আনিসুল হকের মুখোশ উন্মোচন !!

লিখেছেন লিখেছেন হিফজুর রহমান ২১ মার্চ, ২০১৩, ১০:৫১:০৭ সকাল



কেউ নাস্তিক হলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এতে আমার মত বিশ্বাসীর কিছু যায় আসেনা। কিন্তু কেন জানি বাংলাদেশের নাস্তিকরা তাঁদের নাস্তিকতাকে ধ্রমদ্রোহীতার পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাঁরা নোংরা ভাষায় ধর্মকে আঘাত করে। এতে বিশ্বাসী মুসলমানের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগলে তাঁরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে নতুন উদ্যকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। এতদিন ব্যাপারটা তেমন গুরুতর কিছু ছিলনা। বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই ধরা হইত এই গুলানরে। আর ব্লগে বা ফেসবুকে তাঁরা লিখলেও যেহেতু সাধারণ মানুষ এগুলো কম পড়ত তাই তাঁদের কুৎসিত লেঞ্জা আমরা সচরাচর দেখতাম না। কিন্তু প্রথম আলোর গদ্য কার্টুন লেখক আনিসুল হকের কুরআন শরীফ কে ব্যঙ্গ করে লিখা 'সহি রাজাকারনামা' পড়ে তাজ্জব বনে গেলাম। একদম হুবহু কোরআনের মত লিখতে চাইলেন আপনি? দাঁড়ী-কমা-ব্যঞ্জনা-ভাষা- লয় !! বেয়াদবিরও তো একটা একটা সীমা আছে? আপনি রাজাকারদের ব্যঙ্গ করে হাজার হাজার গল্প-প্রবন্ধ-স্যটায়ার-গদ্যকার্টুন-পদ্যকার্টুন লিখেন তাতে আমাদের কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফে হাত দিলেন ক্যান? আপনার এত দুঃসাহস কোথা থেকে আসল? আপনি আমাদের কলিজায় হাত দিয়েছেন। আপনি আমাদের বুকের ভিতর লুকানো হৃৎপিণ্ডে আঘাত করেছেন। আপনি আল্লাহর কিতাবে হাত দিয়েছেন। তবে কি আপনি পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আল্লাহর সেই চ্যালেঞ্জ কোরআনের মত করে আরেকটি আয়াত বা সূরা বানানোর জবাব দিলেন? চৌদ্দ শত বছরের এ অধিক সময়ে কোন ইহুদি খ্রিস্টান হিন্দু কিংবা নামধারী কোন মুসলমান যেই কাজটি করতে পারেনি আপনি কি তাই করতে চাইলেন? ধিক আপনাকে। ধিক। শত ধিক। ভালো মানুষের লেবাসধারি আপনি একটা আস্ত শয়তান। না, ইবলিশ শয়তানেরও অধম। আপনি একটা নরকের কীট। আপনি একটা বুনো দাতাল শুয়র। সামান্য ধৈর্য ধইরা- দাতে দাত চেপে - বিরক্তির চরম সীমায় না গিয়ে জনাব আনিসুল হকের নিচের 'সহি রাজাকারনামা' পড়ে আমি নাদানরে আপনার মতামতটা একটু জানান প্লিজ।

ছহি রাজাকারনামা

-আনিসুল হক

আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে রাজাকার। নিশ্চয়ই রাজাকারগণের জন্যে অতীতের চাইতে ভবিষ্যতকে উত্তম করিয়া সৃজন করা হইয়াছে। অতএব তোমরা তোমাদের প্রভু পাকিস্তানের প্রশংসা করো; নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু পাকিস্তানীরা ক্ষমাশীল।

যখন তোমাদিগকে বলা হইবে নেতা নির্বাচন করো, তখন তোমরা সেই ব্যক্তিকেই নির্বাচন করিবে, যাহার রাজাকারগিরি প্রমাণিত। আর তাহার মতো মূর্খ কে আছে, যে রাজাকার চিনিয়াও তাহাকে সম্মানিত নাকরিলো, আখেরে ইহারাই হইবে অভিশপ্ত। ইহাদের জন্যে সুকঠিন দারিদ্র্য অপেক্ষা করিতেছে। আর যে ব্যক্তি রাজাকার চিনিলো, এবং তাহাকে সম্মান করিলো, এবং তাহার পদাঙ্ক অনুসরণ করিলো, ইহাদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে সুমিষ্ট ফল, সুন্দরী রমণী আর সুদর্শন পুরুষ।

অনন্তর তোমাদের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠীর সৃষ্টি হইবে যাহারা রাজাকারী রজ্জু উত্তমরূপে ধারণ করিবে, আর যাহারা রাজাকারী তরিকা আদমদিগের মধ্যে উত্তমরূপে প্রচার করিবে। যাহারা রাজাকার হিসাবে বাহির হয়, তাহারা শান-শওকতের পথে চলে।

সেই ব্যক্তিই উত্তম রাজাকার, যে বিবাহ করিবে একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি, যেরূপ সে ইচ্ছা করে আর তাহার জন্যে বৈধ করা হইয়াছে ডান হাতের অধিকারভূক্ত দাসীদের, আর তাহারা ভোগ করিতে পারিবে বাঙ্গালী রমণীগণকে, অপিচ তাহাদের সহিত আদল করিবার দরকার হইবে না। স্মরণ রাখিও, মালেগণিমতগণের মহিত মিলিত হইবার পথে কোনরূপ বাধা থাকিলো না।

আর মনে রাখিবে, যে রাজাকারী পথে বাহির হয়, সে একা নহে, সৌদি-মার্কিনীরা ­ তাহার সঙ্গে রহিয়াছে। সেই ব্যক্তিহতভাগ্য, যে রাজাকার হইতে সাহস করিলো না এবং মনে মনে বলিলো যে, আমি রাজাকার হইবো না, কেননা পশ্চাতে লোকে আমাকেগালি দিবে। আর প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার একেকটি আঙুলের জন্যে রহিয়াছে দশ দশটা পুরস্কার, আর যে ব্যক্তিএকজন মুক্তিযোদ্ধার ডানপাঞ্জা কাটিতে সক্ষম হইলো, তাহার বরাতে ৭০ গুণ বেশি পেট্রোডলার লেখা হইলো। নিশ্চয়ই তোমাদের জন্যে রাজাকারী কাজের জন্যে পুরস্কার রহিয়াছে।

আর তোমরা কি অতীত হইতে শিক্ষাগ্রহণ করিবে না? গ্যালিলিও নামের এক পাপিষ্ঠ অতীতে সত্য অস্বীকার করিয়াছিল, এবং সে কি প্রাপ্তহয় নাই চরম শাস্তি? আর রাজাকারগণ যাহাকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে নিজ হস্তে শাস্তি দেন। আঙুল কাটিয়া ফেলা হইতে শুরু করিয়া মুণ্ডু কাটিয়া ফেলা -বিপথগামীদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে ভয়ঙ্কর শাস্তি।

আর তোমরা কি সেই গোষ্ঠীর বংশধর নহ, যাহারা অতীতে তিরিশ লক্ষ বেদ্বীনকে কতল করিয়াছে? নিশ্চয়ই আমগাছ হইতে আম এবং রাজাকার গোষ্ঠী হইতে রাজাকারউৎপন্ন হয়।

অচিরেই দেশে নিখিল পাকিস্তান রাজাকার সংসদ গঠিত হইবে। আর রাজাকার কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে সকল লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছাড়িয়া দেওয়া হইবে। আর রাজাকার প্রার্থীদের জন্যে চাকুরির বয়সসীমা আটত্রিশ বছর করা হইবে। এবং অবস্থা অচিরেই এইরূপ হইবে যে, রাজাকার সার্টিফিকেট নকল করিয়া লোকে রাজাকার সাজিতে থাকিবে। তখন সুন্দরী রমণীগণ সেনাকর্তাদের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইহবার বদলে রাজাকার বরের স্বপ্নে ঘামিতে থাকিবে। কন্যাবৃন্দের মাতাগণ রাজাকার জামাতার গর্বে পাড়া মাতাইবে।

অচিরেই কাহার কল্লা থাকিবে কাহার থাকিবে না, তাহা নির্ধারণের দায়িত্ব ‘ছাই-দি’‘ছা-য়েব’দের হস্তে অর্পিত হইবে। আর যে ব্যক্তি দাড়িপাল্লায় ভোট দিলো, সে-ইমাসুম শিশু হইয়া গেল। ব্যালট পেপার তাহার ডান হাতে আসিবে। ব্যালট পেপার দেখাইয়া স্বর্গে প্রবেশ করাযাইবে। যে ব্যক্তি রাজাকার তহবিলে চাঁদা দিলো, সে-ই ৭০ গুণ ফেরত পাইলো। চাঁদার রসিদ দেখাইলে স্বর্গের দুয়ার খুলিয়া দেওয়া হইবে। আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা করো, আর রাজাকারদের সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই রাজাকারদের তহবিল পরিপূর্ণ। তাহারা তোমাদিগের মাসোহারার ব্যবস্থা করিয়া দিবে। এবং তোমরা রাজাকার মাহাত্মে বিশ্বাসীগণের নিকট জানাইয়া দাও যে, তাহাদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে উত্তম শরাব।

আর তোমরা মওদুদীবাদ উত্তমরূপে কল্বের মধ্যে গাঁথিয়া ফেলো। তিনিই শেষ দার্শনিক, ইহার পর আর কোনো দার্শনিক আসিবে না। অতপর তাহার দেওয়া ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

অচিরেই রাজাকার দেশের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হইবে, এবংঅচিরেই সকল কুফরি মতবাদ প্রচার ও শিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষিত হইবে। আর তখন তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, বলো, তোমাদের দেশ কি? তোমাদেও মধ্যে যাহারা খাঁটি রাজাকার, তাহারা বলিবে, কেন, পাকিস্তান? পুনরায় তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তোমাদের দলপতি কে? তোমাদের মধ্যে যাহারা কল্যাণময়, তাহারা বলিবে, কেন,মওদুদী? পুনরায় তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তোমাদের দলপতি কে? তোমাদের মধ্যে যাহারা ইহলোকের ভালো বোঝে, তাহারা জবাব দিবে, কেন, গোলাম আযম? আর তাহাদের জন্যে সুসংবাদ। তাহাদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছেন, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না।

অনন্তর সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের, যাহারা রক্ত হইতে তখ্ত কায়েম করে।

তথ্যসুত্রঃ

১৯৯১ সালের ৩০ নভেম্বর 'পূর্বাভাস' পত্রিকায় প্রকাশিত।

সচলায়তনে এই লেখা

সামহয়ারইনে এই লেখা

null

বিষয়: বিবিধ

১৩০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File