ওরা ভিক্ষা করেনা,টুকিটাকি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৩ মে, ২০১৩, ০৭:২৯:৪১ সকাল



আমরা মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব,আশরাফুল মাখলুকাত।আদম(আঃ) থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে অগনিত মানুষের আগমন এবং প্রস্হান হয়েছে।এ ধারা অব্যাহত থাকবে কিয়ামত সংঘঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষই জীবন ধারনের জন্য যার যার জীবিকা উপার্জনে সদা সচেষ্ট থাকে।

এই জীবিকা উপার্জনের জন্য মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছুটে চলে।এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়।বিশেষ করে গরীব দেশের মানুষগুলো নিজেদের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও আত্বীয় স্বজন ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দুরে অবস্তান করে শুধু সকলের জীবিকা উপার্জনের তাগিদে।

নানান দেশের মানুষ নানান প্রক্রিয়ায় জীবিকা উপার্জন করে।আমি আমার দেশের গরীব মানুষগুলোর জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম ও তাদের কে আমরা কিভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারি সে বিষয়ে আলোকপাত করবো। তবে যারা জীবিকা উপার্জনের জন্য অবৈধ পথ ও পন্হা বেচে নিয়েছে তাদের বিষয়টা আমার লেখার বাইরে রাখবো।

আমি আজ শুধু তাদের ব্যাপারে লিখবো যারা টুকিটাকি বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।

আমাদের সমাজে অনেক গরীব মানুষ আছে যারা কঠোর পরিশ্রম করে টুকিটাকি বিক্রি করে সৎভাবে জীবন চালায়।আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা নিশ্চয় দেখেছি যে কিছু পুরুষ বা মহিলা আছেন যারা মাথায় বা কাধে করে কাপড়ের গাট্টি নিয়ে গ্রামে গ্রামে এ বাড়ি ও বাড়ি "কাপড় কিনবেন শাড়ি কাপড়" বলে চিৎকার দিয়ে দিয়ে ঘুরে বেড়ান।গ্রামের মানুষ তাদের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে শাড়ি,লুংগি,জামা কাপড়,টুপপিছ,থ্রিপিছ সহ অন্যান্য কাপড় কেনাকাটা করতে পারে। আমরা অনেকে আছি যারা এদেরকে দেখলে বাড়িতে ঢুকতে দেইনা, বরং তাদেরকে তাড়িয়ে দেই।

রাস্তা ঘাটে চলা ফেরা করতে গেলে আমরা দেখি কিছু মানুষ কেও বাদাম বিক্রি করছে,কেও চানাচুর বিক্রি করছে,কেও চিড়ামুরি বিক্রি করছে,কেও বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করছে আবার কেও বা ফুল বিক্রি করছে।



আমরা অনেক সময় তাদেরকে কড়া ভাসায় কথা বলে তাড়িয়ে দেই। কখনো কখনো তাদের কাছ থেকে কিছু একটা কিনতে গেলে দাম নিয়ে অনেক কথাই বলি।সব সময়ই চাই তাদেরকে কতটা কম দেয়া যায়।বাদাম বা চানাচুর ওয়ালার কাছে গিয়ে কেও কেও আছি প্রথমেই বাদাম বা চানাচুর মাগনা খাওয়ার চেষ্টা করি। ২ টাকার বাদাম কিনতে গেলে এত কম কেন, আরেকটু বাড়িয়ে দাও ইত্যাদি বলে চেচামেচি করি।আরোও কত খারাপ আচরন করি তাদের সাথে ।এমনও হয় ২ টাকার বাদাম কিনে ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দেই, তখন বাদামওয়ালা বলে "মামা এত বড় নোটের ভাংতি নাই" তখন আমরা কি বলি ? আমরা কি এটা বলিনা, যা ভাংতি নাই যখন ২ টাকা কাল নিবে।





একটা ছোট বাচ্চা ফুল হাতে নিয়ে আপনার গাড়ির পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে অনেক্ষন থেকে একটি ফুল বিক্রি করবে আপনার কাছে।যখন আপনার গাড়ি জ্যামে আটকা পড়েছে তখন আপনার কাছে এসে বলছে "স্যার একটা ফুল কিনবেন" তখন আপনি তাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।

আসুন একটিবার আমরা চিন্তা করি।

এই যে ফেরিওয়ালা, যে আপনার বাড়িতে কাপড় বিক্রির জন্য নিয়ে গেল তার সাথে কি আমি ভালো আচরন করতে পারিনা।তার কাছ থেকে একটি শাড়ি বা লুংগি ক্রয় করলে আপনার এমন কি ক্ষতি হবে। আপনার প্রয়োজন না হলেও তার সাথে ভালো আচরন করি, বলি যে আজ না অন্যদিন কিনবো।

এই যে বাদাম বিক্রেতা, যার কাছ থেকে আমরা প্রথমেই মাগনা খাওয়ার চিন্তা করি, ২ টাকার বাদাম কিনলেও নানান ধরনের কথা বলি, বেশি নেওয়ার জন্য চেচামেচি করি এটাকি ঠিক করছি ? এই বাদাম বিক্রেতা হয়তো ৫০ টাকার বাদাম সারা দিনে ৭০/৮০ টাকা বিক্রি করবে, এটা নিয়ে তার মায়ের হাতে দিবে , মা হয়তো এই টাকা দিয়েই চাল-ডাল কিনবে।তাহলে আমি কেন তার সাথে এ আচরন করবো।

এইযে ফুল বিক্রেতা বাচ্চা মানুষটা, যে এতক্ষন আপনার আমার গাড়ি বা রিক্সার পেছনে দৌড়িয়েছে একটা ফুল বিক্রির জন্য তার কাছ থেকে একটা ফুল কিনলে আমার এমন কি ক্ষতি হত? এমনও হতে পারে একটা একটা করে ২০/২৫টা ফুল বিক্রি করে ঐ টাকা গুলো তার মায়ের হাতে নিয়ে দেবে আর মা এই টাকা দিয়ে চাল-ডাল কিনবে।

ওরা কিন্তু এ কাজ গুলো না করে অসৎ পথে, অবৈধ পন্হায় আরো অনেক কিছু করতে পারতো, চুরি ডাকাতি করতে পারতো, চিনতাই রাহাজানি করতে পারতো।সর্বোপরি ছলনার আশ্রয় নিয়ে ভিক্ষা করতে পারতো।কিন্তু না, তারা ঐদিকে যায়নি,তারা টুকিটাকি বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।তাই আমরা তাদের সাহায্যকারী হই। তাদের কাছ থেকে বেশি বেশি কেনাকাটা করি। তাদের কে বেশি দেয়ার চিন্তা করি। বেশি দিতে না পারলেও তাদের প্রাপ্যটা যেন দেই।একটি ফুল কিনে দেখুন মেয়েটার মুখে কত নির্মল হাসি দেখবেন।

বিষয়: বিবিধ

৫৪৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File