আমার বাড়ির কাজের বুয়া রহিমার রোযা যেমন কাটে

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৩ জুলাই, ২০১৩, ১১:৫১:৩০ রাত



রামাদ্বান মাস মুসলমানদের জন্য একটি মহিমান্বিত মাস।

রহমতের মাস,মাগফিরাতের মাস এবং নাযাতের মাস এ মাহে রামাদ্বান।কুরআন নাজিলের মাস সর্বোপরি বিজয়ের মাস এই মাহে রামাদ্বান।

ফজরের শুরু থেকে মাগরিব পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকে একজন রোযাদ্বার।পিপাসায় কাতর হলেও আমরা পানি পান করিনা,রোযা ভেংগে যাবে এই জন্য। পেটের ক্ষুধায় কথা বলতে পারছিনা,কিন্তু হাতের কাছে খাবার থাকার পরও কোনো কিছু মুখে দিচ্ছিনা আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর হুকুম মানার নিমিত্তে।

শরীর খুব ক্লান্ত।দিনের বেশিটা সময় কাটিয়ে দিচ্ছি ঘুমে বা অলস সময় কাটিয়ে।কিন্তু আমার বাড়ির রহিমার কি অবস্তা। সেওতো আমার মত রোযা রেখেছে। আসুন জেনে নেই আমার বাড়ির কাজের বুয়া রহিমার রোযা কেমন কাটে।

বর্তমান সময় অনুযায়ি ভোর ৪ টার আগেই সেহরীর খাওয়া দাওয়া আপনাকে শেষ করতে হবে। আর প্রায় সন্ধা ৭ টায় আপনি ইফতার করেন। আমাদেরকে সেহরীতে গরম গরম খাবার পরিবেশনের জন্য কাজের বুয়া রহিমাকে রাত অন্তত ২ টায় জাগতে হয়।যদি সেহরীর খাবার আগেই রান্নাবান্না করা থাকে তাহলে ঠান্ডা খাবার গুলো গরম দিয়ে খাবার রেডি করে ঘরের বাকিদেরকে ডেকে তুলতে হয় রহিমাকে। আর যদি খাবার রেডি না থাকে তাহলে ঘরের বেগমের সাথে রান্নাবান্নায় তাকে সহযোগিতা করতে হয়।

সবার খাবার দাবার শেষ হয়ে গেলে আমরা যে যার মত উঠে কেও মসজিদে আর কেও ঘরে নামায কালাম পড়তে চলে যাই। আবার অনেকে নামায কালাম না পড়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। আমাদের খাবার দাবার শেষ হয়ে গেলে রহিমা তার খাবার শুরু করে। তারও খাবার খাওয়া শেষ হলে আমাদের রেখে যাওয়া প্লেট ও সকল হাড়ি-পাতিল পরিস্কার করে তারপর রহিমাকে ঘুমে যেতে হয়। আর যদি হাড়ি-পাতিল না ধুয়ে শুয়ে পড়ে তাহলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আগে ওগুলো পরিস্কার করে নিতে হয় তাকে।

সকালে ঘুম থেকে সবার আগে রহিমাকে উঠতে হয়। রাতে কম ঘুম হয়েছে বলে বাড়ির অন্যরা সকলেই অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠলেও রহিমাকে আগে জাগতে হবে। ঘুম থেকে উঠার পর সারাদিন এটা সেটা করে রহিমা আর রেস্ট নিতে পারেনা।যদিও যোহর নামাজের পর একটু রেস্টে যায়, কিন্তু বেশিক্ষন আবার রেস্ট নিতে পারেনা। তাকে আবার ইফতারীর আয়োজনে স্বক্রিয় হতে হয়।নানান ধরনের মুখরোচক ইফতারী বানানো হবে এতে রহিমার উপস্হিতি থাকতে হবে শতভাগ। তারপর ইফতারী টেবিলে সাজিয়ে রহিমা ইফতারী নিয়ে বসে পাকের ঘরে। ইফতারী শুরু করেছি সবাই, এখন কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে ডাক পড়ে রহিমার। হয়তো কিছু একটা খাবার মুখে তুলতে শুরু করেছে রহিমা এই মুহুর্তে ডাক শুনেই মুখের খাবার রেখে তাকে মনিবের ডাকে সাড়া দিতে হচ্ছে। ঠিকমত ইফতারীটা করা হয়না রহিমার। আমাদের সবার ইফতারী শেষ হলে আমরা যে যার মত চলে গেলেই পরে রহিমা আরাম করে খেতে পারে। তাও খাবার শেষ হলেই টেবিল পরিস্কার করতে হবে, পরিস্কার করতে হবে আমাদের রেখে যাওয়া প্লেট সহ সব কিছু।তারপর আবার সবাইকে চা বানিয়ে খাওয়াতে হবে রহিমাকে।রাত ১০টা হলে আবার সবাইকে রাতের খাবার খাওয়াতে হয়। সবাইকে রাতের খাবার খাইয়ে এবং নিজে খাওয়াদাওয়া শেষ করে হাড়ি-পাতিল ধুয়ামুছা করে শুইতে শুইতে রাত ১২/১ টা বেজে যায়। সামান্য কিছুক্ষন ঘুমানোর পর আবার সেহরীর খাবার তৈরী করতে তাকে স্বক্রিয় হতে হয়।

আমরা সেহরীর পর একবার, দুপুরে একবার এবং ইফতারীর পর একবার সকলেই রেস্ট নেই। শুধু রেস্ট নেয়া হয়না কাজের বুয়া রহিমার। আর এভাবেই রামাদ্বানের প্রতিটা দিন কাটে তার।

সম্মানিত ব্লগার,প্রিয় পাঠক আমাদের যাদের পরিবারে এই অবস্তায় দিন কাটে কাজের মানুষটির আসুন তার প্রতি আমরা একটু সদয় হই। রোযা রাখার কারনে আমরা যেভাবে ক্লান্ত হই, ঠিক আমাদের মত করেই ক্লান্ত হয় আমাদের কাজের মানুষটি।এই রামাদ্বানে তার উপর থেকে একটু কাজের চাপ কমিয়ে দেই।নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করি। সেহরী ও ইফতারীর খাবার দাবার সবাই মিলে তৈরী করি। খাবারের সময় তাকেও আমাদের মত করে খাওয়াই এবং ডাকাডাকি যেন না করি।তাকেও পর্যাপ্ত রেস্ট নেয়ার সুযোগ করে দেই।

উপরের ছবিটা কিন্তু কাজের বুয়া রহিমার নয়, একটা ফুটফুটে ছোট বালিকার ইফতারীতে কিভাবে সাহায্য করছে তার ছবি

বিষয়: বিবিধ

৪১০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File