মহান আল্লাহর নাম নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য বিকৃত মস্তিষ্কপ্রসূত উদ্ভট চিন্তার ফসল
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তারিক ০৭ জুলাই, ২০১৫, ১০:০৩:৫৮ সকাল
‘‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাকো।’’ (আল কুরআন, সূরা আল আরাফ, আয়াত-১৮০)
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ্জ ও সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে আওয়ামী মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিষোদাগারের বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম, পর্দা ও আরবী ভাষা নিয়ে কটূক্তি করলেন আওয়ামীলীগের আরেক শুভাকাক্সী প্রবাসী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরি। গত ৩ জুলাই বিকেলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত বাংলাদেশ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ওরফে আগাচৌ এক উদ্ভট তথ্য দিলেন, ‘আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো’। শুধু তাই নয় তার মতে, “আজকের আরবী ভাষায় যেসব শব্দ; এর সবই কাফেরদের ব্যবহৃত শব্দ। তাদের ভাষা ছিল আর-রহমান, গাফফার, গফুর ইত্যাদি। সবই পরবর্তীতে ইসলাম এডাপ্ট করেছিল। যেমন আবু হুরায়রা নামের অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। এভাবে আমরা অনেক নাম রাখি। কাফেরদের মধ্যে যারা মুসলমান হয়েছিলো তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। ’’
ইদানিং আমরা ল করছি কিছু বিকৃত রুচির ব্যক্তি ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করে রাতারাতি বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করেন। আমাদের দুঃখ, এ লোকটার নামের সাথেও মহান আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম লেগে আছে। তার পিতা-মাতা হয়ত ‘গাফফার’-এর খাঁটি বান্দা হিসেবে নিজের সন্তানকে দেখতে চেয়েছিলেন বলেই তার নাম রেখেছিলেন ‘আব্দুল গাফফার’ (মাশীলের বান্দা)। নিজের নামের প্রতি তিনি সুবিচার করতে পারেননি।
কোন গ্রন্থ বা সূত্র থেকে এই আজগুবি তথ্য তিনি পেলেন যে কাফেরদের দেবতাদের নাম থেকে আল্লাহর নামগুলো এসেছে? কাফেরদের সবচেয়ে প্রধান দেবতা ছিল লাত, মানাত ওজ্জা, হোবোল ইত্যাদি। কাফেরদের নাম থেকে আল্লাহর নাম এলেতো সেসব প্রধান প্রধান দেবতার নাম সর্বাগ্রে থাকার কথা। ইসলামের প্রাক্কালে অর্থাৎ আইয়ামে জাহেলিয়াতে যে সব মূর্তি কাবাঘরের অভ্যন্তরে স্থাপিত ছিল জনাব আগাচৌ দয়া করে বলবেন সেসব দেবতার কোন্ নামটি আল্লাহর ৯৯ গুণবাচক নামের অন্তর্ভুক্ত?
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, "আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। (সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত- ১১০)
হাদিসে এসেছে,
"আল্লাহ্ তা’আলার রয়েছে নিরানব্বইটি নাম, একশো থেকে একটি কম’’। (সহীহ বুখারি, মুসলিম ও জামে আত তিরমিযি)
নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করার জায়গা পাননি মি. আগাচৌ। নাম আর উপাধি যে দুটো জিনিস এটা জানার জন্য তো এত বড় শিতি ও কলামিস্ট হওয়ার প্রয়োজন হয় না। নইলে "আবু হুরায়রা" "আবু বকর" যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই জন বিখ্যাত সাহাবীর নাম নয়, উপাধি; একজন সাবেক মাদ্রাসা ছাত্র হিসেবে তো এটা তার জানা থাকার কথা।
জনাব চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেছেন, মুসলমান যারা হয়েছিলেন তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। মূর্খদের জানা প্রয়োজন, শির্ক বা কুফরির কোন গন্ধ থাকলে কিংবা কোনো সাহাবীর নামের নেতিবাচক অর্থ থাকলে ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সকল নাম পরিবর্তন করে দেয়ার বহু নজির রয়েছ্।ে যে আবু হুরায়রা রা. এর নাম নিয়ে আগাচৌ বিরূপ মন্তব্য করলেন তার ইসলাম পূর্ব নাম কি তার জানা নেই? হযরত আবু হুরায়রার পূর্বনাম ছিল আব্দে শামস বা সূর্যের দাস, মতান্তরে আব্দুল উজ্জা বা উজ্জার দাস, মতান্তরে আব্দুল লাত বা লাতের দাস। ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহর রাসূল সা. তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন আব্দুর রহমান। "বিড়ালের প্রতি স্নেহাধিক্যের জন্য তিনি আবু হুরায়রা (অর্থাৎ ছোট বিড়ালের পিতা) নামে অভিহিত হন। [দ্র: সংপ্তি ইসলামী বিশ্বকোষ; ১ম খ. ৩য় মুদ্রণ,আবু হোরায়রা অধ্যায়; পৃ: ৫৭]"। বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়।
তেমনি ইসলামের অন্যতম জৈষ্ঠ্য সাহাবী হযরত আবু বকর রা এর নাম নিয়েও আগাচৌ চরম অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন, যদিও এটিও তার মূল নাম নয়, উপাধি। তাঁর পারিবারিক নাম আবদুল্লাহ। ‘‘আবু বকর (র) কে ‘আতিক’ নামেও স্মরণ করা হতো। ‘আতিক’ অর্থ সৌন্দর্য্যের অধিকারী, তিনি প্রথম জীবন হতেই রুচিশীল এবং সত্যনিষ্ট ছিলেন এজন্য তাকে আতিক বলা হতো। হযরত (স.) নিজে এ নামের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেন: আতিক অর্থ মুক্ত। আবু বকর জাহান্নাম হতে চির মুক্ত।’- (তিরমিজি ২/২১৪)। আর মি. আগাচৌ ‘বকর’ শব্দের যে অর্থ বললেন এটা উনি কোথায় পেলেন? আরবিতে একেকটি শব্দ বহুমাত্রিক অর্থ প্রদান করে। বকর শব্দের অর্থ এক অর্থ ছোট উট, এর আরেক অর্থ প্রত্যুষে জাগা, প্রভাতে সম্পন্ন করা, বকর শব্দের আরেকটি হচ্ছে অর্থ জৈষ্ঠ, জৈষ্ঠ সন্তান, প্রথম, নতুন ইত্যাদি (সূত্র: আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান, ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, পৃ-২২৬)। কারো নামের একাধিক অর্থ থাকলে সাধারণভাবেই ইতিবাচক এবং ভাল অর্থটাই গ্রহণ করা হয়। কতটা জ্ঞানপাপী হলে পরে আল্লার রাসূলের সা. এর একজন পরম বিশ্বস্ত সহচর, ইসলামের প্রথম খলিফা এবং পৃথিবীতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত একজন সুমহান ব্যক্তি সম্পর্কে এরকম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারে!
‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি’ বলে একটা কথা আছে। জনাব চৌধুরি এ বয়সে কোন্ স্বার্থে হঠাৎ বিশ্বের ২০০ কোটিরও বেশি মুসলিমের মনে আঘাত হানলেন-এটা তিনিই ভাল জানেন। এর মাধ্যমে যদি তার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ হাসিল হয়ে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা, কিন্তু তিনি তার বক্তৃতায় যে সরকারের প্রশংসা করলেন সে সরকারের ভাবমর্য্যাদা কি এর মাধ্যমে বেড়েছে? নাকি এ সরকারের প্রতিনিধি/শুভাকাক্সী বা উপদেষ্টারা কী ধরনের লোক তা দেশের মানুষের কাছে বা বিশ্ববাসীর কাছে আরো পরিস্কার হয়েছে। এছাড়া এ ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সারা মুসলিম বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তোলার দায় তো নিতে হবে তাকে বা তার প্রিয় সরকারকেই। তাই আমরা মনে করি সরকারেরও উচিত এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিস্কার করা।
পরিশেষে বলতে হয়, যুগে যুগে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতাকারী, মস্তিস্ক বিকৃত নাস্তিকরা ইতিহাসের আস্তাকুরে নিপ্তি হয়েছে। প্যারালাইজ্ড আগাচৌ-এর পরিণতিও হয়ত তার ব্যতিক্রম হবে না। এদের পরিণতি ও তাদের সম্পর্কে আমাদের করণীয় সম্পর্কে মহান আল্লাহ ভূূমিকাতে উল্লেখিত আয়াতের শেষাংশে বলেন, ‘‘...আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে’’। (সূরা আল আরাফ, আয়াত-১৮০)
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইশশশ কততত কষ্ট
ক্ষমতায় ঠিক থাকতে হলে বর্তমানে যা করা উচিৎ তা তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছে স্বার্থপরেরা....।
মন্তব্য করতে লগইন করুন