সৌদি রাজত্বের একাল সেকাল

লিখেছেন লিখেছেন হিফজুর রহমান ২০ আগস্ট, ২০১৩, ১১:১৬:৪৭ সকাল



১৯০১ সালের বসন্তের প্রাক্বালে মাত্র বিশ জন আরব যুদ্ধা নিয়ে একদা বিতাড়িত নিজ ভূমে অতর্কিত হামলা করে তছনছ করে দেন এক সৌদি যুদ্ধা। তিনি ধূর্ত। ক্ষিপ্র। তিনি আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ। এইভাবে শুরু। তারপর ব্রিটিশদের হাত ধরে সামান্য এক গোত্র-সরদার আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ সুনিপুন ক্ষিপ্রতায় বিক্ষিপ্ত আরবের বিশাল অংশ দখল করে নিজ নামে বিশাল রাজত্ব কায়েম করেন। দুনিয়ায় আর কোন রাজা-বাদশা নিজ দেশের নামের সাথে নিজের নাম জুড়ে দেয়ার মত এত বড় বিলাসিতা দেখাতে পারেন নাই। তিনি পেরেছেন। কিংডম অব সৌদি আরাবিয়া।

ধূর্ত ইবনে সউদ যেখানে যা দরকার সেখানে তাই ব্যবহার করেছেন। ব্রিটিশ অস্র ব্যবহার করে তুর্কি খেলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, আবার 'ইখওয়ান' নামে ইসলামী ভাবাদর্শে গঠিত একটি বাহিনীর সহায়তা নিয়েছেন। যুদ্ধ জয় শেষে সেই বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর ২২ জন বউ ৪৫ টা ছেলে এবং অনেক অনেক মেয়ের জন্ম দিয়েছেন। তারপর ইবনে সউদ মরার সময় এমন ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছেন যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেরা কামড়া কামড়ি না করে এক জনের পর আরেক জন রাজত্ব করে যায়। আল্লাহর দেয়া অফুরন্ত তেলের টাকায় ভোগ বিলাসিতার চরম সীমায় এরা পৌঁছে গেছে।

তারপর ৯ম নভেম্বর ১৯৫৩ কিং আব্দুল আজিজ মারে গেলে তাঁর দ্বিতীয় বড় ছেলে কিং সউদের রাজত্ব শুরু হয়। কিং সউদ ছিলেন অদক্ষ, উদ্যত এবং চরম ভোগ -বিলাসী এক শাসক। শুধু বিশাল বিশাল প্রাসাদ তৈরি করে সৌদি অর্থনীতির বারটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন। অচিরেই কিং সউদ তাঁর সৎভাই প্রিন্স ফয়সালের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

যাইহোক, এক দশক রাজত্ব করে ২য় নভেম্বর ১৯৬৪ অনেক নাটকের পর রাজত্ব হারান কিং সউদ। নতুন বাদশাহ হন কিং ফয়সাল। সারা দুনিয়ার ইসলাম প্রেমি জনতাকে আশার বাণী শুনিয়ে কিং ফয়সালের রাজত্ব শুরু "I beg of you, brothers, to look upon me as both brother and servant. 'Majesty' is reserved to God alone and 'the throne' is the throne of the Heavens and Earth. তাঁর হাত ধরেই প্যান ইসলামিজম নতুন করে গতি পায়। তিনি সেই সময়ের উদিয়মান সমাজতন্ত্রের একজন চরম সমালোচক হিসেবে মুসলিম উম্মাহকে সমাজতন্ত্র হতে দূরে থাকার আহ্বান জানান। তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য একজন ভাই এবং অভিবাভক হিসেবে পাশে ছিলেন। কিং ফয়সাল মুসলিম উম্মাহকে মুক্ত ফিলিস্তিনের স্পপ্ন দেখিয়ে ছিলেন।

তাঁর সময়ে কিং ফয়সাল সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর আশা আকাংখ্যার প্রতিকে পরিণত হয়ে ছিলেন।

কিং ফয়সাল তারই এক ভাতিজার হাতে শাহাদাত বরণ করলে মুসলিম উম্মাহর দুঃখের দিন শুরু হয়। কারণ কিং ফয়সালের পরের সব গুলা সৌদি বাদশাহ ছিলেন আমেরিকা-ইস্রায়েলের ক্রিড়নক। সোজা কথায়, কিং ফয়সাল ছাড়া কিং আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ এর আর কোন ছেলেই আল্লাহর পবিত্র ঘরের খাদেম হিসেবে মুসলিম উম্মাহর প্রতি নিজেদের ন্যুনতম কোন দায়িত্ব পালন তো করেনি উল্টা পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যের দালাল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ইঙ্গ-মার্কিন ইহুদিবাদের কাছে নিজেদের বিক্রি হয়ে যাওয়া শেকড়ের কথাই এইসব সৌদি রাজারা বারবার স্মরণ করে দিয়েছেন।

বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ এর সন্তান বাদশাহ আব্দুল্লাহ আমেরিকা ইসরাইল এর দালালী করবে, মিশরের ইসলামপন্থী ব্রাদারহুড স্রকারর উৎখাতে টাকা ঢালবে, এই খানে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই।

সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে লালিত পালিত ইহুদিবাদি ইবনে সউদ পরিবার এখনো পবিত্র ক্বাবা শরীফের খাদেম, মুসলিম উম্মাহর জন্য এইটাই বরং আশ্চর্যের। বড় কষ্টের। বড় লজ্জার।







বিষয়: বিবিধ

২৪৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File