জাঁদরেলদের একাল সেকাল ১
লিখেছেন লিখেছেন হিফজুর রহমান ২৪ জুন, ২০১৩, ১০:২৮:৫৫ সকাল
আজ থেকে ২০ বছর পরের কথা। বাংলাদেশের কোন এক রাজনৈতিক দলের এক সময়ের কিছু দুর্দান্ত প্রতাপশালী নেতানেত্রি তাঁদের ক্ষমতায় থাকাকালীন কুকীর্তির জন্য জেলখানায় বন্দী আছেন। কিন্তু জেলে ও তাঁরা নানা ধরণের উৎপাত করতে লাগলেন। জেল-রক্ষীরা বিভিন্ন সময় জেল-সুপারের কাছে নালিশ করেছে। প্রতিদিন নালিশ শুনতে শুনতে ত্যাক্ত বিরক্ত জেল-সুপার কয়েকজন কারারক্ষী সাথে নিয়ে একদিন বাস্তব অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে বের হলেন।
ব্লক এঃ
ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারের বিশাল এ-ব্লকের সারি সারি সেলের সামনের করিডোর দিয়ে জেল-সুপার হাঁটছেন। একটি কক্ষে বেশ হৈ চৈ শুনা গেল। জেল-সুপার থমকে দাঁড়ালেন।
- এইটা কার রুম?
- স্যার। এইটা কামরুল বুইড়ার রুম। (একজন কারারক্ষীর জটপট উত্তর )
- কোন কামরুল?
( আগেরবার জটপট উত্তর দেয়া কারারক্ষীটি এখন মাথা চুলকায়। মনে করতে পারছেনা বোধহয়। তখন পিছন থেকে আঁতেল টাইপ এক কারারক্ষী উত্তর দেয়)
- স্যার। ঐ যে টাকলা কামরুল। ল' মিনিস্টার ছিল স্যার।
- আরে না। ফুল মিনিস্টার না। কামরুল সাহেব প্রতিমন্ত্রী ছিল। শুধু চিল্লা ফাল্লা করত। ( আঁতেল কারারক্ষীটিকে এবার হালকা ধমক দেন জেল-সুপার)। চল দেখি কি ব্যাপার।
জেল-সুপার দেখলেন একটি রুমে বেশ কয়েকজন কয়েদি কামরুল সাহেবকে ঘিরে রয়েছে। কয়েকজন যুবক-বয়সী কয়েদি কামরুল সাহেবের টাকলা মাথায় হাত বুলাইতেছে। কেউ রঙ মাখাইতেছে। আর বাকিরা তামাশা দেখছে। কিন্তু বেচারা কামরুল সাহেব সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বক্তৃতা-স্টাইলে সমানে চিল্লাইতেছেন। তিনি বোধহয় মনে করতেছেন সবাই তাঁর বক্তৃতা শুনতে জড়ো হয়েছে ! আহারে বেচারা ! এখনো আগের মতই আছে !
জেল-সুপার কয়েদিদেরকে জটলা করতে নিষেধ করলেন। সবাইকে যার যার রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে কারারক্ষীদের নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন।
জেল সুপার করিডোর দিয়ে হাঁটছেন। কারারক্ষীরা তাঁকে অনুসরণ করে পিছে পিছে হাঁটছে। এইবার দেখলেন একজন ধূতি পরা গেরুয়া বসনের বৃদ্ধ কয়েদি বিশাল একটি চটের বস্তা কাঁধে নিয়ে পায়চারী করছে।
- আজিব ! এইটা কে? আর কি করছেন উনি?
- স্যার। উনি সুরঞ্জিত বাবু। (একজন উত্তর দেয়।)
- ওহহো ! সেনবাবুর এই অবস্থা ! তা উনি এইসব বস্তা টস্তা নিয়ে কি করে?
- আর বইলেন না স্যার। রাস্তার যত ছেঁড়া কাগজ আছে সব উনি বস্তায় ভরে রুমে নিয়ে জড়ো করতেছেন। আর কাউকে বস্তার কাছে ঘেঁষতে দেন না। উনি মনে করেন এইসব বস্তায় কোটি কোটি টাকা। জেল থেকে বের হয়ে নাকি উনি এইগুলা তাঁর ছেলেকে দিবেন।
- আরে থাম! কিসব আবুল-তাবুল কথা !
- স্যার। একদম সত্যি স্যার। বিশ্বাস না হয় উনার রুমে চলেন স্যার।
- থাম বলছি। থাম। এই তোরা আর একটা কথা বলবি না।(জেল-সুপার ধমক দিয়ে কারারক্ষীর বকবকানি থামিয়ে দিলেন। )
- আহারে বেচারা ! টাকার বস্তার কথা এখনো ভুলতে পারে নাই। (জেল-সুপার আপন মনে বলতে বলতে কারারক্ষীদের নিয়ে লম্বা করিডোর পার হয়ে আরেকটি বিল্ডিং এর দিকে পা বাড়ালেন।)
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন