মাওলানা মওদুদি আল্লাহর এক অনুগত দাস এবং রসূল সে) এর আর্দশের একনিষ্ট পতাকাবাহী । তার বিরোধিতা শুরু হয় যেভাবে (পর্ব-6)।
লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৪১:১৩ সন্ধ্যা
যুগে যুগে ইসলাম প্রতিষ্টায় তিন ধরনের লোক বিরোধীতা করেছে।
ক) খোদাহীন, ইসলাম বিরোধী রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধারক ও বাহক সম্প্রদায় এবং
খ) অর্থনৈতিক শোষকের দল ও
খ) ঐ সকল আলেম নামধারী ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্টী, যারা নিজেদের জ্ঞানকে পণ্য হিসাবে ব্যবহার করে জনগনের সম্পদ শোষন করতে চায়।
এই ধরনের লোকেরা সব সময় বিদ্যমান ছিল। নবী-রসূলগনকে এই ধরণের লোকদেরকে মোকাবেলা করেই আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্টা করতে হয়েছে। একইভাবে এখন পর্যন্তও এদের বিরোদ্ধে মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
প্রথমে একটা বিষয়ে আমি পাঠক ভাইদের অনুরোধ করতে চাই যে, আমার কথাগুলো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করবেন। আমি মওদুদি কিংবা জামায়াত কিংবা তাবলীগ বা অন্য কোন ইসলামী সংগঠনকে Favour করার জন্য লিখছি না। আল্লাহ সাক্ষী, দীনের ব্যাপারে আমি পক্ষপাতিত্ব অথবা অযথা সহযোগীতা কিংবা বিরোধীতার উপর নির্ভরশীল কর্মপদ্ধতিকে নিজের পরিনতির জন্য আমি বিপদজনক মনে করি। শরিয়তের দৃঢ় সমর্থন ছাড়া শুধু মুরুব্বী ও উস্তাদদের গোমরাহ মনে করার কারনে কোন ব্যক্তি বা দলকে গোমরাহ মনে করা সমীচিন মনে করি না। আল্লাহ তার কোরআনে কী বলেছেন এবং রসূল (স) কিভাবে তা অনুসরনের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্টা করেছেন, সেই চেতনা সামনে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করি । আমরা সবাই যাতে কাল কিয়ামতের মাঠে কঠিন বিচারের দিনে নাযাত পেতে পারি, সেই একান্ত প্রচেষ্টা আল্লাহ যেন কবুল করেন। কারন মওদুদি , জামায়াত, তাবলীগ, কোন পীর মাশায়েখ বুর্যুগ ব্যক্তি হাশরের মাঠে কঠিন মুছিবতের সময় পাশে থাকবে না। পাশে থাকবে শুধুমাত্র আমল। তাই নির্ভেজাল ইসলামে পর্দাপণ করতে পারলে আমাদের মুক্তি পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অজর্নের জন্য, তাকে রাজীখুশি করানোর জন্য পার্থিব জগতের কত চাকচিক্য, কত আনন্দ, কত মজাদার বিষয় যে পরিহার করতে হয়, তা কেবলমাত্র ইসলামপ্রিয় মানুষগুলোই জানে। তাই আমাদের আচরণ বা কথা কিংবা ব্যবহার এমন হওয়া উচিত হবেনা, যাতে এত কষ্টের আমল সব নষ্ট হয়ে যায়।
এখন, মওলানা মওদুদির বিরোদ্ধে উত্থাপিত কতিপয় অভিযোগ বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।
পাঠক ভাইয়েরা, মওদুদির বিরোধিতা কেন, কখন, কিভাবে কোথা হতে প্রথম শুরু হয় তা জানা দরকার।
মওলানা মওদুদি 1925 সালে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের মুখপাত্র আল জমিয়তের সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে কংগ্রেস ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলার রাষ্ট্রে পরিনত করার সিদ্ধান্ত নেয়। জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ যখন কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মওদুদিকে কংগ্রেসের অনুকুলে প্রপাগান্ডা চালাতে চাপ সৃষ্টি করে, তখন তিনি উক্ত পত্রিকার সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেন। ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলার রাষ্ট্রে কংগ্রেসের সহযোগীতা করা ইসলাম বিরোধী কাজ বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইহাতে কংগ্রেসপন্থী আলেমরা মওদুদির বিরোদ্ধে ক্ষেপে যান। গান্ধীর One Natoin বা একজাতি তত্বের পক্ষে দেওবন্দের মওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (র) হিন্দু-মুসলিমকে একজাতি প্রমান করার জন্য একটি পুস্তক প্রণয়ন করেন এবং একই সাথে কায়েদা আজমের Two Naton বা দ্বিজাতিতত্বকে ভুল প্রমান করার চেষ্টা করেন।
অপরদিকে, মাওলানা মওদুদি ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ নামক তাহার গ্রন্থে মওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী সাহেবের উক্ত মত যে কোরআন হাদিসের দৃষ্টিতে ভ্রান্ত, তা বলিষ্ট যুক্তির দ্বারা প্রমান করেন। ইহাতে অধিকাংশ মুসলমানের ভুল ভেঙ্গে যায়। তারা দলে দলে কংগ্রেস ত্যাগ করতে শুরু করে। মওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী সাহেবের জওয়াবে আল্লামা ইকবালও ‘ইসলামী কওমিয়াত’ নামক একটি প্রবন্ধ লেখেন।
গান্ধীর অহিংস আন্দোলন ইসলামী শিক্ষার সর্ম্পুন পরিপন্থী এই মর্মে মওলানা মওদুদি “আল জিহাদ ফিল ইসলাম” নামক একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করে মুসলমানদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে দেন । ইহাতে শুরু হয়ে যায় মওলানা মওদুদির বিরোদ্ধে ষড়যন্ত্র । ফলে দেওবন্দের কংগ্রেসপন্থী আলেমরা মওদুদির বিরোদ্ধে বিষোদগার শুরু করে দিলেন । ইতোপুর্বে যারা মওদুদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, তারাই বিরোধীতার কাজে ভুমিকা পালন করতে লাগলেন। আল্লামা সাব্বির আহমদ ওসমানী কংগ্রেসপন্থী আলেমদের এ সকল প্রবনতা লক্ষ্য করে তার দলবল নিয়ে মুসলীমলীগে যোগদান করেন।
কোন ব্যক্তির বিরোদ্ধে দোষ বা দূর্ণাম দিতে গেলে, ঐ ব্যক্তি দৈনিন্দন জীবনে যা করেন, তার ভিত্তিতেই দূর্ণাম দিতে হয়। ব্যক্তি জীবনে যখন কোন মুসলমানের মধ্যে মৌলিক, অসৎ, ও মানবিক গুনাবলী যেমন: গর্ব ও অহংকার , প্রদর্শনেচ্ছা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারনা, গীবত, চোগলখারী, কানাকানি-ফিসফিসানি, মদ্যপ, নেশাখোর, পরনারীতে আসক্ত, দুর্ণীতিবাজ, চুরি, ডাকাতী, ছিনতাইকারী, একগুয়েমীতা, সংর্কীমনা, ইত্যাদি বৈশিষ্টগুলো বিদ্যমান থাকে, তখন তাহাকে উপরোক্ত দোষে দুষ্ট করে তার প্রতি সমালোচনার তীর ছুড়ে দেয়া হয়।
মওলানা মওদুদির উপর উপরোক্ত কোন ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। কারন তিনি তিনি দৈনিন্দন জীবন অতিবাহিত করতেন নামায, রোজা, আল্লাহ, রসূল (স) ও ইসলাম সম্পর্কে লেখালেখি নিয়ে । তাই তার ভুল ধরার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলও এ সংক্রান্ত । বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, মওদুদির প্রকৃত লেখনীতে কোন ভুল থাকলে সেটা ধরে দিলে অথবা তার বিরোধীতা করলে ইসলামের জন্য মহৎ কাজ হত । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায় যে, মওদুদির লেখার ভুল অর্থ করে, শব্দ উল্ট পালট করে, এমনকি লাইনের আগে পিছে কেঁটে দিয়ে ফতোঁয়া দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । এছাড়া যে সব বিষয়ে বিতর্ক করা হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই ছোট খাটো ধরনের । ইসলামের মৌলিক বিষয়ে তেমন কোন বিতর্ক নেই। অথচ কিছু সংখ্যক লোক এগুলোকে ইসলামের মৌলিক বিষয় হিসাবে চিহিৃত করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে পারস্পারিক মতভেদকে আপন গন্ডীর বাইরে নিয়ে একে অপরকে ফাসেক, কাফের, নাস্তিক বলে অভিহিত করছেন এবং এমনভাবে শক্তিপ্রদর্শন করা হচ্ছে, যার পরিনতিতে নিজেদের মধ্যে এমন ঝগড়ার সৃষ্টি হচ্ছে যা কখনও শেষ হওয়ার নয়। এতে মতভেদে লিপ্ত সবার জন্যই ধ্বংসের কারন হয়ে দাড়াবে ।
আল্লাহ বলেন,
“ তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ত্যাগ কর। অন্যথায় তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি নষ্ট হয়ে যাবে।”
তিনি আরো বলেছেন, “ তোমরা সেই সব লোকদের মত হয়োনা, যারা স্পষ্ট প্রমানাদি আসার পরও মতপার্থক্য করেছে এবং বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এসব লোকদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। (সূরা ইমরান)
চলমান পর্ব-7
বিষয়: রাজনীতি
৪১৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন