এ প্রজন্ম রাজাকার দেখেনি, দেখেনি যুদ্ধ, তাই যুদ্ধারোপরাধীদের বিচারের দায় এ প্রজন্মের নয়। এ প্রজন্ম যা দেখেছে তার বিচার চাই।
লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৩:০৭:০১ দুপুর
কথায় আছে, সময়ের একফোঁড়, অসময়ের দশফোঁড়। 42 বছর আগে সংঘঠিত যুদ্ধাপোরাধের বিচার করতে জাতিকে আজ দু-ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এক অংশ স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে দাবী করে এবং অন্য অংশকে জোর করে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হিসাবে দাড় করানো হয়েছে। শুরু হয়েছে বাকযুদ্ধ।
71 সালে 25শে মার্চের পর সংঘঠিত যুদ্ধে যারা অংশ গ্রহণ করেনি বরং নেতা হিসাবে সাধারন জনগনকে যুদ্ধের ময়দানে অরক্ষিত রেখে সীমান্তে পলায়নের মাধ্যমে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল এবং আরাম আয়াসে জীবন অতিবাহিত করেছিল, তারাই আজকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে মাঠ কাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহায় দিয়ে যুব সমাজের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন এবং সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, উৎপাদনকর্ম ও সামাজিক শান্তিকে বিঘ্নিত করছেন।
দেখুন, এরা কী যুদ্ধ করেছিল ? এরা কী রক্ত দিয়েছিল ?
■ আইন মন্ত্রী শফিক আহমেদ
■অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম:
■ লে.কর্ণেল (অব) ফারুক খান:
■ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন
■সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী:
■মহিউদ্দিন খান আলমগীর:
■ তোফায়েল আহম্মেদ ■মরহুমআব্দুররাজ্জাক ■ সুরন্জিত সেন গুপ্ত ■ মোহাম্দ নাসিম ■ মাহবুবুল আলম হানিফ ■ শাহরিয়ার কবির
■শেখ ফজলুল করিম সেলিম
■ শামসুল ইসলাম টুকু
■ মাওলানা নুরুল ইসলাম
■ সৈয়দ জাফরউল্লাহ
■ বেগম মতিয়া চৌধুরী
■ ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম
■ ডঃ কামাল হোসেনসহ আরো অনেকে।
এরাই এখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, দেশের কণধার। অথচ , মেজর জলিল, মেজর জিয়া, কর্নেল তাহেরসহ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ সাধারন মানুষ যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এদের অনেকে এখন নব্য রাজাকার। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি পর্যন্ত এখন রাজাকার।
যা নিয়ে নতুন করে সংঘাত সেই ফিরে দেখা 1971:
১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ শহীদদের পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে পাক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঢাকার রাজপথে মিছিল বের হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব রাজাকার, আলবদর, আলশামস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করেছে তাদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দ্য বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২ বা দালাল আইন আদেশ শিরোনামে আইন প্রণয়ন করা হয়।
১৯৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই আইনের আওতায় দুই হাজার ৮৮৪টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় সাজা দেওয়া হয় ৭৫২ জনকে। এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল। দালাল আইনের অধীনে ৩৭ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিভিন্ন আদালতে তাদের বিচার আরম্ভ হয়। বর্তমানে যারা কথিত যুদ্ধারোপরাধী হিসাবে বন্দী তাদের নামে তখন একটা মামলাও ছিলনা।
বিবেচ্য ও বিচায্য বিষয়:
বর্তমানে সারা বাংলাদেশে যুদ্ধারোপরাধী বলে জামায়াত-শিবিরের উপর যে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে এবং সকল আইন, নিয়ম কানুন, অধিকার লংঘন করে এদেরকে হত্যা, নির্যাতন, গুম, মামলা, আটক করা হচ্ছে তা কিসের উপর ভিত্তি করে ? সদ্য সমাপ্ত যুদ্ধের পর যেখানে চোখের সামনে সংঘটিত ঘটনার ক্ষেত্রে জামায়াতকে যুদ্ধারোপরাধী হিসাবে প্রমান করতে পারেননি। 42 বছর পর আসমানের কোন ফেরেশতা এসে তাদেরকে যুদ্ধারোপরাধী, মানবতা বিরোধীদের তালিকা দিয়ে গেল ? যার কারনে জামায়াতের সকল উর্দ্ধতন নেতাসহ 64 জেলার সকল নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে ? তাহলে ৭২-৭৩ এ যে বিচারটা হলো তখন এই শীর্ষ অপরাধীদের বাদ দিয়ে কাদের বিচার করা হয়েছিল ? শক্তির দিক দিয়ে তখন জামায়াতের বর্তমানের মতো সারা দেশে হরতাল-অবরোধ করার ক্ষমতা ছিল না।তাহলে কেন সেই সময় তাদের উপর মামলা করা হয়নি? বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা রুই-কাতলা বাদ রেখে চুনোপুঁটিদের শাস্তি দেবেন এটা তো বিশ্বাসযোগ্য নয়।বঙ্গবন্ধু জাতির কাঁধে এতবড় একটা কলঙ্ক রেখে যাবেন কেন ? 42 বছর পর এই দায়ভার নতুন প্রজন্ম নেবে কেন ? ২০১৩ সালে এসে শীর্ষ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলন করতে হচ্ছে কেন? এই দায়ভার তাদের , নতুন প্রজন্মের নয়।
নতুন প্রজন্মের সামনে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলোর বিচার নিয়ে আজ আন্দোলন হওয়া দরকার।
আমরা যারা নতুন প্রজন্ম, তারা দেখেছি-
1) স্বাধীন বাংলাদেশের সম্পদ ভারতে পাঁচার হতে যারা সহযোগীতা করেছে, তাদের বিচার চাই।
2) রক্ষীবাহিনী বাংলাদেশের হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে, ধর্ষন করেছে অসংখ্য মা-বোনকে, লুটতরাজ করেছে এদেশের সম্পদ, তাদের বিচার চাই।
3) একদলীয় বাকশাল কায়েম করে গনতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে আমার অধিকার লংঘন করেছে, তার বিচার চাই।
4) বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার র্কায সম্পন্ন হয়েছে।
5) মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে অবৈধভাবে কারাগারে ঢুকানো হয়েছে, তার বিচার চাই।
6) খাদ্র্যের অভাবে কত বাসন্তিকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে, তার বিচার চাই।
7) জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার চায়।
8) সামরিক অফিসারদের ফাঁসির বিচার চায়।
9) জিয়া হত্যার বিচার চাই।
10) পুলিশ নির্যাতনে রুবেলকে হত্যা করা হয়েছে,তার বিচার চাই।
11) পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমীনকে ধষন করা হয়েছে,তার বিচার চাই।
12) বি ডি আর হত্যাকান্ডের বিচার চায়।
13) ধর্ষণে সেঞ্চুরী করেছে, সেই ছাত্রলীগ নেতার বিচার চাই।
14) সাগর রুনী সহ এ যাবৎ যত সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার চাই।
15) ছাত্রলীগ কর্তৃক বিশ্বজিত হত্যার বিচার চাই।
16) হলর্মাক কেলেংকারীর বিচার চাই।
17) শেয়ার মার্কেট কেলেংকারীর বিচার চাই।
18) পদ্মা সেতু দুর্ণীতির বিচার চাই।
19) ডেসটিনির টাকা আত্মসাৎকারীর বিচার চাই।
20) কুইক রেন্টাল কেলেংকারীর বিচার চাই।
21) গত এক মাসে প্রায় 200 জনকে গনহত্যা করা হয়েছে, তার বিচার চাই।
এভাবে তালিকা করলে কলেবর শুধু বড়ই হতে থাকবে। পত্রিকার পাতা খুললে হত্যা, বাবা-মার সামনে মেয়েকে ধষণ, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডাবাজির খবর বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকে। স্বস্তির কোন সংবাদ নেই।
এত অপরাধের সুষ্ঠ কোন বিচার নেই। ক্ষমতা আকড়েঁ থাকার জন্য রাজনৈতিক মামলা, হামলা, আটক, গুম , হত্যাসহ যাবতীয় কৌশল অনুসরন করা হচ্ছে। 42 বছর পূর্বের মিমাংসিত একটি বিষয়কে পুনর্জীবিত করে নাটক মঞ্চস্ত্র করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি অকাযকর রাষ্ট্রে পরিনত করার চক্রান্ত চলছে। তাই আজ দেশপ্রেমিক জনতাকে আবার এগিয়ে আসতে হবে এ চক্রান্ত রুখে দেওয়ার জন্যে।
বিষয়: বিবিধ
২৬০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন