একজন শফিউল্লাহ ভাইয়ের চলে যাওয়া ও কান্নার জলসা
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ৩০ জুন, ২০১৩, ০৪:৪২:২৮ রাত
মানুষ মরনশীল। আমাদের সবাইকে মরতে হবে।কে কার আগে মরবো কেও জানিনা। তবে সবাই যে মরবো একথায় কারোও দ্বিমত নেই।অনেকের আল্লাহতে বিশ্বাস নেই, নবী-রাসুলে বিশ্বাস নেই, কুরআনে বিশ্বাস নেই।কিন্তু
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবেকুরআনের এই শ্বাশত বাণীকে সবাই মেনে নিয়েছি । আর এটা মেনে নেয়া ছাড়া যে কোনো উপায় নেই। মৃত্যু থেকে পালিয়ে কেও ই বাঁচতে পারবোনা।তেমনি বাঁচতে পারেন নি আমাদের শফিউল্লাহ ভাই।
শফিউল্লাহ ভাই আপাদমস্তক একজন দায়ী ইলাল্লাহ।যাকে যেখানে পেতেন কুরআনের একটি আয়াত শুনিয়ে দিতেন,তিনি কোন্ দল করেন এটা তার কাছে কোনো বিষয় ছিলোনা।সবাইকে খুব সহজে আপন করে নিতেন।দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বুকে জড়িয়ে নিতেন। হতাশাগ্রস্হদের জন্য তিনি ছিলেন আশার প্রদীপ।কোনদিন শফিউল্লাহ ভাইকে কারো সাথে কোনো কারনে রাগতে দেখিনি।ছোটখাট কোনো কথায় কেও কষ্ট পেলে পরক্ষনেই জড়িয়ে ধরে মাফ চেয়ে নিতেন।সব সময় যেন একটা হাসি লেগে থাকতো মুখে।সেই হাসিটা যেন মরার পরও তার মুখে লেগে আছে। তাইতো তার জানাযায় মানুষের ঢল নামে।প্যারিসের ইতিহাসে কোনো বাংলাদেশীর জানাযায় এত মানুষের উপস্হিতি এই প্রথম।
গত ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে ইন্তিকাল করেন। শুক্রবার সকালেই ফোন আসে শফিউল্লাহ ভাই মারা গিয়েছেন। শুনার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়ি। বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদে বাদ জুমা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রচুর বাংলাদেশীর উপস্হিতিতে এই মাহফিল অনুষ্টিত হয়। এই মাহফিলে যে বিষয়টা লক্ষনীয় ছিলো তাহলো, এই দোয়ার মাহফিলটি কান্নার মাহফিলে রুপান্তরিত হয়।
যখন তার মৃত্যুর খবরটি জানতে পারি তখন আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম এমন একজন মানুষকে হারিয়েছি যে মানুষটা দেখা হলেই বুকে জড়িয়ে নিত, জিগ্গেস করতো ইসলামিক গান শিখছি কিনা ? তখন পর্যন্ত আমার ধারনায় ছিলো তিনি শুধুই আমাকে বুকে টেনে নিতেন। কিন্তু দোয়ার মাহফিলে যাওয়ার পর আমার ভুল ভাংগে। অনেকেই স্মৃতিচারন করে এই কথাটিই বললেন যে শফিউল্লাহ ভাইয়ের সাথে দেখা হলে তিনি বুকে জড়িয়ে নিতেন।প্রত্যেকেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো শফিউল্লাহ ভাইয়ের জন্য।মনে হলো যেন সবাই আপন এক ভাইকে হারিয়েছে।
একই অবস্তা দেখলাম তার জানাযায়। শনিবার বেলা ১২ টায় বাংলাদেশী কমিউনিটি মসজিদে তার জানাযা নামাজ অনুষ্টিত হলো। প্যারিসের বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দরা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সমুহের নেতৃবৃন্দরা,দলমত নির্বিশেষে সকলেই অংশ গ্রহন করলেন,সকলেই কাঁদলেন শফিউল্লাহ ভাইয়ের জন্য। তখন মনে হলো শফিুল্লাহ ভাই শুধু আমার না, তিনি সকলের, তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটির।
ফ্রান্সে শফিউল্লাহ ভাইয়ের হাত ধরেই ইসলামিক ফোরাম নামে ইসলামিক সংগঠন প্রতিষ্টা হয়।তিনি ছিলেন প্রতিষ্টাতা সভাপতি। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে আর আন্তরিকতায় গড়ে উঠে ফ্রান্সে বাংলাদেশীদের প্রথম মসজিদ।
সংগঠনের সকল প্রোগ্রামে তিনি উপস্হিত থাকতেন। আমরা অনেক সময় মজা করে ইসলামিক গানের জন্য শরিউল্লাহ ভাইয়ের নাম প্রস্তাব করতাম।তিনিও যথারীতি গান গাইতেন। তিনি শুরু করতেন, তোমার দয়া আছে খোদা জানি সকল দিকে মাশরিকে মাগরিবে তার সুর ও গানের কন্ঠ শুনে আমরা প্রায় সকলেই হাসতাম।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তার গানের মধ্যে যে খুলুসিয়্যাত ছিলো এই একটি কারনেই আল্লাহ তাকে মাফ করে দিতে পারে।
সেদিন তার মুখটা একটু মলিন দেখে এক ভাই প্রশ্ন করেছিলেন, শফিউল্লাহ ভাই মুখটা এরকম কেন ? কোনো অসুস্হ্যতার মধ্যে আছেন কিনা ? উত্তরে বলেছিলেন, সকল ভালো মানুষগুলো আজ জেলের মধ্যে বন্ধি আমরা বাইরে সুস্হ্য থাকি কিভাবে ?
সেই শফিউল্লাহ ভাই মাত্র ৫৭ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে পাড়ি দিলেন অপারের অনন্ত জীবনে। আল্লাহ যেন তার জীন্দেগীর সকল গুনাহ মাফ করে দেন । আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউছ দান করেন। সকলের কাছেই এই দোয়া কামনা করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন