$$$ ফাজায়েলে আমল পড়ে লাভ নাই,যদি ইসলামের ন্যুনতম জ্ঞান না থাকে $$$
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৬ জুলাই, ২০১৩, ০৬:০৬:২৫ সকাল
আমি আমার বাসার কাছাকাছি একটা তুর্কি মসজিদে তারাবীর নামায আদায় করছি।সেদিন মসজিদে যেতে একটু দেরী হয়ে গেলো,গিয়ে দেখলাম এশার জামায়াত শেষ এবং তারাবীর নামায চলছে।তারাবীর জামায়াতের একটু পিছনে দেখলাম ৭ জনের আরেকটা ছোট্ট জামায়াত চলছে।দূরত্ব এতটুকু যে উভয় জামায়াতের ইমামের তেলাওয়াত একে অপরে শুনা যাচ্ছে।যেহেতু এশার নামায তখনো পড়িনি তাই তড়িৎ পিছনের জামায়াতে শরীক হলাম, অন্তত এশার নামাযটা জামায়াতে আদায়ের জন্য।
নামায শেষে দেখলাম আমি ছাড়া বাকি সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে।ছোট জামায়াতের সবাই ছিলো পাকিস্তানি। বুঝতে পারলাম ওরা মুসাফির এবং তাবলীগ জামায়াতের মানুষ।যিনি এই জামায়াতে ইমামতি করলেন তাকে একটু সাহস করে গিয়ে বললাম " আমার মনে হচ্ছে এই ভাবে একসাথে দুটি জামায়াত অনুষ্টিত হওয়া সম্ভবত ঠিকনা।" উত্তরে তিনি বললেন " আমরা অনুমতি নিয়েই পড়েছি।" আমি আবার তাকে বললাম " এভাবে পড়া ঠিক কি না?" তখন তার জবাব শুনে আমি আর কথা বাড়াইনি।তিনি জবাবে আমাকে বললেন, মুফতি হতে হলে দাড়ি রাখতে হবে,নবীর সুন্নাত থাকতে হবে।
প্রিয় পাঠক আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আমার মুখে দাড়ি নাই এবং আমি একটি টি-সার্ট ও জিন্সের প্যান্ট পড়ে মসজিদে গিয়েছিলাম। তিনি আমার প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে আমাকে নসীহত করলেন।ভালো, নবীর সুন্নতের অনুস্মরণ করতে পারলে আমার জন্যও ভালো হত।কিন্তু প্রশ্ন হলো, একসাথে দুটি জামায়াত পড়া সঠিক কি না, এই প্রশ্নের উত্তর জানা থাকার জন্য আমাকে কি মুফতি হওয়া জরুরী ?
আপনাদেরকে আরেকটা সত্য গল্প বলি। আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগে একদিন ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বাড়ি যাচ্ছি। আমার সাথে এক কলেজ পড়ুয়া বড় ভাই যিনি ইসলামী ছাত্র সংগঠনের উপজেলার দায়িত্ব পালন করেছেন।কলেজে পড়ার পরোও শুধুমাত্র ইসলামি ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার কারনে ইসলামের যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন। আমরা দুজন একসাথে আসছি।পথে মাগরিবের নামাযের সময় হওয়াতে আমরা ট্রেনের যে বগিকে নামাযের স্হান হিসাবে রাখা হয়েছে সেখানে গেলাম।গিয়ে দেখলাম আরোও ৬/৭ জন মানুষ নামাযের জন্য অপেক্ষা করতেছে,সাথে একজন লম্বা পান্জাবি ও লম্বা দাড়িওয়ালা এক ভদ্র লোক।
আমরা গিয়ে উনার বেশভুষা দেখে মনে করলাম নিশ্চয় তিনি বড় কোন আলিম উলামা হবেন,তাই মাগরিবের ইমামতিতে তাকেই দিলাম।কিন্তু তিনি কি করলেন, তিনি মাগরিবের নামাজ কসর হিসাবে ২ রাকাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নিলেন। এত বড় একজন আলিমকে নামাযের মধ্যে লুকমা দেব, আমরা সাহস করতে পারিনি শেষে যদি আমাদের ভুল হয়। নামায শেষে আমরা দুজনে একে অপরের দিকে তাকালাম এবং একটু সাহস নিয়ে বললাম, আমাদের মনে নামায আবার পড়তে হবে কেননা মাগরিবের নামায কসর হয়না।
ততক্ষনে ইমাম সাহেব বুঝতে পারলেন তিনি ভুল করেছেন। আমাদেরকে বললেন ভাই আমি বিষয়টা এভাবে জানিনা।আমিতো মনে করেছি সফর অবস্তায় সব নামাযই কসর পড়তে হয়। ইমাম সাহেবের তেলাওয়াত কেমন ছিলো আমার মনে নেই। আমার প্রশ্ন হলো এই ছোটখাটো ইসলামীক জ্ঞান কি আমাদের সকলের থাকা উচিৎ নয় ? শুধু ফাজায়েলে আমল পড়ে,কোন্ দুয়া ও তাসবীহ পড়লে, কোন্ আমল করলে কত হাজার ছওয়াব হবে এটা পড়ে কোন লাভ নাই যদি আপনার মাঝে ইসলামের ন্যুনতম জ্ঞান না থাকে।
ইলম ছাড়া আমলের কি পরিনতি হতে পারে তা একটা গল্পে শুনেছিলাম। গল্পটা এরকম-
এক আল্লাহ ওয়ালা মানুষ সারাক্ষন আল্লাহর প্রেমে মশগুল থাকতেন।সারাক্ষন নামায-কালাম, জিকির আযকার ও দোয়া দুরুদ পড়ে দিন অতিবাহিত করতেন। কিন্তু তার মধ্যে দ্বীনের কোন ইলম বা জ্ঞান ছিলোনা।একদিন শয়তান সাদা পোষাক পরে এসে তাকে বললো,
আপনিতো খুব আল্লাহ প্রেমিক, সব সময় আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকেন। আপনার আল্লাহ এজন্য খুব খুশি হয়েছেন এবং আপনাকে মি'রাজে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন।এই কথা শুনে আল্লাহওয়ালা মানুষটি অনেক খুশি হলো এবং শয়তানের সাথে মি'রাজে যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করলেন।শয়তান তাকে অনেক দুর নিয়ে এক পাহাড়ের উপর তুলে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। মানুষটি পাহাড়ের নীচে পড়ে মারা গেলো।তার যদি এই জ্ঞান থাকতো যে সে যতই আল্লাহ প্রেমিক হোক না কেন তার মি'রাজে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই তাহলে সে এভাবে শয়তানের ধোকায় পড়তোনা।
সম্মানিত পাঠক, আমাদের সকলের উচিৎ ইসলামের ন্যুনতম প্রাথমিক জ্ঞান গুলো অর্জন করা। এজন্য আপনাকে মুফতি হওয়া জরূরী নয়।এজন্য আপনাকে পায়জামা-পান্জাবি পড়ে সব সময় হুজুর সেজে থাকতে হবেনা।
বিষয়: বিবিধ
২৭২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন