বরযখে ( কবর হতে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত ) শাস্তির কিছু দৃশ্য ।
লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪৯:১৮ রাত
সামুরা ইবনে জুনদুব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বহু সময়ে তার সাহাবীদের বলতেন, তোমাদের কেহ কি কোন সপ্ন দেখেছে ? তখন কেহ কেহ তাদের দেখা সপ্নের বিবরণ দিতেন । একদিন সকালে তিনি আমাদের বললেন, গত রাতে আমার কাছে দু জন আগন্তুক আসলো। তারা আমাকে জাগালো আর বলল, চলেন। আমি তাদের সাথে চললাম। আমরা এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে শুয়ে আছে আর তার কাছে এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একটু পর তার মাথা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আবার সে পাথরটি নিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে। তার মাথা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে আবার আঘাত করছে। এভাবেই চলছে। আমি তাদের বললাম, ছুবহানাল্লাহ! এ দু ব্যক্তি কে ? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা চলতে থাকলাম।
অত:পর এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। আরেক ব্যক্তি তার মাথার কাছে কুঠার নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাকে উলট পালট করে তার শরীর চিরুচ্ছে। একবার চিৎ করছে আরেকবার উপুর করছে। যখন পিঠের দিকটা এ রকম করছে তখন সামনের দিকটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আবার যখন সামনের দিকটায় এমন করছে তখন পিঠের দিকটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখে বললাম, ছুবহানাল্লাহ! এ দু ব্যক্তি কে ? তারা বলল, আপনি সামনে চলুন। আমি তাদের সাথে চলতে থাকলাম। এসে পৌছলাম বিশাল চুলার মত একটি গর্তের কাছে। তার মধ্যে শুনলাম চিৎকার। ভিতরের দিকে তাকালাম। দেখলাম তার মধ্যে কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। তাদের নীচ থেকে আগুনের শিখা তাদের উপর আছরে পড়ে । তারা চিৎকার দিয়ে উঠে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা ? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন! সামনে চলুন!! আমি চলতে থাকলাম। আমি একটি নদীর কাছে আসলাম। নদীটির পানি রক্তের মত লাল। দেখলাম এক ব্যক্তি নদীটির মধ্যে সাতার কাটছে। নদীর তীরে এক ব্যক্তি দাড়ানো আছে। তার কাছে অনেকগুলো পাথর জমানো। যখন সে তীরের দিক আসে তখন তার মুখ খুলে যায়। মুখে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয় আর সে তা গিলে ফেলে। আবার সাঁতার কাটতে শুরু করে। আবার তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করা হয়। য খনই সে তীরে ফিরে আসে তখনই তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে আর সে তা গিলে ফেলে আবার সাঁতার কাটতে থাকে।
আমি তাদের প্রশ্ন করলাম, কারা এ দু ব্যক্তি ? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা সামনে চললাম। এমন ব্যক্তির কাছে আসলাম যাকে দেখতে খূবই খারাপ। তার মত খারাপ চেহারার লোক আমি কখনো দেখেনি। তার কাছে আগুন আছে আর সে তাতে অনবরত ফুক দিয়ে জালিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কে এই ব্যক্তি ? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা সামনে চললাম।
এরপর আমরা একটি একটি উদ্যানে আসলাম, যেখানে আছে বিশাল বিশাল গাছ। আর আছে প্রত্যেক প্রকারের বসন্তকালীন ফুল। দেখলাম সেই উদ্যানে একজন দীর্ঘকায় মানুষ। আমি তার মত দীর্ঘ মানুষ দেখিনি। তার চতুর্পাশে দেখলাম বহু সংখ্যক শিশু-কিশোর। আমি আমার সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা ? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন! সামনে চলুন!! আমরা চলতে থাকলাম। এসে পৌছলাম এমন একটি সুন্দর উদ্যানে যার মত সুন্দর উদ্যান আমি কখনো দেখিনি। আমাকে বলল, উপরের দিকে উঠুন। আমি উঠলাম। এসে পৌছলাম এমন একটি শহরে যার বাড়ীঘরগুলো স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত। আমরা শহরের গেটে এসে পৌছলাম। দরজা খোলার জন্য বললাম। দরজা খুলে দেয়া হল। দেখলাম সেখানে কিছু মানুষ আছে যাদের শরীর অর্ধেক অংশ অত্যন্ত সুন্দর আর অর্ধেক অতি কুৎসিত। আমার সঙ্গীদ্বয় তাদের বলল, তোমরা ঐ নদীতে যাও। নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ। তারা নদীতে ঝাপ দিয়ে ফিরে আসল। দেখা গেল তাদের পুরো শরীর সুন্দর হয়ে গেছে। সঙ্গীদ্বয় আমাকে বলল, এটা হল জান্নাতে আদন। আর ঐগুলো হল আপনার বাসস্থান। আমার দৃষ্টি উপরে উঠে গেল। আমি দেখলাম সাদা মেঘের মত শুভ্র একটি প্রাসাদ। আমাকে বলল, এটা আপনার ঘর। এরপর আমি তাদের উভয়কে বললাম, আল্লাহ তোমাদের বরকত দিন, আমাকে একটু সুযোগ দাও আমি প্রবেশ করি। তারা আমাকে বলল, এখনতো সম্ভব নয়।
তবে আপনি তো সেখানে প্রবেশ করবেন।
এরপর আমি তাদের উভয়কে বললাম, রাত থেকে শুরু করে আমি আশ্চর্যজনক অনেক বিষয় দেখলাম। যা দেখলাম তা কী ?
তারা বলল, আমরা আপনাকে এখনই বলছি। তা হল: যার মাথায় আপনি পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করতে দেখেছেন সে হল এমন ব্যক্তি যে আল কুরআন গ্রহণ করেছিলো কিন্তু পরে তা ছেড়ে দিয়েছে ও ফরজ নামাজ রেখে ঘুমিয়ে থেকেছে।
আর যার মাথায় কুঠার দিয়ে আঘাত করতে দেখেছেন, সে হল এমন ব্যক্তি যে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হত আর মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াতো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে।
আর যে চুলোর মধ্যে উলঙ্গ নারী ও পুরুষ দেখেছেন তারা হল ব্যভিচারী নর নারী।
আর যাকে দেখেছেন রক্ত নদীতে সাঁতার কাটছে সে হল সুদখোর।
আর যাকে আগুন ফুঁকতে দেখেছেন সে হল জাহান্নামের রক্ষী।
আর উদ্যানে যে দীর্ঘকায় মানুষটিকে দেখেছেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, আর তার চারিদিকের শিশু-কিশোররা হল, যারা স্বভাব ধর্মের উপর শিশু অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
এ কথা বলার সময় অনেকে প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মুশরিকদের শিশু সন্তাদেরও কি এ অবস্থা হবে ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুশরিকদের শিশু সন্তানদেরও এ অবস্থা হবে।
আর যে সকল মানুষকে দেখেছেন যে, তাদের কিছু অংশ কুৎসিত আর কিছু অংশ সুন্দর, তারা হল এমন মানুষ যারা সৎকর্ম করেছে আবার পাপাচারেও লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিলেন। বর্ণনায়: বুখারী।
বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, যাকে কুঠার দিয়ে মাথায় আঘাত করা হচ্ছে সে হল এমন ব্যক্তি যে মিথ্যা রচনা করত আর তা বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিত। কেয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে । আর যার মাথায় কুঠার দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে সে হল এমন ব্যক্তি যে আল কুরআন শিখেছে আর রাত নিদ্রায় কাটিয়েছে এবং দিনে কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি। কেয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।
আসুন, আমরা এই হাদিসটিতে যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা আমল করি ।
বিষয়: বিবিধ
৩৫৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন