ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীল যখন হয় অছাত্র
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৯ জুলাই, ২০১৩, ০৭:৪৩:২৪ সকাল
প্রতিদিন ব্লগ দেখার পাশাপাশি একনজর ফেসবুকটাও দেখা হয়।ফেসবুক দেখি মূলত সারা দুনিয়ার আপটুডেট জানার জন্য।আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা যে উপজেলায়,যে উপজেলায় আমার শৈশব-কৈশোর,আমার ছাত্রজীবন ও ছাত্ররাজনীতি, যে উপজেলার প্রতিটি পথেপ্রান্তরে,শহরের রাজপথে কিংবা গ্রামের মেঠো পথে প্রতিটি ধুলিকনায় আমার পদচারনা সেই উপজেলার কোনো সংবাদ যদি কোথাও দেখি তাহলে পড়ার চেষ্টা করি মনোযোগ দিয়ে।তা কোন পত্রিকার পাতায় হোক বা ফেসবুকে হোক।
ঠিক এমনি একটি লেখা চোঁখে পড়লো ফেসবুকে। একজন ভাই শেয়ার করেছে যে, আজ বড়লেখা ছাত্রদলের কমিটি গঠন হয়েছে। সাথে সভাপতি,সাধারন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নামও দেয়া আছে।সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে চিনতে পারলেও সাংগঠনিক সম্পাদককে চিনতে পারিনি।
আপনাদের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দেই সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে।তবে আমি তাদের সম্মানার্থে নাম লিখবোনা।
সভাপতি : তার বাড়ি শহরেই। আজ থেকে ৮ বছর পূর্বে তাকে দেখেছিলাম ব্যবসা করতে। ব্যবসা ছিলো বিয়ে বাড়ির প্রোগ্রামে ভিডিও করা,বর কনের জন্য গায়ে হলুদের ষ্টেজ বানিয়ে দেয়া আর বর কনের বাসরঘরের বিছানা সাজিয়ে দেয়া।জানিনা এখন কি ব্যবসা করে।কলেজে তাকে কোনদিন দেখিনি।সম্ভবত এস এস সি পর্যন্তও লেখাপড়া করে নি, সিক্স/সেভেন পর্যন্ত হবে হয়তো।সে আজ সভাপতি।
সাধারন সম্পাদক : সে আমার আত্বীয় হয়। তার বাড়িও শহরে। সে আবার কলেজে ভর্তি হয়েছিলো আজ থেকে ১০/১২ বছর আগে।যতদুর মনে হয় ইন্টার পাশ করতে পারেনি। শুনেছি এখন বড়লেখা শহরে ব্যবসা করে। আর সাংগঠনিক সম্পাদককে চিনতে পারিনি বলে তার সম্পর্কে কিছু লিখলাম না।
এটা দেখার পর আমি একটা কমেন্ট করলাম এভাবে,
আমাকে কি কেও বলবেন নতুন কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক কোথায় লেখাপড়া করেন, বা কে কতটুকু লেখাপড়া করেছেন।তখন একজন ভাই আমাকে বাংলিশ(ইংরেজী বর্ণ দিয়ে বাংলা কথাকে বাংলিশ বলে যেমন:Amar আমার ) লিখে কমেন্টের উত্তর দিলেন। তার উত্তর ছিলো এভাবে,
ভাই আপনিতো আর সিআইডি না যে আপনাকে সবকিছু বলতে হবে।তার এই জবাব দেখে আমি আবার তাকে লিখলাম,
একটা ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সম্পর্কে জানার অধিকার আমার আছে। থাকলে বলেন, না থাকলে বলার দরকার নাই, বুঝে নেব।তখন সে আমাকে আবার জবাব দিলো,
ব্রাদার শুনেন, আমারও অধিকার আছে কেননা আমিও একটা সংগঠনের দায়িত্বশীল। আপনি যদি এতকিছু জানতে চান তাহলে দলের সংবিধান দেখুন,এড. এবাদুর রহমানের কাছে যান (সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী) হাফিজ মিয়া উপজেলা বি এন পির সভাপতির কাছে যান,তাহলে ভালো ভাবে জানতে পারবেন।আপনার সাথে বিতর্কতে জড়ানোর জন্য স্যরি।আমি আবার লিখলাম,
ভাই আমিতো কোন বিতর্ক করতেছিনা। আমি শুধু জানতে চাচ্ছি, এই চাওয়াটা কি আমার অপরাধ? আর একটা ছাত্রসংগঠেনর দায়িত্বশীলদের লেখাপড়ার ব্যাপারে জানতে আমাকে কি দলের সংবিধান পড়তে হবে। তাহলে আপনাদের সংবিধানে কি এটা লেখা আছে যে, ছাত্রদলের সভাপতি, সেক্রেটারী হওয়ার জন্য ছাত্র হওয়া জরুরী নয়।সে আবার আমাকে জবাব দিলো,
হা অবশ্যই জরুরী।আপনি যদি তা বলতে চান তাহলে দেশের যতগুলো ছাত্র সংগঠন আছে যেমন ছাত্রলীগ,ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র সমাজ ? আপনি কতটুকু সিওর দিয়ে বলতে পারবেন ছাত্রলীগের কয়জন নেতা লেখাপড়া করছেন।ভাই এরশাদ বলছেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ।কিন্তু এরশাদের মূল্য আমাদের বাজারের আদুর চেয়ে আরোও খারাপ।লেখাপড়া থাকতে হবে,জ্ঞানী হতে হবে,টাকা পয়সা থাকতে হবে, এটা অবশ্যই ঠিক।আপনার বাড়ি যদি বড়লেখা হয় আপনি দেখুন কয়জন এখন লেখাপড়া করতেছে। আপনি জুড়িতে (অন্য একটা উপজেলা) যান সেখানে ৯৯ ভাগ লেখাপড়া ছাড়া।cz (এটা বুঝিনি) সরকার বলেছেন,লেখাপড়া থাকতে হবে ছাত্ররাজনীতি করতে হলে, কিন্তু এটাতো আর রাজতন্ত্রের দেশ নয় এটা গনতন্ত্রের দেশ তাই সবার অধিকার আছে।তার এই জবাব দেখার পর আমি তাকে দূঃখ প্রকাশ করে আর কিছু লেখা থেকে বিরত থাকলাম। কেননা আমার মনে হয়েছে সেও সম্ভবত তার ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মত ।
আমি তার উপর আর মন খারাপ করিনি তার বুঝের অভাবের জন্য।কিন্তু আমার খারাপ লাগলো এই ভেবে যে, এই যদি হয় আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতির দায়িত্বশীলদের অবস্তা তাহলে সেই দেশে ছাত্রদের মধ্যে হরহামেশা মারামারি,কাটাকাটি হবেনাতো কি হবে। হাতে গুনা ২/১ টি ছাত্র সংগঠন ছাড়া বাকি সব সংগঠনের একই অবস্তা। কেন্দ্র থেকে শুরু করে নিয়ে একটি উপশাখা পর্যন্ত অছাত্ররা লিড দিচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগে যখন দেখি কলেজ ভার্সিটির পর্যন্ত লিড দিচ্ছে অছাত্র। কবে এই দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পাবে ছাত্র সমাজ। কবে বুধোদয় হবে ছাত্রদের।
বিষয়: রাজনীতি
২৬৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন