রহস্যময় এক ট্রেন জার্নি
লিখেছেন লিখেছেন হিফজুর রহমান ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩৪:১৫ সকাল
লন্ডন উইক-এন্ড এ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলা ফেরা করাটা রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ একটা কাজ। স্টেশন-সার্ভিস-ট্রেন-বাস সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে এরা শনি রবি এই দুই দিনে অনেক কাজ করে। মেরামত করে। পাতাল রেলের নতুন লাইন তৈরির কাজ করে। সব গুলো রুট কে সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিনের টেকসই চলাচলের জন্য প্রস্তুত করে রাখে। যাই হোক, আমি থাকি পূর্ব লন্ডন। গত শনিবার কোন এক জরুরী কাজে পশ্চিম লন্ডনের ইলিং যাইতে হইল। আমার পৌঁছানো দরকার সকাল সাড়ে আঁটটায়। নেটে জার্নি প্লানার এ দেখলাম টাইম দেখাইতেছে পাক্কা এক ঘণ্টার জার্নি। ব্যাপার কি? পূর্ব লন্ডন হতে দ্রুত গতির সেন্ট্রাল লাইনে ত আধা ঘণ্টার বেশী লাগার কথা না। ওহ। উইক এন্ড। সেন্ট্রাল লাইন বন্ধ। যাইতে হবে একদম স্লো গতির ডিস্ট্রিক লাইনে। তাই সময় লাগবে দ্বিগুণ। তবে মাঝপথে কয়েকবার ট্রেন চেঞ্জ করলে সময় কম লাগবে। কয়েকবার চেঞ্জ করে টিকই আধা ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম।
আমার কাজ শেষ হবার কথা চারটায়। হয়ে গেল তিনটায়। পাক্কা এক ঘণ্টা বাইচা গেল। এবার ফেরার পালা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হইতেছে। ঠিক সিলেটে যেমন হয়, থামার নাম নাই। ফিনি ফিনি মেঘ! কাক ভেজা হয়ে গেলাম। স্টেশনে আইসা দেখি যথারীতি সেন্ট্রাল লাইন বন্ধ। কি আর করা। আলসে শরীরে লাইন চেঞ্জ করার চেয়ে মোটামুটি শম্বূক গতির ডিসট্রিক লাইন-এ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বাড়ি ফেরাটা এঞ্জয়েবল মনে হইল। ট্রেন এ উটে দেখি একদম কো-য়া-ঈ-ট। মানুষজন একদম নাই। একপাশে হেলান দিয়ে বসলাম। আরামে আমার চোখ বুজে এলো। একটু পর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
দেখি, কাক ভেজা হয়ে আমি বাড়ি ফিরেছি। মা হইহই করে উটলেন। বিশাল একখান তোয়ালে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, যা এখনি গোসল সেরে আয়। তোরে আমি ভাত বেড়ে দিচ্ছি। আমার অবস্থা ঠিক - পড়েছি মায়ের হাতে, ভাত লইতেই হইবে পাতে ! তাছাড়া ক্লান্ত শরীর। আর দুপুরে একটা টুনা সেন্ডূইচ খাইসি। জাতে বাঙালী। ভাত না খাইলে মনে হয় কিছুই খাই নাইক্কা ! আর আমার মা। পারেন ও। বরাবরের মত এই এক-দুই মিনিটেই হাজারটা তরি-তরকারি রেডি কইরা ফেলছেন। ভর্তা-ভুনা-ভাজি-বিরয়ানী কিছুই বাদ পড়ে নাইক্কা! আমি কেবল খাইতেছি আর খাইতেছি। একদম লোড হইয়া গেলাম। বললাম, আর সম্ভব না, মা। মায়ের এক কথা, আরেকটু নে বাবা। আরেকটু ! আমার ছোট ভাইবোন গুলা ও পাজি একেকটা। দেখতেছে যে আর নিতে পারছি না তবু মায়ের সাথে গলা মিলায়। বলে ভাইয়া আ-রে-ক-টূ............ তবে আমার হাতের নাগালের বাইরে দাড়িয়ে। কারণ ভালো করেই জানে, কাছে পাইলে হালকা-পাতলা-কিল-ঘুষি-চটকানা লাগাবো! খাইতে খাইতেই অনুভব করলাম মা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন যেন খাইতে খাইতে ঘুমিয়ে না যাই। হঠাৎ মনে হল একটু ধাক্কার মত দিলেন। আর আমি দড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। কিন্তু এ কি? আজব ! আমি ট্রেনের সিটে হেলান দিয়ে ঘুমাইতেসি আর ট্রেনের ড্রাইভার আমারে প্রাণপণে জাগানোর চেষ্টা করছে। দূর হ হারামজাদা। আমার এত্ত সুন্দর স্বপ্ন টা ভেঙ্গে ত দিলই সাথে ঘুম ও ভাঙাল। আমার চোখেমুখে স্পষ্ট বিরক্তি দেখে এইবার ড্রাইভার মুখ খুলল। জিজ্ঞেস করল, উ অররাইট ইয়াং ম্যান? জানালো ট্রেন তার শেষ গন্তব্যে এসে পড়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সব যাত্রী নামার পর ইঞ্জিন অফ করার আগে সে শেষবারের মত সবকিছু চেক করতে গিয়ে ক্যামেরায় দেখে যে আমি সিটে হেলান দিয়ে ঘুমাইতেছি। সে প্রথমে ড্রাঙ্ক মনে করে এম্বুলেন্স কল করতে গেসিল। পরে আমার এশিয়ান দেখে বুঝল যে না ড্রাঙ্ক নয়, এমনিই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ট্রেন হতে বের হ্লাম। ডিসট্রিক লাইন ট্রেন পূর্ব লন্ডন হয়ে সাউথ লন্ডনে গিয়ে শেষ হয়। ভগ্ন হৃদয়ে ফিরতি ট্রেন ধরলাম।
মনেমনে হিসাব করতেসি, আধা ঘণ্টার এই ট্রেন জার্নি কয় ঘণ্টায় যে শেষ হবে?
বিষয়: বিবিধ
১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন