ছাত্রশিবির বাংলাদেশের মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন ইনসিয়া ১৪ মার্চ, ২০১৩, ০৯:১৮:১৮ রাত
আমি যতটুকু জানি ছাত্র শিবির একটি আদর্শিক ছাত্র সংগঠনের নাম যা 1977 সালে বাংলাদেশের মাটিতে সৃষ্টি হয় । বাংলাদেশের আলো বাতাসে লালিত পালিত হচ্ছে। এরা বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে । এরা আওয়ামীলীগ, বি এন পি, জামায়াত , জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনে বিশ্বাসী মানুষের সন্তান। এদেশে বিদ্যমান যতগুলো ছাত্র সংগঠন আছে-মেধার দিক দিয়ে,আদর্শের দিক দিয়ে, নিয়মানুবর্তিতার দিক দিয়ে, শৃংখলার দিক দিয়ে, আচরণের দিক দিয়ে, মানবিক গুনাবলীর দিক দিয়ে, সামাজিক শিষ্টাচারের দিক দিয়ে, তাকওয়ার দিক দিয়ে কোন ছাত্র সংগঠনের পিছনে নেই। আমার মনে হয়, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সকল মানুষ এটা স্বীকার করবে।
তাহলে এদের অপরাধ কী ? বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে অন্য সংগঠনের কর্মীরা যদি তাদের আদর্শ প্রচার করার জন্য রাস্তায় মিছিল সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারে , তাহলে শিবির কেন পারবে না ? অন্যেরা যদি পুলিশ প্রহরায় মিছিল –সমাবেশ করতে পারে, তাহলে শিবিরকে কেন সেই সুযোগ দেওয়া হবেনা ? আল্লাহকে অস্বীকারকারী রাজনৈতিক আদর্শের কর্মীরা যদি আল্লাহর জমীনে গলা ফাটিয়ে মিছিল-সমাবেশ করতে পারে, তাহলে আল্লাহর নিদের্শ অনুসরনকারী কর্মীরা তারই জমীনে তারকথা বলার সুযোগ পাবেনা কেন ? কী অপরাধে রাষ্টীয় পুলিশ ব্যবহার করে শরাহত পাখির ন্যায় শিবির কর্মীদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে ? আমরা সবাই জানি 71 সালে যুদ্ধ অপরাধের সাথে শিবিরের কোন সম্পর্ক নেই । আমরা জানি, শিবিরের ছেলেরা রাজাকার বা আলবদর নই।কেননা আজকে যারা শিবির করে তাদের বয়স 18 থেকে সর্বোচ্চ 28 বছরের মধ্যে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে 41 বছর আগে। তাহলে কেন শিবির নিধনের জন্য শফত গ্রহন করতে হবে ? যতটুকু জানি শিবিরের ছেলেরা ধর্ষণে সেঞ্চুরী করেনী। শিবিরের ছেলেরা অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের মত টেন্ডারবাজী করেনা। শিবিরের ছেলেরা অশ্লীল গান বাজনা, বেহায়াপনা করেনা । শিবিরের ছেলেরা মেয়েদের সাথে অবাধ মেলামেশা করেনা ।এই জন্য বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদেরকে ব্যাকডেটেড হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।ডঃ জাফর ইকবাল বলেছেন, “যে বয়সে মেয়েদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময, যে বয়সে রঙ্গিন চশমা চোখে দিয়ে গান, বাজনা , আনন্দ করার সময় ,সেই বয়সে শিবিরের ছেলেরা এসব উপভোগ না করে নামাজ, ধর্ম এগুলো নিয়ে দিনাতিপাত করে।”
তাহলে বুঝা গেল, প্রগতির নেংটা সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পন করেনী বলে শিবির আজ ব্যাকডেটেড ।স্বল্প বয়সে মেয়েদের সাথে আড্ডা না দিযে নামাজ পড়ে বলে আজ তারা মৌলবাদী।সককআাচচটডআস সসসববাাাুবয়আসলে কী তারা আধুনিকতার বাইরে ? দেখা যাক আজকের প্রগতিবাদীরা তাদের সম্পর্কে কী বলে?
গত কয়েকদিনে ধরে যে মিডিয়াগুলো তাদের খবরের শিরোনামে “শিবিরের তান্ডবতা” শব্দ দুটি স্থায়ীভাবে পেষ্ট করে ক্রমাগত অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে, সেই মিডিয়াগুলোই শিবিরের সাথে সাইবার যুদ্ধে শাহবাগীদের পরাজয়ের কথা র্নিদিধায় স্বীকার করছেন। তারা বলছেন, অন্তত 5000 শিবিরকর্মী সাইবার যুদ্ধে 24 ঘন্টা ধরে লিপ্ত রয়েছে, তাদের 40 জন বিশেষ আইটি এক্সপার্ট রয়েছে, বাঁশের কেল্লাকে রোধ করতে পারছে না সরকার, অসংখ্য শিবির কর্মী কারাগারে আটক করা সত্ত্বেও তাদের আন্দোলনে সরকারে নাজেহাল ইত্যাদি ইত্যাদি ।
প্রশ্ন হল, যারা আধুনিক বলে নিজেদেরকে দাবী করেন, আপডেটেড হিসাবে পরিচয় দেন, তারা শিবিরের আইটি সেক্টরের কাছে ধরাশায়ী। আধুনিক অস্ত্র ও কৌশল অবলম্বন করেও তারা শিবিরের কর্মকৌশলের কাছে পরাজিত।তাহলে জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞায় কোন দিক থেকে শিবিরের ছেলেরা পিছিয়ে আছে ?
একটু ভাবুন তো –
জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় সকল নেতা, 64 টি জেলার অধিকাংশ জেলা আমীরসহ হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গত চার বছর ধরে আটক রাখার পরও অবশিষ্ট কর্মীদের উপর সরকার যে স্টীম রোলার চালাচ্ছে , এই অবস্থাটি যদি আওয়ামীলীগ কিংবা বি এন পির ক্ষেত্রে হত , তাহলে রাজপথে আন্দোলন করার মত তাদের কোন কর্মী খুঁজে পাওয়া তে কিনা ?
আজকে যারা “শিবিরের তান্ডবতা” বলে অহরহ পত্রিকায় হেডলাইনে লিখছেন, তারা কী শিবিরের শান্তিপুর্ন কর্মসূচী দেখেননি ? বাংলাদেশে 68 হাজার গ্রাম সাক্ষী হয়ে আছে শিবিরের শান্তিপুর্ন কর্মসূচীর বিষয়ে।সন্ত্রাস করে আদর্শ প্রতিষ্ঠা শিবিরের কাজ নয়। এই কাফেলা আজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মানুষের ভালবাসায় , বাতিলের মোকাবেলায় ধর্যের পরাকাষ্ঠ দেখিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে অগনিত শহীদ। গত কয়েকদিন আগেও জামায়াত-শিবিরকে মিছিল-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। দেখা গেছে তারা শান্তিপুর্নভাবে তাদের কর্মসূচী পালন করেছে।
তাহলে অপরাধটা কী ? অপরাধ হলো ইসলামের আদর্শ গ্রহণ। আল্লাহ এ বিষয়ে বলেন,“ ওমা নাকামু মিনহুম ইল্লা আইয়াশা আল্লাহু রব্বুল আলামীন” অর্থ্যাৎ মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ঈমান আনা ছাড়া তাদের আর কোন অপরাধ ছিলনা।
একটি কথা জেনে রাখা দরকার। বিদ্রোহ-বিপ্লব সৃষ্টির একটি বড় কারন হলো- মানূষ যখন নিজেদেরকে সব ধরনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত মনে করে, তখন তার মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় । ক্রমে ক্রমে এই অসন্তোষ যত বৃদ্ধি পায় ,ততই তার মধ্যে দ্রোহ কাজ করে । একপর্যায়ে মানুষ হিসাবে তখন অধিকার আদায়ের জন্য তার মধ্যে বিপ্লবী মানুষিকতা সৃষ্টি হয়।এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এই অবস্থায় অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীবনবাজী রাখা তার জন্য কোন বড় ব্যাপার হয়ে দেখা দেয়না। আর আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটা তো আরো একধাপ এগিয়ে। কেননা আল্লাহ এ ব্যাপারে তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের সাহস দিয়ে মনোবল আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন-“ যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমে নিহত হয়, তোমরা তাদেরকে মৃত বলোনা বরং তারা জীবিত।”
রসূল (স) বলেন, “যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমে নিহত হয় তাদের মৃত্যু শাহাদতের মৃত্যূ। শহীদরা কিয়ামতের মাঠে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে।”
এখন আসা যাক, হত্যা করে কোন আদর্শবাদী সংগঠনকে থামানো যায় কিনা ?
ইসলামী আদর্শ গ্রহণ এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত।যারা এটা পায় তাদেরকে আল্লাহ বিশেষ ভাবে পছন্দ করেছেন বিধায় তাকে এই নেয়ামত দান করেছেন। এই নেয়ামত কেমন বিষয় একটু বুঝিয়ে বলি । আপনি অবশ্যই লক্ষ্য করবেন যে, প্রতিদিন একটি নিদিষ্ট সময়ে মুয়াজ্জিন মসজিদে আজান দেন।ধরা যাক, আব্দুর রহমান নামক একজন মানুষ মসজিদের পাশে ব্যবসা করেন অথবা চাকুরী করেন। তিনি নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবীও করেন মুয়াজ্জিন মসজিদে আজানে যখন বলেন “আল্লাহ আকবর আল্লাহ আকবর...........হাই আলা্চ্ছালাহ হাই আলা্চ্ছালাহ ” র্অথ্যাৎ আল্লাহ সবচেয়ে বড়...... নামাজের জন্য এসো । তখন দুর-দুরান্ত থেকে নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দারা সাড়া দেওয়ার জন্য সমস্ত কাজ ফেলে আল্লাহর বড়ত্ব স্বীকার করার জন্য ছুটে আসে। অথচ নিকটে অবস্থানকারী আব্দুর রহমান নামক মানুষটি মসজিদের ভিতরে ঢুকতে পারলো না । এভাবেই তার দিন কেটে যাচ্ছে । আল্লাহর নিকট এই দুই ব্যক্তি নিশ্চয়ই সমান নয়। আল্লাহর দ্বীন কায়েমে নিয়োজিত কর্মীরা সেই সর্বশক্তিমান প্রভুকে ভয় করে , পৃথিবীর কোন তাগুতি শক্তির নিকট মাথা নত করা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্হী। এটা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সব সময় মনে থাকে। কাজেই গুলি করে , হত্যা করে, জেলে পুরে, রিমান্ডে নিয়ে আল্লাহ প্রেমিক মানুষকে থামানো যায়না । এটা আমার আবেগ তাড়িত কথা নয় । এটা ইসলামের অনিবার্য আমোঘ নীতি। রসূল (স) এর সাহাবীরা এর বাস্তব নমুনা রেখে গেছেন।
এদের উপর যতই অত্যাচার করা হবে , আন্দোলন আরো তত বেগবান হবে। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের শফত হলো-
“ তারা নিরব হবেনা, নিথর হবেনা, নিস্তব্ধ হবেনা , যতদিন না আল কোরআনকে এক অমর শাসনতন্ত্র হিসাবে দেখতে পাবে। তারা হয় একাজে সফলতা অর্জন করবে নতুবা মৃত্যুবরণ করবে ইনশআল্লাহ।” কাজেই আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতধারী কর্মীদের উপর ফেরআউনী, শাদ্দাদ, নমরুদের মত আচরণ না করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় অংশ গ্রহন করুন এবং আল্লাহর কৃপা লাভ করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন