ইমরানের আশা পুরণ হবে না কোনদিন :
লিখেছেন লিখেছেন ইনসিয়া ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৭:৪৯ রাত
আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সা: কে মহান চরিত্রের অধিকারী’বলে পরিচিতি দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা: নিজেই বলেছেন,‘মানবজাতির চরিত্রের উৎকর্ষতা সাধনের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। যুগে যুগে ফের‘আউন, নমরুদ, আবু জেহেল, আবু লাহাব, মুসাইলামাসহ যারাই তাঁর নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ নবী রসূলের চরিত্রে কলঙ্কের দাগ ফেলতে চেষ্টা করেছে তাঁরাই দুনিয়ায় অত্যন্ত অপমান-অপদস্থ আর বেদনাদায়ক কষ্ট ভোগ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।ইতিহাস তার স্বাক্ষী হয়ে আছে।
আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ সা:-এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ছিল আকাশের মতো বিশাল। প্রতিভাদীপ্ত ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ায় তিনি অল্প দিনের মধ্যেই পাথরসম কঠিন আরব হৃদয়গুলোকে মোমের মতো নরম করতে সক্ষম হয়েছিলেন।শুধু তরবারি দিয়ে নয়; বরং মমত্ব আর ভালোবাসা দিয়েও তিনি জয় করেছিলেন পৃথিবীবাসীর মন। তাঁর সুপরিকল্পিত দাওয়াতের ফসল হলো এমন একশ্রেণীর চিরতরুণ, আল্লাহ ও রসূল প্রেমী মানুষ ,যাঁরা ছিলেন বুদ্ধির গভীরতায় ও দর্শনের দীপ্তিময়তায় উদ্ভাসিত। যাঁদের যৌবন ছিল স্বচ্ছ-পবিত্র, জীবন ছিল সত্যের বিরুদ্ধে বজ্রকঠিন হাতিয়ার, যুদ্ধের ময়দানে সিংহের ন্যায় গর্জনকারী, বাতিলের বিরুদ্ধে উত্তাল তরঙ্গ তুফান। জর্জ বার্নার্ড শ যথার্থই বলেছেন, ”I believe that if a man like him (Muhammad) were to assume the dictatorship of the modern world he would succeed in solving its problems in a way that would bring it the much needed peace and happiness.”
অর্থ্যাৎ,আজো যদি মহানবী সা:-এর ন্যায় একজন নিঃস্বার্থ মানবদরদি মহামানব থাকত, তবে পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে শান্তি ও উন্নয়নের প্রবল স্রোত বয়ে চলত।
সাইয়্যেদুনা মুহাম্মদ সা: হলেন একমাত্র উৎস, যা থেকে ভরে নেয়া যায় অঢেল জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সম্পদ। সভ্যতার উন্নয়নের চূড়ান্ত মডেল হলেন মহানবী সা:। তিনি যে জীবনব্যবস্থা রেখে গেছেন তা উন্নতি, অগ্রগতি, আধুনিকতা প্রগতির সর্বোক্ষেত্রই প্রযোজ্য।
আল্লাহ তার কোরআনে বলেছেন, “ তোমাদের অনুসরনের জন্য রসূল (স) এর চরিত্রই হলো উত্তম আদর্শ।”
আল্লাহর এই নিদের্শ অনুসরণ করে রসূল প্রেমী উম্মতগন তার দৈনন্দিন জীবন-যাপন পরিচালনা করেন।
আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন,
“ আল্লাহ সত্য দ্বীন সহকারে রসূল (স) কে প্রেরণ করেছেন, যাতে কিনা সকল বাতিল মতাদর্শের উপর আল কোরআনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।এতে মুশরিকগন যতই অপছন্দ করুক না কেন?”
এই কোরআন হলো মুসলমানদের মৌলগ্রন্থ। এই গ্রন্থের অনুসরনের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তোষ্ট অর্জন করা সম্ভব।আল্লাহর এই নিদের্শ প্রতিপালন করতে গিয়ে যুগে যুগে সকল নবী-রসূল বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
"কখন এমনটি ঘটেনি যে, আমি কোন জনপদে কোন সতর্ককারী পাঠিয়েছি এবং সেই জনপদের সমৃদ্ধিশালী লোকেরা একথা বলেনি যে, তোমরা যে বক্তব্য নিয়ে এসেছ আমরা তা মানি না।" (৩৪:৩৪)
অনেক প্রাচুর্য এবং নেয়ামতে মত্ত থেকে যুগে যুগে অত্যাচারী শাসক ঈমানদারদের নির্যাতন চালিয়েছে। অন্যদিকে ঈমানের পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি অংশ নিতে হয়েছিল নবী-রাসুলদের, অতপর তাদের সঙ্গী-সাথী ঈমানদারদের, এবং অতপর যারা তাদের নিকটবর্তী তাদের। ঈমানদারদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল 'পাগল', 'জাদুকর', 'জোতিষী ', ইত্যাদি হিসেবে - তাদের গালিগালাজ করা হয়েছিল, অপমান করা হয়েছিল। এটি সকল কাল ও অঞ্চলে প্রযোজ্য।
আল্লাহ আমাদের বলছেন:
"তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি ৷ তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল ৷ এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চীৎকার করে বলে উঠেছিল, অবশ্যিই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই ৷" (২:২১৪)
"আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে তাদের উত্তম খবর শোনাও।" (২:১৫৫)
"তোমাদের অবশ্যি ধন ও প্রাণের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এবং তোমরা আহলি কিতাব ও মুশরিকদের থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে৷ ... (৩:১৮৬)
"যখন তারা (শত্রুরা) ওপর ও নিচে থেকে তোমাদের ওপর চড়াও হলো, যখন ভয়ে চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল, প্রাণ হয়ে পড়েছিল ওষ্ঠাগত ... " (৩৩:১০)
মুমিনরা একটি অনবরত 'ভয়', 'নিগ্রহ' এবং 'দারিদ্র্য' অবস্থার মধ্য দিয়ে বসবাস করছিলেন। ভয়াবহ ক্ষুধার যন্ত্রনায় তাদের পেটে পাথর বেধে রাখতে হয়েছিল। ঈমানদারদের নেতা নবীজি (দ) কখনো একদিনে দুই বেলায় পেট ভরে খেতে পারেননি (মুসলিম: ২৯৭০)।
উপরন্তু নবীজিকে বিভিন্ন ভাবে মনো-কস্ট দেয়া হয়েছিল - যেমন তার সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী (ঈমানদারদের মা) সম্পর্কে অপবাদ ছড়িয়ে দিয়ে। জীবনের শেষ প্রান্তে মুসায়লামা, তুলায়হা এবং আল-আনসি নামক ভন্ড -নবীরাও তাকে কস্ট দেয়। যখন তিনি মারা যান, তখন তার যুদ্ধের পোশাক এক ইহুদির কাছে ত্রিশ সা' পরিমান গমের বিনিময়ে বন্দক ছিল (বুখারী: ২৯১৬)।
নবীরা এবং ঈমানদারেরা সব সময় পরীক্ষা এবং নির্যাতন মোকাবেলা করেছিলেন । প্রত্যেকে তাদের ঈমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাদের কাউকে কাউকে করাত দিয়ে চিরে দুই টুকরা করা হয়েছিল কিন্তু তবুও তারা ঈমান-চুত হননি। মহানবী (দ) বলেন,
"ঈমানদারদের উদাহরণ হল একটি গাছের মত - প্রবল বাতাস তাকে সর্বদা একবার একদিকে বাক করে ফেলে আবার পরক্ষনেই অন্যদিকে। ঈমানদাররা এভাবে সবসময়েই পরীক্ষার মুখোমুখি হন।" (বুখারী: ৫৬৪৪, মুসলিম: ২৮০৯)
"ঈমানদারদের উদাহরণ একটি সতেজ গাছের কচি কান্ডের মতন; প্রবল বাতাস কখন ও তাকে বাকিয়ে ফেলে, কখনও ভেঙ্গে ফেলে, কখন ও প্রবল বাতাসেও তা দাড়িয়ে থাকে যতক্ষণ না শুস্ক ও মৃত হয়ে যায়।" (বুখারী: ৫৬৪৩, মুসলিম: ২৮১০)
ঈমানদাররা কঠিন দুরাবস্থার মাঝেও সন্তুস্ট এবং নিশ্চিত থাকেন। এ গুনটি তাদের আল্লাহর ভালবাসার দিকে ধাবিত করে। এর কারন হল: পূর্ণ-কর্মশীল এবং পাপী উভয়েই পরীক্ষার মুখোমখি। আল্লাহ প্রদত্ত এ পরীক্ষায় যে অসন্তুস্ট থাকে, সেই আল্লাহর অসন্তুষ্টির পাত্রে পরিনত হয় - এবং দুনিয়া এবং আখেরাত বরবাদ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যেকোনো অবস্থায় যিনি সর্বদা সন্তুস্ট এবং খুশি থাকেন, তার জন্য বরাদ্দ হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি যা জান্নাত এবং তার মাঝের যেকোনো কিছুর তুলনায় মূল্যবান। আল্লাহ বলেন:
"এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহমান হবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে৷ এসব চির সবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে৷ এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য৷ " (৯:৭২)
উপরিল্লিখিত মৌল গ্রন্থ কোরআন ও হাদিসের মর্মাথ অনুসরন করে যতটুকু জানি ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রত্বের পাশাপাশি আল্লাহর জমীনে তার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আল্লাহকে রাজী খুশি করে পরকালে চুড়ান্ত পুরস্কার পেতে চায়।এই উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে 1977 সালে শিবির নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।সেই থেকে সংগঠনটি যে সঠিক পথে আছে, তার প্রমান হলো-শুরু থেকেই খোদাদ্রোহী বাতিল শক্তির পক্ষ থেকে বাধার সম্মুখীন হওয়া।কেননা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও তার বিধিবিধান প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কী ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।কাজেই আজকের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগাররাসহ রাম-বাম-আমদের পক্ষ থেকে যে বাধা আসছে, তা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগার নাস্তিক ডাঃ ইমরান সরকার দম্ভভরে শিবির কে মৌলবাদী, মানবতাবিরোধী,খুনি, রাজাকার, হিসাবে চিহিত করার যে প্রয়াস চালাচ্ছে এবং সংগঠন টি নিষিদ্ধ করার জন্য মিথ্যার বেসাতি করছে , তাতে ধরা যাক, সংগঠনটি ব্যান্ড করা হলো। তাতে কী শিবির নামাজ, রোজা, সত্য কথা বলা, মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করাসহ পড়ালেখা বন্ধ করে দেবে ? তাতে কী আল্লাহ ও তার রসূল (স) এর নাম হিদয় থেকে মুছে ফেলবে? না, কখনোও না। শিবিরের ছাত্ররা অন্যান্য ছাত্র সংগটনের ন্যায় কোন ব্যক্তি পুজায় বিশ্বাস করেনা।এখানে মুজিব,জিয়া এরশাদ, গোলাম আজম, নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লার বন্দনা করেনা।শিবির বন্দনা করে সর্বশক্তিমান সেই আল্লাহকে যিনি আসমান-জমীনের সমস্ত মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। সংগঠন নিষিদ্ধ করে এদের কর্ম যাত্রাকে কখনোও বন্ধ করা যাবেনা।
ব্লগার ডাঃ ইমরান বলেছেন,
“ চূড়ান্ত মৌলবাদী, মানবতাবিরোধী কাজে যারা নিজেদের কাজে যারা নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আর এই দলটিকে বাদ দিলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর যে কাঠামো তার মধ্যেই নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব।”
তরুণ প্রজন্মেরই একটি অংশ বর্তমানে জামায়াত-শিবিরেও সম্পৃক্ত। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাও এতে জড়িয়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, এটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধাপরাধী, সহিংসতায় বিশ্বাসী দলটি এদের টার্গেট করে রিক্রুট করছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মগজধোলাই করে দলে রাখছে। সহিংসতায় বাধ্য করছে। এই বিভ্রান্ত তরুণদের ধীরে ধীরে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, প্রগতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের সঙ্গে আমাদের সাইবার যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ প্রতিহত করার জন্য যতটা, তার চেয়ে বেশি তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ।আমি আশা করি তরুণরা দ্রুতই এই দলটি ছেড়ে আমাদের আন্দোলনের পথে এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।”
নাস্তিক ডাঃ ইমরানের মত প্রত্যাশা আবু জেহেল , আবু লাহাবরা ক্ষমতার স্বাদ চিরকাল ভোগ করার জন্য করেছিল । কিন্তু ক্ষমতা স্থায়ী হয়নি। আল্লাহর কৌশলের কাছে তারা পরাজিত হয়েছিলে। ইসলামী আন্দোলনকে নস্যাত করার জন্য শিবির দমনে যে নির্যাতন, জুলুম, অন্যায়, গুম, হত্যা, চালানো হচ্ছে, এতে এত প্রত্যাশা করার প্রয়োজন নেই।সংগঠন নিষিদ্ধ করলেই শিবির ইসলামের আদশ ত্যাগ করে আল্লাহর পর্রিবতে জয় বাংলার শ্লোগান শুরু করবে, এমন ভাবনা ভাবার কোন কারন নেই বরং বাতিলের মোকাবেলায় সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় আরো শক্তিশালী হবে ।জেনে রাখা দরকার-
“শিবির ততদিন র্পযন্ত নিরব হবেনা,নিথর হবেনা, নিস্তব্ধ হবেনা,
যতদিন না আল কোরআনকে এক আমর শাসনতন্ত্র হিসাবে দেখতে পাবে। হয় তারা এ কাজে সফলতা অজন করবে, নতুবা মৃত্যুবরণ করবে ।”
বিষয়: বিবিধ
১৯০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন