৪২ বছর পর কেন এই বিভাজন ? আরোও ১০ বছর পর কোন মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার কেও বেচে থাকবেনা।।
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:২৪:৩৩ সন্ধ্যা
১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে অসংখ্য প্রানের বিনিময়ে, মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ পেয়েছি। একটি মানচিত্র, একটি পতাকা, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্টায় বাংলাদেশীরা জীবন দিতে জানে তা বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে।
সেই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের গুটি কতেক মানুষ ছাড়া আবাল বৃদ্ধ বনিতা দল মত নির্বিশেষে অংশ নিয়েছিলো।কেও সরাসরি মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে,কেও মুক্তি বাহিনীর জন্য স্পাই হিসাবে কাজ করে, কেও মুক্তি বাহিনীকে খাবার দাবার ও আশ্রয় দিয়ে,কেও মুক্তি বাহিনীর সফলতার জন্য মহান মাবুদের দরবারে মন থেকে দোয়া করে চোখের পানি ফেলে আকুতি জানিয়ে,কেও মিডিয়ার মাধ্যমে , কেও গান লিখে, কেও গান গেয়ে মুক্তিবাহিনীকে উজ্জিবিত করার মাধ্যমে, কেও বিশ্ব দরবারের দৃষ্টি আকর্ষন করার মাধ্যমে।
অর্থাৎ কোন না কোন ভাবে সবাই অংশ নিয়েছেন।যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তাদের তুলনা শুধু তারাই। তাই বলে অন্যদের কাজকে, অন্যদের ভিন্ন ভিন্ন অংশ গ্রহনকে আমরা ছোট করে দেখতে পারিনা। আমাদের সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহনে,আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল এই বাংলাদেশ।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ আজ চরম দূর্দিন অতিক্রম করছে। আমাদের মানচিত্রে আজ শকুনের কু-দৃষ্টি পড়েছে।আমাদের পতাকা আজ চিন্নভিন্ন। আমরা জানিনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস কি ? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একেকজন একেক ভাবে লেখেছেন।যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখন তাদের দলের, তাদের মতের ও পক্ষের করে ইতিহাস তৈরী করেছে এবং আজোও সেভাবেই বিকৃত ইতিহাস তৈরী হচ্ছে।আজ বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতেও দেখা যায় একটা বিষয়ে একেকজন একেকভাবে বলতেছে। তাইতো স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও কে স্বাধীনতার ঘোষক সে বিষয়ে বিতর্ক রয়ে গেলো।
আমরা পারিনি আমাদের জাতীয় নেতাদের সম্মান জানাতে। আমাদের জাতীয় নেতাদের নিয়ে আমরা রীতিমত টানাহেচড়া করছি। আমরা আমাদের নিজেদের বলয় থেকে বের হতে পারছিনা। আমরা আছি শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যেই ঐ গল্পের মত।
গল্পটা হচ্ছে, এক ছেলে প্রায়ই তার বাবার সাথে বিয়েতে অংশ নেয়। একদিন সে তার বাবাকে বললো, বাবা তুমি কবে বিয়ে করবে ? তার বাবা বললো কেন, আমিতো বিয়ে করেছি। তখন ছেলের পাল্টা প্রশ্ন, কাকে বিয়ে করেছো ? কেন, তোমার মাকে বিয়ে করেছি, বাবা উত্তর দিলেন। তখন ছেলেটি বললো, ও আমাদের আমাদের মধ্যে হয়েছে ।
আমাদের বাংলাদেশের অবস্তা হচ্ছে এই রকমই। আমরা আমাদের আমাদের মধ্যেই আছি। আমাদের বাইরে সবকিছুই তুচ্ছ। জাতীয় নেতাদের নিয়ে টানাহেচড়া শুধু আমাদের দেশেই। পৃথিবীর অন্য কোথাও এভাবে টানাহেচড়া আছে বলে আমি জানিনা। সম্ভবত আপনারাও বলতে পারবেন না।
একটা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সকলের লক্ষ্য থাকে কিভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায়।কিভাবে একটা সুখি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়া যায়।কিভাবে অর্থনৈতিক মুক্তি আনা যায়। কিভাবে সকল মানুষকে এক জাতিতে পরিনত করা যায়।যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতিতে দেখা যায়। আমাদের কাছাকাছি সময়ে স্বাধীন হওয়া অনেক দেশই তাদের লক্ষ্যে পৌছুতে পেরেছে।
আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সম্ভবত সে লক্ষেই কাজ শুরু হয়েছিলো। তাইতো দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ৪ টি গুরুতর অপরাধ ছাড়া বাকী সবাইকে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করে দেশের সবাইকে এক জাতিতে পরিনত হওয়ার প্রয়াস চালিয়েছিলেন।
কিন্তু,স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আমরা আজ কি দেখছি। আজ যোদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে দেশকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যাদের নামে দেশের কোথাও কোন মামলা হয়নি, যুদ্ধে অপরাধ করেছেন বলে কোন অভিযোগ উঠেনি তাদের কে আজ গ্রেফতার করে ফাঁসীতে ঝুলানোর সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। আর এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশে আজ এক চরম অরাজকতা তৈরী হয়েছে।পাখীর মত নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারছে পুলিশ।দেশ আজ এক চরম সহিংসতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে।
আজ দেশে কেও মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষ শক্তি আর কাওকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি বলে প্রচার করা হচ্ছে। আর শুধু প্রচার নয় এমন ভাবে জিকির তুলা হয়েছে যে সেই জিকিরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও ভেসে যাচ্ছেন। আজ জিয়াউর রহমানকে বলা হচ্ছে পাকিস্তানের চর। কাদের সিদ্দেকীকে বলা হচ্ছে রাজাকার। আজ দেশ যেন দুটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজ কেন এই বিভাজন ? আরোও ১০ বছর পরতো কোন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকবেন না ,বেঁচে থাকবেনা কোন রাজাকারও। এমন কি আমাদের দুই নেত্রী বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান বিরুধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।বেঁচে থাকবেন না এরশাদ, গোলাম আজম, নিজামী কেও ই।
তাহলে কেন আজ বিভাজন তৈরী করা হচ্ছে। আজ যে বিভাজন তৈরী করা হচ্ছে তা যদি আগামী ৪২ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে তাহলে আমাদের দেশ কোথায় গিয়ে দাড়াবে ?
বিষয়: রাজনীতি
১৩৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন