আস্তিক ও নাস্তিকের দ্বন্দ্ব চিরন্তনঃ

লিখেছেন লিখেছেন ইনসিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৪৭:২৭ রাত

Every action has an equal and opposite reaction ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে’। কেউ যদি মনে করে এক তরফাভাবে সে বিজয়ী হবে, তাহলে সে ইতিহাস, প্রকৃতি, মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব সম্পর্কে কিছু জানেনা।প্রকৃতি জগতে সবকিছু একটি নিয়মের গন্ডীতে আবদ্ধ। প্রত্যেককে তার স্বাভাবিক ধারায় চলার সুযোগ দিতে হয়। আর তা না দিলেই প্রকৃতি তার বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। যেমন: পানির ধর্ম হল নিচের দিকে ধাবিত হওয়া। এখন কেউ যদি তাকে রোধ করতে চাই, তাহলে যেভাবে হোক সে তার গতিপথ তৈরি করে নেবে। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সে প্রথমে তার প্রতিক্রিয়ায় ক্রোধান্বিত হয়ে ফুলতে (উচু হতে) থাকবে । এরপর এক সময় চিরাচরিত পথ ছেড়ে এমন পথে ধাবিত হবে, যেখানে সাজানো, গুছানো, সুন্দর পরিবেশকে নষ্ট করে দেবে। তবুও তাকে থামানো যাবেনা।

এমনিভাবে মানুষ ব্যতিত প্রত্যেকটি জীব ও জড়কে একটি স্বভাবজাত ধর্ম দিয়ে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তারা তাদের ধর্মের বাইরে যেতে পারেনা।এরা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক এটা মানতে তারা বাধ্য। প্রকৃতিতে এই শৃংখলা সর্বোত্র বিরাজমান।কিন্তু মানুষকে জ্ঞান দানের মাধ্যমে এর থেকে ব্যতিক্রম করে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তি(Rationality) ও জৈববৃত্তি(Animality) এই দুই গুনের সমাহারসহ স্বাধীনতা দিয়েছেন। যুগে যুগে তিনি প্রিয় নবী-রসূল প্রেরণ করে পথভোলা মানুষকে সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন। সতর্ক করে দিয়েছেন বিপথগামীদের।জৈববৃত্তির মাধ্যমে কিছু কিছু মানুষ পশুসুলভ আচরণ করলেও বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা অনেকে সরল, সহজ, সুন্দর, পার্থিব কল্যাণ চিন্তা করে।এরা মানুষ, মানবতার কল্যাণে পার্থিব জীবন উৎসর্গ করে।এদের মধ্যে পরকালীন কোন চিন্তা নেই । এমনকি পরকাল সম্পর্কে তাদের বিশ্বাসও নেই। আবার দ্বিবিধ গুণ দিয়ে যে স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টি করেছেন অনেকে তা আল্লাহর নেয়ামত মনে করে মানুষ, মানবতার কল্যাণে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহর নির্দেশ পরিপালন করে থাকেন।

এক্ষেত্রে পৃথিবীতে দুটি শ্রেণীর মানুষ দেখা যায়। ক)খোদায় বিশ্বাসী আস্তিক ও খ)খোদায় অবিশ্বাসী নাস্তিক

খোদায় অবিশ্বাসী নাস্তিকদের মধ্যে অনেকে তাদের চিন্তা চেতনাকে বিভিন্নভাবে যুক্তি, বুদ্ধি দিয়ে আস্তিকদের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নাস্তিক বানানোর প্রচেষ্টা চালান। অপরপক্ষে, খোদায় বিশ্বাসী আস্তিক মানুষগুলো আল্লাহর নিদের্শ মোতাবেক তার প্রেরীত গাইড লাইন অনুসরন করে বিপথগামী মানুষকে সঠিক আনার জন্য চেষ্টা করেন। বিশ্বাসের দিক দিয়ে এই দু শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ্ব অনিবার্য।এই দুই শ্রেণীর মানুষই মানুষের চিন্তা ও কর্ম নিয়ে সারাক্ষন বিশ্লেষন করেন। এক প্রকারের লোক ষড় রিপু আক্রান্ত মানুষকে লোভী, কামাতুর, ক্ষমতালোভী, পরশ্রীকাতরতা, স্বার্থান্ধ, নিষ্ঠুর, পরনির্ভরশীল, নীচ, হিংসা-দ্বেষে ভরপুর একটি জীব হিসাবে আখ্যয়িত করেছেন। আবার এক শ্রেণীর লোক মায়া-মমতা, ভালবাসাপুর্ন দয়ালু এবং মহান সৃজনশীল প্রাণী হিসাবেও নামকরণ করেছেন। অবশ্য নানান দোষে-গুণে মানুষ বৈষয়িক এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং এমতপরিস্থিতিতে সে কখনো হয়তবা কারো কাছে মহানরুপে আবিভুত হয় অথবা নিষ্ঠুর রুপে।

মানুষ, মানুষকে কী নামে আখ্যায়িত করল সেটির চেয়ে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার হলো মহান আল্লাহ মানুষকে কী নামে আখ্যায়িত করেছে- তা নিয়ে।তিনি মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।

মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ এই সত্যটি সকল ধর্ম, বর্ণ, মত, পথের মানুষই এক বাক্যে স্বীকার করে। এই বিষয়টি সকল বিতর্কের উর্ধ্বে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই একটি প্রশ্ন জাগে এমন একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ,জাতি, গোষ্ঠির বিভক্ত মানুষ কী করে পৌছাতে পারলো ?

এমন একটি স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে মানুষ প্রকৃতপক্ষে কী একই স্রষ্টার অস্তিৃত্ব স্বীকার করে নিচ্ছে না? ব্যাপারটি আসলে তাই।কেবলমাত্র এক ও অভিন্ন স্রষ্টার পক্ষেই সম্ভব সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে মানুষকে সৃষ্টি করা । কেননা স্রষ্টা ভিন্ন ভিন্ন হলে এক এক স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে সৃষ্টির সেরা জীব বলে নামকরণ করত । ফলে হিসাবে ও দাবীতে দেখা দিত গরমিল।তাহলে বোঝা যায় যে, সৃষ্টিগতভাবে ধর্ম, বর্ণ,জাতি, গোষ্ঠি নির্বিশেষে সকল মানুষই আস্তিক।

স্বভাবতই আরেকটি প্রশ্ন এসে দাড়ায় যে, মানব ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে , যুগে, ও কালে এমনকি বর্তমানকালেও যারা নিজেদেরকে নাস্তিক বা স্রষ্টায় অবিশ্বাসী হিসাবে দাবী করত বা করে, কিংবা নিজেদেরকে নাস্তিক বলে পরিচয় দিত বা এখনোও দেয়, তারা কারা ?মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে স্বীকার করে নেয়ার পরও তারা নিজেদেরকে নাস্তিক বা স্রষ্টায় অবিশ্বাসী হিসাবে দাবী করার যুক্তিটা কী?‘আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে নিজেদের পরিচয়টা বহাল রাখার পরও তারা ‘আশরাফুল মাখলুকাতের স্রষ্টাকে করছে কেন?

স্রষ্টায় অবিশ্বাসী বা ‘নাস্তিকতাবাদ’ এর লালনের মধ্য দিয়ে তারা কী স্রষ্টার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের খেয়াল-খুশি মত জীবন গড়া এবং পরিচালনা করার বাসনা করছে ? যিনি মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন, তার মহা পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে মনগড়া পথে জীবন পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে নাস্তিকবাদীরা স্বয়ং স্রষ্টা ঘোষিত মানুষের শ্রেষ্টত্ব রক্ষা করবে কীসের জোরে ? স্রষ্টার ঘোষনা মোতাবেক নিজেদেরকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে বেড়াব, অথচ তার অস্তিৃত্বে করব অবিশ্বাস এবং তার বিধানকে করব অমান্য, এটা কী নিছক র্নিবুদ্ধিতা বা পাগলামী নয়?

কিন্তু আর্শ্চায্যের বিষয় হলো , স্রষ্টায় অবিশ্বাসীরা পাগলও নয়, বুদ্ধিহীনও নয়।তারা বিরাজমান বিশ্বে প্রগকত ও উন্নতির দাবীদার এবং সবরকম বিদ্যা, বুদ্ধি, প্রযুক্তির দিক দিয়ে সমৃদ্ধ।তবে ধণ,ঐশয্যের প্রাচুর্য, বেপরোয়া ইন্দ্রীয়-সুখকর আরাম-আয়েশ এবং প্রবল ক্ষমতাধর হওয়া সত্বেও স্রষ্টায় অবিশ্বাসীরা শান্তি খুজে পাচ্ছেনা , পাচ্ছেনা মুক্তি খুজে।নানান রকম সংঘাত, দুর্ভোগ এবং বিভিন্ন জটিল মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা এবং ব্যাধি তাদের সৃষ্ট প্রযুক্তি এবং সৃষ্ট কৃৎকৌশল দ্বারা অর্জিত সূখ বিনষ্ট করে দিয়ে মানুষকে স্রষ্টা কর্তৃক ঘোষিত শ্রেষ্ঠ জীবের সোপান থেকে নিক্ষেপ করে চলছে নিকৃষ্ট স্বভাবের পশুতুল্য অবস্থানে-নিশ্চিত ধ্বংসযঞ্জে।

যাদের বিশ্বাসে স্রষ্টা নেই, তাদের বিশ্বাসে আত্মা, বা রুহুর কোন অবস্থান নেই ।কিন্ত ইন্দ্রীয়-সুখভোগ এবং জাগতিক প্রাচুয্যের বহর তাদের অশান্তি নিরসন করতে সক্ষম হচ্ছেনা ।তাদের ভিতর আজ শান্তি ও মুক্তি অর্জন করার লক্ষ্যে প্রচন্ড ক্রন্দন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই তারা জাগতিক বিষয়গুলোর মধ্যে সুখ খুজে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জাগতিক সুখ আত্মাকে কখনোও পরিপুর্ন করতে পারেনা। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হওয়া সত্ত্বেও যারা স্রষ্টাকে অশ্বীকার এবং প্রত্যাখ্যান করে চলার ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে, তারা নিঃসন্দেহে মূর্খ বিদ্রোহী-‘ইবলিশের খুদে চেলা।’ তাই এরা সব সময় স্রষ্টা প্রদত্ত বিধিবিধান না মেনে বরং তার অসারতা প্রমান করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ।

আজকের শাহবাগ চত্তরে আন্দোলরত মানুষের মধ্যে এমনই কিছু ব্লগার রয়েছে, যারা আল্লাহ ও তার রসুল (স) সম্পর্কে কটুক্তি করে নিজেদেরকে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে চায়।তারা আল্লাহ প্রদত্ত ও রসূল (স) প্রদর্শিত বিধিবিধান পরিপালন তো দুরের কথা বরং তার অসারতা প্রমান করার জন্য বিভিন্ন রকমের যুক্তি খাড়া করেছে।নিজেদের র্মূখতা, ঔদ্ধত্য,জেদ, অতৃপ্তি এবং অশান্তি থেকে জন্ম নেয়া ক্রোধ নিঃশেষ করার নিজেদের মত করে ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে থাকে। তাদের মধ্যে সদ্য দুষ্কৃতকারী কর্তৃক নিহত রাজীব হায়দার হলো একজন। এছাড়া রয়েছে আসিফ মহি উদ্দিন, ইমরান সরকারসহ আরো 19 জন।

স্রষ্টায় বিশ্বাসী মানুষগুলো স্রষ্টা ও রসূল (স) আনুগত্য করার কারনে তাদের মধ্যে সব সময় আত্মিক প্রশান্তি কাজ করে ।এই প্রশান্তিসহ পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে পার্থিব জগতকে তুচ্ছ হিসাবে বিবেচনা করে।আল্রাহর নির্দেশ অনুযায়ী ‘লিউজ হিরাহু অলাদ দ্বীন’ অর্থ্যাৎ দ্বীনকে আল্লাহর জমীনে বিজয়ী করার প্রচেষ্টায় কোন বাধায় তাদের কাছে বড় হয়না।তাইতো সকল বাধা উপেক্ষা করে আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশায় মৃত্যুকে পরোয়া করেনা ।কেননা, আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে আরো অনুপ্রেরনা দিয়ে বলেছেন, দ্বীনকে আল্লাহর জমীনে বিজয়ী করার প্রচেষ্টায় যারা নিহত হয়, তারা মৃত নয় বরং তারা আল্লাহর কাছে জীবিত।

কাজেই ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অনুসারীদের বলব, বুলেট দিয়ে, হত্যা করে, গুম করে, পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে,আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করে আল্লাহ প্রেমিক মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবেনা। আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File