“ মওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে গালি না দিলে যাদের ঘুম হয়না”

লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৭:২০ রাত



প্রথমে একটা বিষয়ে আমি পাঠক ভাইদের অনুরোধ করতে চাই যে, আমার কথাগুলো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করবেন। আমি মওদুদি কিংবা জামায়াত কিংবা তাবলীগ বা অন্য কোন ইসলামী সংগঠনকে Favour করার জন্য লিখছি না। আল্লাহ সাক্ষী, দ্বীনের ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব অথবা অযথা সহযোগীতা কিংবা বিরোধীতার উপর নির্ভরশীল কর্মপদ্ধতিকে নিজের পরিনতির জন্য আমি বিপদজনক মনে করি। শরিয়তের দৃঢ় সমর্থন ছাড়া শুধু মুরুব্বী ও উস্তাদদের গোমরাহ মনে করার কারনে কোন ব্যক্তি বা দলকে গোমরাহ মনে করা সমীচিন মনে করি না। আল্লাহ তার কোরআনে কী বলেছেন এবং রসূল (স) কিভাবে তা অনুসরনের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্টা করেছেন, সেই চেতনা সামনে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করি ।

আরো একটি কথা বলতে চাই, তাহলো, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অজর্নের জন্য, তাকে রাজীখুশি করানোর জন্য পার্থিব জগতের কত চাকচিক্য, কত আনন্দ, কত মজাদার বিষয় যে পরিহার করতে হয়, তা কেবলমাত্র ইসলামপ্রিয় মানুষগুলোই জানে। তাই আমাদের আচরণ বা কথা কিংবা ব্যবহার এমন হওয়া উচিত হবেনা, যাতে এত কষ্টের আমল সব নষ্ট হয়ে যায়।

ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ইসলাম বিরোধী শক্তির সাথে একাট্টা বেধে এক ধরনের দাড়ি টুপিওয়ালা হুজুর ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। ইসলাম প্রচার তাদের লক্ষ্য নয়। তাদের একমাত্র লক্ষ্য মওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো এবং সাধারন মুসলমানদের ধর্ম পালনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।

সহজ একটি বিষয় বোধগম্য হচ্ছেনা, তা হলো মওদুদী তো এখন আর বেঁচে নেই। তিনি তো সভা সমাবেশ করে তার চিন্তা চেতনাকে গ্রহণ করার জন্য তাকিদ দিচ্ছেন না। তাফসিরসহ তিনি 150 এর অধিক বই লিখেছেন। কারো ইচ্ছা হলে তা পড়তে পারে, আবার নাও পড়তে পারে। তার লেখনী পড়ার জন্য কোন ব্যক্তিকে তো বাধ্য করা হচ্ছেনা।

তার লেখণীতে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে যে দাবী করা হয়, সেই অভিযোগগুলোও কেউ মিছিল সহকারে সরকারের কাছে কিংবা বিল আকারে সংসদের কাছে কিংবা ওলামাদের কাছে তালিকা দিয়ে জায়েজ করানোর জন্য কেউ আন্দোলন করছেনা। তার চেতনা গ্রহন করা না করা নিতান্তই কোন ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

Student Life-এ কাল মাকর্সের Communist Manufesto, Das Capital, The Critic of Political Economy পড়েছি। জানতে পেরেছিলাম, দ্বান্দিক বস্তুবাদ কী, শ্রেণী সংগ্রাম কী, শোষণহীন সমাজ কীভাবে আসে, প্রলেতারিয়েতের এক নায়কত্ব কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, ইতিহাসের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা কেমন, ধর্ম কীভাবে মানুষকে আফিমের ন্যায় একটি নিদিষ্ট গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ রাখে ইত্যাদি। নম্বর পাওয়ার জন্য শোষিত মানুষের মুক্তির শ্লোগানে কমিউনিজমের পক্ষে কত যুক্তি তুলে ধরেছি। এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছি ভুরি ভুরি। এতদাসত্বেও সেই দর্শন আমাকে কমিউনিষ্ট করতে পারেনী।

মওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো তোলা হয়, সে সম্পর্কে সাধারন মানুষ কিছুই জানেনা। যে তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর উপর মওদুদী ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা বোঝার সক্ষমতাও অনেকের নেই। তথাকথিত এক শ্রেনীর হুজুর ও ধর্ম ব্যবসায়ী যারা পার্থিব স্বার্থের প্রতিভু হয়ে না বুঝেই সাধারন মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে বিভান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

সারা বিশ্বের 99% মুসলমানেরা নামাজ, রোজা হজ্জ, যাকাত পরিপালন করেন স্বাভাবিক চেতনা নিয়ে। এই মৌলিক ইবাদতের বিষয়ে মওদুদীর চিন্তার সাথে অন্যদের কোন বিরোধ নেই। এমন নই যে মওদুদী এই সকল ইবাদতগুলো নিজে করতেন না, কিংবা অপরকে পালন করতে নিষেধ করেছেন।

মওদুদীর বিরুদ্ধে চুরি , ডাকাতি, ছিনতাইকারী, ঘুষখোর, মদ্যুপ, নেশাখোর, পরনারীতে আসক্ত, চরিত্রহীন গর্ব ও অহংকার , প্রদর্শনেচ্ছা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারনা, গীবত, চোগলখারী, কানাকানি-ফিসফিসানি, দুর্ণীতিবাজ, , একগুয়েমীতা, সংর্কীমনা, ইত্যাদি খারাপ দোষে তাকে দুষ্ট করা হয়নি। কারন তিনি দৈনিন্দন জীবন অতিবাহিত করতেন নামায, রোজা, আল্লাহ, রসূল (স) ও ইসলাম সম্পর্কে লেখালেখি নিয়ে । তাই তার ভুল ধরার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলও এ সংক্রান্ত ।

বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, মওদুদির প্রকৃত লেখনীতে কোন ভুল থাকলে সেটা ধরে দিলে অথবা তার বিরোধীতা করলে ইসলামের জন্য মহৎ কাজ হত । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায় যে, মওদুদির লেখার ভুল অর্থ করে, শব্দ উল্ট পালট করে, এমনকি লাইনের আগে পিছে কেঁটে দিয়ে ফতোঁয়া দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । এছাড়া যে সব বিষয়ে বিতর্ক করা হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই ছোট খাটো ধরনের । ইসলামের মৌলিক বিষয়ে তেমন কোন বিতর্ক নেই।

আমরা সূরা, আয়াত দিয়ে নামাজ পড়ি, রমজান মাসে রোজা করি, নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলে যাকাত দেই, অনৈতিক সামথ্য থাকলে হজ্জ করি, সামজিক পরিবেশে ধর্ম পালন করি। এখানে মওদুদী শরিয়ত বিরোধী কি ফতোয়া দিয়েছেন, সে ব্যাপারে আমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। সাধারন মানুষ এটার খোঁজ খবরও নেয়না। অথচ কিছু সংখ্যক জ্ঞানপাপী ধর্মব্যবসায়ী লোক মওদুদীর লেখনীকে ভুল হিসাবে প্রমান করার কাজে এমনভাবে লিপ্ত হয়েছেন যে, সারাদিন যদি মওদুদীর বিরেুদ্ধে গালি না দেয়া হয়, তাহলে তাদের ইবাদত কবুল হবেনা। এগুলোকে তারা ইসলামের মৌলিক বিষয় হিসাবে চিহিৃত করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে পারস্পারিক মতভেদকে আপন গন্ডীর বাইরে নিয়ে একে অপরকে ফাসেক, কাফের, নাস্তিক বলে অভিহিত করছেন এবং এমনভাবে শক্তিপ্রদর্শন করা হচ্ছে, যার পরিনতিতে নিজেদের মধ্যে এমন ঝগড়ার সৃষ্টি হচ্ছে যা কখনও শেষ হওয়ার নয়। এতে মতভেদে লিপ্ত সবার জন্যই ধ্বংসের কারন হয়ে দাড়াবে ।

যারা এই ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছেন আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করুন।

বিষয়: বিবিধ

২১৯৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

167469
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:১১
এনামুল মামুন১৩০৫ লিখেছেন :
মওদুদীর বিরুদ্ধে চুরি , ডাকাতি, ছিতাইকারী, ঘুষখোর, মদ্যুপ, নেশাখোর, পরনারীতে আসক্ত, চরিত্রহীন গর্ব ও অহংকার , প্রদর্শনেচ্ছা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারনা, গীবত, চোগলখারী, কানাকানি-ফিসফিসানি, দুর্ণীতিবাজ, , একগুয়েমীতা, সংর্কীমনা, ইত্যাদি খারাপ [q]দোষে তাকে দুষ্ট করা হয়নি। কারন তিনি দৈনিন্দন জীবন অতিবাহিত করতেন নামায, রোজা, আল্লাহ, রসূল (স) ও ইসলাম সম্পর্কে লেখালেখি নিয়ে । তাই তার ভুল ধরার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলও এ সংক্রান্ত ।
[/q]

ভালো লিখছেন-
167481
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ইসলামী আন্দোলনে অন্যতম বাধা হলো নামদারী আলেমদের ফাকামি ( অন্যের দুশ খুজা )
আল্লাহ মওলানা মওদুদী কে জান্নাত নসিব করুন আমীন
167500
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৪২
চেতনাবিলাস লিখেছেন : মাওলানা মওদুদী একজন মানুষ । তার ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু ইসলামের জন্য তিনি যা করে গেছেন তা খুব কম লোক ই করতে পেরেছে । তাকে যারা সমালোচনা করে তারা প্রকৃতইসলাম থেকে অনেক ানেক দূরে রয়েছে। সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্রবাদ।
167518
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১০
অপ্রিয় সত্য কথা লিখেছেন : মানুষ মানুষের পূজা ইসলাম মানে না । মউদুদীরে আপনাদের এত কান্না কাটি কেন ? আলেমরা সব বোকা !একমাত্র ম উদুদী আর তার অনুসারিরা সব বুঝে ! আপনার সব কথার জবাব দিবো ইনশা আল্লাহ সময় করে ।
167627
২৬ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:২৬
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : মাওলানা মওদুদী (রহ) এর ব্যপারে জামায়াত এর দৃষ্টিভংগি-১

নিজের ব্যপারে মাওলানা মওদুদীর অবস্থানঃ

" পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই,
ফিকাহ ও ইলমে কালামের বিষয়ে, আমার নিজস্ব একটি তরিকা রয়েছে।
আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান, গবেষণার ভিত্তিতে আমি এটি নির্ণয় করেছি।
গত আট বছর যারা "তারজামানুল কুরআন পাঠ করেছেন তারা একথা ভালোভাবেই জানেন।

বর্তমানে এই সংগঠনের আমীরের পদে আমাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাজেই একথা পরিষ্কার ভাবে বলে দিতে হচ্ছে যে- ফিকাহ ও ইলমে কালামের ব্যপারে, ইতিপূর্বে আমি যা লিখেছি এবং ভবিষ্যতে যা লিখবো অথবা বলবো তা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ফয়সালা হিসেবে গন্য হবে না।
বরং তা হবে আমার ব্যক্তিগত মত।
এইসব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত রায়কে,
জামায়াত এর অন্যান্য আলেম বা গবেষক দের উপর চাপিয়ে দিতে আমি চাইনা!
এবং আমি এও চাই না যে,
জামায়াত এর পক্ষ থেকে,
আমার উপর এমন সব
বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে যে,
যার ফলে ইলমের ক্ষেত্রে,
আমার গবেষণা করার এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া হবে।

জামায়াতের সদস্যদের কে আমি আল্লাহর দোহাই দিয়ে অনুরোধ করছি যে,
ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত আমার কথাকে, আপনারা কেউ অন্যের সম্মুখে প্রমান স্বরুপ পেশ করবেন না।
অনুরুপ ভাবে আমার ব্যক্তিগত কার্যাবলীকেও, যেগুলোকে আমি নিজের অনুসন্ধান ও গবেষণার পর জায়েয মনে করেছি,
অন্য কেউ যেন প্রমান স্বরুপ গ্রহন না করে,
এবং নিছক আমি করেছি বলেই যেন বিনা অনুসন্ধান এ তার অনুসারী না হন।

এ ব্যপারে প্রত্যেকের পুর্ন স্বাধীনতা রয়েছে।
উপরন্তু এ ব্যপারে আমার বিপরীত মত পোষন করার এবং নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে" -

(জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরনী-১মখন্ড, ২৮ পৃষ্টা)
167660
২৬ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:২২
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷
167661
২৬ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:২৫
শিকারিমন লিখেছেন : মাওলানা মউদুদী সাহেব কোনো ফেরেস্তা নন। তার ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। শুদুমাত্র কারো নির্ভুদ্ধিতা , অজ্ঞতা ও বিরোধিতার খাতিরে তার সমালোচনা করা কতটুকু যুক্তিনির্ভর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File