ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়েদের হিজাব- ১ম পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন কুরআনের সৈনিক ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৩২:৪৭ বিকাল
আজকের পোষ্ট আমার মুসলমান বোনদের জন্য এবং দ্বীনদার ভাইদের জন্য। প্রাইয় আমরা দেখি পর্দা সম্পর্কে আমাদের সামনে সূরা আহযাবের ৫৮নং আয়াতটা পেশ করা হয়। কিন্তু আমরা এর ব্যাখ্যাটা অনেকে জানিনা।যার ফলে নিজের ইচ্ছা মত অর্থ বুঝি। আজ তারই ব্যাখ্যা করবো আশা করি ধৈর্য্য ধরে লক্ষ্য করবেন আর হ্যা সাথে অবশ্যই আরো কিছু আলোচনা করবো।ফেসবুকে সর্বাধিক শেয়ারকৃত আমার অন্যতম পেষ্ট এটি। বিসমিল্লাহহির রাহমানীর রাহীম আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলছেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٣٣:٥٩]
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। এই আয়াতে ‘‘তারা বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় ’’ এর অর্থ হলো-চাঁদর দিয়ে যেন উপর থেকে ঢেকে নেয়। অন্যথায় মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ অনাবৃত রেখে যেন বের না হয়। অনুরূপ ‘‘এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে’’ এর অর্থ হলো-তাদেরকে এই সরল ও শালীন পোষাক পরিহিতা দেখে প্রত্যেকে এ কথা সহজে বুঝে নেবে যে, তারা সম্ভ্রামশালী মহিলা, তারা উচ্ছৃঙখল ও খেলাড়ি (দুঃচরিত্রহীন) স্ত্রীলোক( বিবাহিত/ অবিবাহিত) নয়। তাই যে কোন দূরাচার নিজের অন্তরের বাসনা তাদের দ্বারা পূর্ণ করার আশার করবে না। তদ্রূপ ‘‘ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না’’এ মর্মার্থ হলো- তারা সম্ব্রান্ত ও বিশেষ মূল্যবোধের অধিকারীনি বলে পরিচিত হওয়ায় অশালীন আমন্ত্রণের লক্ষ্য হবেনা। বোন হে যারা পর্দা করেনা তারা
কি জানে যে,
لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [٢:٢٨٤]
যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। সূরা বাকারা-২৮৪
তিনি সেই পরাক্রমশালী সত্তা যিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন:
يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَٰنِ وَفْدًا [١٩:٨٥]وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ وِرْدًا [١٩:٨٦]
সেদিন দয়াময়ের কাছে পরহেযগারদেরকে অতিথিরূপে সমবেত করব, এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। সূরা মারইয়াম-৮৫-৮৬। তিনি হলো সেই ভয়াবহ পরিণাম দিনের একমাত্র অধিকর্তা। সূরা হাজ্জ্ব এর ২নং আয়াতে তিনি আবার ঘোষণা করেছেন, يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَىٰ وَمَا هُم بِسُكَارَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ [٢٢:٢]
যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন। তিনি সেই সুমহান পবিত্রসত্তা যিনি ঘোষণা করেছেন,
يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِن مَّزِيدٍ [٥٠:٣٠]وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ [٥٠:٣١]
যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব; তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবেঃ আরও আছে কি? জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে খোদাভীরুদের অদূরে। সূরা ক্বাফ-৩০-৩১
মুসলিম বোন আমার তোমরা কি কখনো আল্লাহর সেই পবিত্র ঘোষণা শুনেছো বা পাঠ করেছো? আল কোরআনের ভায়ায়,
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
হে মুহাম্মদ (সা.)! ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা নূর-৩১
এবার আসি হাদিসে ইমাম বুখারী (রহ.) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ননা করেন, আল্লাহ তায়ালা প্রথমে মুহাজির মহিলাদের প্রতি রহম করবেন, কেননা তারা যখনই আল্লাহর এই ঘোষণা, ‘‘আর অবশ্যই তারা তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশের উপর নিজেদের চাঁদর বা ওড়না( মাথার কাপড়) ফেলে রাখবে ’’ শুনতে পেয়ে তখনই নির্দ্বিধায় এর উপর আমল শুরু করে দিয়েছে এবং যে জন্যে নিজেদের ওড়নাকে করেছে অনেক লম্বাও প্রশস্ত। বোন এখন হয়তো তুমি বলবে আমরা তাদের থেকে তো অনেক দুরে আছি তাইনা?
যদি সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও সংকল্পের সাথে আমরা উক্ত কাজে অবতীর্ণ হই, তাহলে আমাদের সমাজও পরিণত হবে তাদের সমাজের মত ফিৎনা ও ফাসাদহীন সুখী সমাজে। আর এটা আশ্চার্যের কোন বিষয় নয় বরং কবি এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে বলেছেন: ভালো লোকের মতো না হতে পারলেও হতাশ হয়ে না তাদের সদৃশ হওয়ার চেষ্টা কর। কেননা ভালো হওয়ার চেষ্টাটাই কল্যাণের দরজা খুলে দেয়।
পরিশেষে আমার মুসলিম বোনদের বলি কোরআন-হাদিসের কথা অনুসারে পর্দা করে চলুন আর ইমানদ্বার ভাইদের বলি নিজের স্ত্রী, কন্যা দেরকে পর্দা করতে উদ্বুদ্ধ করুন আল্লাহ আপনাদের মর্যাদা কে বাড়িয়ে দিবেন।
বিষয়: বিবিধ
২৩৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন