"বিলাইর গোস্বা পাটির উপর দিয়ে যায়"
লিখেছেন লিখেছেন আক্কাস রফিক ২০ মার্চ, ২০১৩, ০২:৪৮:২০ রাত
বিড়ালে মাছ খেয়ে ফেলে। একবার দুবার নয়, বার বার বহু বার। ক্ষোভে-দূঃখে প্রতিজ্ঞা করলো বিড়ালটাকে মারবেই মারবে। চোরা বিলাইগুলো কিন্তু ধুরন্ধর আর চালাক হয়। সহজে এদের বাগে পাওয়া যায়না। তবুও তক্কে তক্কে রইল নাগালে পাওয়ার। একদিন গরমের দুপুরে খাওয়ার শেষে সবাই যখন ঘরের বাইরে আম গাছের ছায়ায় শুয়ে বসে বিশ্রাম আর গল্প করছিল, ঠিক তখন পাকের ঘরে কি কাজে ঢুকতে গিয়ে দেখে মেঝেতে বিছানো ভাত খাওয়ার পাটিতে কাৎ হয়ে শুয়ে আছে সেই চোরা বিলাই। যুগপৎ দুটি ক্রোধ উত্থিত হলো ধমনীতে। মাছ হারানোর ক্ষোভ আর খাওয়া শেষে পাটি মেঝেতে পড়ে থাকার অনিয়ম।
এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের কাছে কিছু না পেয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে গেল অদূরে লাকড়ীর ঘরের দিকে। দেখতে প্রায় মুগুরের মত যুৎসই একখন্ড কাঠ পাওয়া গেল। হাতে নিয়ে নিঃশব্দ পায়ে ফিরে এল পাকের ঘরের দরজায়। উঁকি দিয়ে দেখে আগের মত ঠাঁয় শুয়ে আছে চোরা। মনে মনে বললো, বুঝেছি! শালা! কোথাও চুরি করে ভুরি ভোজন করে এসে এখানে আমার পাটিতে শুয়ে দিবানিদ্রা দেয়া হচ্ছে। দাঁড়া! তোর একদিন কি আমার একদিন! গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে মারলো মুগুর চোরার মাথা লক্ষ্য করে। লাগলো কিন্তু ঠিকভাবে না, একটু খানি লেগে পিছলে গিয়ে মুগুর মাটিতে ড্রপ খেয়ে ছুটে গিয়ে লাগলো ভরা কলসিতে। ফটাশ আওয়াজ তুলে মাটির কলসি গেল ভেঙ্গে, পানি ছড়িয়ে পড়লো মাটির মেঝেতে। সেদিকে খেয়াল না দিয়ে বিলাই ধরার জন্য দিল লাফ, মুগুরের আঘাত খেয়ে বিড়ালও দিয়েছিল লাফ। দুজনের লাফ প্রায় এক সঙ্গে হলো, কিন্তু বিড়াল উঠে গেল মাচানে আর মানুষ ধাক্কা খেল সেই মাচানের খুঁটিতে। কপালে আঘাৎ পেয়ে উঁহ বলে কপাল চেপে ধরে বসে পড়লো সেখানেই। বিড়াল হলো পগার পার।
পাকের ঘরে ধুপধাপ ফটাশ আওয়াজ শুনে দৌঁড়ে এল সহধর্মিনী। ঘরের অবস্থা দেখে চক্ষু তার চড়ক গাছ। কি হয়েছে বলে সোয়ামীকে ধরতে গেলে হাত ঝাড়া দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রক্ত চক্ষু নিয়ে এদিক ওদিক তাকালো, তারপর মেঝে থেকে পাটিটা তুলে নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। সোয়ামীর রক্তচক্ষু আর কান্ডু কারখানা দেখে ভয়ে বউ আর কিছু বলার সাহস পেলনা। ঘর সাফ করার কাজে লেগে গেল। সোয়ামী গজরাতে গজরাতে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
গ্রামাঞ্চলে বাগধারায় বলে "বিলাইর গোস্বা পাটির উপর দিয়ে যায়"
বিষয়: বিবিধ
১২৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন