মত প্রকাশের গনতান্ত্রিক অধিকার রোধ করা সরকারের জন্য আত্মহত্যার শামিল।
লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৪৯:১৬ সকাল
অধ্যাপক Laski মানুষের অধিকারের সংঙ্গা দিতে গিয়ে বলেছেন,
In facts, Right are those conditions of social life without which no man seek, is general, to be himself at his best.
অর্থ্যাৎ অধিকার হল সমাজ জীবনের সেই সকল অবস্থা যেগুলি ব্যতিরেকে কোন মানুষ সাধারনভাবে তার ব্যক্তিত্বের প্রকৃত বিকাশ লাভ করতে পারেনা।
আমরা জানি, মানুষ মুলতঃ চার প্রকারের অধিকার ভোগ করে থাকে। যেমন,
ক) সামজিক অধিকার : সামজিক অধিকারের মধ্যে প্রধান অধিকারগুলো-
►জীবন রক্ষার অধিকার
► ধর্মীয় অধিকার
► মত প্রকাশের অধিকার
►সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার
► শিক্ষার অধিকার
► সংবাপত্রের স্বাধীনতার অধিকার
► পরিবার গঠনের অধিকার ইত্যাদি
খ) রাজনৈতিক অধিকার: রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে প্রধান অধিকারগুলো-
► ভোটাধিকার
► নির্বাচিত হওয়ার অধিকার
► চাকুরী লাভের অধিকার
► আবেদন করার অধিকার
► বিদ্রোহ করার অধিকার ইত্যাদি
গ) অর্থনৈতিক অধিকার:
ঘ) সাংস্কৃতিক অধিকার
এবার আসি স্বাধীনতা প্রসঙ্গে
Harbert Spencer এর মতে স্বাধীনতা হল,
“ Everyone is free to do whatever he wills provided he infringes not the equel freedod of any other man.”
অর্থ্যাৎ স্বাধীনতা বলতে খুশিমত কাজ করাকে বুঝায়, যদি উক্ত কাজের দ্বারা অন্যের অনুরুপ স্বাধীনতা উপভোগে বাধার সৃষ্টি না হয়।
অধিকার ও স্বাধীনতার সংজ্ঞা থেকে আমরা যা জানতে পারলাম, তা বর্তমানে আমরা বাস্তবে পাচ্ছি কিনা তা বিবেচ্য বিষয়। আর যদি না পেয়ে থাকি তার জন্যে যা হতে পারে সেটাও আমরা জানব।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে,
Everyman is born to free but everywhere he is in chained.
অর্থ্যাৎ প্রত্যেকটি মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সব জায়গায় সে শৃংখলিত।
কোন শিশু জন্ম নেয়ার পর চোখ খোলামাত্রই খাদ্য পাওয়ার, কোন কিছু দেখা ও শান্তি বা আরাম পাওয়ার কয়েকটি অধিকার প্রাপ্ত হয়। ক্ষুধা লাগলে কান্না করে খাদ্য পাওয়ার অধিকার জানিয়ে দেয়, তেমনি তার আরামের ব্যাঘাত ঘটলে তার একমাত্র সার্মথ কান্না, তা দিয়ে চিৎকার করে জানিয়ে দেয়। দিনে দিনে তার মধ্যে উৎসুক্য ও কৌতুহল শুরু হয়। চোখ দিয়ে যা দেখে তার ভাষা বোঝার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকে। কোন বস্তু তার সামনে আনলে অথবা ঝুলিয়ে রাখলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
নিজের প্রাপ্তীর অধিকার না পেলে তা আদায়ে যেমন চেষ্টা করে, তেমনি নিজ কতৃর্ক শান্তি বা আরাম নষ্ট করে তা পুনরায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানায়। যেমন: শিশুটি যখন প্রসাব বা পায়খানা করে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে, তখন সে ঐ বিছানায় নিজেকে বড় অসস্তি অনুভব করে । নিজ কতৃর্ক এ কাজ সংঘটিত হলেও বিছানা পরিস্কার করা তার সামর্থের বাইরে বিধায় কান্না করে তা পরিবর্তনের চেষ্টা করে। এভাবে পৃথিবীতে সব সময় তার অনুকুল পরিবেশ আশা করে। এই জানানোর ইচ্ছায় হল মানুষের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতায় বাধাপ্রাপ্ত হলেই বয়স, স্থান, কাল ও পাত্রভেদে তার বিরুপ প্রতিক্রিয়া কর্তৃপক্ষকে সহ্য করতে হয় । এই প্রতিক্রিয়া কখনো কখনো কর্তৃপক্ষকে মহাবিপদে ফেলে দিতে পারে।
প্রাপ্তির দাবী একই রকম হলেও শিশু বয়সের দাবী, আর পরিনত বয়সের দাবীর ভাষা একরকম নয়। শিশু বয়সের দাবী পুরণ না করলে শিশু কেবলমাত্র তার কান্নার শব্দই শুধু বাড়াতে পারে। কিন্তু পরিনত বয়সের দাবী না মানলে তা ক্ষোভে পুঞ্জভুত হয়ে মারাত্বক আকার ধারণ করতে পারে।
মানুষের মধ্যে ভালমন্দের বোধশক্তি নিহীত থাকায় ভালর প্রতি সর্মথন ব্যক্ত এবং মন্দের প্রতি অনীহা কিংবা প্রতিবাদ জানানোর আগ্রহ জাগ্রত হয়। সেই ভাল বা মন্দ বিষয়ের উপর মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করা হলে, না বলতে পারার ব্যাথা ক্রমাগত পুঞ্জিভুত হয়ে মহীরুপ আকার ধারণ করে। এক সময় তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ফলে নিজের অস্তিৃত্ব রক্ষার্থে মুখ দিয়ে বলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। সেক্ষেত্রে যদি তা প্রকাশ করতে না দেয়া হয়, তাহলে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা এর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, তাদের কে উৎখাতের মাধ্যমে নিজের মতামত প্রকাশের পথ তৈরি করে নেয়। আর তখন সেটা ঘটে রক্তপাতের মাধ্যমে। 1975 সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা কার্য সংঘঠিতের পিছনে এটাও একটা কারন ছিল বলে অনেকে মনে করেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই ধরনের কাজই করা হচ্ছে। সরকার কর্তৃক বিরোধী রাজনৈতিক দলকে আটক, নিপীড়ন,নির্যাতন হত্যা, গুম ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করে আপাতদৃষ্টিতে সস্তির ঢেকুর তুললেও এর পরিনতি কখনোও শুভকর হবেনা বলেই মনে হয়। গত দুই মাসে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সাথে যে আচরণ করেছে , স্বাধীনতাত্তোর এমনটি আর কখনোও দেখা যায়নি। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয় সরকারের মধ্যে যে অহংমিকা তৈরি হয়েছে, তারফলেই এই স্বেচ্ছচারী আচরণ।
এখন শুরু হয়েছে পতনের সুর। পতনের এই কথা শুনে কারো বিরক্ত হওয়ার কারন নেই । কেননা, যে সিলসিলা দেখা যাচ্ছে, তাতে এটা যে ঘটবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
এখানে, আমি সূরা নসর এর আয়াতসমূহের কথা উল্লেখ করতে চা্য়। তা হল:
“ যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয় , আর ( হে নবী ! ) তুমি যদি দেখ যে, লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দীন গ্রহণ করছে, তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও৷ অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী ”
যেকোন বিজয়ই আনন্দের । এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করে, এই বিজয় আল্লাহর দান। তাই তারা এ বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকে এবং এ বিজয় অজন করতে গিয়ে যে পথ অবলম্বন বা পরিশ্রম করতে হয়েছে তার মধ্যে কিছু ভুলত্রুটি থাকতেও পারে। এ জন্য খোদাপ্রেমিক বান্দারা কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে মাগফিরাতও চায়।
কিন্তু আমাদের দেশের সরকার অর্থ্যাৎ আওয়ামীলীগ
জনগণের ম্যান্ডেটের এই বিজয় যে মহান আল্লাহর দান, সেই কথা তারা ভুলে গিয়ে যিনি বিজয় দান করলেন, সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর কেন জানি গোস্বা করে সংবিধানের মুলনীতি থেকে তার নামই উঠিয়ে দিলেন। তদস্থলে প্রতিষ্ঠিত করলেন তাকে অস্বীকার করার মুলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ । যার পরিনতিতে গত চার বছরে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ঈমান আকিদায় কুফুরী ঢুকিয়ে দেয়ার সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা করা হয়েছে। সবিশেষ শাহবাগ চত্তরে প্রজন্মের নাম ব্যবহার করে কিছু খোদাবিমুখ মানুষকে পুলিশ কর্তৃক নিরাপত্তা দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার মতাদর্শ বাস্তবায়নে ব্রতি হয়েছেন। সেখানে কি করা হচ্ছে, কেন করা হচ্ছে, তা সবাই কম বেশী এখন জানে।
এখানে ব্লগারদের মধ্যে এমন কিছু ব্লগার রয়েছে, যারা মস্তিস্ক বিকৃতকারী নাস্তিক । কেননা নাস্তিক হওয়ার কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে । আল্লাহকে দেখা যায়না । বিশ্বাস করে, অনুভব করে তাকে মানতে হয়। যারা এভাবে না দেখে বিশ্বাস করতে চায়না তারা নাস্তিক । যুগে যুগে অনেক মানুষ নিজেদেরকে খোদায় অবিশ্বাসী বা নাস্তিক বলে ঘোষনা দিয়েছেন । কিন্তু তারা আল্লাহতে বিশ্বাস না করলেও বিশ্বাসী মানুষের আল্লাহকে যা ইচ্ছে তাই বলে গালি-গালাজ করেননি। অথচ শাহবাগে আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রথম সারির ব্লগাররা আল্লাহ ও রসূল (স)কে নিয়ে যে কুঁরুচি পুর্ন কথা বলেছেন, তাতে তাদেরকে মস্তিস্ক বিকৃতি নাস্তিক ছাড়া আর কোন ভাল ভাষা খুজেঁ পা্ওয়া মুসকিল। তারা যে সব ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা সুস্থ মস্তিষ্কের কোন মানুষ পড়তে পারেন না।
এই সব ব্লগারদেরকে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। অথচ 90% মুসলমানের এই দেশে আল্লাহ ও রসূলকে আপমান করা সহ্য করতে না পেরে যারা এর প্রতিবাদ করতে গিয়েছে, তাদেরকেও সরকার আটক, নির্যাতণ, গুলি করে হত্যা করেছে। আগামী 6.4.2013 তারিখে বাংলাদেশের নিরীহ ইসলামপ্রিয় মানুষ হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ঢাকায় একত্রিত হয়ে সরকারের কাছে এর প্রতিবাদ জানানোর জন্য একটি কর্মসূচী নিয়েছে, অথচ সরকার সেই কর্মসূচী ভুন্ডলের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রিত কিছু ফোরাম বা দল দিয়ে অবরোধ, হরতাল ঘোষনা করেছে।
সরকার কর্তৃক এই প্রতিবন্ধকতায় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীকে বন্ধ করতে পারবেনা । কারন আল্লাহ কোন সীমা লংঘনকারীকে পছন্দ করেন না। যে মহান সংসদে মহান সত্বার নাম উচ্চারনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। কোটি কোটি মানুষের মনের গভীরে যে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত, সেই আল্লাহর নামকে সংবিধান থেকে কলমের এক খোচাঁয় কেটে দেয়া হয়েছে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ সূরা ইমরানের 26 নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন,
﴿قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
“ বলোঃ হে আল্লাহ ! বিশ্ব –জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও৷ যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্জিত ও হেয় করো৷ কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহিত ৷ নিসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী ৷ ”
স্পষ্টটতই: যে আল্লাহ এই রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছিলেন, মর্যাদা ও ইজ্জত দিয়েছিলেন, তার সাথে প্রতরনা করা হয়েছে। কাজেই এই রাষ্ট্রক্ষমতা ও মর্যাদা ও ইজ্জত ছিনিয়ে নেয়া এবং তাকে লাঞ্জিত ও হেয় করা মহান আল্লাহর ওয়াদা। আর সেটাই শুরু হয়ে গেছে।
বিষয়: রাজনীতি
১০৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন