মিডিয়ার তেলেসমাতিঃ পর্ব-২
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত আকাশ ০৯ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৫৭:৩৪ সন্ধ্যা
Click this link
মিডিয়ার খবর
অনেক সময়ই মিডিয়াগুলো নানা খবর ছাপে, প্রচার করে বিদ্বেষপ্রসুতভাবে।ঠান্ডা মাথায় ভাবলে এমন অনেক খবরই অযৌক্তিক ঠেকে, অবিবেচনাপ্রসুত মনে হয়। কিন্তু দর্শক পাঠক অনেক সময় তা ধরতে পারেন না, বুঝতে পারেননা। এমন কি অনেক সময় নিজের অজান্তেই তারা মিডিয়ার নাড়ানো সুতোয় পুতুলের মত নাচেন, দাসের মত আজ্ঞাবহ ভুমিকা পালন করেন।
আসুন, দুয়েকটা উদাহরন দেখি।
১।শাহবাগ আন্দোলন
কাদের মোল্লার ফাসির দাবিতে কিছু ব্লগারের উদ্যেগে শাহবাগে শুরু হয় প্রতিবাদী সমাবেশ। আস্তে আস্তে বাড়তে বাড়তে সে সমাবেশ জনস্রোতে রুপান্তরিত হয়। মিডিয়াগুলো ফলাও করে তা প্রচার করা শুরু করে। চ্যানেলে চ্যানেলে চলে লাইভ অনুষ্ঠান। মুলত প্রতিবাদটা শুরু হয় কাদের মোল্লা সহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর ফাসির দাবি নিয়ে।আস্তে আস্তে তাতে নতুন নতুন দাবীর মাত্রা যোগ হতে থাকে।একপর্যায়ে ইসলামী ব্যাংক ও দুটো পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে বক্ত্রৃতা শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে ইসলামী ব্যাংকে হামলা হয়, দুটো পত্রিকার কপিতে আগুন দেয়া হয় জেলায় জেলায়।একটি টিভি চ্যানেলের অফিসেও ভাঙচুর হয়।
পাঠক খেয়াল করুন। ইসলামী ব্যাংক কিংবা অন্যান্য মিডিয়ার অফিসে হামলা, পত্রিকার কপিতে আগুন দেয়া মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। দেশীয় আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার, কোন ব্যক্তি বা মহল নয়। অথচ এ অন্যায় কাজ নিয়ে আক্রান্ত মিডিয়াগুলো ছাড়া অন্য মিডিয়াগুলো বলতে গেলে নিরবতা পালন করেছে। আর সে সব মিডিয়ার দর্শক পাঠকের কাছেও তা অন্যায় বলে বিবেচিত হয়নি। বরংচ কোন কোন মিডিয়া তা উস্কে দেয়ার মত রিপোর্ট ছাপে, সম্প্রচার করে।
২। ব্লগার রাজীব হত্যাকান্ড
শাহবাগ আন্দোলন যখন তুংগে, তখনই খবর আসে ব্লগার রাজীব নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। কে বা কারা তাকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে পৈশাচিক পন্থায় কুপিয়ে হত্যা করে। তার হত্যার সাথে সাথে আলোচনায় আসে তার লেখালেখির বিষর। থাবা বাবা শিরোনামে লেখা তার লেখাগুলো নিয়ে চলে বিপুল আলোচনা সমালোচনা। শাহবাগ বিরোধী পত্রিকাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে সে লেখাগুলো ছাপানো হয়। অত্যন্ত আপত্তিকর সে লেখাগুলো স্বাভাবিকভাবেই অনেককে বিক্ষুদ্ধ করে তুলে। শাহবাগের আন্দোলন তার মুল আলোচনার জায়গা থেকে সরে এসে পরিনত হয় আস্তিক নাস্তিক আলোচনার খোরাকে।
এখানে দুটো বিষয় বিবেচনা করা দরকার। প্রথমত,শাহবাগ আন্দোলনের যে প্রাথমিক দাবী ছিল তার সাথে আস্তিকতা নাস্তিকতার কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের সমাজে নানা অসংগতি আছে, আছে সমস্যা। সে সব সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন দল মত বা পেশার মানুষ এক ব্যানারে আসতেই পার। সত্যিকারার্থে একটা সুন্দর সমাজে সেটাই হয়া উচিত। কোন মানুষ কি করে তার চাইতে মুল বিচার্য বিষয় হয়া উচিত তার বক্তব্য কি, তার দাবীর যৌক্তিকতা কতখানি। সাধারনভাবে আমাদের উচিত সেটা নিয়ে আলোচনা করা, তার স্বভাব চরিত্র দেখা নয়। দ্বিতীয়ত, রাজীবের লেখা যদি আপত্তিজনক হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তার নিন্দা করা উচিত, প্রতিবাদ করা উচিত। পাশাপাশি যেভাবে তার মৃত্যু হল, সেটার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়া উচিত অত্যন্ত জোরালোভাবে। অথচ মিডিয়া “আস্তিকতা নাস্তিকতা” , সে আস্তিক ছিল নাকি নাস্তিক ছিল তা নিয়ে এতটাই মেতে উঠলো, তার মৃত্যুর বিষয় চলে গেল আড়ালে। এক দিকের মিডিয়ার রিপোর্টগুলো ছিল এমন, যা দেখলে মনে হবে, তার মত নাস্তিকের এমন মৃত্যুই বাঞ্চনীয়। আবার অন্য দিকের মিডিয়া তাকে আস্তিক প্রমানে উঠে পড়ে লাগলো।
সাধারনত একটা হত্যাকান্ড ঘটার পর মিডিয়াতে তার ফলো-আপ রিপোর্ট থাকে। কিন্তু রাজীবের বেলায় তা ছিল অনেকটাই অনুপস্থিত। প্রথম আলো সহ শাহবাগ আন্দোলন সমর্থনকারী মিডিয়াগুলো এ ব্যাপারে ছিল বিস্ময়করভাবে নিরব। পক্ষান্তরে নয়া দিগন্ত, আমার দেশ সহ শাহবাগ বিরোধী মিডিয়াতে ফলো-আপ রিপোর্ট ছাপা হয় নেতিবাচকভাবে। সেগুলো যতটা না ছিল বস্তুনিষ্ঠ, তার চাইতে ছিল বেশি ছিল কাহিনী আর গুজব নির্ভর। ফাকে তালে তার হত্যাকান্ডের বর্বরতা ধামাচাপা পড়ে যায়।
প্রিয় পাঠক এভাবেই মিডিয়া আমাদের নিয়ে খেলছে প্রতিনিয়ত। আমাদের মন মস্তিস্ক আবেগ নিয়ন্ত্রন করে চলেছে সুকৌশলে। তাই আসুন আমরা প্রতিটা খবর, রিপোর্ট ভালভাবে যাচাই করি। কোন সুনির্দিষ্ট পত্রিকা বা চ্যানেলে আটকে না থেকে বিভিন্ন মিডিয়া, পত্রিকা দেখি, বিচার করি, ভাবি।
আসুন মিডিয়া দ্বারা অতিরিক্ত প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে বিচার করতে শিখি কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়। দল বা পক্ষ নিয়ে নয়, আমরা যেন সব সময় সাদাকে সাদাকে আর কালোকে কালো বলতে পারি। আমার দলের পক্ষে গেলে সোচ্চার আর বিরুদ্ধে গেলে নিরবতা-এ যেন আমাদের নীতি না হয়।
একটি সুন্দর নির্মল সমাজ বিনির্মান তবেই কেবল সম্ভবপর হতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন