মালালা নিউজ ও 'ছাগু' সমাচার
লিখেছেন লিখেছেন মির্জা ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৫:৪৪:১২ সকাল
সে বেশ আগের কথা। তখন বাংলাব্লগ বলতে ছিল শুধু সামুব্লগ। তো, সেখানকার প্রগতিশীলতার তালেবরগণ ইসলামপন্থীদের নাম দেয় ‘ছাগু’। ‘ছাগু’ নামের মাহাত্ম্য বর্ণনা করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। কারণ, ‘ছাগল’ শব্দটা বাংলায় গালি হিসেবে কি অর্থে ব্যবহৃত হয় সেটা আশা করি সবারই জানা আছে। মানলাম, ঐসব প্রগতির তালেবরদের ইসলামপন্থীদের নিয়ে চুলকানী আছে। কিন্তু যা রটে তার কিছু না কিছু তো ঘটেই। তো এখন সামু ছাড়াও অনেক ব্লগে হয়েছে যেখানে ইসলামপন্থীরা স্বাধীনভাবে ব্লগিং করতে পারছেন। কিন্তু এরপরও এই ‘ছাগু’ নামের স্বার্থকতাখানা তারা দুঃখজনকভাবে হলেও প্রমাণ করে যাচ্ছেন। দেড়-দু বছর আগে প্যারিস হিল্টনের ইসলাম গ্রহণ, কয়েকদিন আগে তসলিমা নাসরিনের বোধদয় হওয়া, সাম্প্রতিককালে মালালা হত্যা প্রচেষ্টা সাজানো নাটক হওয়া সংক্রান্ত গুজব রটে। এগুলোর উৎস আর কিছুই নয়, অনলাইন স্যাটায়ার নিউজসাইট বা ব্লগের স্যাটায়ার পোষ্ট। বাংলাদেশে অনেক ভুঁইফোড় নিউজসাইট আছে যেগুলো হিট বাড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অজ্ঞতাবশত এসব ইংরেজি স্যাটায়ার নিউজসাইটগুলো থেকে খবর অনুবাদ করে নিজেদের সাইটে দিয়ে দেয়। দুঃখজনকভাবে প্রতিটা গুজবের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে কিছু হাইপারএক্টিভ ইসলামপন্থী ভ্রাতাগণ যাচাই-বাছাই না করে অতি উত্তেজনার বশে খবরগুলো সিরিয়াসলি নিয়ে সেগুলো নিয়ে ফেসবুকে এবং ব্লগে ছড়াতে থাকেন এবং পরিণতিতে লোকজনের হাসিরপাত্রে পরিণত হন। যাই হোক, এ পোষ্টে শুধু লেটেস্ট গুজব এর ব্যাপারেই কথা বলব। ১১ অক্টোবর নাদিম পারাচা পাকিস্তানের ডন পত্রিকার ওয়েবসাইটের ব্লগ বিভাগে ‘Malala: The Real Story (With Evidence)’ নামে একটি লেখা লেখেন। এবার আসুন বিশ্লেষণে যাওয়া যাক। লেখার লিংকঃ http://dawn.com/news/1048776/malala-the-real-story-with-evidence
১)যেকোন ইংরেজির জ্ঞান রাখা ব্যাক্তি লেখাটি আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালো করে পড়লে সহজেই বুঝবে যে, লেখাটা একটা স্যাটায়ারমাত্র। তাছাড়া লেখার নিচেও স্পষ্টভাবে ডিসক্লেইমার লেখা আছে।
২) লেখাটি ওয়েবসাইটের মূল খবরের পেইজে ছাপা হয়নি। ছাপা হয়েছে ব্লগ বিভাগে। অনেকটা বিডিটুমরো নিউজ সাইটের যেমন আলাদা ব্লগ (যেখানে আমরা সচরাচর নিজেদের ব্লগ লেখি) আছে তেমন।
৩) দুনিয়ার খবর যারা রাখেন তারা ভালো করে জানেন নাদিম পারাচা পাকিস্তানের একজন বামপন্থী বুদ্ধিজীবি ঘরানার লোক যিনি বহুকাল আগে থেকেই পাকিস্তানে ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামপন্থীদের বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি সাহিত্যিক। আবার স্যাটায়ারও লেখেন। আর তার উপরোল্লিখিত লেখাটি ছিল তার লেখা স্যাটায়ারের একটা নমুনা। তার সম্বন্ধে আরো জানতে হলে উইকিপিডিয়ার এই লিংকে গিয়ে দেখে আসতে পারেনঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Nadeem_F._Paracha
অবশেষে ইসলামপন্থী ব্লগ এক্টিভিষ্টদের প্রতি আহবানঃ
১) মনে রাখবেন, আপনার লেখা পড়লে আপনি কোন ঘরানার লোক তা বেশীরভাগ সময়েই বোঝা যায়। তাছাড়াও, আপনি একা নন বরং একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন। অতএব, এমন কিছু করবেন না যাতে শুধু আপনি নন বরং আপনার পুরো আদর্শিকগোষ্ঠীর উপর আপনার কর্মফল এসে আপতিত হয়।
২) ইন্টারনেটে কোন আঁৎকে ওঠার মত নিউজ পেলে উত্তেজনার চোটে তা শেয়ার দিয়ে বসবেন না। কোন বাংলা নিউজসাইটে খবরটি পেলে প্রথমে তথ্যসূত্র চেক করুন। এরপর তথ্যসূত্রে গিয়ে আসল নিউজটি ভালো করে পড়ুন। তথ্যসূত্রটি কি সুপরিচিত নাকি অপরিচিত কোন ভূঁইফোড় ওয়েবসাইট? যদি অপরিচিত কোন ওয়েবসাইট হয়, তাহলে খবরটি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। তাছাড়া ভালো করে দেখুন ওয়েবসাইটটি কি কোন স্যাটায়ারমূলক ওয়েবসাইট কিনা। এখন ইন্টারনেটে প্রচুর ফেইক নিউজসাইট খোলা হচ্ছে যেগুলোর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র স্যাটায়ারের মাধ্যমে আনন্দ দেয়া। আর যদি সুপরিচিত কোন ওয়েবসাইট হয় তাহলে চেক করে দেখুন, খবরটি কি নিউজ বিভাগে দেয়া হয়েছে নাকি ব্লগ বিভাগে। কারণ এখন প্রায় মোটামুটি সব আন্তর্জাতিক মানের নিউজসাইট বা পত্রিকার অনলাইন ভার্শনে ব্লগ থাকে যেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। যদি আপনার পর্যবেক্ষণকৃত লেখাটি ব্লগ বিভাগে থাকে তাহলে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকাটাই উত্তম।
বিষয়: বিবিধ
৩১৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন