মিলান সফর ::(পর্ব এক) ট্রেন চলছে উঁচু উঁচু পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে, মনে কিন্তু একরাশ টেনশন।।
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:০৩:৪১ সকাল
গত ১৭ এপ্রিল স্ব-স্ত্রীক ইতালির মিলান সফরে গেলাম। সকাল ৭টা ৪৯ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে প্যারিসের গার দো লিওন নামে একটা ট্রেন ষ্টেশন থেকে। আমার বাসা থেকে মেট্রোতে যেতে সময় লাগে মাত্র ১৫/১৭ মিনিট।
সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ফজরের নামাজ আদায় করে নিলাম। মহান মাবুদের দরবারে হাত তুলে সফরের সকল ধরনের অনাকাংখিত দূর্ঘটনা থেকে পানাহ চাইলাম। ভালোয় ভালোয় সফর করে আসার তাওফিক কামনা করলাম। আল্লাহ তায়ালা এই অদমের কথা শুনেছেন বলেই বিশ্বাস, যার কারনে সহি সালামতের সাথে নিজ ঠিকানায় ফিরতে পেরেছি। মহান মাবুদের অগনিত শোকরিয়া আদায় করছি, আল হামদুলিল্লাহ।
যথা সময়ে আমরা ট্রেন ষ্টশনে গিয়ে পৌছলাম।প্যারিস থেকে প্রায় ৭ ঘন্টার পথ মিলান। অবশ্য রাতের ট্রেন ছড়লে আপনার সাড়ে ৮ ঘন্টা লাগবে। দিনের ট্রেন বলেই কিছুটা কম সময় লাগে। তবে এ সময়টা বাড়তেও পারে, প্রায়ই ২৫/৩০ মিনিট বেড়ে যায়। আমাদের ট্রেনটাও ১০ মিনিট দেরী হবে বলে আগেই ঘোষনা দিয়েছিলো।
পাসপোর্ট বিহীন অবস্তায় আমরা দুজন গিয়ে আমাদের টিকেটের গায়ে লেখা নাম্বার সিটে বসলাম।ট্রেনও ঠিকসময়ে ছেড়ে দিলো। ইংল্যান্ড ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশে ভ্রমন করতে ভিসা লাগেনা, শুধু রেসিডেন্টস কার্ড থাকলেই হয়। তবে ভিসা না লাগলেও ভ্রমনের সময় কার্ডের সাথে আপনার পাসপোর্ট রাখতে হবে।
আমরা পাসপোর্ট না রাখার কারন হচ্ছে, আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট টি খুজে পাইনি, তাই আমার পাসপোর্টও সাথে নিলাম না। এক বড় ভাইকে মোবাইলে ফোন করে জিগ্গেস করলাম, সাথে পাসপোর্ট নেয়াটা কি জরুরী। তিনি জানালেন, না পাসপোর্ট লাগবেনা শুধু কার্ড থাকলেই চলবে। তার কথায় একটু ভরসা পেলাম । কিন্তু ইতালি বর্ডার এলাকায় পৌছার পর টেনশন শুরু হয়ে গেলো।
ফ্রান্সের দিগন্ত জোড়া সবুজ মাঠ পেরিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে মিলানের উদ্দেশ্যে। প্রায় ৪ ঘন্টা চলার পর ট্রেন একসময়ে বর্ডার এলাকায় পৌছলো। উঁচু উঁচু পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে, কখনো পাহাড়ের ভিতর দিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে।পাহাড়গুলো এতটাই উঁচু যেন পাহাড়ের চুড়ায় হামেসা মেঘ খেলা করছে।বর্ডারের উভয় পার্শেই উঁচু উঁচু পাহাড়ের বিশাল সমারোহ, যেন শেষ হতে চাচ্ছেনা।কোথাও আবার পাহাড়ের চুড়ায় বাড়ি ঘরও দেখা যায়।আল্লাহ তায়ালা সম্ভবত সব দেশের বর্ডার হয় পাহাড় নয়তো সাগর নদি দিয়ে পৃথক করে দিয়েছেন।
একসময় ট্রেন গিয়ে থামলো ফ্রান্সের বর্ডার ষ্টেশন মদান (MODAN) নামক ষ্টেশনে।সেখানেই ফ্রান্সের বর্ডার পুলিশ ট্রেনে উঠে যাত্রীদের আই ডি চেক করে নেয়। আমাদের চেকের সময়ে পুলিশ জানতে চাইলো সাথে পাসপোর্ট আছে কি না ? বললাম, পাসপোর্ট সাথে আনিনি। তখন পুলিশ আবার আমাকে বললো, তাদের কোন সমস্যা নাই, তবে ইতালির পুলিশের কাছে পাসপোর্ট অবশ্যই লাগবে।
ইতালির পুলিশের কাছে পাসপোর্ট অবশ্যই লাগবে শোনার পর রীতিমত টেনশনে পড়ে গেলাম। কেননা বর্ডারের ঝামেলার অভিগ্গতা আমার আছে।তাই বউকে সাথে নিয়ে কোন ঝামেলা হোক সেটা আশা করি কেও ই চাইবেন না।তবে মনে মনে আল্লাহর উপর পূর্ন ভরসা করে টেনশন মুক্ত থাকার চেষ্টা করলাম।
কিছুক্ষন পর ট্রেন ইতালির বর্ডার ষ্টেশনে গিয়ে থামলো। সেখনে ঠিকই ইতালির পুলিশ ট্রেনে উঠলো কিন্তু কোন ধরনের চেক ছাড়াই তারা আবার নেমে গেলো।কোন ঝামেলায় না পড়ায় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলাম।
ট্রেন আবার পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে, পাহাড়ের ভিতর দিয়ে তার গন্তব্যে ছুটে চললো।বর্ডার এলাকা অতিক্রম করার পর ট্রেন ইতালির বিস্তৃর্ন মাঠ পেরিয়ে একসময় মিলান শহরে পৌছলো।সেখানে ঘটলো আরেক বিপত্তি।
চাচাত ছোট বোনকে (সে আবার দুধ বোন) বলেছিলাম মিলান এসে পৌছব ২টা ৪৫ মিনিটে । সে আর তার স্বামী তাদের নিজস্ব গাড়ি নিয়ে মিলান সেন্ট্রালে এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আর আমাদের ট্রেন গিয়ে থামলো কাছাকাছি মিলান গারিবাল্দি ষ্টেশনে।ষ্টেশনে নামার পর যখন দেখলাম এটা আমার পরিচিত ষ্টেশন না এটা অন্য ষ্টেশন তখন তাদের সাথে মোবাইলে কথা বললাম। তাদের ডিরেকশনে ১০/ ১৫ মিনিটের ভিতর দেখা হলো এবং তাদের গাড়িতে করে বাসায় গেলাম।প্রথম দিন কোথাও বের না হয়ে বিশ্রাম নিলাম এবং তার দু'টি বাচ্চার সাথে সময় কাটালাম।
(পাহাড়ের সবকটি ছবি ট্রেন থেকে তুলা)
চলবে...
আগামি পর্বে মিলানের কমো ল্যাকেতে, আমার থেকে আমার বউয়ের সাহস বেশি সেই কাহীনি।
বিষয়: বিবিধ
৪১২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন