৪ সিটি নির্বাচন:গণেশ খুব দ্রুত উল্টা হাটতে শুরু করেছে

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৯ জুন, ২০১৩, ০৫:৪২:২৪ সকাল

গত ১৫ ই জুন বাংলাদেশের ৪টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন হলো।রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল চার সিটিতেই আওয়ামীলীগ তথা ১৪ দলীয় মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী ও বি এন পি তথা ১৮ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্ধন্ধিতা হয়েছে।যদিও শেষ হাসিটা হাসতে পেরেছেন ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থীরা, এবং সবকটি সিটি কর্পোরেশনে, তাও আবার বিশাল ভোটের ব্যবধানে।

নির্বাচনের আগে অনেকেই সন্দেহ সংশয়ের মধ্যে ছিলেন যে আদৌ নিরপেক্ষ এবং সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া নির্বাচন হবে কি না ? সকলের সন্দেহ সংশয় দূর করে একটি অপেক্ষাকৃত ভালো, নিরপেক্ষ এবং সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত, সুষ্ট নির্বাচন হয়ে গেলো। নির্বাচন সুষ্ট হলে ফলাফল এরকমই হবে এটা অন্তত যারা মুক্ত চিন্তা করেন তারা আগেই জানতেন।শুধু জানতেন না আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা।

এই ফলাফলে কিন্তু আবার বি এন পি কে ক্রেডিট দেবেন না অনেকেই। সত্যি কথা বলতে বি এন পির ক্রেডিট পাওয়ার কোনো সুযোগই নাই। সরকারের সাড়ে ৪ বছরের দমন-পীড়ন নির্যাতন,এম পি- মন্ত্রীদের দুর্নীতি, যুবলীগ-ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস, সর্বোপরি রাতের আঁধারে নিরীহ মানুষদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারনে মানুষের ভিতর সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ জমা হয়েছে তারই বিষ্ফোরন ঘঠেছে এই নির্বাচনে। তাই যত ক্রেডিট দেয়া যায় সব আওয়ামীলীগের।

নির্বাচনে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর আওয়ামীলীগের নেতানেত্রীরা একেকজন একেক ধরনের কথা শুরু করেছেন।তাদের কথা আবার সবসময় এরকমই হয় বলে মানুষও এখন আগে থেকেই বুঝে ফেলেন যে তারা কি বলবেন।নির্বাচনের পরই একটা প্রশ্ন আওয়ামীলীগ ছাড়া প্রায় সকলের মনে উঠে আসে।আর তাহলো আওয়ামীলীগ কেন এত সহজে চারটা সিটি ছেড়ে দিলো? যাদের মনে এই প্রশ্নটি এসেছে, তাদেরকে এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আবার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সহ তার অনেক মন্ত্রীরা বলেই দিয়েছেন যে, শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে কতটা সুষ্ট নির্বাচন হতে পারে তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। অতএব তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন আর অযৌক্তিক দাবি।

সরকারের এমন বক্তব্য শুনার পর মানুষের বুঝতে আর বাকি থাকলোনা যে সরকার কেন সিটি নিয়ে এত নিস্ক্রীয়তা দেখিয়েছে। নানা মহল থেকে সরকারের এই বক্তব্যের জবাব দেয়া শুরু হলো।বলা হলো, সংসদে আইন পাশ করেন এমপিরা, কোন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নন। এমপিদের মাধ্যমেই সরকার গঠন হয়, আর সরকার দেশ পরিচালনা করেন।কোনো সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলর দেশ চালান না। জানিনা বি এন পি সরকারের এমন বক্তব্য ও তার জবাবকে কিভাবে নিয়েছে। যদি সরকারের বক্তব্যকে সঠিক ধরে পরবর্তী কর্মসূচী তৈরী করে তাহলে তার মাসুল বি এন পিকে কড়ায় ঘন্ডায় দিতে হবে।

চারটি সিটি কর্পোরেশনে বিরোধী জোট নির্বাচিত হলো আর সরকারের গনেশও যেন খুব দ্রুত উল্টা হাটা শুরু করলো। সাধারনত বিরুধীদলীয় কোন নেতা কর্মীকে আদালতে রিমান্ডের জন্য হাজির করা হলে আদালত রিমান্ডের আদেশ যেন পুর্বেই লিখে রাখে। পুলিশ যতদিনের রিমান্ড চায় আদালত দু' একদিন কমবেশী করে সবসময় রিমান্ড আবেদন মন্জুর করে।

এ প্রসংগে আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের আদালতকে বলা একটি কথা খুবই চমৎকার।তাহলো, একদিন তাকে রিমান্ডের জন্য আদালতে তোলা হলো,তিনি তার পক্ষে কোন আইনজীবি নিয়োগ করেননি।তো বিচারক জানতে চাইলেন, আপনি আপনার পক্ষে কোনো আইনজীবি নিয়োগ করেননি কেন ? মাহমুদুর রহমান বললেন, আমাকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, আর আপনিও আমাকে রিমান্ডে পাঠাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত, কেননা আপনাকে বলে দেয়া হয়েছে।তাই অযথা একজন আইনজীবি এনে কোনো লাভ নাই।


যখন এই অবস্তা বাংলাদেশের আদালতের তখন সেদিন আদালত ব্যতিক্রম করে বসলো। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান ও শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ ইয়াহইয়াকে আদালতে তোলা হলো রিমান্ডের জন্য, আদালত রিমান্ড না দিয়ে তাদেরকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিলো।সত্যিই ব্যতিক্রম!

নির্বাচনের পরপরই শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করলো, এবং বর্তমানে নিয়মিত ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে, অথচ পুলিশ নির্বিকার। এমনকি যে ছাত্রলীগ শিবিরের একজন সাধারন কর্মীকেও ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়নি, শিবিরের সাথে সামান্য সম্পর্ক আছে জানলে একজন ছাত্রকে ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিত সেই তারা শুধুমাত্র ক্যাম্পাসে শিবিরের উপস্তিতিতে ভয়ে লেজ ঘুটিয়ে ক্যাম্পাস ও হল ছাড়তে শুরু করেছে।

এদিকে আমাদের পতিত স্বৈরাচার হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদও নাকি সিংগাপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করবেন।ইতিমধ্যে রওশন এরশাদ ও খালেদা জিয়ার মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। লন্ডনে তারেক জিয়ার সাথেও নাকি জাতীয়পার্টির কোন্ নেতার বৈঠক হয়েছে।

অবস্তাদৃষ্টে মনে হচ্ছে চার সিটি নির্বাচন ও বি এন পি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার পর গণেশ খুব দ্রুত উল্টা হাটতে শুরু করেছে। এখন দেখা যাক সামনে কি হয়।

বিষয়: রাজনীতি

১৪৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File