মিলান সফর ::(পর্ব তিন) ইতালির ভ্যানিস নগরী

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৭ মে, ২০১৩, ০৯:১৯:৫৭ রাত





মিলান সফরনামা শুরু করেছিলাম আজ থেকে অন্তত একমাস পূর্বে। দেশের সার্বিক অবস্তার আলোকে অনেক সময় লিখতে গিয়েও পরে অন্য বিষয় নিয়ে লেখা পোষ্ট দিয়েছি।ইতিপূর্বে দুইটি পর্ব লিখেছি।ওগুলো পড়তে চাইলে আমার ব্লগে খুঁজে নিন।



এই পর্বে আমি খুব বেশি বর্ণনা করবোনা, সামান্য কিছু বর্ণনার সাথে বেশ কিছু ছবি এ্যাড করবো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।



২০ এপ্রিল স্ব-স্ত্রীক গিয়েছিলাম ইতালির প্রাচীন নগরী ভ্যানিসে।সাথে ছিলো এক ভাগনা ও আমার ছাত্রজীবনের এক ক্লাসমেট। ঐদিন সকালে চাচাতো বোনের বাসা থেকে ভাগনাকে সাথে নিয়ে আমরা ভ্যানিসের উদ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। মিলান সেন্ট্রালে এসে মিলিত হই আমার ক্লাসমেটের সাথে। মিলান সেন্ট্রালে গিয়ে রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে একসাথে যাওয়া আসার টিকেট কেটে নিলাম। আপনি যদি কম সময়ে যেতে চান তাহলে টিকেটের দাম পড়বে বেশি। আর যদি সময় নিয়েই যেতে চান তাহলে অপেক্ষাকৃত অনেক কমদামে টিকেট পাবেন। আমরা অবশ্য কম সময়ে যাওয়ার জন্য টিকেট কাটি।কম সময়টা আবার প্রায় আড়াই ঘন্টার রাস্তা।



সবাই মিলে ট্রেনে গল্প করে করে একসময়ে ঠিকই ভ্যানিস গিয়ে পৌছি।সাড়ে ৭০০ বছর পূর্বের এই শহর খুবই চমৎকার।দুনিয়া জুড়ে প্রাচীন নগর গুলোর মধ্যে ভ্যানিস নগরী অন্যতম। এমনিতেই ইতালিকে বলা হয় প্রাচীন নগরীর দেশ।

প্রাচীন নগরী গুলোর মধ্যে ভ্যানিসের আরো একটি বৈশিষ্ট আছে, আর তা হলো এই নগরীটা ভূ-মধ্য সাগরের ক্যানেলে গড়ে উঠেছে।তাই আপনি যে দিকেই তাকাবেন দেখবেন শুধু পানি আর পানি। বড় বড় দালানগুলো যেন পানির ভিতরেই বানানো হয়েছে।







দালানগুলো খুব কাছাকাছি তৈরী করা হয়েছে।ভিতরের দালান গুলো এতটাই কাছাকাছি যে আপনি দেখলে মনে করতে পারেন ঢাকার কোন গলিতে ঢুকেছেন।তবে ঢাকার গলির মত নোংরা না ।সম্পূর্ণ নগরীটা পানির উপর তাই মাঝে মধ্যে পানির জমাটবাধা দূর্গন্ধ আপনার নাকে এসে লাগতে পারে।





নগরটাকে ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় বোট,আছে নানান রংয়ের নৌকা।তবে ওগুলোতে চড়তে প্রচুর ইউরো লাগে।আপনি হেঁটে হেঁটেও ঘুরে দেখতে পারেন। আমরা দুটোই করেছি, বোটও চড়েছি আবার হেঁটেছিও।হাটতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশীর সাথে দেখা হয়েছে যারা ওখানে বিভিন্ন খেলনা বিক্রি করছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে। আমি দুজনের কাছ থেকে কিছু খেলনা কিনেছি, ওরা টাকা নিতে চায়নি বাংলাদেশী বলে। আমি একরকম জোর করে ওদের হাতে খেলনার দাম দিয়েছি, কিন্তু তারা অন্যের থেকে কম নিয়েছে।



ঘুরতে ঘুরতে যখন পেটে প্রচন্ড ক্ষুদা অনুভব করলাম তখন শুরু হলো হালাল খাবারের রেষ্টুরেন্ট খুঁজা। খুঁজতে খুঁজতে এক সময়ে একটা রেষ্টুরেন্ট পেলাম যেখানে বাংলাদেশীরা কাজ করতেছে। তাই ভাবলাম রেষ্টুরেন্ট যারই হোক হালাল খাবার পাওয়া যাবে। বাংলাদেশী ভাই আমাদেরকে পিজা বানিয়ে দিলেন।



ঐ ভাইয়ের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম তার নাম মাসুদ,তিনি ইতালি থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার সাংবাদিক।তার কাছ থেকে কিছু তথ্য নেয়ার চেষ্টা করলাম।

তিনি জানালেন, মাঝে মধ্যে সাগরের পানি অনেক ফুলে উঠে।তখন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্টানে পর্যন্ত পানি ঢুকে যায়।



এখানে ছোট বড় মিলে ৫৫০ টির মত ব্রীজ রয়েছে। এই ক্যানেলটি ভূ-মধ্য সাগরের শেষ প্রান্তে।একটু দুরে "লীদু দি ভ্যানেসিয়া " ও "লিদু দি ইয়েজেলো" নামে দুটি বীচ রয়েছে।রয়েছে পৃথিবীখ্যাত গ্লাস ফ্যাক্টরী। যে ফ্যাক্টরীর একটা সুপিছ ৫/৭ হাজার ইউরো পর্যন্ত বিক্রি হয়।





এই নগরীতে রেসিডেন্ট ও নন রেসিডেন্ট মিলে সাড়ে সাত হাজারের উপরে বাংলাদেশী বসবাস করেন।শতাধিক বাংলাদেশী মালিকানাধিন রেষ্টুরেন্ট রয়েছে এই নগরীতে।





ঘুরতে ঘুরতে একসময় এই বিশাল জাহাজটির সাথেও আমাদের দেখা হয়।

ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে আমরা ৭টা ৫৫ মিনিটে আমাদের ফিরতি ট্রেনে মিলান সেন্ট্রালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি এবং প্রায় ১১ টায় বাসায় যাই।

বিষয়: বিবিধ

৩৭৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File