম মান্দা চলছে। এই অবস্তায় কাজ পাওয়া দুরহ হয়ে উঠেছে। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে অপেক্ষাকৃত কম বেতনে কাজ করছে আর অন্যরা সুযোগ নিচ্ছে।

এই পোষ্টে আর বেশী কিছু লিখছিনা। খুব শীঘ্রই ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে একটি ধারাবাহিক লেখা শুরু করবো, ইনশা আল্লাহ। সেটা পড়লে পুরো ইউরোপের একটা চিত্র পাওয়া যাবে।যা শুরু করেছিলাম সোনার বাংলা ব্লগে।

বিষয়: বিবিধ

২৮১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File