প্রকৃত দেশ প্রেমিক ও জামায়াত অপরাধী হওয়ার গল্প

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৮ জুলাই, ২০১৩, ১১:২৮:৪৭ রাত

গত ১৫ তারিখে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে।রায়ে অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছরের সাজা প্রদান করা হয়।যদিও ট্রাইব্যুনাল বলে দিয়েছে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সাথে তিনি সরাসরি জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায়নি।এমনকি প্রসিকিউসনের দেয়া প্রমানাদি যথেষ্ট ছিলোনা বলে এ রায় দিতে বিলম্ভ হয়েছে।

৫টি অভিযোগে গোলাম আযমকে অভিযুক্ত করে ট্রাইব্যুনাল এই রায় প্রদান করে। যে গুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে গোলাম আযম বিভিন্ন তারিখে কতকগুলো বৈঠক করেছেন কিছু মানুষের সাথে।এই যা, তিনি বৈঠকে কি আলোচনা করেছেন সেটা বিস্তারিত বলা না হলেও তিনি দেশ বিরুধী কাজ করেছেন(!) তাই তার ৯০ বছরের সাজা।

পাশাপাশি ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমের দল জামায়াতকে একটি অপরাধী সংগঠন হিসাবে উল্লেখ করেছেন।জামায়াত দেশ প্রেমিক কোনো সংগঠন নয়,ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির সময়ে জামায়াত পাকিস্তান হওয়ার পক্ষে অংশ নেয়নি,৭১ এ বাংলাদেশের পক্ষ নেয়নি,তাই তারা দেশ প্রেমিক নয়। এবং জামায়াতের সাথে জড়িত কাওকে রাষ্ট্রের কোনো কাজে জড়িত না করার সুপারিশ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের এ বক্তব্য কতটুকু আইনসিদ্ধ হয়েছে সে বিষয়ে আমি খুব জানিনা। এই বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরাই বলবেন।আমি যেটা বলবো, ট্রাইব্যুনালের এই বক্তব্য একটি রাজনৈতিক বক্তব্য এবং সরাসরি আওয়ামীলীগের বক্তব্যের ফটোকপি মাত্র। যে বক্তব্যে রয়েছে অসত্য , হিংসা আর রাজনৈতিক দেওলিয়াপনাত্ব।

আমি ট্রাইব্যুনালের কাছে সবিনয়ে জানতে চাই, দেশ প্রেমিক বলতে কি বুঝানো হয়েছে ?

একটা দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয়া, সে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা, দেশের উন্নতি ও কল্যান সাধনে সর্বাত্বক চেষ্টা করে যাওয়া, আমানতদারীর সাথে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাওয়া, নিজে দূর্নীতি না করা এবং অন্যকে দূর্নীতি করা থেকে বিরত রাখা বা নিরুৎসাহিত করা,মন্ত্রীত্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর একটি টাকার দূর্নীতি করেননি বলে ইতিহাস সৃষ্টি করা, আইন শৃংখলা রক্ষা করা, দেশের আইন মেনে চলা, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা, দেশের অর্থনীতিকে সামনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা, লুটেপুটে না খাওয়া, দেশের মানুষকে একটি সোনালী সকালের স্বপ্ন দেখানো,মিথ্যা ও ভাওতাবাজি কোনো স্বপ্ন না দেখানো, এই সমস্ত কাজ কি দেশ প্রেমের আওতায় পড়েনা ?

নাকি, দেশকে লুটেপুটে খাওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার করা, নিজ দেশের টাকা পয়সা অন্য দেশে পাচার করা, মাইক্রো ভর্তি করে মন্ত্রীর বাসায় টাকা নিয়ে যাওয়া, দূর্নীতির কারনে পদ্মা সেতু না হওয়া, হলমার্কের কেলেংকারী ধরা পড়া, ৪ হাজার কোটি টাকা(মাত্র) আত্বসাতের পরও এটা তেমন কিছু না বলার মত মন্ত্রী থাকা,শেয়ার মার্কেটের টাকা লুট করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথে বসিয়ে দেয়া, সোনালী ব্যাংক লুট করা, যে দেশের মানুষ না খেয়ে মরে সে দেশের জন্য অস্ত্র ক্রয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্বসাৎ করা,আওয়ামীলীগ না করার কারনে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে কুপিয়ে মারা, রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের উপর গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো, পিলখানা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যা করা, রাষ্টের অর্থ অপচয় করে বিশাল বরযাত্রার বহর নিয়ে নিজের বোনের মেয়ের বিয়েতে উপস্হিত হওয়া,দেশকে একটা নরক রাজ্যে পরিনত করা, সর্বপরি দেশকে ভারতের অংগ রাজ্যে পরিনত করা, এগুলোর নাম কি প্রকৃত দেশ প্রেম ?

মাননীয় ট্রাইব্যুনাল,এটাই যদি আপনাদের প্রকৃত দেশপ্রেমের সংজ্ঞা তাহলে আপনাদের কথিত এই দেশপ্রেম আমাদের দরকার নাই, এই ধরনের দেশপ্রেমিক আমরা চাইনা, আমরা তাদের ঘৃনা করি।

মাননীয় ট্রাইব্যুনাল আপনারা বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের বিভক্তিতে জামায়াত পাকিস্তান হওয়ার পক্ষে ছিলোনা। এই কথাটা কতটুকু সত্য বলেছেন তা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। কেননা যে সময়ে কংগ্রেসের এক জাতি তত্ব ও মুসলিম লিগের দ্বিজাতি তত্ব যখন বিরোধ বাধল তখন ওলামায়ে হিন্দ কংগ্রেসের পক্ষেই সমর্থন জানাল। উলামায়ে হিন্দ নেতা হযরত মাওলানা হুসাইল আহাম্মদ মাদানী (রঃ)এ বিষয়ে ১৯৩৮ সালে লাহোর শাহী মসজিদে যে বিখ্যাত বক্তৃতা করেন তাতে তিনি একজাতি তত্বকে ইসলাম বিরোধী নয় বলে প্রমান করার চেষ্টা করলেন। তার এ বক্তৃতাটি মুত্তাহিদা কাওমিয়াত আওর ইসলাম (একজাতি তত্ব ও ইসলাম) নামে পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়।১৯৩৯ সালে এ বক্তৃতার সমস্ত যুক্তি খন্ডন করে কুরআন হাদীস ও ইসলামের প্রথম যুগের ইতিহাস থেকে বলিষ্ট যুক্তি দিয়ে আল্লামা মওদুদি (রঃ) প্রমান করেন যে,কংগ্রেসের এক জাতি তত্ব ইসলামী জাতীয়তার সম্পূর্ন বিরোধী।তাঁর এ বইটি “মাসালায়ে কাওমিয়াত’ (জাতিয়তা সমস্যা)নামে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষায় এর অনুদিত বইটির নাম “ইসলাম ও জাতীয়তা বাদ”।

যে দলের প্রতিষ্টাতা তার দল প্রতিষ্টার পূর্বেই পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে এত জোরালো বক্তব্য উপস্হাপন করেছেন, যে কারনে তিনি আজ পর্যন্ত দেওবন্দি হুজুরদের কাছে প্রতিপক্ষ হয়েই আছেন,তার দলকেই আপনার পাকিস্তানের বিপক্ষ শক্তি বলছেন। আর ১৬ ই ডিসেম্বরের পূর্বে এই দেশ বাংলাদেশ ছিলোনা,ছিলো পূর্ব পাকিস্তান। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে সমর্থন করেছিলো। যা কোন অবস্তায় দেশ প্রেমের বাইরে পড়েনা। দেশের অখন্ডতা রক্ষাও দেশ প্রেমের অংশ। আজ যদি সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ থেকে পৃথক হতে চায় তাহলে যারা এর পক্ষে থাকবে তাদেরকে আপনারা কি বলবেন ? আর যারা সিলেট ভাগের বিপক্ষে থেকে দেশের অখন্ডতা রক্ষা করবে তাদেরকে কি বলবেন? সিলেটের বর্ডার হচ্ছে ভারতের সাথে,আজ যদি ভারত সিলেটকে উস্কানি দেয় সিলেট বিভক্ত করতে তাহলে নিশ্চয় এটা আমাদের ভয়ের বিষয়। ৭১ সালে ভারতীয় আগ্রাসনের ভয়ই জামায়াতকে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে নিয়ে যায়। বিষয়টা সে দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে জামায়াত কি কোনো অপরাধ করেছে ?

বিষয়: রাজনীতি

২৩২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File