পুলিশ যখন দায়িত্ব পালনে পশুর মত আচরন করে, সেই সমাজে গনতন্ত্র থাকেনা শেষ পর্ব-4)

লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ১১ মার্চ, ২০১৩, ১০:৫০:৪৬ রাত



Code oF Conduct:

পুলিশের আচরচণ কেমন হবে, এ মর্মে তাদের Code oF Conduct –এ স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে।তা সত্ত্বেও যখন যে সরকার থাকে, তখন সেই সরকারের আজ্ঞাবাহী হয়ে পুলিশকে চলতে হয়, এটাই বাস্তবতা। বতমানে পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিক দলসহ সাধারন মানুষের সাথে যে আচরন করছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে তা ইতোপুর্বে আর কখনও দেখা যায়নি।মানুষের স্বাভাবিক সেন্স যেটি, সেটিও তারা হারিয়ে ফেলেছেন।রাজপথে মানুষের পিটানোর দৃশ্য দেখলে রবীন্দ্রনাথের সেই পংক্তির কথা মনে হয়,

“ফিরিয়ে দাও অরণ্য, লও হে নগরী”

আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে ঘোষনা দিয়েছে।সৃষ্টির সেরা জীব বা Human beings হয়ে মানুষ মানুষকে এমনভাবে পিটাতে পারে, পশু কিংবা জানুয়ারেরা দেখলে আঁতকে উঠবে।সেদিন দেখলাম হ্যান্ডক্যাপ পরা অবস্থায় একজন মানুষকে রাস্তার উপর ফেলে তিনজন পুলিশ তাদের শরীরে যত শক্তি আছে তার সবটুকু ব্যবহার করে তাকে কুত্তা পিটানোর মত পিটাচ্ছে আর মানুষটি তার হাত বাধা অবস্থায রাস্তার উপর ছটফট করছে। এই দৃশ্য আমি আর সহ্য করতে না পেরে টিভি বন্ধ করে দিলাম এবং ক্ষনিকের জন্য স্থম্ভিত হয়ে গেলাম।আমি তখন পুলিশনামক মানুষগুলোর মধ্যে সৃষ্টির সেরা হিসাবে কোন কিছু খুঁজে পেলাম না। তাই নিজে নিজের কাছে প্রশ্ন করলাম , আল্লাহ কেন মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে ঘোষনা দিলেন ? তার এ ঘোষনার মধ্যে কোন ভুল নেই তো ! (নাউযুবিল্লাহ)। তা হবে কেন ?

আবার চিন্তা করলাম যে , আমি কী ভুল দেখলাম, নাকি সিনেমা দেখছি ? পরে আবার টিভি অন করলাম এবং সকল মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে, পুলিশের উপর জামাত-শিবিরের হামলা, 14 জন নিহত, 30 জন গুলিবিদ্ধ, শতশত আহত।

খবরের শিরোনামে এমন নিউজ দেখে আমি কিছুটা ইকোয়েশন করলাম যে, জামাত-শিবিরের হামলায় যেহেতু 14 জন পুলিশ নিহত, 30 জন গুলিবিদ্ধ, শতশত আহত হয়েছে, কাজেই ক্ষোভ প্রসমিত করতে না পেরে সহকর্মীদের হত্যার জন্য পুলিশ বেপরোয়াভাবে মানুষটিকে পিটাচ্ছে ।

হঠাৎ মনে হল দেখি তো, জামাত-শিবিরদের দিগন্ত টিভি কি নিউজ করছে। চ্যানেল ঘুরিয়ে দিগন্তের হেডলাইনে দেখা গেল পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে 18 জন জামাত-শিবিরের কর্মী নিহত, 50 জন গুলিবিদ্ধ, শতশত আহত হয়েছে। মনে প্রশ্ন দেখা দিল, জামাত-শিবির পুলিশের উপর হামলা করল, আবার মারাও গেল তারা , এটা কেমন সংবাদ হলো।

তখন বুঝিনী, কেন পুলিশ এমন আচরণ করছে ? পরবর্তী দিন সরকারের ভাষ্যে পুলিশের আচরণের বিষয়টি বোধগম্য হলাম।সরকারী নিদের্শে পুলিশ তার স্বাভাবিক দায়িত্ব বাদ দিয়ে জামাত-শিবিরসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পিটানোর দায়িত্ব নিয়েছে।

গত চার বছরে বিরোধীদলের হাজার হাজার কর্মীদেরকে পুলিশ, র্যা ব আইন শৃংখলা বিনষ্টের অযুহাত দেখিয়ে কাউকে গুম , কাউকে হত্যা আবার কাউকে ধরে ধরে কারাগারে রেখেছে। কারাগারে এখন আর জায়গা নেই।

বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো, র্বতমানে পুলিশ জিরো টলারেন্সে যে আচরণ করছেন, সেটি তার চাকুরির বিধি মোতাবেক কতটুকু আইনসিদ্ধ ? আমরা জানি, পুলিশও এদেশেরই মানুষ । যে পুলিশ অফিসারের র্নিদেশে তারা বিরোধীদলসহ সাধারন মানুষের উপর জঘণ্যতম র্নিযাতন, হত্যাকান্ড সংঘঠিত করছে, স্বাভাবিকভাবেই তারা এখন চিহিৃত। তারা সরকারের নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করে থাকে।

পুলিশ তো জনগণের সেবক , তারা আইন শৃংখলা, মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার নিমিত্বে নিয়োজিত থাকবে।তাদেরকে জনসাধারণের জীবন কেড়ে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। জনসাধারণ আইন বর্হিভুত কাজ বা অপরাধ করলে তাদের আইনের হাতে সোপদ করা র্পযন্ত তাদের কাজ । জনগনের অপরাধের বিচার করার জন্য র্কোট আছে। কোর্টে অপরাধ সনাক্ত হলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করবে র্কোট। কিন্তু পুলিশ কেন আইন তার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। তাহলে র্কোটের প্রয়োজন কী?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কী কী কারনে বিপ্লব হতে পারে তার বিষয়ে বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কারন হলো, মানুষের যা কিছু পাওয়ার অধিকার আছে, কোন মানুষ যখন তা থেকে বঞ্চিত হয় , তখন তার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। না পাওয়ার বেদনায় আস্তে আস্তে ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হয়ে তা মহীরুপ ধারন করে । তখন তার কাছে জীবন অথহীন মনে হয়।শেষ পযন্ত তার না পাওয়া বিষয় আদায়ের লক্ষ্যে জীবনবাজী রেখে লড়াই করে ।এই লড়াইয়ের ফলাফল নিয়ে তার কোন চিন্তা থাকেনা । ঈপ্সিত লক্ষ্য পুরণের জন্য একসময় হুমসীক্যালী পথও বেছে নিতে পারে।শুরু হয় বিপ্লবের প্রাথমিক যাত্রা।

একটি গনতান্ত্রিক সমাজে হরতাল, ধমঘট, অবরোধ, মিছিল, প্রতিবাদ এগুলো সবই নাগরিকের অধিকার । সরকার যখন জনগণের দাবী পুরণ না করে নিজেদের ইচ্ছামত চলতে চায়, তখন বিকল্প না থাকলে উপরোক্ত কম্পোনেন্টগুলো ব্যবহার করে জনসাধারন সরকারকে জানাতে চায়। সরকার যদি এতেও না বুঝার ভান করে বরং এই জানানোর ভাষা ভুলুন্ঠিত করার জন্য তার রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে সেখানে সংঘাত অনিবায হয়ে ওঠে।এরফল কখনও ভাল হয়না। এই ধরনের পরিস্থিতি আজ বাংলাদেশে সংঘঠিত হচ্ছে।পুলিশ দিয়ে অত্যাচারের স্টীম রোলার চালিয়েও সরকার যখন র্ব্যথ, তখন জনসাধারণ বিরোদ্ধে বি জি বি কে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে।

গত 28 শে মাচ মওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়া হলে সাঈদীভক্ত মানুষগুলো সাঈদীর মুক্তির দাবীতে ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।শতাধিক প্রাণ হানির প্রেক্ষিতে পুলিশ, বিজিবি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হওয়ায় এক পযার্য়ে সরকার “ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের” অধীনে সেনাবাহিনী নামানোর চেষ্টা করেন।কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রধান “ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের” অধীনে সেনা নামানোর চেষ্টায় রাজী হননি।তিনি বলেছিলেন, “জরুরী অবস্থা বা র্পুন ক্ষমতা দিয়ে নামনো হলে দেশের জন্য অবশ্যই দায়িত্ব পালন করব।” সেনাবাহিনী প্রধানের এমন জবাব পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষেপে যান এবং সেনাপ্রধানসহ কিছু জেনারেলকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করা হয়। সারারাতভর আমরা সরকারের বড় বড় নেতাদেরকে টেনশনে থাকতে দেখেছি। অবশেষে, সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনার মুখে পিছু হটে শেখ হাসিনা।

সরকার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে না পেরে রাগে, ক্ষোভে, অর্ন্তজালায় পুলিশ বিভাগের ন্যায়নীতির উপর কালো কাপড়ের সিলগালা মেরে ঢেকে দিয়েছেন এবং দৃশ্যত: মনে হচ্ছে, পুলিশ পাগলা কুকুরের ন্যায় দিকবিদিক ছুটাছুটি করছে। কে ভাল , কে মন্দ, কে অপরাধী, কে শিশু, কে বয়স্ক, কে র্নিদোষ, সেটা দেখার মানুষিকতা তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।

এদিকে রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে শাহবাগে। গতকাল 8 র্মাচ বিশ্বনারী দিবসের সমাবেশে ইমরান সরকার দম্ভভরে ঘোষনা দিয়েছেন , “শাহবাগ সরকারের চেয়েও শক্তিশালী।” তিনি তার ইচ্ছামত জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে ঘোষনা দিয়ে তা পরিপালনের জন্য দেশবাসীকে র্নিদেশ দিচ্ছেন। সে মোতাবেক রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্রের অধিবাসীরা তার র্নিদেশ পালনও করছেন। প্রথমে যুদ্ধঅপরাধী, পরবতীর্তে মানবতা বিরোধী অপরাধীর বিচারের নামে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে পুরো দেশকে আজ দুটি ভাগে বিভক্ত করা হচ্ছে। যে ট্রাইবোনালে বিচার হচ্ছে,দেশ-বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে ঢোল পিটিয়ে চেতনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ধর্মীয় দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতি সৌহাদ্রের দেশ হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত। সেই দেশে আল্লাহ ও রসূল (স) কে কটুক্তিকারী কিছু ব্লগারকে সরকার সমথন দিয়ে ধর্মীয় বিভেদ ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিহিংসা চরির্তাথ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।মসজিদে, গ্রামে-গঞ্জে- “সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি” গঠনের মাধ্যমে স্বজনদের মধ্যে দ্বন্বের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।সারা বাংলাদেশে একটি গৃহযুদ্ধ বাধানোর উপক্রম সৃষ্টি হয়েছে।

এভাবে একটি দেশ চলতে পারেনা। এদেশে একটি সুসংঘটিত সেনাবাহিনী আছে, আছে বিপদে-আপদে দিক র্নিদেশনা দেওয়ার মত বুদ্ধিজীবি শ্রেণী। সরকারের একগুয়ে মানুষিকতার কারনে একটি দেশ পিছিয়ে যেতে পারেনা। ধম , বণ, র্নিবিশেষে সবাইকে নিয়ে আমাদের বসবাস। আমরা বাঙ্গালী অবাঙ্গালী শ্রেণীভেদ করতে চাইনা, আমরা ধম নিয়ে সংঘাত চায়না, আমরা মুসলিম, হিন্দু, খ্রীষ্টান , বৌদ্ধ সবাই মিলে একসঙ্গে বসবাস করতে চায়। আমরা এভাবে ছিলাম , আছি, এবং থাকব।কাজেই সরকারকে বলব প্রতিহিংসার মানুষিকতা ত্যাগ করুন। বাস্তবতা উপলব্ধি করুন। জনগনের জানমাল হেফাজত করুন। এটাই আপনাদের জন্য মঙ্গল। (শেষ)

বিষয়: বিবিধ

১৩৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File