সস্তা শাহবাগি আবেগ আর গিলছে না পাঠক

লিখেছেন লিখেছেন শিশির আব্দুল্লাহ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৫৩:৩৫ রাত

শাহবাগ চত্বরের আন্দোলন নিয়ে দেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যমে যে অতিমাত্রার আবেগী প্রচারণা চলছে তাতে পাঠক ও দর্শকদের প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না। প্রথমদিকে সাধারণ মানুষের আবেগ ধারণ করে আন্দোলনটি শুরু হলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এটি থেকে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। প্রথমদিকের সমর্থকদের অনেকেই এখন এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অন্ধভাবে শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়া দেশের বেশিরভাগ পত্রিকার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এবং আন্দোলনের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা অন্য কয়েকটি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে পাঠক সংখ্যার বৃদ্ধি-কমতি, পাঠকদের প্রতিক্রিয়া ও সংবাদ বাছাইয়ের ধরন বিশ্লেষণ করে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দিন থেকেই এটি নিয়ে সবচেয়ে মেতে আছে দেশের ‘সর্বাধিক প্রচারিত’ দৈনিক প্রথম আলো ও অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজ২৪ডটকম।

বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন ট্রাফিকিং ওয়েবসাইট অ্যালেক্সাডটকমের রেটিংয়ে বাংলাদেশী সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রথম স্থানে আছে প্রথম আলো। এরপর যথাক্রমে বিডিনিউজ২৪ডটকম ও বাংলা-নিউজ২৪

ডটকমের অবস্থান। এই ক্রমের কোনো পরিবর্তন না হলেও অ্যালেক্সা রেটিং অনুসারে গত দু’সপ্তাহে প্রথম আলো ও বাংলানিউজ২৪ডটকমের পাঠক সংখ্যা কমেছে যথাক্রমে -১৬.৩০% ও -৫.৭২%। দৈনিক কালের কণ্ঠের ওয়বেসাইট গত মাসে অ্যালেক্সা রেটিংয়ে পিছিয়েছে -৫.৯৮% পয়েন্ট। এক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম বিডিনিউজ২৪ডটকম। গত এক সপ্তাহে তাদের পয়েন্ট বেড়েছে +৮%।

উল্টোদিকে অ্যালেক্সা রেটিংয়েও দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশী সংবাদপত্র হিসেবে অনলাইনে দৈনিক আমার দেশ-এর অবস্থান ছিল সপ্তম (সব ধরনের ওয়েবসাইট মিলে ৩১তম)। ২৫ ফেব্রুয়ারি আমার দেশ-এর অবস্থান এগিয়ে হয়েছে চতুর্থ (সব ধরনের ওয়েবসাইট মিলে ২০তম)। একইভাবে বেড়েছে নয়া দিগন্ত ও ইনকিলাবের রেটিংও।

পয়েন্টের হিসেবে গত সপ্তাহে আমার দেশ-এর বেড়েছে +৫৬%, নয়াদিগন্ত +২৪% ও ইনকিলাব +১০০% পয়েন্ট।

গত কয়েকদিনে অনলাইনে পাঠকদের সংবাদ বাছাইয়ের ধরন দেখলেও বোঝা যায় শাহবাগ কেন্দ্রিক সংবাদে আগ্রহ কমছে পাঠকের।

প্রতিদিন বাংলানিউজ২৪ডটকম শাহবাগ বা অন্যান্য স্থানের গণজাগরণ মঞ্চের গড়ে ২০টিরও বেশি সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। অথচ ২৪ ফেব্রুয়ারি তাদের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে ‘সর্বোচ্চ পঠিত’ অপশনে প্রথম ৫টি সংবাদের মধ্যে দুটি শাহবাগ বিষয়ক এবং সবক’টি সংবাদ ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত। অর্থাত্ ২১ ফেব্রুয়ারির পর প্রতিদিন ১৫/২০টি শাহবাগ বিষয়ক আবেগময়ী সংবাদ প্রকাশ করলেও পাঠকরা সেগুলো তেমন গুরুত্ব দেয়নি।

একই পত্রিকার ‘সেরা ২৪ সংবাদ’ নামক ট্যাব-এর প্রথম ৫টি সংবাদের একটিও শাহবাগ আন্দোলন বিষয়ক নয়। ১০টির মধ্যে আছে মাত্র ১টি এবং সেটিও নেতিবাচক, অর্থাত্ আন্দোলনের বিপক্ষে! সংবাদটির শিরোনাম হলো, ‘বাংলানিউজ নিয়ে মাহমুদুর রহমানের বিষোদগার’।

একইভাবে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম কয়েকদিন (৫ থেকে ১২ ফেবু্রয়ারি) ‘সর্বোচ্চ পঠিত’ ও ‘সর্বোচ্চ আলোচিত’ দুই ক্যাটাগরিতে প্রতিদিনের প্রথম তিনটি করে সংবাদের প্রায় সবক’টি আন্দোলন কেন্দ্রিক। ‘সর্বোচ্চ আলোচিত’ সংবাদে প্রতিদিনের মন্তব্য সংখ্যা গড়ে ১১০টির মতো ছিল। এসব মন্তব্যের বেশিরভাগ আন্দোলনকে সমর্থন করে হলেও বিপক্ষেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্তব্য প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করত।

কিন্তু ১২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কিছুটা এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বিস্ময়করভাবে পরিবর্তন হতে থাকে ‘সর্বোচ্চ পঠিত’ ও ‘সর্বোচ্চ আলোচিত’ সংবাদের ধরন। ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেখা গেছে, এই দুই ক্যাটাগরিতে প্রতিদিন তিনটি করে সংবাদ বাছাই করলে শাহবাগ নিয়ে আবেগমাখা সংবাদের সংখ্যা অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। এ ওয়েবসাইটেও শাহবাগ নিয়ে ‘সর্বোচ্চ পঠিত’ সংবাদগুলোর বেশ কয়েকটি নেতিবাচক। আর ‘সর্বোচ্চ আলোচিত’ সংবাদগুলোতে মন্তব্যের সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫-৩০টিতে। প্রায় একই রকম চিত্র দেখা গেছে আরও কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায়।

প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের প্রথমদিকে সমালোচনাকারীদের মন্তব্যও প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ১৬ তারিখের পর থেকে শাহবাগের সমালোচনামূলক মন্তব্য প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় তারা তা প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন ব্লগে অনেক পাঠককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদের অভিযোগ, পত্রিকাটি পাঠকদের কোনো সমালোচনামূলক মন্তব্যই ছাপছে না (‘সর্বোচ্চ আলোচিত’ সংবাদে মন্তব্য হঠাত্ কমে যাওয়ার এটা একটা কারণ হতে পারে)।

ওয়েবসাইটে শাহবাগ বা এর বিতর্কিত নেতাদের সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক বা সমালোচনামূলক মন্তব্য না ছাপালেও প্রথম আলোর ফেসবুক ফ্যান পেজে এসব সংবাদের নিচে পাঠকের শত শত নেতিবাচক মন্তব্য কিন্তু তারা মুছে দিচ্ছে না! প্রথম আলোর ওয়বেসাইটে যে নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করা হয় না, তা অনুমান করা যাবে তাদের ফ্যান পেজে একই সংবাদে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্যের হার দেখে।

এরকম কয়েকটি সংবাদ তুলে ধরা হলো—১. ‘বল্গগার রাজীবের বাবার ক্ষোভ, আমার ছেলের চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে’ শিরোনামের সংবাদটি প্রকাশিত হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রথম আলো ওয়েবে সংবাদটির নিচে মন্তব্য সাকুল্যে ৬টি। একটিও নেতিবাচক নয়। আর ফেসবুক পেজে মোট মন্তব্য ২৬৭টি। মাত্র ২টি রাজীবের পক্ষে। একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীও তার বিপক্ষে লিখেছেন।

২. ‘শাহবাগের বিরুদ্ধে আমার দেশ-এর অবস্থান অব্যাহত থাকবে : মাহমুদুর রহমান’ শিরোনামে ২৩ তারিখ প্রকাশিত সংবাদে প্রথম আলো ওয়েবে মন্তব্য করেছেন ৮ জন। সবগুলোই মাহমুদুর রহমানের বিপক্ষে। অন্যদিকে ফেসবুক পেজে মন্তব্য ২৫৯টি। বেশিরভাগই মাহমুদুর রহমানের পক্ষে।

৩. ‘ধর্ম নিয়ে খেলার অধিকার কারও নেই : প্রধানমন্ত্রী’—২৪ তারিখের এ সংবাদটির নিচে প্রথম আলো ওয়েবে কোনো মন্তব্য নেই। অথচ ফেসবুক পেজে ১১৩টি মন্তব্যের প্রায় সবই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে।

বিষয়: বিবিধ

১৩১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File