মায়ের নিখাদ ভালোবাসা
লিখেছেন লিখেছেন প্রজাপতি ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:০৮:০০ দুপুর
মানুষের জীবনটা খুব ছোট্ট। কিন্তু তারপরও মানুষ অনেক বড় বড় কাজ করতে চায়। মানুষ কবিতা লিখতে চায়, পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে চায়, চাঁদে গিয়ে বসে থাকতে চায়। আবার চাঁদ থেকে বালু নিয়ে ফিরতে চায়। আরও কত কি ! তারপর যখন অনেক রাত হয়, আর আকাশটা ঝিকিমিকি নীল তারাতে ভরে যায়, মানুষ চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ছোট বাচ্চাদের মতো অনেক আগ্রহ নিয়ে বুঝতে চায় নীল তারাগুলোকে। ছায়াপথগুলো ও বিশাল বড় মহাবিশ্বটা নিয়ে ভাবতে থাকে।
এই রঙিন পৃথিবী দেখার পিছনে যার সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে সেই মানুষটি আর কেউ নয় । তিনি হলেন মা। এই নামটি সবার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। জন্মের পূর্ব থেকেই যেমনি মায়ের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে তেমনি জন্মের পর শিশুর বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। মায়ের ভূমিকার নেই কোনো জুড়ি।
শৈশব থেকে এ সব নিয়ে প্রায় ভাবনার মধ্যে দিন কাটে শিহাবের ।কাজী কাদের নেওয়জের কথাগুলো তার মনি কোঠায় উকি দিচ্ছে বার বার। তা হল এই রকম
মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রিভূবনে নাই।
দিবালকের ন্যায় স্পষ্ট ‘মা’ নামটি অতি ছোট্ট হতে পারে। কিন্তু তাতে রয়েছে অজস্র মধু। কারণ মায়ের মুধুমাখা ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর কোনো ভালবাসার তুলনা হয় না । মায়ের মতো করে কেউ কখনও আদর করে না। কাছে টেনে নেয় না। এ সব শিহাবের চেয়ে আর কে ভাল জানে? কেউ তো জানার কথা নয়। জানলেও বা তাতে কি আসে যায়। শিহাব এও জানে, কখনও পাবে না এমন ভালোবাসা ।
মায়ের কথা বার বার মনে পড়ে। ভাবতেই দু চোখ বেয়ে নেমে আসে কান্নার স্রোত। নিজকে সে সামলাতে চায় । তবুও হয়ে উঠে না। শৈশব, কৈশোরের স্মৃতিগুলো তার মনে দোলা দিচ্ছে।
শৈশবের স্মৃতি তার আজও মনে পড়ে। তখন ছোট্ট একটি পরিবারে বাস করতো সে। কি অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা একটি পরিবার! অন্য রকম ভালোবাসায় ঘেরা ছিল পরিবারটি ।
সবার বড় হওয়াতে শিহাবের প্রতি ভালোবাসা ছিল একটু বেশি। যেমনি আদর, সোহাগ ভালোবাসা ছিল তেমনি মায়ের শাসনের কমতি ছিল না তার প্রতি। অন্য ভাই বোনদের চেয়ে একটু বেশই-ই দুষ্ট ছিল। তাই বলে আদরের কখনও ভাটা পড়ে নি । সারাদিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরা হতো শিহাবের। আর দুষ্টমির রুটিন চালিয়ে যেত। পড়ালেখার রুটিনে হেরফের হলেও দুষ্টমিতে কখনও ঘাটতি হতো না। তাই মা সব সময় চিন্তিত থাকত তাকে নিয়ে।
সব কিছুই পাচ্ছে সে মায়ের কাছ থেকে । খুব ভালোভাবে চলছে। মজা করছে, ঘুরছে, ফিরছে, খেলাধুলা তো চলছে। পাড়ার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠা নিত্য কাজ। কখনও খেলাধুলায় সারাদিন কাটিয়ে দিতো। মনে হতো এটিই জীবনের পরম সুখ ও নিষ্কলুষ আনন্দ। দুষ্টমিতে তার কোনো অন্ত ছিল না। দুষ্টমির কথা স্মরণ করে মিট মিটিয়ে করে হাসতো।
একটি ঘটনা ছিল এই রকম- আমাদের বাড়ির পাশেই এক প্রতিবেশীর লাউ গাছ ছিল। যথেষ্ট লাউ ধরছে। লাউগুলো দেখতে যেমন সুন্দর ছিল তেমন লম্বাও ছিল। লাউ পাতাগুলো ছিল পরিপাটি ও সবুজে আচ্ছন্ন। আমার কাছে তখন এই সব ভাবনার মধ্যেই ছিল না। দুষ্টদের কাজ দুষ্টমি করা। তাই করলাম। লম্বা একটা লাউয়ের নিচ দিয়ে বাঁশের কঞ্চি প্রবেশ করিয়ে দিলাম। আমার কাজ শেষ। কে বা কারা করছে এই নিয়ে হই চৈ পরে গেল । যথারীতি আমার নামটি সবার মনের পর্দায় ভেসে আসল। কি আর করা মা বকা দিল। ভাগ্যিস আব্বু ছিল না। তাহলে কি যে হতো। যাক তা আর নাই বললাম। এই নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করছি। খাওয়া দাওয়া নেই। প্রতিদিনের মা আমাকে আদর করে খাইয়ে দিলেন। নিমিষে সব অভিমান শেষ।
কিছুদিন পর আব্বু বাড়িতে আসে। আমি আব্বু কে প্রচুর ভয় করি। উনি আসলে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়! মনে হচ্ছে আমার মতো ভদ্র মানুষ আর নেই । আব্বু সব ঘটনা শুনতে পায়। মাকে বকা দিল। তোমার ছেলে এতো বেড়ে গেল। আমাকে জানালে না কেন? এই রকম অজস্র প্রশ্নের মুখমুখি হলো আমার লক্ষ্মী মা। মা আব্বুকে বুঝিয়ে বললেন ধৈর্য ধর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখ এত মায়া ভালোবাসা দিয়ে ছেলেকে মানুষ করা যাবে না । ভালোবাসা কিছু নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখ। প্রতিটি পিতা-মাতা তার সন্তানকে ভালোবাসে।এই ভালোবাসাটা হতে হবে সন্তানের ভালোর জন্য। ছেলেকে সৎ ও চরিত্রনবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ ।
আর শুন, ওর পড়াশুনার জন্য ওকে হোস্টেলে দিয়ে দিব। এটা শুনার পর আমার বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠল ! মাকে ছাড়া আমি থাকব কি করে! একা থাকতে হবে তা আমি কখনও ভাবি নি। ভাবতেও চাই নি।
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি । মায়ের চাহনিতে কেমন জানি অন্য রকম এক কষ্টের চাপ লক্ষ করছি । শুন বাবা, তোর আব্বু তোকে শহরে নিয়ে যাবে । ওখানে ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবে । কথাগুলো বলতে বলতে মা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছলেন । আমি মাকে জড়িয়ে ধরি । মা আমাকে বুকের মাঝে আগলে নিলেন । আমি কাঁদো কাঁদো ভাবে মাকে বলি, তোমাকে ছেঁড়ে কোথাও যাব না । কে আমাকে খাইয়ে দিবে ? কে গোসল করিয়ে দিবে ? কে তোমার মতো করে আদর করবে ? এসব শুনে মা পিসপিস করে বলে, মা সব সময় আছি, থাকব। তুমি আমার পাশেই থাকবে। আর আমার দু চোখ বেয়ে পানির ঝর্ণা বইতে থাকে। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি একই অবস্থা।
তারপর আমাকে বুঝিয়ে বলে, বাবা আমরা চাই তুমি অনেক বড় হও। নিজকে প্রতিষ্ঠিত কর। মানুষের পাশে দাড়াও। ভাল পড়াশুনার জন্য তোমাকে হোস্টেলে দিচ্ছি। এটা শুনার পর আমার কান্না আরও বেড়ে যায়। মনে হচ্ছে আমি মাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আর আসব না ফিরে।
বাবা তুমি যদি এমন কর তোমার আব্বু রাগ করবে। তোমার আব্বু তোমাকে অনেক ভালোবাসে । জান, তুমি প্রতি সপ্তাহে আম্মুর কাছে আসবে । আম্মু মাঝে মাঝে তোমাকে দেখে আসব । মজার মজার পিঠা বানিয়ে নিয়ে যাব।
আমার কোমল মন কিছুতে যেন মানছে না । পরদিন আব্বু আমাকে নিয়ে গেলেন । আম্মু কান্না লুকিয়ে ভালভাবে আমাকে বিদায় দিলেন । আমার যেন কষ্ট না হয় তা ভেবে হয়ত ।
হোস্টেলে আসার পর মনে হচ্ছে পৃথিবীটা মরুভূমি । পাখির শব্দ, মানুষের কলাহল, গাছ গাছালি দিয়ে সবুজে ভরা। তবুও যেন মনে হচ্ছে কিছুই নেই।
আমার মন মানছে না । সারাক্ষণ মায়ের কথা মনে পরছে। খুব খারাপ লাগছে । অপেক্ষায় থাকি কখন সপ্তাহ শেষ হবে । আর আমি মায়ের কাছে ফিরে যাব । অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চায় না । কি অদ্ভুত সময়!
আজ আমি বাড়িতে আসলাম । মনে হলো অনেক দিন বাড়ির বাইরে ছিলাম। মা আমাকে পেয়ে হারানো চাঁদ খুঁজে পেল।
কি করবে না করবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন! আমার পছন্দের জিনিস গুলো রান্না করেন। যতক্ষণ বাড়িতে থাকি খাবারের উপরে থাকতে হতো। এটা ওটা নিয়ে সব সময় মা হাজির হতো। জীবনে বহুবার মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি৷ কখনো কখনো মায়ের বাড়াবাড়ি রকম ভালোবাসা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ৷ তবুও মায়ের ভালোবাসা কোনো ক্ষয় হয় না সন্তানদের জন্য । সব সময় নিখাদ থাকে
বিষয়: Contest_mother
৪৪১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন