জামাত শিবিরের মানসিক ও রাজনৈতিক শক্তির নেপথ্যে......।
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৪ জুন, ২০১৩, ০৫:৫৭:১০ বিকাল
এক সময় শুনতাম আমেরিকা ও সৌদিআরব জামাত শিবিরের বন্ধু।আমেরিকা জামাত শিবিরকে দেশের রাজনীতিতে এবং সৌদিআরব অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। তাদের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশে জামাত শিবির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একটা শক্ত অবস্তান তৈরী করছে।
এধরনের কথা শুনার পর আমেরিকার কথা মানতে কষ্ট হলেও সৌদিআরবের কথা মেনে নিতাম সহজেই।কেননা সৌদিআরব একটা মুসলিম প্রধান দেশ তারা হয়তো জামাত শিবিরকে এই সহযোগিতা দিতে পারে।
কিন্তু না, আমার এই শুনা কথাটা একটা ভুল কথা। শুধু ভুল না, মিথ্যা ও জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা।বর্তমান বাংলাদেশের অবস্তা বিবেচনা করলে যে কেও এই সত্যটি উপলব্দি করতে পারবেন।যদি না তিনি চোঁখ বন্ধ করে গর্ত খুঁজেন।
কিছু সময়ের জন্যে না হয় মেনে নিলাম যে,জামাত শিবিরকে আমেরিকা ও সৌদিআরব সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, আজ জামাত শিবিরের এই বিপর্যয়ের মুহুর্তে কোথায় আমেরিকা ? এত এত নিরীহ মানুষগুলোকে জেলের ভিতর রেখে মাসের পর মাস নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার, ফাঁসীতে ঝোলানোর জন্য নাটক সাজিয়ে নাটকের শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সরকার,কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারা দেশের জামাত শিবিরের নেতা কর্মীকে জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে সরকার,যারা জেলের বাহিরে তারা পলাতক থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে, কোন মামলা না থাকলেও শুধু জামাত শিবির হওয়ার কারনে পুলিশ নির্যাতন চালাচ্ছে অহরহ, পাশাপাশি সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরাতো আছেই। কই ? আমেরিকাতো এসব নিয়ে কোন কথা বলছেনা।তাদের কোনো হস্তক্ষেপতো দেখিনি।
কোথায় আজ সৌদিআরব?কোনো টাকাপয়সা দিয়েছে বলে তো শুনিনি।শুনিনি জামাত শিবিরের উপর চালিত নির্যাতনের বিষয়ে কোনো কথা বলেছে বলে। কোনো কথা বলেনি বিশ্বখ্যাত আলেমেদ্বীন মাও: সাঈদীকে ফাঁসী দেয়ার ব্যাপারে।বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহশালারদের ফাঁসীতে ঝোলানো ও তাদেরকে এই বৃদ্ধ বয়সে মাসের পর মাস জেলে রেখে নির্যাতন চালানোর ব্যাপারে।রিমান্ডের নামে সময়ের সবচেয়ে ভালো যুবকদের উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের বিষয়ে কেও তো কোনো কথা বলছেনা।
এই যে জামাতের বয়োবৃদ্ধ মানুষগুলোর উপর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মিথ্যা অপবাধ দিয়ে ফাঁসীতে ঝোলানোর পায়তারা চলছে,ফাঁসীর রায় পর্যন্ত দেয়া হয়েছে,এটা জানার পরোও তারা কিভাবে এতটা নির্লিপ্ত থাকতে পারে? কিভাবে প্রফোল্লচিত্তে, প্রশান্ত মনে থাকতে পারে?
এই যে ১৫/১৬ বছরের একটা তরুন বা ২৮/৩২ বছরের একজন যুবক যে জানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে নিয়ে তাকে কাপুরুষিত নির্যাতন চালানো হবে সে কিভাবে পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর এতটা নির্মল হাসি দিতে পারে? পুলিশ তার সার্টের কলার চেপে ধরার পরও কিভাবে থাকে তার সাহসী পদচারনা।
এতটা মানসিক শক্তি ওরা পায় কোথায়? আর কোন্ সেই কর্মপদ্ধতি যার বলে তারা এত নির্যাতনের পরেও দিন দিন রাজনৈতিকভাবে আরোও শক্তিশালী হচ্ছে?
আসুন যেনে নেই কি আছে জামাত শিবিরের মানসিক ও রাজনৈতিক শক্তির নেপথ্যে:
প্রথমত, জামাত শিবির তাদের বন্ধু হিসাবে দুনিয়ার কোনো পরাশক্তিকে নয়, বরঞ্চ দুনিয়া ও আখেরাতের মহা পরাক্রমশালী বাদশা মহান আল্লাহসুবহানাহু তায়ালাকে তাদের বন্ধু হিসাবে গ্রহন করেছে।
দ্বিতীয়ত, রাসুলের আদর্শকে তাদের জীবনের ব্রতি করে নিয়েছে। রাসুলের জীবন ও সাহাবাদের জীবন এবং যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের সিপাহশালারদের উপর চালিত নির্যাতনের কাহিনীকে তাদের চলার পথের প্রেরনা হিসাবে গ্রহন করেছে।
তৃতীয়ত, দুনিয়ার সফলতাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আখেরাতের সফলতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। আখেরাতের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি জান্নাতের লোভে তারা তাদের দুনিয়ার জীবনকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এটাই জামাত শিবিরের মানসিক শক্তির নেপথ্য কারন বলে আমি মনে করি। আর এই শক্তি অর্জনের জন্য জামাত শিবিরের রিপোর্টিং পদ্ধতির প্রথমেই রাখা হয়েছে কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নের ব্যবস্হা।যাতে করে একজন কর্মী নিজকে চিনতে পারে, চিনতে পারে তার মালিককে।জানতে পারে দুনিয়ায় তার আগমনের উদ্দেশ্য।
যখন একজন মানুষ জানতে পারে কেন তাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে, তার কাজ কি বা এই কাজের প্রতিদান কি, তখনই সে সেই কাজ আন্জাম দিতে তৎপর হয়। জামাত শিবিরের প্রতিটি কর্মী সমর্থক জেনে নিয়েছে যে তাদের প্রধান কাজ হলো আল্লাহর জমীনে আল্মাহর দ্বীন প্রতিষ্টা। আর এটা জানার পর তা মেনে নিয়ে এ কাজেই সদা সচেষ্ট থাকে বলেই শত নির্যাতনের পরও তাদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের শক্তি বৃদ্ধিতে বর্তমান সময়ে আরো একটি বিষয় নেয়ামক হিসাবে কাজ করছে। আর তাহলো, বর্তমান সরকারের পুলিশি নির্যাতন।
সারা দেশেই পুলিশি নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার।নির্বিচারে নিরীহ মানুষ গ্রেফতার করে জেলে ঢুকাচ্ছে।এতে করে জামাত শিবিরের প্রতি সাধারন মানুষের সহানুভুতি বাড়তেছে। বিশেষ করে গ্রামের সবচেয়ে ভালো মানুষটিকে, সবচেয়ে আদর্শবান,চরিত্রবান ও মেধাবি ছাত্রটিকে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে আসছে শুধুমাত্র জামাত শিবির করার অপরাধে তখন মানুষের মনে অন্যরকম একটা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, আর সেই প্রতিক্রিয়া এক সময় জামাত শিবিরের রাজনৈতিক শক্তিতে পরিনত হয়।
বিষয়: রাজনীতি
২১৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন