তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।
লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৩১:৫৯ রাত
কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হলো জানি না তা।
নারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা।
দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ারে এনেছে ফেনা।
তবু জাগলে না ?
তবু , তুমি জাগলে না ?
স্বাধীনতার পর রাজপথে ইসলামের বানী প্রতিষ্ঠায় কথা বলেছিলেন হাফেজ মাওলানা মহম্মদউল্লাহ( হাফেজ্জী হুজর) শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক , মুফতি আমিনি, চরমোনায়ের পীর ফজলুল করিমসহ আরো অনেকে। এছাড়া নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কিছু ইসলামী সংগঠন। ভিন্ন ভিন্ন নাম হলেও এ সকল সংগঠন ও মানুষের মুলতঃ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তোষ্টি অর্জন। উপরোক্ত ব্যক্তিগুলোর মধ্যে আল্লাহ অনেককেই দুনিয়া থেকে নিয়ে গেছেন।
বর্তমান সরকার নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ট আসনে জয় লাভ করে সংবিধানের মুলনীতি থেকে ‘আল্লাহর উপর পুর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ লাইনটি তুলে দিয়ে তদস্থলে ধর্মনিরপেক্ষতা পুন:প্রতিষ্ঠিত করেন। জামায়াত-শিবিরকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে চিহিৃত করে তাদের রাজনীতি তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। এমন কঠিন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে ঘায়েল করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এই ঘায়েল থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বি এন পি মামলা হামলার ভয়ে লেজ গুটিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় ঘরে বসে আছে। সরকার 18 দলকে ভেঙ্গে দুর্বল করার জন্য জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে রেখেছেন এবং বর্তমান পর্যন্ত কোন কারন ছাড়াই শিয়াল-কুকুরের মত তাদেরকে আটক করে পিটিয়ে পিটিয়ে জেলে ঢুকাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মী তাদের নেতাদের মুক্ত করার জন্য পুলিশের গুলি খেয়েও এখনও রাজপথে টিকে আছে।
এদিকে সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নার্থে এক ধরনের পরগাছা বুদ্ধিজীবিদের পরামর্শে শিক্ষাব্যবস্থাসহ সামাজিক পরিবর্তনে ধর্মীয় বিষয়গুলো খাটো করে দেখার প্রয়াস পায়। এই সুযোগে একঢিলে দুই পাখি মারার ফন্দি নিয়ে কথিত যুদ্ধ অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিছু ব্লগারকে দিয়ে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে পুলিশ প্রহরায় আন্দোলনের সুযোগ করে দেয়।
কথায় আছে, তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে। ঠিক তাই । সরকারের নেংটা সংস্কৃতির সুযোগ পেয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে কিছু ব্লগার সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও তার রসূল (স)কে নিয়ে অকথ্য ভাষায়, কুরুচিপুর্ন কটুক্তি করে লেখালেখি করে। আস্তে আস্তে ধর্ম নিয়ে এদের বিষোদগারের মাত্রা সীমালংঘন করে যায়।
রাজিব, মহিউদ্দিন, জেবতিকসহ অন্যান্য ব্লগাররা ধর্মীয় বিষয়গুলোকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে এমনভাবে নেটওর্য়াক সৃষ্টি করে, যা ফেরআউনকে হার মানায়। কারন ফেরআউন বিশ্বাস করত আল্লাহ আছে। সে শুধু দুনিয়ার খোদা হওয়ার জন্য আল্লাহকে অস্বীকার করতো । ফেরআউন দিনের বেলায় আল্লাহকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নিজেকে খোদা দাবী করলেও রাতের বেলায় আল্লাহর কাছে দিনের ক্ষমতা ভিক্ষা চেয়ে কান্নাকাটি করত।
অপরপক্ষে, শাহবাগের কতিপয় ব্লগার আল্লাহ ও রসূলকে তো বিশ্বাস করেইনি বরং রাতের বেলায় আল্লাহ ও রসূলকে নিয়ে সীমাহীন কটুক্তি খেলায় মেতে উঠেছে।
মহান আল্লাহ সকল গোপন বিষয় সম্পর্কে অবহিত আছেন। তিনি তাদের স্বরুপ মানুষের সামনে উম্মোচিত করার জন্য রাজিব নামক এক নাস্তিককে দুনিয়া থেকে নিয়ে গেলেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসাবে ঘোষনা দিলেন।
বাংলাদেশের মানুষ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদকে জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে গেলেন। তার সম্পর্কে জানতে গিয়ে পাওয়া গেল এমন এক প্যাকেজ, যার জন্য বাংলাদেশের মানুষ একটুও প্রস্তুত ছিলনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ যে আল্লাহ ও রসূলকে জীবনের মধ্যে লালন করে আসছে, পালন করছে তার আদেশ, সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও রসূল কে নিয়ে রাজিবের চরম বিদ্রুপাত্বক লেখা, যা চোখ দিয়ে পড়া যায়না , কান দিয়ে শুনা যায়না।
এই অবস্থা দেখে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান, আপোষহীন এক লেখক, যিনি তার কলম দিয়ে তুলে আনলেন ঘুমিয়ে পড়া বাংলাদেশের মুসলমানকে। রাজিবের লেখনীর কিছু অংশ ঈমানী দায়িত্ব মনে করে তার পত্রিকায় প্রকাশ করলেন। আর বজ্রপাতের মত হুংকার দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া ইসলামপ্রিয় মানুষগুলো জেগে উঠল।
ঘুম থেকে জেগে উঠে যাবে কোথায় ? কি করবে ? সবাই সরকারের নজিরবিহীন কার্যক্রমে দিধাগ্রস্ত । সেই সময় প্রচারবিমুখ ইসলামের এক খাদেম যিনি বয়সের প্রায় শেষ সীমায় পৌছে গেছেন( আল্লাহ তাকে হায়াত দান করুন), যিনি হাটহাজারীতে নিভৃতিতে আল্লাহর বন্দেগী করে জীবন পার করছেন, সেই আল্লামা শাহ শফি সাহেব হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ইসলামপ্রিয় মানুষগুলোর নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এগিয়ে এলেন। তিনি 6 ই এপ্রিল 2013 , তারিখে ঢাকাতে মহাসমাবেশ করার ঘোষনা দিয়ে এমন হংকার দিলেন, সরকারের তক্ত যেন কেপেঁ উঠল। সরকার তাকে থামানোর সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখল । তবুও তিনি অনড় রইলেন।
অবশেষে সরকার হেফাজতে ইসলামকে ঢাকার শাপলা চত্তরে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দিল । এ লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশ থেকে হেফাজতকর্মীরা ঢাকায় আগমন করবে এটাই স্বাভাবিক গণজাগরণ মঞ্চ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-৭১, সাংস্কৃতিক জোটসহ তথাকথিত প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ইসলাম পছন্দ করেন না বিধায় শক্রবার সন্ধা ছয়টা থেকে পরের দিন চারটা পর্যন্ত সারা বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় সাধারন মানুষ যাতে সমাবেশে উপস্থিত হতে না পারেন, সে জন্য হরতালসহ অবরোধ দিলেন। হরতালকারীদের সাথে সরকার ও তার সংগঠনের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে তারা বললেও সবিশেষ তারা হেফাজত কর্মীদেরকে ঢাকাতে আসতে বাধা সৃষ্টি করল । ট্রেন ,ফেরী, লঞ্চ, বাস, ট্রাক মালিকদেরকে সরকার রাস্তায় না বেরোনোর জন্য নির্দেশ প্রদান করল। সেক্ষেত্রে হেফাজতকর্মীরা হরতাল উপেক্ষা করে অনেক কষ্ট করে পায়ে হেঁটে মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন। লক্ষ লক্ষ হেফাজত কর্মীর আল্লাহ আকবর গগণবিদারী শ্লোগানে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছে।
অপরদিকে, সরকার হেফাজতে ইসলামকে ঢাকার শাপলা চত্তরে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে তাদেরকে ঢাকায় আসতে বাধা সৃষ্টি করে মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে হেফাজতের যতজন কর্মী এসেছিল তারা সাক্ষী থাকল সরকারের Double Standerd charrecter সম্পর্কে। কর্মীবৃন্দ নিশ্চয়ই স্ব স্ব এলাকায় গিয়ে তাদের কষ্টের কথা, তাদের অভিজ্ঞতার কথা, সরকারের দ্বিমুখী আচরণের কথা পরিবারসহ আত্মীয়স্বজনের নিকট প্রকাশ করবে। এটা ইসলামের বিজয়ের জন্য একটি মাইলফলক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিষয়: রাজনীতি
১৬৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন