রছুমাত : গরিবের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২২ জুন, ২০১৩, ১১:২৬:৪৫ রাত



রছুমাত, যার খাটি বাংলা হচ্ছে প্রথা।বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কিছু রছুমাত বা প্রথা সেই আদিকাল থেকে চলে আসছে।সময়ের পরিবর্তনে এই রছুমাতে যোগ হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা।যদিও এসকল রছুমাত পালনে শরিয়তের কোন বাধ্যবাদকতা নেই। বরং কিছু রছুমাতকে হিন্দু সংস্কৃতির অংশ বলা হয়।আমি আজ কিছু রছুমাত নিয়ে লিখবো, জানিনা এই রছুমাত গুলো বাংলাদেশের সকল এলাকায় আছে কি না? তবে বেশিরভাগ এলাকায় আছে এটাতে আমি শিওর।তাছাড়া আমাদের বৃহত্তর সিলেটেতো এ সকল রছুমাতের মহামারি আকার ধারন করেছে।

বিয়ে শাদির রছুমাত

বিয়ে শাদির পুরো প্রসংগটা আমি এখানে নিয়ে আসলাম না।কে কিভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করতেছেন, শরিয়ত কতটুকু এলাও করতেছে এসকল বিষয় আমার লিখার অংশ না। আমি বিয়ের পরবর্তি কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই। তাহলো, দেখা যায় বিয়ে ও ওয়ালিমার পর ২/১ দিনের মধ্যে ফিরা খাওয়া বা ফিরা যাত্রা নাম দিয়ে বরের বাড়ি থেকে নতুন বউ সহ কনের বাড়িতে নুন্যতম ১০ জনের একটা বহর নিয়ে কনের বাড়িতে যাওয়া হয়। আগে সকলে মিলে কনের বাড়িতে ২/১ দিন থাকা হত, এখন আর থাকা হয়না,সকালে এসে বিকালে চলে যায় বর পক্ষ। এই যাওয়ার সময়ে বর পক্ষের সবাইকে কাপড় গিফট দিতে হয় কনে পক্ষের। শুধু এখানেই শেষ নয়, বরের পরিবারের অনেককেই কনে পক্ষ থেকে কাপড় গিফট দিতে হয় বিভিন্ন অকেশনে।

একটু চিন্তা করে দেখুন, পয়সাওয়ালা বড় লোকদের জন্য এটা কোনো বিষয়ই না। কিন্তু যে বাবা তার মেয়েকে বা যে ভাই তার বোনকে অনেকের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে বিয়ে দিলো, যার এখনো মুদির দোকানে বিয়ের খরছের দেনা রয়েছে তার পক্ষে এটা কিভাবে সম্ভব হবে।

আম-কাঠালি





আম-কাঠালি। অনেকে আবার আম্বকষি বলে থাকেন।বাংলাদেশে সময়টা এখনি যাচ্ছে।কনের বাড়ি থেকে ঠেলা গাড়ি, ভ্যান গাড়ি বা ছোট ট্রাক ভর্তি করে যতধরনের ফলমুল আছে সাথে মিষ্টি যাতীয় অন্যান্ন খাবার সহ বরের বাড়িতে পাঠানো। এক সময় হয়তো ছিলো যে, কনের বাড়িতে কিছু ফলমুলের গাছ আছে, ঐ গাছে কিছু ফলমুল ধরেছে তা থেকে মেয়ের বাবা বা ভাই তাদের মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছে।কিন্তু আজ এমন অবস্তা হয়েছে যে আপনার বাড়িতে থাকুক বা না থাকুক আপনি বাজার থেকে কিনে হলেও এই সময়ে আপনার মেয়ের বাড়িতে পাঠাতে হবে।তাও কম পাঠালে হবেনা। এমন পরিমান দিতে হবে যে আপনার পাঠানো ফলমুল থেকে বরের গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে যাতে দেয়া যায়।



একটু ভেবে দেখুন, আপনার হয়তো প্রচুর টাকা পয়সা আছে তাই আপনি গাড়ি ভর্তি করে আম-কাঠাল পাঠিয়ে দিলেন । কিন্তু যে গরিব দিন আনে দিন খায়,সামান্য পেটে ব্যাথা হলে যে ২ টাকার প্যারাসিটামল কিনে খেতে পারেনা সে কিভাবে বাজার থেকে কিনে আম-কাঠাল পাঠাবে। এমনও দেখেছি, একজন লোক তার ঘরে খাবার নেই কিন্তু সে তার বোনের বাড়িতে আম-কাটালি দেয়ার জন্য অন্যের কাছ থেকে টাকা ঋন করছে।



ইফতারি

সামনে আসতেছে।আর মাত্র ক'টা দিন পরেই রামাদ্বান মাস।এমাসেই আমরা একে অপরকে ইফতারি করিয়ে থাকি।ইফতারি করানো এটা অবশ্যই একটা ভালো কাজ। রাসুল (সঃ) অন্যকে ইফতারি করানোর জন্য উৎসাহ দিয়েছেন।তিনি বলেছেন, যখন কোনো ব্যাক্তি একজন রোজাদারকে ইফতারি করালো তখন ঐ ব্যাক্তি রোজাদারের সমপরিমান ছওয়াব পাবে। কিন্ত এই ইফতারিকে আমরা একটা আনুষ্টানিকতায় পরিনত করেছি।প্রতি রামাদ্বানে কনের পিত্রালয় থেকে বরের পিত্রালয়ে ঘটা করে ইফতারি দিতে হবে । এটাকে আমরা যেন ফরজে আইন করে ফেলেছি।ধনি-দরীদ্র সবাইকে এটা করতে দেখা যায়।

একটু ভাবুন। যে মানুষটি এই রামাদ্বানে সারা দিন রোজা রাখবে এজন্য সেহরিতে পেট ভরে খেতে পারেনি, ইফতারিতে কি দিয়ে রোজা ভাংবে তার কোন ব্যবস্তা নাই ,কিন্তু তাকেও তার মেয়ে বা বোনের বাড়িতে ইফতারি পাঠাতে হবে।

কি অবস্তায় আছি আমরা। কিভাবে আমাদের সমাজ ব্যবস্তা গড়ে তুলা হচ্ছে। সমাজের এই প্রথা বা রছুমাত গরিবের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা নয় কি?

যদি কোন পরিবার অর্থাভাবে এই কর্ম গুলো থেকে বিরত থাকে তাহলে তাদের মেয়ে বা বোন কে তার স্বামীর বাড়িতে কথা শুনতে হয়। এমন কি অনেক যায়গায় ঐ মেয়েকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নির্যাতন বা কথা শুনা থেকে বাঁচাতেই মানুষ যত কষ্টই হোক এই রছুমাতগুলো যথাযত ভাবে পালন করে থাকে।

আরোও অনেক রছুমাত আছে যা আমরা পালন করে থাকি।

এর থেকে বাঁচার কি কোনো উপায় নাই? আশা করি আপনারা বাঁচার উপায় গুলো বলবেন।

বিষয়: বিবিধ

৪০৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File