মাওলানা মওদুদি আল্লাহর এক অনুগত দাস এবং রসূল সে) এর আর্দশের একনিষ্ট পতাকাবাহী (পর্ব-6)।

লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৫৩:৪২ রাত



শিল্প বিপ্লব : রেনেসাঁ যুগে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, অষ্টাদশ শতাব্দীতে যন্ত্র আবিস্কারের ফলে তা শতগুন বৃদ্ধি পেয়ে যায়। অভিনব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, তথ্য ও আবিস্কার উদ্ভাবনীকে শিল্প , কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আমল পরিবর্তন এনে দেয়। বুজোর্য়া শ্রেণী এর শতভাগ সুবিধাই লুটে নেয় । কেননা শিল্প ও বাণিজ্য তাদের হাতেই কুক্ষিগত ছিল । জ্ঞান বিজ্ঞান ও সাহিত্যের উপরও একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তৃত ছিল । তারা পুজিঁ, কর্মকুশলতা,ও সাংগঠনিক যোগ্যতা- এই তিনটির সমন্বয়ে শিল্প ও বাণিজ্যের এক নবতর ব্যবস্থা রচনা করল , যার নাম আধুনিক পুজিবাদ।

পুজিঁবাদী ব্যবস্থা:

পুজিঁবাদী ব্যবস্থার মুল কথা হলো, প্রত্যেক ব্যক্তিই হবে নিজের উর্পাজিত ধন-সম্পদের মলিক, তার উর্পাজিত ধন-সম্পদে কারো কোন অংশ কিংবা অধিকার থাকবে না। সে যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় অথবা ব্যবহার করতে পারবে। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তিকে চরম আত্মকেন্দ্রীক ও স্বার্থপর হতে উদ্বুদ্ধ করল। এর অনিবার্য পরিনতিতে দুটি শ্রেণীর সৃষ্টি হলো।

এক. বিপুল ধণসম্পদের মালিক হিসাবে খ্যাত ভাগ্যবানের দল দুই. দুবেলা খাদ্য জোটেনা ,এমন হতভাগ্য দরিদ্রের দল।

এতে একদিকে সুদখোর, মহাজন, শোষক, কারখানা মালিক ও জালিম জমিদারের সৃষ্টি করে, অপরদিকে, শ্রমিক, মজুর , কৃষকদের এক সর্বহারা বুভুক্ষুদের দল তৈরি করে। এখানে মানুষের প্রতি দয়া, মায়া সবকিছু যেন উবে গেল। র্বুজোয়া শ্রেণী আরো বেশী সম্পদ অর্জনের নেশায় উৎপাদন বাড়াতে চাইল, অপরদিকে, শ্রমিক শ্রেণী শ্রম দিয়ে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক দাবী করল। এ দুয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে দেখা দিল । এখানে রাষ্ট্র পুজিঁপতিদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হল। শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণীর ব্যাপারে যারা ধণীদের তুলনায় দূর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রের তেমন কিছু করার নেই, নেই কোন ধর্মীয় কিংবা নৈতিক বাধা। তাদের শ্লোগান হল, “ধর্ম হচ্ছে আল্লাহর জন্য, আর রাষ্ট্র হলো সবার জন্য।”

এ অবস্থায় মুনাঁফাকে কাজে লাগিয়ে আয় বৃদ্ধির জন্য র্বুজোয়া শ্রেণী নতুন নতুন লিমিটেড কোম্পানি, ব্যাংক, বীমা, সমবায় সমিতি গড়ে তোলে। তারা নিজেরাই শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে। কোন সময় বিনা বেতনে, বিনা ছুটিতে ও কাজের সময়সীমা নিধারণ করা ছাড়াই কাজ আদায়ের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এক্ষেত্রে স্বল্প বেতনে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুবিধা উপেক্ষা করে নারী ও শিশুদেরকেও কাজে লাগায়। ফলে তাদের রোগ শোক ও দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পায় এবং বেকারত্বের হারও বেড়ে যায়।

এসকল কারনে সৃষ্ট ঘৃণা ও বিদ্বেষ গরিবদেরকে মুক্তির আশায় হিংসাত্বক ও নতুন এক বিপ্লব সাধনে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। আর এর শ্লোগানের মধ্যে ছিল রক্ত, হানা হানি, নৈরাজ্য ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করা , তার নামই হল সমাজতন্ত্র।

সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম :

নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত জনগন, যাদের মধ্যে জ্ঞান প্রতিভা, মননশীলতা ও অভিজ্ঞতা কোন কিছুই ছিলনা, যারা দুঃখে কষ্টে অস্থির ও ব্যকুল হয়েছিল, তারা রীতিমত হিংস্র ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। তাদের কাছে কোন বুদ্ধি ও যুক্তির মানদন্ডে যাচাই করে দেখার মত মানুষিক অবস্থাও তাদের ছিলনা। এ সময়ে তাদের মধ্যে তীব্র ঘৃণা, ক্রোধ ও প্রতিশোধ গ্রহণের দাবী বড় হয়ে দেখা দিল । বস্তত কাল মার্কস তার নিজের চিন্তা লেখনীর মাধ্যমে যে কমিউনিজম এর কথা বলে ছিলেন, তা শুধু কাগজের পাতায় রয়ে গেল। কাল মার্কস এ সময় এসে এই সাধারন দাবীর জবাবে এক বিশেষ ধরনের সমাজতন্ত্র পেশ করলেন , যার নাম ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ বা মার্কসবাদ বলা হয়ে থাকে।

সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মুল কথা হলো, উৎপাদন উপকরনের মালিকানা থাকবে রাষ্ট্রের হাতে। ব্যক্তি এগুলোর মালিক হতে পারবেনা এবং নিজ ইচ্ছামত এগুলো ভোগ দখলও করতে পারবেনা। কাজের বিনিময়ে রাষ্ট্র থেকে তারা ভাতা লাভ করবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল নাগরিকদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে। এখানে ব্যক্তিমালিকানা ও উত্তরাধিকারের কোন অস্তিৃত্ব থাকবে না। কাল মাকর্সের মতবাদে বিশ্বাসী কম্যুনিষ্টরা ইতিহাসের বস্ততান্ত্রিক ব্যাখ্যা প্রদান করে ধর্মকে অস্বীকার করে বলল যে , ধর্ম হচ্ছে জনগনের জন্য “নিষিদ্ধ আফিম” স্বরুপ।

যাইহোক, কাল মার্কস তার নিজের চিন্তা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করে এমন এক মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে সমস্ত বিশ্বটাকে তিনি দুটি শিবিরে বিভক্ত করে ফেলেছিলেন। তার দর্শন অনুধাবন করে বিশ্বের অনেক মানুষ সমাজতন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। তার লেখনীর মর্মাথ ছিল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি।

সাম্যতার শ্লোগানে সেখানে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা থাকলেও ছিলনা মানবতার মুক্তির কথা। মানুষের রয়েছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক , রাষ্ট্রীয় জীবন। মানবীয় জ্ঞান কোন সময়ই স্বার্থপরতা ও ত্রুটিমুক্ত নয়। বস্তুজগতে চোখে যা দেখে তাকেই সে বাস্তব ও সত্য মনে করে, আর অদৃশ্য ইন্দ্রিয় বর্হিভুত বিষয়গুলোকে সে সত্য মনে করেনা। তাই সাধারনত এসব মতাদর্শে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও অপরাপর বস্তুকে উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এখানে মানুষের অনুভুত প্রয়োজন সমূহ যেমন: ভাত, কাপড়, বাসস্থান ও যৌন চাহিদা পুরণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থায় ইন্দ্রিয়ানুভুতির বাইরে মানুষের আত্মিক প্রয়োজনের কথাকে অস্বীকার করা হয়। তাই মাত্র 70 বছরের মধ্যে মানুষের মুক্তির দিশারী হিসাবে সমাজতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ল। অবশ্য স্থায়ী না হলেও এখনোও কিছু কিছু মানুষের নিকট তার গ্রহণযোগ্যতা রয়ে গেছে।

কিন্তু ইসলাম তো মানব রচিত কোন মতাদর্শ নয়। ইহা মহান আল্লাহ কর্তৃক মানব সমাজের জন্য রহমতস্বরুপ একটি পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান, যা অনুসরনের মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন শান্তির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এর রয়েছে সুবিশাল এক জ্ঞান ভান্ডার। পৃথিবীতে অনেক মনীষি এই ভান্ডার থেকে জ্ঞান আহরনের চেষ্টা করেছেন এবং করছেন । সারা জীবন তপস্যা করে পান্ডিত্যলাভ করলেও তারা এ ব্যাপারে সাগরের তীরে নুড়ি কুড়িয়েছেন মর্মে স্বীকার করেছেন।

মাওলানা মওদুদি তেমন একজন ব্যক্তি, যিনি ইসলাম নিয়ে সারা জীবন গবেষনা করেছেন। তিনিও মানুষ হিসাবে ভুল ত্রুটির উর্দ্ধে নয়। পরবর্তী আলোচনা তার দর্শন নিয়ে আলোচনা করার প্রত্যাশা রাখলাম। (চলমান পর্ব-৭)

বিষয়: রাজনীতি

১৭৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File