“যে মাটিতে জামায়াত-শিবিরের পালাবার জায়গা হবেনা বলে ইমরান দম্ভ করেছে, সেই মাটিতেই ইমরান এর জায়গা হবে কে বলেছে ?

লিখেছেন লিখেছেন ইনসিয়া ০১ মার্চ, ২০১৩, ১১:৪০:৫২ রাত

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৭:৪৯ রাতটায় “ইমরানের আশা পুরণ হবে না কোনদিন ’ –এই মর্মে একটি লেখা বিডি টুডেতে প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে সেলিম জাহাঙ্গীর আমার লেখায় একটি মন্তব্য করেছেন।

লেখাটি নিম্নরুপঃ

আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সা: কে মহান চরিত্রের অধিকারী’বলে পরিচিতি দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা: নিজেই বলেছেন,‘মানবজাতির চরিত্রের উৎকর্ষতা সাধনের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। যুগে যুগে ফের‘আউন, নমরুদ, আবু জেহেল, আবু লাহাব, মুসাইলামাসহ যারাই তাঁর নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ নবী রসূলের চরিত্রে কলঙ্কের দাগ ফেলতে চেষ্টা করেছে তাঁরাই দুনিয়ায় অত্যন্ত অপমান-অপদস্থ আর বেদনাদায়ক কষ্ট ভোগ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।ইতিহাস তার স্বাক্ষী হয়ে আছে।

আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ সা:-এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ছিল আকাশের মতো বিশাল। প্রতিভাদীপ্ত ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ায় তিনি অল্প দিনের মধ্যেই পাথরসম কঠিন আরব হৃদয়গুলোকে মোমের মতো নরম করতে সক্ষম হয়েছিলেন।শুধু তরবারি দিয়ে নয়; বরং মমত্ব আর ভালোবাসা দিয়েও তিনি জয় করেছিলেন পৃথিবীবাসীর মন। তাঁর সুপরিকল্পিত দাওয়াতের ফসল হলো এমন একশ্রেণীর চিরতরুণ, আল্লাহ ও রসূল প্রেমী মানুষ ,যাঁরা ছিলেন বুদ্ধির গভীরতায় ও দর্শনের দীপ্তিময়তায় উদ্ভাসিত। যাঁদের যৌবন ছিল স্বচ্ছ-পবিত্র, জীবন ছিল সত্যের বিরুদ্ধে বজ্রকঠিন হাতিয়ার, যুদ্ধের ময়দানে সিংহের ন্যায় গর্জনকারী, বাতিলের বিরুদ্ধে উত্তাল তরঙ্গ তুফান। জর্জ বার্নার্ড শ যথার্থই বলেছেন, ”I believe that if a man like him (Muhammad) were to assume the dictatorship of the modern world he would succeed in solving its problems in a way that would bring it the much needed peace and happiness.”

অর্থ্যাৎ,আজো যদি মহানবী সা:-এর ন্যায় একজন নিঃস্বার্থ মানবদরদি মহামানব থাকত, তবে পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে শান্তি ও উন্নয়নের প্রবল স্রোত বয়ে চলত।

সাইয়্যেদুনা মুহাম্মদ সা: হলেন একমাত্র উৎস, যা থেকে ভরে নেয়া যায় অঢেল জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সম্পদ। সভ্যতার উন্নয়নের চূড়ান্ত মডেল হলেন মহানবী সা:। তিনি যে জীবনব্যবস্থা রেখে গেছেন তা উন্নতি, অগ্রগতি, আধুনিকতা প্রগতির সর্বোক্ষেত্রই প্রযোজ্য।

আল্লাহ তার কোরআনে বলেছেন, “ তোমাদের অনুসরনের জন্য রসূল (স) এর চরিত্রই হলো উত্তম আদর্শ।”

আল্লাহর এই নিদের্শ অনুসরণ করে রসূল প্রেমী উম্মতগন তার দৈনন্দিন জীবন-যাপন পরিচালনা করেন।

আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন,

“ আল্লাহ সত্য দ্বীন সহকারে রসূল (স) কে প্রেরণ করেছেন, যাতে কিনা সকল বাতিল মতাদর্শের উপর আল কোরআনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।এতে মুশরিকগন যতই অপছন্দ করুক না কেন?”

এই কোরআন হলো মুসলমানদের মৌলগ্রন্থ। এই গ্রন্থের অনুসরনের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তোষ্ট অর্জন করা সম্ভব।আল্লাহর এই নিদের্শ প্রতিপালন করতে গিয়ে যুগে যুগে সকল নবী-রসূল বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

"কখন এমনটি ঘটেনি যে, আমি কোন জনপদে কোন সতর্ককারী পাঠিয়েছি এবং সেই জনপদের সমৃদ্ধিশালী লোকেরা একথা বলেনি যে, তোমরা যে বক্তব্য নিয়ে এসেছ আমরা তা মানি না।" (৩৪:৩৪)

অনেক প্রাচুর্য এবং নেয়ামতে মত্ত থেকে যুগে যুগে অত্যাচারী শাসক ঈমানদারদের নির্যাতন চালিয়েছে। অন্যদিকে ঈমানের পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি অংশ নিতে হয়েছিল নবী-রাসুলদের, অতপর তাদের সঙ্গী-সাথী ঈমানদারদের, এবং অতপর যারা তাদের নিকটবর্তী তাদের। ঈমানদারদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল 'পাগল', 'জাদুকর', 'জোতিষী ', ইত্যাদি হিসেবে - তাদের গালিগালাজ করা হয়েছিল, অপমান করা হয়েছিল। এটি সকল কাল ও অঞ্চলে প্রযোজ্য।

আল্লাহ আমাদের বলছেন:

"তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি ৷ তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল ৷ এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চীৎকার করে বলে উঠেছিল, অবশ্যিই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই ৷" (২:২১৪)

"আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে তাদের উত্তম খবর শোনাও।" (২:১৫৫)

"তোমাদের অবশ্যি ধন ও প্রাণের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এবং তোমরা আহলি কিতাব ও মুশরিকদের থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে৷ ... (৩:১৮৬)

"যখন তারা (শত্রুরা) ওপর ও নিচে থেকে তোমাদের ওপর চড়াও হলো, যখন ভয়ে চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল, প্রাণ হয়ে পড়েছিল ওষ্ঠাগত ... " (৩৩:১০)

মুমিনরা একটি অনবরত 'ভয়', 'নিগ্রহ' এবং 'দারিদ্র্য' অবস্থার মধ্য দিয়ে বসবাস করছিলেন। ভয়াবহ ক্ষুধার যন্ত্রনায় তাদের পেটে পাথর বেধে রাখতে হয়েছিল। ঈমানদারদের নেতা নবীজি (দ) কখনো একদিনে দুই বেলায় পেট ভরে খেতে পারেননি (মুসলিম: ২৯৭০)।

উপরন্তু নবীজিকে বিভিন্ন ভাবে মনো-কস্ট দেয়া হয়েছিল - যেমন তার সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী (ঈমানদারদের মা) সম্পর্কে অপবাদ ছড়িয়ে দিয়ে। জীবনের শেষ প্রান্তে মুসায়লামা, তুলায়হা এবং আল-আনসি নামক ভন্ড -নবীরাও তাকে কস্ট দেয়। যখন তিনি মারা যান, তখন তার যুদ্ধের পোশাক এক ইহুদির কাছে ত্রিশ সা' পরিমান গমের বিনিময়ে বন্দক ছিল (বুখারী: ২৯১৬)।

নবীরা এবং ঈমানদারেরা সব সময় পরীক্ষা এবং নির্যাতন মোকাবেলা করেছিলেন । প্রত্যেকে তাদের ঈমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাদের কাউকে কাউকে করাত দিয়ে চিরে দুই টুকরা করা হয়েছিল কিন্তু তবুও তারা ঈমান-চুত হননি। মহানবী (দ) বলেন,

"ঈমানদারদের উদাহরণ হল একটি গাছের মত - প্রবল বাতাস তাকে সর্বদা একবার একদিকে বাক করে ফেলে আবার পরক্ষনেই অন্যদিকে। ঈমানদাররা এভাবে সবসময়েই পরীক্ষার মুখোমুখি হন।" (বুখারী: ৫৬৪৪, মুসলিম: ২৮০৯)

"ঈমানদারদের উদাহরণ একটি সতেজ গাছের কচি কান্ডের মতন; প্রবল বাতাস কখন ও তাকে বাকিয়ে ফেলে, কখনও ভেঙ্গে ফেলে, কখন ও প্রবল বাতাসেও তা দাড়িয়ে থাকে যতক্ষণ না শুস্ক ও মৃত হয়ে যায়।" (বুখারী: ৫৬৪৩, মুসলিম: ২৮১০)

ঈমানদাররা কঠিন দুরাবস্থার মাঝেও সন্তুস্ট এবং নিশ্চিত থাকেন। এ গুনটি তাদের আল্লাহর ভালবাসার দিকে ধাবিত করে। এর কারন হল: পূর্ণ-কর্মশীল এবং পাপী উভয়েই পরীক্ষার মুখোমখি। আল্লাহ প্রদত্ত এ পরীক্ষায় যে অসন্তুস্ট থাকে, সেই আল্লাহর অসন্তুষ্টির পাত্রে পরিনত হয় - এবং দুনিয়া এবং আখেরাত বরবাদ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যেকোনো অবস্থায় যিনি সর্বদা সন্তুস্ট এবং খুশি থাকেন, তার জন্য বরাদ্দ হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি যা জান্নাত এবং তার মাঝের যেকোনো কিছুর তুলনায় মূল্যবান। আল্লাহ বলেন:

"এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহমান হবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে৷ এসব চির সবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে৷ এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য৷ " (৯:৭২)

উপরিল্লিখিত মৌল গ্রন্থ কোরআন ও হাদিসের মর্মাথ অনুসরন করে যতটুকু জানি ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রত্বের পাশাপাশি আল্লাহর জমীনে তার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আল্লাহকে রাজী খুশি করে পরকালে চুড়ান্ত পুরস্কার পেতে চায়।এই উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে 1977 সালে শিবির নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।সেই থেকে সংগঠনটি যে সঠিক পথে আছে, তার প্রমান হলো-শুরু থেকেই খোদাদ্রোহী বাতিল শক্তির পক্ষ থেকে বাধার সম্মুখীন হওয়া।কেননা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও তার বিধিবিধান প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কী ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।কাজেই আজকের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগাররাসহ রাম-বাম-আমদের পক্ষ থেকে যে বাধা আসছে, তা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগার নাস্তিক ডাঃ ইমরান সরকার দম্ভভরে শিবির কে মৌলবাদী, মানবতাবিরোধী,খুনি, রাজাকার, হিসাবে চিহিত করার যে প্রয়াস চালাচ্ছে এবং সংগঠন টি নিষিদ্ধ করার জন্য মিথ্যার বেসাতি করছে , তাতে ধরা যাক, সংগঠনটি ব্যান্ড করা হলো। তাতে কী শিবির নামাজ, রোজা, সত্য কথা বলা, মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করাসহ পড়ালেখা বন্ধ করে দেবে ? তাতে কী আল্লাহ ও তার রসূল (স) এর নাম হিদয় থেকে মুছে ফেলবে? না, কখনোও না। শিবিরের ছাত্ররা অন্যান্য ছাত্র সংগটনের ন্যায় কোন ব্যক্তি পুজায় বিশ্বাস করেনা।এখানে মুজিব,জিয়া এরশাদ, গোলাম আজম, নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লার বন্দনা করেনা।শিবির বন্দনা করে সর্বশক্তিমান সেই আল্লাহকে যিনি আসমান-জমীনের সমস্ত মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। সংগঠন নিষিদ্ধ করে এদের কর্ম যাত্রাকে কখনোও বন্ধ করা যাবেনা।

ব্লগার ডাঃ ইমরান বলেছেন,

“ চূড়ান্ত মৌলবাদী, মানবতাবিরোধী কাজে যারা নিজেদের কাজে যারা নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আর এই দলটিকে বাদ দিলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর যে কাঠামো তার মধ্যেই নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব।”

তরুণ প্রজন্মেরই একটি অংশ বর্তমানে জামায়াত-শিবিরেও সম্পৃক্ত। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাও এতে জড়িয়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, এটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধাপরাধী, সহিংসতায় বিশ্বাসী দলটি এদের টার্গেট করে রিক্রুট করছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মগজধোলাই করে দলে রাখছে। সহিংসতায় বাধ্য করছে। এই বিভ্রান্ত তরুণদের ধীরে ধীরে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, প্রগতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের সঙ্গে আমাদের সাইবার যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ প্রতিহত করার জন্য যতটা, তার চেয়ে বেশি তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ।আমি আশা করি তরুণরা দ্রুতই এই দলটি ছেড়ে আমাদের আন্দোলনের পথে এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।”

নাস্তিক ডাঃ ইমরানের মত প্রত্যাশা আবু জেহেল , আবু লাহাবরা ক্ষমতার স্বাদ চিরকাল ভোগ করার জন্য করেছিল । কিন্তু ক্ষমতা স্থায়ী হয়নি। আল্লাহর কৌশলের কাছে তারা পরাজিত হয়েছিলে। ইসলামী আন্দোলনকে নস্যাত করার জন্য শিবির দমনে যে নির্যাতন, জুলুম, অন্যায়, গুম, হত্যা, চালানো হচ্ছে, এতে এত প্রত্যাশা করার প্রয়োজন নেই।সংগঠন নিষিদ্ধ করলেই শিবির ইসলামের আদশ ত্যাগ করে আল্লাহর পর্রিবতে জয় বাংলার শ্লোগান শুরু করবে, এমন ভাবনা ভাবার কোন কারন নেই বরং বাতিলের মোকাবেলায় সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় আরো শক্তিশালী হবে ।জেনে রাখা দরকার-

“শিবির ততদিন র্পযন্ত নিরব হবেনা,নিথর হবেনা, নিস্তব্ধ হবেনা,

যতদিন না আল কোরআনকে এক আমর শাসনতন্ত্র হিসাবে দেখতে পাবে। হয় তারা এ কাজে সফলতা অজন করবে, নতুবা মৃত্যুবরণ করবে ।”

মন্তব্যটি নিম্নরুপঃ

সেলিম জাহাঙ্গীর লিখেছেন :

ইনসিয়া, আপনি বলেছেন: উপরিল্লিখিত মৌল গ্রন্থ কোরআন ও হাদিসের মর্মাথ অনুসরন করে যতটুকু জানি ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রত্বের পাশাপাশি আল্লাহর জমীনে তার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আল্লাহকে রাজী খুশি করে পরকালে চুড়ান্ত পুরস্কার পেতে চায়

১। জামায়াত-শিবির বাদে দেশের সকলেকি কাফের?

২। আপনার কি ধারনা কেবল জামায়াত-শিবির‘ই নামাজ রোজা করে?

৩। জামায়াত এর মাঝে রাজাকার আছেকি?

আপনার ধর্মের যে বয়ান দেন সেটা আপনাদের উপকিতাবের। আপনারা কেবল ধার্মীক আর অন্যরা কাফের ভাবা ঠিক নয়। আল্লাহ্ কোরআনে বলছেন:

১। সূরা বাবারা ২:৭৯ আয়াতে বলেছেঃ

فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـذَا مِنْ عِندِ اللّهِ لِيَشْتَرُواْ بِهِ ثَمَناً قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُونَ

অর্থঃ অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে।

২। সূরা আন-আম ৬:১৫৯ আয়াতে বলছেঃ

إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ

অর্থঃ নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে।

৩। সূরা মায়েদাহ ৫:৪৭ আয়াতঃ

وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الإِنجِيلِ بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فِيهِ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ অর্থঃ যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।

আপনারা নিজের মতবাদ দিয়ে ধর্মের বিচার করেন না। আপনারা যে ধর্মের কথা বলেন সে কাজ কিন্তু করেন না। আপনাদের মাঝে ইয়াজিদের ইসলাম ফুটে উঠে, গত শুক্রবারে জুম্মার নামাজ শেষে সারা বিশ্ব তা চেয়ে দেখেছে। মুহাম্মাদ (সা,) ইসলামটাকে আগে ভালো করে জানুন। জামায়অতের ইসলাম উয়াজিদের ইসলাম, মৌদুদির ইসলাম। আমি জানি আপনি আমার এসিব কথা শুনে তর্ক করবেন। কোরআন সেখানেও আপনাদের সম্পর্কে বলেছে।

৪। সূরা কাহফ ১৮:৫৪ আয়াতঃ

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَذَا الْقُرْآنِ لِلنَّاسِ مِن كُلِّ مَثَلٍ وَكَانَ الْإِنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا

অর্থঃনিশ্চয় আমি এ কোরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়।

হাদীস কোরআন ও ধর্ম রক্ষার জন্য আল্লাহ আপনাদের লিজ দেয় নাই। তার সমস্ত কিছু রক্ষা তিনি নিজেই করবেন বলে কোরআনে ঘোষনা দিয়েছে।

৫। আমিই কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি এবং অবশ্যই আমিই ইহার সংরক্ষক। (সূরা হিজর - আয়াত : ০৯)

৬। ইহা সংরক্ষণ ও পাঠ করাইবার দায়িত্ব আমারই। (সূরা কিয়ামাহ - আয়াত : ১৭)

আপনি বলেছেন: এই কোরআন হলো মুসলমানদের মৌলগ্রন্থ। এই গ্রন্থের অনুসরনের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তোষ্ট অর্জন করা সম্ভব।আল্লাহর এই নিদের্শ প্রতিপালন করতে গিয়ে যুগে যুগে সকল নবী-রসূল বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

আপনি বলেছেন এই কোরআন মূল গ্রন্থ। কেবল এই কোরআন অনুসরণ করেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে হবে। আপনার সাথে একমত নই। কেন? আল্লাহ্ কোরআনের সূলা মায়েদার ৬৮ নাম্বার আয়াতে বলছে চারটি গ্রন্থের কথা। আর আপনি বলছে কেবল কোরআনের কথা।

সূরা মায়েদা ৫:৬৮ আয়াতঃ

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَى شَيْءٍ حَتَّىَ تُقِيمُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم مَّا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَانًا وَكُفْرًا فَلاَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

অর্থঃ বলে হে কিতাবগণ তওরাত, ইঞ্জিল ওযাহা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তোমরা তাহা প্রতিষ্ঠিত নাকরা পর্যন্ত। তোমাদের কোন ভিত্তি নাই। তোমরা প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবর্তীর্ণ হইয়েছে তাহা তাহাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বর্ধিত করিবে। সুতরাং তুমি কাফের সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ করিও না।

আপনার কাছে প্রশ্ন

১. আপনি কোরআন কতটুকু পড়েছেন?

২. কোরআন কিভাবে পড়েছেন?

৩. নাসেখ-মানসুখ বোঝেন?

৪. কোন তাফসির পড়েছেন?

৫. হাদীস সংকলনের ইতিহাস জানেন?

৬. হাদীসের প্রয়োজন কেন হল জানেন?

৭. হুকম শরীয়া বোঝেন?

৮. কারীনা বোঝেন?

৯. সহীহ, জয়ীফ, হাসান, জাল হাদীসের পার্থক্য বোঝেন?

১০. মুস্তাহিদ চেনেন? মুস্তাহিদ হতে হলে কি কি গুনাবলী থাকতে হয় জানেন

সূরা বাকারা ২:১১৩ আয়াতঃ

وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَى عَلَىَ شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ كَذَلِكَ قَالَ الَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ فَاللّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُواْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

অর্থঃ ইহুদীরা বলে, খ্রীস্টানরা কোন ভিত্তির উপরেই নয় এবং খ্রীস্টানরা বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়। অথচ ওরা সবাই কিতাব পাঠ করে! এমনিভাবে যারা মূর্খ, তারাও ওদের মতই উক্তি করে। অতএব, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল।

এমনিভাবে যারা মূর্খ, তারাও ওদের মতই উক্তি করে আপনি কি সূরা বাকারার এই আয়াত অনুযায়ী তাদের মত মূর্খ নন? রেগে গেছেন নাকি? রাগ করেন না। সত্যকে মেনে নেন পরাজিত হবার কিছু নাই।

উত্তরটি এভাবে দিলামঃ

আপনাকে ধন্যবাদ জানাই আমার লেখাটি পড়ার জন্য । আর কৃতজ্ঞতা জানায় সমালোচনা করার জন্য ।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই এই জন্য যে, আমার লেখাটির জবাব দেওয়ার জন্য আপনি কোরআনের বিভিন্ন সুরা বাছাই করে উদ্ধৃতি দিতে পারছেন।প্রথমেই আপনাকে জানিয়ে রাখি, আমি কোন জামায়াত-শিবির করিনা ।তারপর আপনি যে সব প্রশ্ন ছুড়েছেন, তা জানতে গেলে আপনাকে একটু ধর্য্যসহকারে আমার লেখাটি পড়তে হবে যদিও একটি মন্তব্যের উত্তর এত বড় হওয়া ঠিক নয়।কিন্তু এটা এমন বিষয় যা অল্প কথায় লেখা যায়না ।

এবার আমার লেখাটি আবার একটু দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

■ জামায়াত-শিবির বাদে সকল মানুষ কাফের –একথা কোথাও কী বলেছি? ■ জামায়াত-শিবির‘ই কেবল নামাজ রোজা করে -এটা আমার লেখায় কোথাও উল্লেখ আছে কী?

আমার কাছে মনে হয়েছে , আপনি কোরআন-হাদিসের অনেক বিষয়ে হয়ত জানেন । কিন্তু বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো এই জানার মধ্যে ইসলামের মুল থিম সম্পর্কে অনেক কিছু ভুল জানা রয়েছে । আর রয়েছে জামায়াত-শিবির সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা।

একজন মুসলমানের কাছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের প্রত্যেকটি বানীই অনুসরনীয় ।যুগে যুগে পথ ভোলা মানুষকে পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তার মনোনীত ব্যক্তির দ্বারা গাইড লাইন দিয়ে পাঠিয়েছেন।কে না চাই ভ্রান্ত পথ থেকে সঠিক পথে আসতে ? আপনার উল্লেখিত কোরানের আয়াত ও আমার লেখায় কোরআনের আয়াত একই গ্রন্থের, একই উদ্দেশ্যে প্রেরিত। বিশ্বাস, বোধগম্য এবং আমলের ক্ষেত্রে আমার ও আপনার বিষয়ে মতপাথক্য হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তবুও হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। এখানেই হলো সমস্যা।

আল্লাহ তার প্রিয় হাবিবকে যে পথ বাতলে দিয়েছেন এবং তা অনুসরনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন-সেইপথটি সঠিক ভাবে না জানতে পারলে ইসলাম পরিপালন সম্ভব হবেনা ।আমি জানিনা মওদুদীর বা ইয়াজিদের ইসলাম কেমন ? আমি যে আয়াতগুলো উল্লেখ করেছি সেগুলি কোরআনের আয়াত।, সেখানে মওদুদীর বা ইয়াজিদের আয়াত বলে কোন কিছু উল্লেখ নেই।

আপনি বলেছেন,

“আপনারা নিজের মতবাদ দিয়ে ধর্মের বিচার করেন। আপনারা যে ধর্মের কথা বলেন সে কাজ করেন না। আপনাদের মাঝে ইয়াজিদের ইসলাম ফুটে উঠে, গত শুক্রবারে জুম্মার নামাজ শেষে সারা বিশ্ব তা চেয়ে দেখেছে।”

আপনি কোন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন জানিনা।তবে সাধারন সেন্সে বুঝা উচিত কোন ধর্মপ্রাণ মানুষ মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারেন না।গত শুক্রবারে জুম্মার নামাজ শেষে আসলে কী হয়েছে –এটা যদি শাহবাগের উত্তেজনায় না ভেবে ভালভাবে জানতেন তাহলে ঐ দিন মসজিদে মুসল্লীরা যে কষ্ট পেয়েছেন তার সাথে আপনারও কষ্ট হতো।আপনি সহমর্মীতার বদলে মুসল্লীদের উপর অপবাদের বোঝা চাপিয়ে দিলেন।

আপনার চোখে কখনোও কী টি আর গ্যাসের ধুয়া লেগেছে ? না , মনে হয় লাগেনী। ঐ দিনে যারা মসজিদে নামাযে গিয়েছিলেন আমি তাদের কাছে শুনেছি, ঐ দিন শুরু থেকেই মুসল্লীদেরকে মসজিদে প্রবেশ করতে পুলিশ বাধা সৃষ্টি করেছে। এরপর এক পর্যায়ে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছে। অতপরঃ নামাজান্তে যখন মুসল্লীরা বেরিয়ে মহানবী (স) কে কটুক্তকারী ব্লগারদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে গিয়েছে, তখনই পুলিশ তাদের উপর লাঠি চার্জ সহ রাবার বুলেট, গুলি ও কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।রাবার বুলেটে যখন মুসল্লীরা আহত, কাতরাচ্ছে, সেই অবস্থায় মসজিদের ভিতরে অবস্থানরত মুসল্লীদের লক্ষ্য করে শত শত কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। ফলশ্রতিতে কাদানে গ্যাসের তীব্র ঝাঁঝালো যন্ত্রনায় ছটফটরত মুসল্লীগনের চোখ বন্ধ হয়ে যায়। এর থেকে বাঁচার জন্য বিঞ্জানসম্মত উপায় হলো আগুন জালিয়ে গ্যাসের তীব্রতা নষ্ট করা। তখন মসজিদের পরিত্যক্ত কাপড় জালিয়ে সেই কাজটিই করেছে মুসল্লীরা । আর এটাকেই আপনারা চালিয়ে দিলেন মসজিদের ভিতরে জামায়াত-শিবিরের আগুন বলে। বা ! বা! বা! আপনার ইসলামের বুঝ।

আপনি বলেছেন,

“ইসলামকে আগে ভালো করে জানুন। জামায়াতের ইসলাম ইয়াজিদের ইসলাম, মৌদুদির ইসলাম। আমি জানি আপনি আমার এসব কথা শুনে তর্ক করবেন।”

কাজী নজরুল বলেছেন-“তর্ক করে দুঃখ ছাড়া কী পেয়েছিস অবিশ্বাসী।’ একটুও না । আমি আপনার সাথে তর্ক করে আমার আমল নস্ট করতে যাব কেন । আমি ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি চায়। এর জন্য আমি ইসলাম মেনে চলার চেষ্টা করি । ম্ওদুদী বা ইয়াজিদ আমার ভোরণ-পোষন চালায় না।আমি আল্লাহর রিজিকের উপর নিভর্রশীল। শাহবাগের গণজাগরণে অবশ্য খরচ চালানোর জন্য ঈশ্বরের অভাব নেই।সুন্দর সুন্দর পোলাও, বিরানি, টাকা-পয়সাসহ সবই পাওয়া যায়।তাহলে বলুন, আমি কেন প্রকৃত ইসলাম ছেড়ে ম্ওদুদী বা ইয়াজিদের ইসলাম পালন করতে যাব?

আপনি বলেছেন,

“ হাদীস কোরআন ও ধর্ম রক্ষার জন্য আল্লাহ আপনাদের লিজ দেয় নাই। তার সমস্ত কিছু রক্ষা তিনি নিজেই করবেন বলে কোরআনে ঘোষনা দিয়েছে।”

এর উত্তরে বলব, আমাকে জোর করে কোন দলে ঢুকাতে চাচ্ছেন কেন? নাউযুবিল্লাহ,হাদীস-কোরআন ও ধর্ম রক্ষার জন্য আল্লাহ আমাকে লিজ দেবে কেন । এটা তিনি নিজেই সংরক্ষন করবেন , যেটি আপনি উল্লেখ করেছেন-

আমিই কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি এবং অবশ্যই আমিই ইহার সংরক্ষক। (সূরা হিজর - আয়াত : ০৯)

এগুলো তিনি কিভাবে সংক্ষন করবেন সেটিই বিবেচ্য বিষয়।

দেখুন, আল্লার ঘোষনা-“ কিছু মানুষ মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নুর(ইসলামকে) কে নিভিয়ে করতে চায়, আর আল্লাহর সিদ্ধান্ত তিনি তার নুরকে সবসময় প্রজ্জলিত রাখবেনই।এতে কাফেররা যতই অপছন্দ করুকনা কেন ।”(সূরা ছফ-8)

এখন যুগে যুগে যেসকল ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রসূল (স) কে অবমাননার মাধ্যমে আল্লাহর নুর তথা ইসলামকে কে নিভিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন তাদের মোকাবেলা করার জন্য অর্থ্যাৎ তার নুরকে প্রজ্জলিত রাখার জন্য এই জমীনে তার কিছু পছন্দসই বান্দাও সৃষ্টি করছেন।তারা সবসময় আল্লাহ ও তার নবী রসূলের গাইড লাইন ফলো করে তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছেন। এটাও করেছেন আল্লার ইশারাতে । যেমনঃ আল্লাহ বলেন,

“ শযতান চক্রান্ত করে আর আমি কৌশল অবলম্বন করি। আর আমার কৌশলই সবসময় বিজয় লাভ করে।”(ইমরান-54)

শয়তান কারা ? তাদেরকে চিনব কীভাবে ?

আসুন, তাদের কে চিনিয়ে দিই ।এই প্রশ্নের জবাবেই পাওয়া যাবে প্রকৃত ইসলাম কী ?

আমরা জানি, কালেমা তাইয়েবা হলো ইসলামের প্রবেশদ্বার।কালিমাটি কী ? কালিমা হলো-“ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ”

অর্থ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।মুহাম্মাদ (স) আল্লার রসূল। এ ঘোষনাটি যখন কোন মানূষ দেয়, তখন প্রকৃত অর্থে সে কী বলে? এটা কোন আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত নয়। আল্লাহ জোর করে এটা কারো উপর চাপিয়েও দেননি ।বিশ্বাস করা বা না করার স্বাধীনতাও দিয়েছেন। এই কালিমা যিনি সজ্ঞানে বিশ্বাস করে পড়বেন, তখন তাকে এর মর্মকথা জানতে হবে, বুঝতে হবে।

কালিমার প্রথম অংশ হলো-“ লা ইলাহা ” অর্থ্যাৎ কোন ইলাহ নেই, কোন মাবুদ নেই, কোন সর্বশক্তিমান স্বত্তা নেই –এই কথা মনে প্রানে গেঁথে নেয়া। এটার একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝায়। ধরুন, একটি চেয়ারে আপনি প্রধানমন্ত্রীকে বসতে দেবেন। চেয়ারের উপর ময়লা, আবর্জনা, ইদুরের পায়খানা, মাকড়সার জাল ইত্যাদি পড়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর বসার জন্য এই ধরনের চেয়ার উপযুক্ত নয় ।তাই প্রথমে চেয়ার থেকে যাবতীয় ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করে প্রমান করতে হবে যে, চেয়ার পরিস্কার , সেখানে কোন আর্বজনা নেই। এই ধরনের পরিস্কার চেয়ারই কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত রাখতে হবে।এখানে অন্য কোন ব্যক্তি বা জীব জানুয়ারের জন্য বরাদ্দ থাকবেনা।

কালিমার দ্বিতীয় অংশ-‘ ইল্লাল্লাহ’ অর্থ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া ।তাহলে কালিমা অর্থ দাড়াল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।

কোন ব্যক্তি যখন এই কালিমা পড়ে মুসলমান হবে ,অর্থ্যাৎ পরিস্কার চেয়ারে আল্লাহকে বসতে দেবে অর্থ্যাৎ তখন তার মনের মধ্যে আল্লাহর এই জায়গায় কারো স্থান দিতে পারবেনা ।তখন তার সমস্ত কার্যকলাপ পরিচালিত হবে আল্লাহর র্নিদেশে।

আল্লাহর নির্দেশ কী ? কোথায় পাব ? সেই জন্য কালিমার তৃতীয় অংশ-‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ” অর্থ্যাৎ মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল”।

এবার আসুন, আল্লাহর রসূল কী দাওয়াত দিয়েছেন ? মানুষের গড়া মতবাদ থেকে এই দাওয়াতের র্পাথক্য কোথায় ? দাওয়াতের প্রতিক্রিয়া কী হলো এবং কেন হলো তা দেখি ?

দাওয়াতের অর্থ আহবান করা, ডাক দেয়া। যুগে যুগে নবী রসূলগণ যে পথে মানুষকে ডাক দিয়েছেন , মুহাম্মাদ(স)ও একই ভাবে মানুষকে ডাক দিয়েছেন।তবে এই পাথর্ক্য হলো আহবানটা ছিল ব্যাপক,পরিধি ছিল গোটা পৃথিবী আর কর্মক্ষেত্র ছিল পুর্নাঙ্গ জীবন। উপরিল্লিখিত কালিমা তাইয়েবা ছিল আন্দোলনের প্রাণ এবং এই কালিমার স্বীকারোক্তি ও নিজের সর্বাঙ্গীন জীবনে প্রতিফলিত করায় ছিল মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি।

এই কালিমার কয়েকটি কথায় কিসের আহবান ছিল তা দেখা যাক-

1) আল্লাহর দাসত্ব ও নবী (স) এর নেতৃত্ব মেনে নেয়া।অর্থ্যাৎ আল্লাহ হচ্ছে মালিক, মনিব, সার্বভৌম, স্বয়ংসম্পুর্ন, বিধানদাতা, আইন রচয়িতা, যাবতীয় উপাসনা ও সেজদা পাওয়ার এক ও একক সত্বা। আল্লাহর দাসত্বের পথ হচ্ছে নবী (স) এর নেতৃত্বের দ্বিধাহীন আনুগত্য।নবীর আনুগত্যই হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য।

2) কর্মবৈষম্য বা মোনাফেকী স্বভাব পরিত্যাগ করে একনিষ্ঠ আত্বসর্মপনকারী হয়ে যাওয়া। অর্থ্যাৎ নিজের কামনা, বাসনা, ও মনগড়া মতাদর্শের লোভ লালসাকে কোরবানী করে নিজের নৈতিক চরিত্রে, আচার-ব্যবহারে, রৈন-দেনে, সামাজিকতায়, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এক কথায় জীবনের সামগ্রিক বিষয়ে আল্লাহ ও তার রসূলের শরীয়তকে একমাত্র হেদায়েত মেনে নিতে হবে এর বিপরীতে সবকিছুকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

3) খোদাদ্রোহী সৎ লোকদের নেতৃত্ব, কতৃত্ব ও প্রাধান্য নির্মুল করে খোদাভীরু ও সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এই পৃথিবীতে মানব সমাজের অত্যাচার, অবিচার ও দুঃখ-র্দুদশার মূওল রয়েছে অত্যাচারী, পাপী, ও অসৎ লোকের নেতৃত্ব। রাষ্ট্র ও সমাজের চাবিকাঠি যাদের হাতে থাকে, জনসাধারন িইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তাদের আনুগত্য করতে বাধ্য হয়। তাই কালিমা পড়ার পর ঈমানের অপরিহায দাবী হলো নবীর নেতৃত্ব সমাজে প্রতিষ্ঠা করা ।আদর্শের নিজস্ব কোন হাত পা নেই। মানুষই একে বান্তবায়িত করে। আর এটি ব্যক্তিগত প্রছেষ্টায় কখনোও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সামগ্রিক প্রচেষ্ঠা এবং সৎ ও আদশবাদী দল।যদিও এক শ্রেণীর মানুষ বলে ধম পালন ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে ঈমানী দায়িত্¦ পালন থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখে আর সমাজে খোদাবিমুখ মতাদশ পালনে ব্রতি হন।

ইতিহাস সাক্ষী দেয় দুনিয়ার বুকে যখন Ôলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু- এর আওয়াজ বুলন্দ হয়েছে, তখনই তিন শ্রেণীর লোক বিদ্রোহ ঘোষনা করেছে।

ক)ক্ষমতাশীন মহল, খ) অর্থনৈতিক শোষনের দল, গ) ধর্মব্যবসায়ী মহল

মহানবী (স) এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।একটু ভাবুন তো- নির্মল, নিষ্কলংক চরিত্রের অধিকারী, বিশ্বস্ততার প্রতীক 40 বছর পযর্ত্ন যার কোন শত্র বা সমালোচক ছিলনা, নবুওয়াত প্রাপ্তীর পর সঙ্গে সঙ্গে ঐ একই সমাজে এমন কী অন্যায় বা অপরাধজনক কাজ করলেন, যার জন্যে গোটা সমাজ ইট, পাথর, লাঠি নিয়ে ছুটে এলো। শুরু করল নির্যাতনের এক করুন অধ্যায়এবং শেষ পর্যন্ত তার প্রিয় জন্মভুমি থেকে তাকে বহিস্কার করা হলো।এই নিযার্তন শুধু আহবানকারীর উপরই সীমাবদ্ধ থাকল না , এই আহবানে যারা সাড়া দিয়েছিল তাদের উপর শুরু হল অত্যাচারের স্টীম রোলার।সুমাইয়া, বেলাল, খাব্বাবসহ অসংখ্য সাহাবী অত্যাচারের শিকার হয়েছিল।

এখন প্রশ্ন হলো শত্রতা ও বিদ্রোহের কাতারে শামিল হলো কারা ? এর উত্তর জানা আবশ্যক।

কালিমার মধ্যে আল্লাহ ছাড়া য প্রভুত্বকে অশ্বীকার করা হয়েছে, সেই প্রভুত্ব খতম করে সমাজে আল্লাহর দাসত্বমুলক সমাজ গড়ায় প্রথমেই বাধা আসল ক্ষমতাশীন মহল, যারা ছিল ক্শমতায় সমাশীন, রাষ্ট্র শক্তি যাদের হাতে ছিল কেন্দ্রিভুত। তারা এই কালিমার আওয়াজের মধ্যে দেখতে পেলেন নিজেদেরই মৃত্যু। তাই শুরু করেছিল চরম বিরোধিতা। এই কাতারে ছিল আবু জেহেল, আবু লাহাব, আবু সুফিয়ানপ্রমুখ।

দ্বিতীয় পর্যায়ে যারা বিরোধিতায় এগিয়ে এসেছিল, তারা হল অর্থনৈতিক শোষকের দল। এদের বাহুবল ছিলনা, ছিলনা রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের সামর্থ কিন্তু অর্থে ছিল প্রাচুর্য। সমাজের বুকে দুর্ণীতি, শোষন ও চৌযবৃত্তি করে অর্থের পাহাড় গড়ার রাস্তা তৈরি করে নেয়। সুদী কার বার চালু করে, ওজনে কম দিয়ে, ভেজাল মিশিয়ে, শ্রমিককে ফাঁকি দিয়ে, নারীকে দেহ ব্যবসার বস্তু বানিয়ে এবং মদ ,জুয়া কালো বাজারীর মাধ্যমে শোষনের হাজারো পাইপ তৈরি করে সমাজের অর্থকে কয়েকজন মানুষের হাতে কুক্ষিগত করবার ব্যবস্থা পাকাপাকি করে। কালিমার আওয়াজকে রুখবার জন্য এই দ্বিতীয় ম্রেণীর দল প্রথম শ্রেণীর সাথে হাত মিলায়।

তৃতীয় পর্যায়ে যারা বিরোধিতায় এগিয়ে এল, তাদের ছিলনা বাহুবল, ছিলনা পুজি। আল্লাহর সত্য দ্বীন সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এই দল নিজেদের মনগড়া আচার অনুষ্ঠানকে ধর্মীয় নাম দিয়ে বিনা পুজিতে ব্যবসা চালিয়েছে ।অস্তিৃত্বের প্রয়োজনে তারাও উপরোক্ত দুই শ্রেণীর কাছে টাকার বিনিময়ে ঈমানকে বিক্রি করেছে। নিজেরাই সুপারিশকারী সেজে মানুষের পাপ মোচনের দায়িত্ব নিয়েছে টাকার বিনিময়ে, মাজার পুজা চালু করে মানুষের সংগ্রামী চেতনার মৃত্যু ঘটিয়েছে।‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি’ প্রচার করে এবং জীবনের গুরত্বর্পুন দিকগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে রেখে বাতিল সমাজ ব্যবস্থার নায়কদের তুষ্ট করেছে।ভন্ডামীর লেবাসে ঢাকা কখনও পাদ্রী, কখনও বা পীর বা দরবেশ ,আবার কখনও বা কলিকায় বাধা ফকির বা সণ্যাসি।

আল্লাহর দ্বীন মানুষের জন্য সহজ, সরল একটি জীবন ব্যবস্থা । মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সামন্জস্যশীল এই সহজ জীবন ব্যবস্থা বুঝবার মত জ্ঞান তাদের ছিল। শুধুমাত্র নিজেদের প্রবৃত্তির তাড়নায়, প্রভুত্বের নেশায় কালিমার আওয়াজকে বরদাশ্ত করতে রাজী ছিলনা।এখানে উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র কালিমার আওয়াজে তারা ভীতু ছিলনা, সমাজের বুকে কালিমার বাস্তবায়নই ছিল তাদের বিরোধিতার মুল কারন।

এই তিনটি দল পৃথক পৃথকভাবে পৃথক সময়ে নয় বরং যুগপৎভাবে একতাবদ্ধ শক্তি নিয়ে রসূল (স) এর বিরোদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছিল।আজকের ক্ষেত্রেও ঐ একই অবস্থা বিদ্যমান।এখনও এই তিনটি শ্রেণী সমাজে বিদ্যমান রয়েছে । ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের বিরোধিতায় শ্রেণী তিনটি একইভাবে একই সময়ে বিরোধিতায় এগিয়ে আসে। একটু চিন্তা করলেই তা বুঝা যায়।নানা ধরনের অজুহাত সৃষ্টি করে ক্ষমতাকে ধরে রাখার প্রয়াস এখনও বিরাজমান।বতমানে শাহবাগে গণজাগরনের দিকে তাকালে সহজেই তা প্রতীয়মান হয়।

রসূল (স) এর দাওয়াত আর বতমান আলেম-ওলামাদের দাওয়াতের মধ্যে র্পাথক্য কী ?

বতমানকালেও অনেক বুর্জুগকে আমরা দেখি কালিমার দাওয়াত দিচ্ছেন বলে দাবী করেন। কিন্তু তাদের দাওয়াত প্রদানকালে উপরোক্ত তিন শ্রেণীর লোকের রোষানলে আদৌও পড়তে দেখিনা। তাহলে কী ধরে নিব, এরা হেকমতের দিক দিয়ে রসূল (স) এর চেয়েও উন্নত ? নাউযুবিল্লাহ । এ চিন্তা মনে স্থান দেওয়াও কুফুরীর শামিল।এটাও যদি না হয়, তাহলে রাসূলের দেখানো পথে দাওয়াতের কাজ করলে বাধা আসেনা কেন ? এর উত্তর একটু চিন্তা করলেই পাওয়া যায়।

রসূল (স) এর আন্দোলন ছিল মানুষের র্পুনাঙ্গ জীবনকে কেন্দ্র করে। আন্দোলন যেমন ছিল সর্বাত্মক, তেমনি বিরোধীতাও ছিল সর্বাত্মক। তিনি র্নিধারণ করেছিলেন, সমাজে ব্যক্তির মযাদা কী হবে এবং সমাজে তার অধিকারই বা কতটুকু ? শুধু মহাসত্যের দিকে আহবান করেই ক্ষান্ত হননি। মানুষের রাজনৈতিক কাঠামো কী হবে, কীভাবে মানুষ অথনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে তা আল কোরআনের মাধ্যমে মানুষের সার্বিক জীবনের পরিপুন সমাধান প্রিতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাই আজও যদি কেউ তার দেখানো পথে দাওয়াত প্রদান করে , তাহলে নিঃসন্দেহে তিন শ্রেণীর লোকের নিকট থেকে বাধাপ্রাপ্ত হবে।

তাহলে আমরা কীভাবে চলব ?

আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রসূল (স) এর জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদশ।”

এই আদশ আদশ অনুসরনের মধ্যেই ইহকালী শান্তি ও পরকালীন মুক্তি রয়েছে।রসূল (স) এর জীবন ছিল 63 বছরের সমষ্টি। এই 63 বছরের জীবনে যা যা সংঘঠিত হয়েছে , কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলমান দাবী করে, তাহলে তার জীবনেও রসূল (স) এর জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো ঘটতে বাধ্য। কেননা কিয়ামতের আগ পযন্ত উপরোক্ত তিন শ্রেণীর লোক বিদ্যমান থাকবে।নিজেকে মুসলমান দাবী করব, রসূলের পথে চলব অথচ বাধা আসবে না এমনটি কখনও হতে পারে না অন্তত আল কোরআনের শাসন কায়েম হবার পুব পযন্ত। আর যদি বাধা না আসে , তাহলে ধরে নিতে হবে ঐ তিন শ্রণীর সাথে আপোষ করে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া হয় । এই দাওয়াত কখনও রসূল (স)এর দেখানো পথ নয়। এটা অবশ্য ভ্রান্ত পথ।

আমি বলেছি এই কোরআন হলো মুসলমানদের মৌলগ্রন্থ। এই গ্রন্থের অনুসরনের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তোষ্ট অর্জন করা সম্ভব।আল্লাহর এই নিদের্শ প্রতিপালন করতে গিয়ে যুগে যুগে সকল নবী-রসূল বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

আপনি এর সাথে একমত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।পারবেন কেন ? আপনার জানার মধ্যে অহমিকাবোধ কাজ করছে। আপনি যখন মাথার মধ্যে আল্লাহর দাসত্ব বাদ দিয়ে মানবীয় মতাদশের প্রাধান্য দিবেন, তখন অন্যের মতামত সে কখনও গ্রহণ করতে পারেনা।মস্তিষ্ক একটু নিরপেক্ষ করে চিন্তা করুন, তখন উত্তর পেয়ে যাবেন।আমি আবারও বলছি কোরআন হলো মুসলমানদের মৌলগ্রন্থ। আমার লেখায় অন্য কোন মতাদশ স্থান দিয়ে আপনি সূরা মায়েদার 168 নং আয়াতের উদ্ধৃতি দয়ে ভিন্নমত পোষন করেছেন।আমার লেখায় আমি কোথাও পুববতী কিতাব সমুহকে অস্বীকার করিনি।আপনার জানা আছে, পুববতী তিনটি কিতাব তিনটি সম্প্রদায়ের উপর নাজিল হয়েছে। আর আল কোরআন নাজিল হয়েছে মুসলমান তথা বিশ্ববাসীর উপর। কোরআন নাজিলের পর অন্যান্য কিতাবসমুহ অনুসরন মুসলমানদের জন্য হারাম হয়ে গেছে।শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব হিসাবে বিম্বাস করার কথা বলা হয়েছে।

আমার কাছে আপনি নিচের প্রশ্নগুলো করেছেন।

১. আপনি কোরআন কতটুকু পড়েছেন?

২. কোরআন কিভাবে পড়েছেন?

৩. নাসেখ-মানসুখ বোঝেন?

৪. কোন তাফসির পড়েছেন?

৫. হাদীস সংকলনের ইতিহাস জানেন?

৬. হাদীসের প্রয়োজন কেন হল জানেন?

৭. হুকম শরীয়া বোঝেন?

৮. কারীনা বোঝেন?

৯. সহীহ, জয়ীফ, হাসান, জাল হাদীসের পার্থক্য বোঝেন?

১০. মুস্তাহিদ চেনেন? মুস্তাহিদ হতে হলে কি কি গুনাবলী থাকতে হয় জানেন ?

আপনার সাথে আমার কোন পরিচয় নেই। এমনিতেই লেখার কলেবর বড় হয়ে গেছে।প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অনেক সময় ও লেখা আরো বড় হয়ে যাবে।কারন হ্যাঁ বা নাঁ বলে প্রশ্নের উত্তর দেয়া শুভনীয় নয়। শুধু এতটুকু বলা যায় যে, প্রশ্ন গুলো ছুড়ে দিয়ে আপনি নিজেকে বড় জানলেওয়ালা মানুষ হিসাবে প্রমান করতে চাচ্ছেন এবং এর জন্য একটু অহংকারও কাজ করছে বটে। আমি আপনাকে একজন Rvb‡jIqvjv gvbyl wnmv‡e ধরে নিলাম। এতে যদি আপনার জানাটা প্রকৃত ইসলামের পথে কাজে লাগে আমি খুবই খুশি হব।

এবার আসি আবারও শিবিরের কথায়।Avwg e‡jwQjvg মৌল গ্রন্থ কোরআন ও হাদিসের মর্মাথ অনুসরন করে যতটুকু জানি ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রত্বের পাশাপাশি আল্লাহর জমীনে তার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আল্লাহকে রাজী খুশি করে পরকালে চুড়ান্ত পুরস্কার পেতে চায়|

এই কথাটি আপনার ভাল লাগেনী এবং আপনি বিশ্বাসও করেন না । ভাল লাগার কথাও না। মুসলমান হয়ে কালিমার দাবী পুরন করতে গেলে রসুল (স) এর দেখানো পথে চলতে হবে। চলতে গেলে কী হয় , সেটাই আপনাকে জানালাম । আপনি এখন পরিস্কার চেয়ারে শাহবাগের চেতনা জয় বাংলা বসাবেন, না নারায়ে তাকবীরের পুরোধা আল্লাহকে বসাবেনে সেটা আপনার উপরই ছেড়ে দিলাম।

একটু আগে শাহবাগের চত্তর থেকে ব্লগার ইমরান জামায়াত –শিবির কে হুশিয়ার করে বললেন, বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি তাদের।জামায়াত –শিবিরের এখানে থাকার জায়গা নেই।তারা মাটির গর্তে পালাবার জায়গা পাবেনা । এর আগে বলেছিলেন, যেখানে পাওয়া যাবে , সেখানে ধর, ফাঁসি দাও । জবাই কর ইত্যাদি।

ঠিক এমনভাবেই রসূল (স) ও তার সাহাবীদের উচ্ছেদ করার ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল। এমনভাবেই তাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল। আল্লাহর জমীনে বসবাস করে, তারই আলো বাতাস গ্রহণ করে, তারই দেওয়া রিজিক খেয়ে যারা আল্লাহ ও তার রসূল (স) এর নামে কুৎসিত মন্তব্য করেছে, তারাই আবার আল্লাহর পছন্দসই লোকগুলোকে জশনে থাকতে দেবেনা, মাটির নিচেও নাকি পালাবার জায়গা নেই। দেখা যাক, আল্লাহর সিদ্ধন্তের অপেক্ষায় থাকলাম।তবে জানি মাটির এমন এক শক্তি আছে, য সবকিছুকেই সে ধারন করতে পারে।

তাই বলি, মাটির মানুষ হয়ে এত দম্ভ, এত র্স্পধা দেখানো ঠিক নয়। এই মাটি কাকে কখন গ্রহন করবে সেই সিদ্ধান্ত ব্লাগার নাস্তিক ইমরানের নয়, এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক যিনি মাটিকে সৃষ্টি করেছেন তার। ইতোমধ্যে দুইজন ব্লগার মাটির সাথে মিশে গেছেন। মাটি এখন তাদের সাখে কিরুপ ব্যবহার করছে তা কেবলমাত্র তারাই জানে।ফেরআউন, নমরুদ, শাদ্দাদ, আবু জাহেলের মধ্যে খায়েস সৃষ্টি হয়েছিল চিরকাল পৃথিবীতে প্রভু হিসাবে বাদশাহগিরি করার। তাদেরকেও যেতে হয়েছে । কাজেই মাচির বুকে বসবাস করে দম্ভ দেখাবেন না।

কাল র্মাকস বলেছেন, পুজিপতি সমাজে শ্রমিক শ্রেণীর সাথে মালিক শ্রেণীর সংঘাত অনিবায।ঠিক এমনিভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বাতিলের সাথে মুমিনের সংঘাত অনিবায।আজকে জামায়াত –শিবিরসহ অন্যান্য ইসলামপ্রিয় মানুষের অগ্রযাত্রায় রাষ্ট্রের উল্লেখিত তিন শ্রেণীর বাধা আমরা সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করছি। দ্বন্দ্ব আজ অনিবাযভাবে দেখা দিয়েছে। এটা ন্যায় ও বাতিলের দ্বন্দ্ব ।তবে আমার বিশ্বাস, এ পথের মানুষের হারাবার কিছু নেই।কেননা আল্লাহ সবাইকে এ পথে কবুল করেনা।

আজকে যারা আল্লাহর নুরকে নিভিয়ে দিতে চায়, আল্লাহ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাধ্যমে তার দ্বীনকে প্রজ্জলিত করতে চানিএই কাজ করতে গিয়ে যারা শাহাদত বরণ করেছেন, আল্লাহ তাদেরকে কবুল করুন।আর আপনাদের মত ইসলাম জানলেওয়ালা মানুষকে অনুরোধ করব, তিন শ্রেণীর মধ্যে না থেকে প্রকৃত ইসলামে দাখিল হন। আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করুন।

আর একটি কথা না বললেই নয়।আপনি বলেছেন, জামায়াত –শিবির মওদুদী আর ইয়াজিদের ইসলাম পালন করেন।আমি যতটুকু জানি মওদুদী আর ইয়াজিদ দুইজন ব্যক্তি ছিলেন মাত্র । এর মধ্যে ইয়াজিদ কোন বই লিখেছেন কিনা জানিনা তবে মওদুদী ইসলামের উপর অনেক বই লিখেছেন যা কিনা সারা বিশ্বের বড় বড় লাইব্রেরীতে রয়েছে। এর উপর অনেকে গবেষনাও করে থাকে।

আপনি নিজেও কয়েকটি বই পড়তে পারেন।ক) ইসলাম পরিচিতি, খ) সত্যের সাক্ষ্য, গ) দায়ী ইলাল্লাহ ও দাওয়াতে ইলাল্লাহ ইত্যাদি।দেখুন, ইসলামের বিপরীতে তিনি প্রকৃত পক্ষে কী লিখেছেন।

বিষয়: বিবিধ

২২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File