“শোককাতর বঙ্গভবনেও কথা হলো না দুই নেত্রীর ” একটি সাইক্লোজিক্যাল কনফ্লিক্ট , এর থেকে বেরিয়ে আসা যাবে কী ?
লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ২১ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৫৯:২০ রাত
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এর মৃত্যুশোকে বহুদিন পর বঙ্গভবনে এক ছাদের নিচে এলেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা। কিন্তু এবারো তাদের মধ্যে কোনো কথা হলো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের আধা ঘণ্টা পর বঙ্গভবনে আসেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। দেখা গেছে বঙ্গভবনে শোকের আবহের মধ্যে খালেদা জিয়া যখন রাষ্ট্রপতির কফিনে ফুল দিচ্ছিলেন, তখন দরবার হলেই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসা কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়া পরে রাষ্ট্রপতির ছেলে সাংসদ নাজমুল হাসানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সান্ত্বনা দেন এবং বঙ্গভবনে রাখা শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এর পরপরই বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসেন বিরোধী দলীয় নেতা। সাংবাদিকদের সঙ্গেও তিনি কোনো কথা বলেননি।
কবি গুরু বলেছিলেন,
‘ফিরিয়ে দাও অরণ্য, লওহে নগরী’
সভ্যতা নাকি প্রথমে নগরে গড়ে উঠেছিল। নগর থেকে সভ্যতার শিক্ষা সঞ্চালিত হতে হতে পুরো সমাজকে আলোকিত করে তোলে । কিন্তু আমাদের নগরের নেতা নেত্রীরা সামনা-সামনি হলে কথা তো বলেনই না, অগোচরে যখন বলেন, তখন মুখের ভাষা দিয়ে যে সভ্যতা সঞ্চালিত করেন, তা আমাদেরকে আলোর পরিবর্তে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায় । একে অপরকে নিয়ে যে মন্তব্য করেন তা রীতিমত আমাদেরকে লজ্জা দেয়। রাস্তা-ঘাটেই শুধু নয়, মহান সংসদেও এমন কুরুচিপূন ভাষা ব্যবহার করা হয়, যা স্পীকার সাহেবকে সংসদীয় কাযবিবরণী থেকে এক্সপাঞ্চ করতে হয়। েএর আসুন, কেন মহিলা দুজন এমন করেন তা আমরা একটু ভেবে দেখি :
পৃথিবীতে কোন দেশে একই সাথে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের বিরোধীদলীয় নেতা মহিলা রয়েছে এমনটি আমার জানা নেই। আল্লাহ নারীকে পুরুষের একটি অংশ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যে কারনে ইলেকট্রন-প্রটোনের মত পুরুষ নারীকে এবং নারী পুরুষকে আকষন করে। এই জন্য বিভিন্ন সমস্যা থাকার পরও তাদের মধ্যে ভাব হয়, প্রেম হয়, মহব্বত হয়। একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকতে পারেনা । এ নিয়ম মানুষের তৈরি নয় । এটা আল্লাহর তৈরি। এ বিধি আছে বলেই নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হয়, সৃষ্টির মধ্যে অনেক কষ্ট, ব্যাথা, বেদনা থাকলেও আনন্দ খুঁজে পায়। তাদের মধ্যে আশা জাগ্রত হয়। সৃষ্টির ধারায় পৃথিবীতে বৈপ্লবিক পরিবতনও সুচিত হয়।
নারীতে-নারীতে যতই প্রেম, ভালবাসা, মহব্বত সৃষ্টি হোকনা কেন, তা দিয়ে নতুনত্ব আসেনা, আসেনা কোন সৃষ্টির ধারা। আমরা পশ্চিমা সমাজে Les bianism শব্দটি অহরহ শুনি। তারা অনেকে সংসার না করে সারা জীবন একত্রে কাটিয়ে দেন। পুরুষের মধ্যেও এটা রয়েছে। প্রকৃতির আমোঘ নিয়মকে অস্বীকার করে নারী পুরুষের উপর, আর পুরুষ নারীর উপর চরম বিদ্বেষপ্রসুত এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কিন্তু জরীপে দেখা গেছে, শেষ বয়সে তাদের মধ্যে হতাশা বেশী কাজ করছে।
যাইহোক আমার প্রতিপাদ্য বিষয় এটা নয়। দিকজজকাকককরির বলছিলাম বাংলাদেশের কথা। আমাদের এই দেশে হাজার হাজার মর্দে পুরুষ থাকতে এ জাতি দুজন মহিলাকে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন, যারা কিনা পৃথিবী থেকে চির জনমের মত চলে যাওয়া একজন ব্যক্তির লাসকে সামনে রেখেও ব্যক্তিগত অহমিকাবোধের উর্দ্ধে ওঠে সহমর্মিতা জানাতে পারলেন না।পারলেন না দুজনের কুশল বিনিময় করতে। একজন সবোর্চ্চ পাস এর অহংকারে আরেকজন প্রাইমারী পাসের সাথে কথা বললে মান থাকবেনা ।
আমরা জানি, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে দেশে দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সংঘাত চলছে। জাতীয় নির্বাচনের আর নয় মাস বাকি থাকতে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দুই নেত্রীর সংলাপ চাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। একই দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও হয়েছে।এদিকে অসচ্ছ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ কিছু নেতার বিচারকার্য চলছে। ইতোমধ্যে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন ও সাঈদীকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে।এ কারনে যে উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে রীতিমত দেশে বিদেশে দেশের ভাবমুর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায় যে, মহিলা হওয়ার কারনেই জন্মগতভাবেই তারা পরস্পর বিরোধী হবেন, একে অপরের প্রতি ভাব, প্রেম, মহব্বত ও আকষণবোধ করবেন না এটাই স্বাভাবিক। সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী সমাজ, বুদ্ধিজীবি সমাজ বারবার দুই নেত্রীর মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব রাখলেও তা মহিলা ইগোর কারনে সম্ভব হচ্ছেনা। এই সংকট উত্তরনে আল্লাহ একজন মৃতব্যক্তির অসিলা দিয়ে দুই নেত্রীকে এক জায়গায় বসার সুযোগ করে দিলেন। কিন্তু র্দুভাগ্য এ জাতির । এখানেও তারা দুজনে দুই দিকে ব্যস্ততা দেখালেন। একজন কুটনীতিকদের সাথে কথোপকথনে, অন্যজন মৃত ব্যক্তির ছেলেকে সান্তনা দেওয়ার কাজে।
পাঠক ভাইদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা ? আজকে যদি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা পুরুষ হতেন, তাহলে এমন হতো কিনা ?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এ দুজন মহিলাকে আল্লাহ যদি জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়, তাহলেও তারা একত্রে থাকতে পারবেন না। তাদের মনে হিংসা এমনভাবে স্থান করে নিয়েছে যে, জান্নাতের মধ্যে একজন অন্যজনকে সহ্য করতে না পেরে বলবে, হে আল্লাহ ! ওকে দেখলে আমার গাঁয়ে জাহান্নামের আগুন জ্বলে ওঠে। ওকে দেখার চাইতে তুমি আমাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দাও। (নাউযুবিল্লাহ)।
এমন অবস্থা হয়ত একসময় আসবে, তখন দুই নেত্রী বাধ্য হবেন আলোচনায় বসতে। কিন্তু ততদিনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লাসের মিছিল আরো ভারী হবে। একটু আন্তরিক হলেই যেটা এড়ানো সম্ভব হত।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন