পায়ে গুলিবিদ্ধ মাহবুবের অবাক তাকিয়ে থাকা
লিখেছেন লিখেছেন নাবিল ২০ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৩৪:১৮ সন্ধ্যা
গত দু'দিন ধরে একটা চাহনী আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো না। সে তাকিয়ে ছিলো সামনে দাড়ানো পুলিশদের দিকে। মাটিতে পড়ে আছে, পাঁচ ছয়জন পুলিশের তান্ডবের মাঝখানে পড়ে এক পায়ের জুতা হারিয়ে গেছে। অন্য পায়ের জুতা খুলে যায়নি। ছয়বার গুলি করা হয়েছে ঐ পায়ে, পা থেকে রক্ত বেরুনো শুরু হয়েছে মাত্র।
তাকে রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে কয়েকজন। এরা দেখতে তার মতোই মানুষ। অন্য কোন জাতির বা দেশের না। ওদের গায়ে পুলিশের ভারী পোশাক, হাতে বিভিন্নরকম অস্ত্র। নামিয়েই পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করেছে একের পর এক ছয় বার। ধাম ধাম ধাম ধাম ধাম ধাম।
শরীরের ভেতর গুলী প্রবেশ করার সাথে সাথে অনুভব করা যায় না। কেবল একটা ধাক্কা লাগে, বিবশ একটা অনুভব হয়। পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ড পর ব্যাথা শুরু হয়। মাহবুব গুলী খাওয়ার পরও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুলিশের দিকে। হয়তো সে বুঝতে পারেনি কি হয়ে গিয়েছে। অথবা হয়তো বুঝতে পেরেছে, কিন্তু ব্যাথাকে ছাপিয়ে গিয়েছে আশ্চর্য। বিশ্বাস করতে পারছে না সে, যেসব ঘটনার কথা শুনে আসছিলো তা তার সাথেই ঘটে গিয়েছে।
সামনে অনেক কাজ পড়ে আছে। অনেক ঝামেলা। যারা তাকে গুলী করেছে তাদেরকেই ধাপে ধাপে কমপক্ষে ষাট-সত্তর হাজার টাকা দিতে হবে রিমান্ড আর হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য। জেলখানায় টাকা দিতে হবে, আদালতে টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে হবে হাসপাতালে। পা টা কেটে ফেলতে হতে পারে। ভাগ্য ভালো হলে প্যারালাইজড বা অক্ষম হওয়ার উপর দিয়েও সেরে যেতে পারে। পঙ্গু হতে হবে হয়তো বাকী জীবনের জন্য। ছোট বাচ্চা আর স্ত্রী নিয়ে সংসারটাকে প্রচুর ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
তাতে এই দেশের, এই তথাকথিত মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কিছু আসে যায় না। মানবাধিকার এখানে কৌতুক, গায়ের জোরই শেষ কথা। গুলী খাওয়ার পর মাহবুবের মাথায় এতো কিছু ভাবার সময় তখনও হয়নি। তবে সে যেভাবে তাকিয়ে আছে আমি নিশ্চিত, ঘটনাটা তখনো সে বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। হয়তো অবাক হয়ে সে ভাবছে এ মানুষগুলো এভাবে তাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে কেন। কিসের এতো রাগ? কি তার অপরাধ? ব্যাথা আর ভোগান্তিকে পেছনে ফেলে আশ্চর্য স্থবিরতার এ চাউনি গত দুদিন যাবত আমাকে শান্তি দিচ্ছে না।
------------------------------------------
ব্যাক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত
------------------------------------------
দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রাসঙ্গিক খবরঃ
আমার দেশ
নয়াদিগন্ত
ওসি সালাহ উদ্দিনের নির্দেশে পথচারী মাহবুবের পায়ে গুলি
চূর্ণবিচূর্ণ পায়ের হাড়, ছিন্নভিন্ন রগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
তারিখ: ২০ মার্চ, ২০১৩
মিরপুর থানার ওসি সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে মাহবুব কবিরের পায়ে গুলি করে পুলিশ। একটি দু’টি নয় ৬ রাউন্ড গুলি করা হয়। এতে তার পায়ের হাড্ডি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। রগগুলো ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। অথচ পুলিশ উল্টো আহত মাহবুব কবিরের বিরুদ্ধেই থানায় মামলা করেছে। গতকালও তার স্বজনরা দেখা করতে পারেননি মাহবুব কবিরের সাথে। তার স্ত্রী ও স্বজনরা বলেছেন, তিনি কোনো অপরাধ করলে তার বিচার হতো। কিন্তু এভাবে পুলিশ কেন তাকে পঙ্গু করে দিলো। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তারেরা বলেছেন, কবিরের পা থাকবে কি না তা নিয়ে এখনো তারা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তার স্বজনরা পুলিশের এই নৃশংসতার বিচার দাবি করেছেন।
গত সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার ঘটনা। মাহবুব কবির রিকশায় মিরপুর ২ নম্বর থেকে ১০ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। মিরপুর থানার অদূরে ঠিক ওই সময় একটি মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকেরা। মিছিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। এই দৃশ্য দেখে কবির রিকশা ঘুরিয়ে উল্টো দিকে রওয়ানা দেন। এ সময় অপর এক যুবক তার রিকশায় উঠে পড়েন। রিকশাটি কয়েকগজ দূরে যেতেই একটি মাইক্রোবাস সামনে থেকে রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। তার সঙ্গী ওই যুবকটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, তিনি ছিলেন রিকশার বাঁ দিকে। আর ডান দিকে ছিলেন মাহবুব কবির। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা দুইজনই ছিটকে পড়েন রাস্তার ওপর। ওই তরুণ জানান, উঠে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তারা দুইজনেই। এ সময় আরো একটি মাইক্রোবাস এসে ওই তরুণকে আবারো ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। ওই তরুণ জানান, ‘আমাকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। কোনো মতে দেয়াল টপকে একটি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ি’। তিনি বলেন, তখন ওই ব্যক্তিকে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে দেখেন। অমনি, কয়েকজন পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। এরপর কী হয়েছে তা বলতে পারেননি। পড়ে টেলিভিশন চ্যানেলে দেখেছেন তার সঙ্গী ওই ব্যক্তিটিকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। তার পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। তিনি শুনেছেন, পুলিশ ওই ব্যক্তির পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। আহত মাহবুব কবির হাসপাতালে বলেছেন, তিনি যখন হোঁচট খেয়ে পড়েন তখনই পুলিশের কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে। কিছু বলার আগেই তার পায়ে গুলি করা হয়। এরপর কী হয়েছে তা মনে নেই তার। সজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তিনি বলেন, ওই মিছিলে তিনি ছিলেন না। পুলিশ বিনা কারণে তার পায়ে গুলি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই স্পটে মিরপুর থানার ওসি সালাহ উদ্দিন নিজেই ছিলেন। তার নির্দেশেই এসআই আসলাম ও এসআই হাসান এই গুলি করেছে। সালাহ উদ্দিনের নির্দেশেই তাকে ‘পশুর’ মতো টেনে হিঁচড়ে পুলিশের মাইক্রোবাসে তোলা হয়। সেখান থেকে প্রথমেই তাকে হাসপাতালে না নিয়ে নেয়া হয় থানায়। থানায় অবস্থার অবনতি হতে থাকলে পুলিশ তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে তার পা কেটে ফেলার জন্য পুলিশ ডাক্তারদের পরামর্শ দেয়। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তারেরা পুলিশের কথা না শুনে দ্রুত তাকে হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেয়ার পর ডাক্তারেরা বলে দেন পা আপতত কাটা লাগবে না। তবে অবস্থা মারাত্মক। উন্নত চিকিৎসা না হলে তার পা রাখা যাবে না। হাসপাতাল সূত্র জানায়, তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের হাড় গুলির আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। রগগুলো টুকরো হয়ে গেছে। হৃদরোগ থেকে তাকে আবারো পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ হেফাজতে তার চিকিৎসা চলছে। তার স্বজনরা গতকাল পর্যন্ত তার সাথে দেখা করতে পারেননি।
এ দিকে ঘটনার পর ওসি সালাহ উদ্দিনসহ কয়েকজন পুলিশ মাহবুব কবিরের বাসায় যায়। পুলিশের দাবি কবিরের বাসা থেকে জামায়াতে ইসলামীর কিছু কাগজপত্র তারা পেয়েছে। পুলিশ ওই পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকিও দিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুলির ব্যাপারে যাতে মিডিয়াকে কিছু বলা না হয় সে ব্যাপারেও পুলিশ তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসে।
সামান্য বেতনের চাকরিজীবী মাহবুব কবির স্ত্রী এবং তিন বছরের এক ছেলেকে নিয়ে মিরপুরের পীরের বাগে বসবাস করে আসছেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তিনি জানান, কিভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাবেন তা নিয়ে দিশেহারা। এতো টাকা কোথায় পাবেন। তদুপরি পরিবার এখন পুলিশি হয়রানির ভয়ে আছেন। এ ব্যাপারে মিরপুরের থানার ওসি সালাহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। থানার ডিউটি অফিসার জানান, মাহবুব কবিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বিষয়: রাজনীতি
৪৬১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর একটায় 'না'।কিন্তু,উপরের প্রশ্নগুলো যদি ছাত্রলীগকে নিয়ে করা হয় তাহলে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর 'হ্যা' হবে।
বেশ কয়েক বছর ধরে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মেয়েদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে মিডিয়া।অতি উৎসাহী পদলেহী মিডিয়াগুলো অপসাংবাদিকতার সব নোংরারূপ দেখিয়েছে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মেয়েদের বিরুদ্ধে।
নতুন খবর হচ্ছে, ভারতীর আশির্বাদপুষ্ট আওয়ামী সরকার ইসলামী ছাত্রী সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার কার্যক্রম শুরু করেছে।অন্দরমহলের তথ্যমতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে একজন প্রফেসর,৪ সম্পাদক,একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান! এদের প্ল্যান বাস্তবায়ন করবে পুলিশ,র্যাব,গোয়েন্দারা। শিক্ষা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলায় দেবে ফাইনাল টাচ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন