যারা আলিম তৈরী করে তাদেরকে অন্যের দ্ধারা স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ?
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৬ জুলাই, ২০১৩, ০১:২১:১৬ রাত
কখনো কখনো একটা তীর্যক মন্তব্যও নেয়ামক হিসাবে কাজ করে। আপনার একটা মন্তব্য পোষ্টদাতাকে আরেকটি লেখা পোষ্ট দিতে উৎসাহিত করে, অনুপ্রানীত করে।কখনো কখনো জীদি করে তুলে। অনেক সময় একটা মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আরেকটি পোষ্টের জন্ম হয়।
আমার লেখাতেও অনেকে মন্তব্য করেন, লেখার পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য আসে। অনেক পোষ্টে দেখি গালি গালাজ করে মন্তব্য করা হয়।আমাকেও দু'একটি পোষ্টে গালি গালাজ করে মন্তব্য করা হয়েছে। তখন মনে হয় মন্তব্যের কড়া একটা জবাব দিয়ে দেই।কিন্তু পরোক্ষনেই ভাবি তুমি অদম হয়েছ বলে আমি উত্তম হইবোনা কেন? তাই নিভৃত থাকি।
গত ৯ জুন ২০১৩ 'জামায়াতের প্রকৃত বন্ধু......' শিরোনামে একটি পোষ্ট দেই। মন্তব্য করতে গিয়ে
অপ্রিয় সত্য কথা লিখেছেন : আপনার মত বেকুব না হলে এ ধরনের উল্টা-পাল্টা কেউ বলে না।বাংলাদেশের কোন হকপন্হী আলেম জামাতের সাথে আছে?দু,এক জনের নাম বলেন দেখি।তাকে বলেছিলাম অন্য একটি পোষ্টে জবাব দিব। কিন্তু কেন জানি ইচ্ছে করে এতদিন লিখা হয়নি।
ভাই অপ্রিয় সত্য কথা, আপনি জানতে চেয়েছেন-বাংলাদেশে কোন হক্বপন্হি আলেম জামাতের সাথে আছে কি না।তার মানে হচ্ছে জামাতের সাথে যে আলেম উলামা আছেন তারা আপনার দৃষ্টিতে কেউই হক্বপন্হি আলেম না।আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, আর তাহলো, আপনি হক্বপন্হি বলতে কি বুঝাতে চান ?তারপর,আলেম বলতে আপনি কি বুঝাতে চান ?
প্রথমত যারা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন, কামিল টাইটেল অর্জন করেছেন, দাওরায়ে হাদীস পড়েছেন, দেওবন্দ পাশ করেছেন, আপনার দৃষ্টিতে শুধু তারাই আলেম, এইতো। হা, আমি আপনি আমাদের সমাজ শুধু তাদেরকেই আলেম হিসাবে জানে এবং স্বীকৃতি দেয়।আর হক্বপন্হি বলতে এই আমাদের সমাজ ব্যবস্হার দেয়া স্বীকৃত আলেমদের মধ্যে যারা কোনো ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত হননা, যারা মানুষের কোনো কল্যানে আসেননা,যারা শুধুমাত্র ইস্ত্রি করা পান্জাবী পরে নাদুস নুদুস চেহারা নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে দাওয়াত খান আর দোয়া দুরুদ পড়েন,সাথে আসার পথে হাতের মুষ্টির ভিতর কিছু হাদিয়াও নিয়ে আসেন, তারাই কি আপনার হক্বপন্হি আলেম।
অনৈসলামিক সমাজ ব্যবস্হার পরিবর্তনে যাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই, কুরআনের সমাজ প্রতিষ্টার জন্য যাদের কোনো চিন্তা চেতনা নেই, নিজের জীবন ধারনের জন্য যারা সব সময় অন্যের মুখাপেক্ষি, ইয়াতিম খানা আর মসজিদ মক্তব দিয়েই যারা তাদের কাজ শেষ মনে করে,যারা খানকা তৈরী করে পীর-মুরিদি ব্যবসা করতেছে,সর্বোপরি ভোটের সময় এলে যারা কোনো ইসলামিক দলের প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে সেক্যুলার প্রার্থিকে ভোট দেন, শুধু ভোট দেয়ার মধ্যেই শেষ নয়,তার পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেন,তারাই কি আপনার হক্বপন্হি!
না, 'অপ্রিয় সত্য কথা' না। প্রকৃত পক্ষে তারা হক্বপন্হি নয়।যুগে যুগে নবী রাসুলদের ইতিহাস, ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস, ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের উপর চালিত নির্যাতনের ইতিহাস পড়লেই আপনি নিজেই বিচার করতে পারবেন কারা হক্বপন্হি।
এবার আসুন জেনে নেই আলেম কারা ?
কুরআনে সুরা ফাতিরের ২৮ নম্বর আয়াতে উলামার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন
তার বান্দাদের মধ্যে উলামারাই আল্লাহকে ভয় কর ।এখানে উলামার সাথে আল্লাহর ভয় টি গুরুত্বপূর্ন।
হাসান বসরী (রঃ) বলেন: যে একান্তে ও জনসমক্ষে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা কামনা করে এবং আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা ঘৃনা করে।
রবী ইবনে আনাস বলেন :যে আল্লাহকে ভয় করেনা, সে আলেম নয়।
ইমাম আবু হানিফা বলেন : যে ব্যক্তি দ্বীনের সমস্ত কিতাব পাঠ করে নিল,কিন্তু দ্বীনকে পুরোপুরি বুঝতে পারলো না, সে ব্যক্তি কুরআন হাদীসের পরিভাষায় আদৌও আলেম না।
মুফতি মুহাম্মদ শফি তার মা'আরেফুল কুরআনে লিখেছেন : আয়াতে উলামা বলতে এমন লোক বুঝানো হয়েছে,যারা আল্লা তায়ালার সত্তা ও গুনাবলী সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং পৃথিবীর সৃষ্ট বস্তুসামগ্রী,তার পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও আল্লাহর দয়া করুনা নিয়ে চিন্তা গবেষনা করেন।কেবল আরবী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিকেই কুরআনের পরিভাষায় আলিম বলা হয়না, যে পর্যন্ত তিনি আল্লাহর মারেফত উপরুক্ত ভাবে অর্জন না করেন।
আহমদ আব্দুল কাদের বলেন: বাহ্যিকভাবে আলেম বলতে তাকেই বুঝায় যিনি দ্বীনি বিষয়ে অর্থাৎ কুরআন হাদীস ফিকাহ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এবং সাথে যথার্থ অনুসারীও। আল্লাহর মারেফাত,তাকওয়া ও দ্বীনি চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিই আলেম।
উপরোক্ত কথা থেকে যা বুঝা গেল যারা কুরআন হাদীস ও ফিকাহের জ্ঞান রাখেন এবং কাজ কর্মে আচরনে আল্লাহ ভীতির ন্যুনতম প্রকাশ থাকে তারাই আলেম।
এই দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করলে জামায়াত শিবিরের প্রতিটি নেতা কর্মী এক একজন আলেম। আর সকল যুগের ইসলামী আন্দলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটা নির্দ্ধিধায় বলা যায়, জামায়াত শিবির হক্বের উপরই আছে।তারা প্রতিনিয়ত আলেম তৈরী করছে। তাই বলছি যারা আলেম তৈরী করে তাদেরকে অন্য কারোও দ্ধারা সত্যায়িত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ?
বিষয়: রাজনীতি
২৯৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন