হেফাজত ইসলামের ১৩ দফায় নারীদের অধিকার ও সম্মানকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ।
লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৫৭:৫২ দুপুর
হেফাজতে ইসলামের শায়খুল ইসলাম আল্লামা
শাহ্ আহ্মদ শফী ১৩ দফা দাবি পেশ করেন।
এর প্রথম দফা হলঃ
১। সংবিধানে ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরান-সুন্নাহ্ বিরোধী সকল আইন বাতিল করতে হবে।
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলীম এই দেশে সংবিধানের মুলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা জুড়ে দেওয়ায় এবং তার বাস্তবায়নে দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয় তার অনিবার্য পরিনতিতে 1975 সালে তাকে নির্মম ভাবে নিহত হতে হয়। পরবতীর্তে সংবিধানের মুলনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ স্থাপন করা হয়’ যা র্দীঘ 34 বছর ধরে বিদ্যমান ছিল। শেখ মুজিব কন্যা এবার ক্ষমতায় এসে ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এর স্থলে বাবার সেই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে দেশে ইসলাম বিদ্বেষী সব কর্মকান্ড। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র কুফুরী মতবাদ কায়েমের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার আল্লাহ ও তার রসূলকে নিয়ে কটুক্তি ও বিষোদগার করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ফলে এক শ্রেণীর ব্লগার এ খেলায় মেতে উঠেছে। শুরু হয়েছে দেশব্যাপি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
কাজেই দেশের স্থিতিশীলতায় জনগনের মনের কোঠায় যে স্রষ্টার বিশ্বাস রয়েছে, তার পুনরুদ্ধারের জন্য হেফাজতের প্রথম দফা দাবী খুবই যুক্তিযুক্ত ।
দেশের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এবং ধর্মবিদ্বেষীদের শাস্তির জন্য ব্লাসফেমী আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা উচিত, যাতে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধেই কেউ কটুক্তি করতে না পারে এবং কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত না লাগে। এ ক্ষেত্রে হেফাজতের দ্বিতীয় দফা কোন দিক দিয়ে অযৌক্তিক ?
শাহবাগে আন্দোলরত বেশকিছু স্বঘোষিত নাস্তিক রয়েছে, যারা সর্বোতখাবে আল্লাহ ও রসূল (সা.)কে নিয়ে জঘন্য কুৎসা রটনা করেছে । এখন যদি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে এর মাত্রা শুধু বাড়তেই থাকবে। অপরদিকে, শাহবাগকে কেন্দ্র করে দেশকে দুটিভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাই এই মুহুর্ত্বে শাহবাগ গণজাগরণমঞ্চ ভেঙ্গে দিয়ে হিংসা –বিদ্বেষের পরিবেশ তুলে দিতে হবে এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপপ্রচার বন্ধের যে দাবী করা হয়েছে, তা সঠিক আছে।
চার নং দফায় ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতার নামে সকল বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করার দাবী জানানো হয়েছে।
পাঠক ভাইযেরা, তেরো দফার মধ্যে 4 নং দফায় নারীদের বিষয়ে বলা হয়েছে “ নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ ” বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ নারীদের ভুল বুঝিয়ে মিথ্যাচার করে বলে বেড়াচ্ছে যে, এই তেরো দফা বাস্তবায়ন হলে নারীরা চাকুরী করতে পারবে না, ঘরের বাইরে বের হতে পারবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। ইসলাম নারীদেরকে সবচেয়ে বেশী সম্মান দিয়েছে, দিয়েছে স্বাধীনতা । শালীন পরিবেশে যার যার কমক্ষেত্রে স্ব স্ব কাজে নিয়োজিত থেকে নারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান পৃথিবীতে এর উদাহরণের অভাব নেই। কিন্তু এই অবাধ স্বাধীনতার নামে বেহায়পনা, অনাচার, ব্যাভীচার বন্ধ করার কথায় এখানে বলা হয়েছে। এ দাবি নারী স্বাধীনতা, সংবিধান ও নারী অধিকারের সঙ্গে কোন অবস্থায়ই সাংঘষিক নয়।
“ঘরের বেড়া ভাঙ্গবো, স্বাধীন মত চলবো”
“নারী নারী নারী, সবই করতে পারি ”
উপরোক্ত শ্লোগানের নাম নারী স্বাধীনতা নয়।
আপনারাই বলুন, কোনো মুসলীম ঘরের মেয়ে বা নারীরা পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশা পছন্দ করেন কিনা ? কোন মেয়ের নিরাপত্তার জন্য অবাধ বিচরণের চেয়ে স্ব স্ব কম পরিবেশ থাকাটাই ভাল কিনা ? অতএব, হেফাজতের দাবী এখানে যুক্তিযুক্ত।
সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নার্থে শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে ধর্মবিরোধী যে সেন্টিমেন্ট সংযুক্ত করেছে, তা ইতোমধ্যেই প্রমানিত হয়েছে। কাজেই 90% মুসলমানের এই দেশে ধর্মহীন শিক্ষানীতি, অবাধ নারীনীতি বাতিল করে শুরু থেকে উচ্চমাধ্যমিক পযর্ন্ত ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবী সঠিক আছে।
৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
কাদিয়ানীরা আমাদের রসূল (স) কে নবী বলে স্বীকার করেন না। অথচ নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করেন। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের দেশে এই আকিদায় বিশ্বাসীদেরকে অমুসলীম ঘোষনা দেয়া রাষ্ট্রের জন্য ফরজ কাজ।
মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে যে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হয়, তাতে ধর্ম, দাড়ী-টুপিওয়ালা মানুষদেরকে সম্পর্কে সাধারন মানুষদের মধ্যে নেতিবাচক মানুষিকতা সৃষ্টি হয়। এই ধরনের তৎপরতা বন্ধ করার দাবী কখনোও অন্যায্য হতে পারেনা।
দীর্ঘদিন যাবৎ দারিদ্র বিমোচনের নামে দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারীরা ধর্মান্তকরণসহ অনেক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। তাদের এই তৎপরতা বন্ধ করার দাবী কেন অযৌক্তিক হবে।
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীসহ সহজ সরল ধর্মপ্রান আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র এবং তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন চালিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে । এ্টা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবী কেন অন্যায় হবে।
সারা দেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রর্দশন করা হচ্ছে । এই ধরণের কার্যক্রম নিঃসন্দেহে বন্ধ করার দাবী অযোক্তিক হতে পারেনা।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
পরিসংহারে সরকারকে বলব, জোর করে ক্ষমতায় থাকার মানুষিকতা পরিহার করে জনসাধারণের ভালবাসা নিয়ে দেশের সেবা করুন। ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ না করে তাদের দোয়া নিয়ে তাদের পাশে থাকুন। এটাই সরকারের জন্য মঙ্গল হবে নচেৎ অপমানিত হয়ে, লাঞ্চিত হয়ে আস্থাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন ।
বিষয়: রাজনীতি
১৭৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন