মুখোশের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া তারুণ্য
লিখেছেন লিখেছেন শাহজাহান সানু ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:১৩:২২ সন্ধ্যা
প্রতিটি দেশ ও জাতির জন্য নববর্ষ এক ভিন্নধর্মী আবেশ নিয়ে হাজির হয়। পুরাতনকে ভুলে নয় বরং আত্নবিচার ও আত্নপর্যালোচনার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক নির্মল বার্তা নিয়ে আসে নববর্ষ। সুতরাং এর প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠানে প্রতিফলিত হওয়া উচিত দেশ ও জাতির আবহমান সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের দ্যুতি। কোন জাতিই তার মৌলিক বিশ্বাস ও সভ্যতা থেকে মুখ লুকিয়ে পরজীবী হয়ে কচুরীপনার মত বাঁচতে পারে না।
ভারতবর্ষে ইসলামের আগমন বারো শতকে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের মধ্যে দিয়ে। এর পর আসেন বিখ্যাত সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি। হিন্দু রাজা দাহিরের পরাজয়ের ফলে গোটা ভারতবর্ষে ইসলামের সুমহান আদর্শ ছড়িয়ে পড়ে। এ পথ ধরেই পরবর্তিতে এদেশে আগমন করেন বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী, খানজাহান আলী, হযরত শাহজালাল, বায়েজিদ বোস্তামী সহ অসংখ্য নিবেদিত প্রাণ দা’য়ীগণ। বৃটিশ শাসনের শেষ দিকে হিন্দু রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ ও জমিদারদের আগ্রাসি তৎপরতা থেকে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্যই ইসলামী জাগরণের অবিসংবাদিত কবি আল্লামা ইকবালের দার্শনিক তত্বের উপর ভিত্তি 1940 সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক উত্থাপন করেন ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে 1947 সালে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্থান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার শ্লোগান ছিল “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্থান-কায়েম করেঙ্গা আল কুরআন”। কিন্তু না, পাকিস্থানী শাসকদের বেইনসাফী শোষন আর জুলুমের প্রতিবাদের চুড়ান্ত পর্যায়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
কিন্তু আজ 42 বছর পরও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি মাথা উচু করে দাড়াতে পারেনি আমাদের শাসক গোষ্ঠির ক্ষমতার অন্ধমোহ, দূনীতি আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কারনে। গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন সংগ্রামী নেতারা ক্ষমতার লোভে গলা টিপে হত্যা করেছেন গণতন্ত্রের ভ্রুণকে। স্ববিরোধী বিধ্বংসী রাজনীতির করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে দেশ ও জাতির কৈশর ও যৌবনের অপরিমেয় শক্তি। আগামী দিনের স্বপ্নে বিভোর তরুণরা তাদের অপরিপক্ক সরলতার কারনে বারবার শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতায় আরোহনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাস বিমুখ এই তরুণরা নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য ভুলে পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত চলতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। সম্রাজ্যবাদীরা এই সুযোগে অবচেতন তারুন্যের উপর আধুনিকতার নামে চাপিয়ে দিয়েছে ভাষা ও সাংস্কৃতিক উপনিবেশ। লাল পানি আর রঙ্গীন চশমার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর জাতির ভবিষৎ প্রজন্ম।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলণে শহীদ সালাম, বরকত ও রফিকের রক্তকে অতি অল্প দামে বিক্রি করে এরা হলিউড-বলিউডের বুলি আওড়াচ্ছে নির্দ্বিধায়। ব্যক্তিস্বার্থ ও বিকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার জাতি ক্ষুধার্থ ও মুমূর্ষ ব্যক্তির ন্যায় বিজাতীয় সংস্কৃতির ভাগাড়ে পড়ে থাকা মৃত জন্তুকে উদরস্থ করছে গোগ্রাসে। অনাগত ভবিষ্যতের কল্যাণ কামনার পরিবর্তে ভুতুম পেচা ও শকুনের মুখোশ পরে মেকি সভ্যতার প্রতিভূ সাজতে ব্যস্ত শিকড় বিহীন বিকৃত রুচীর মানুষ গুলো।
নিজেদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য যদি কোন জাতি হারিয়ে ফেলে তখন তারা শ্রোতে ভাসা শেওলার মত ধ্বংসের অতল গহ্বরের দিকে অন্ধের মত ছুটতে থাকে। যারা নিয়মিত রসনা বিলাসে মত্ত সেই সকল নব্য সামন্ত প্রভূরা পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মহড়া দিয়ে প্রকারন্তে এদেশের দরিদ্র জনসারণকে উৎকটভাবে উপহাস করেন। এই পান্তা- ইলিশ বিলাসীরা কি জানেন দরিদ্র মানুষগুলির ঘরের খবর? অর্থাভাবে যাদের অসুখের পথ্য কেনা হয়না এবং যাদের ছেলে–মেয়েরা স্কুলে যেতে না পেরে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে কোন রকমে বেচে থাকে। জীবন যুদ্ধের এ সকল কাহিনী কি তাদের পীড়িত করে না?
বেনিয়ার উচ্ছিষ্ট ভোগী অসভ্য হায়েনারা জনতার উপর চালাচ্ছে নির্যাতনের ষ্টিমরোলার। ক্ষমতা লিপ্সা চরিতার্থ করতে নির্বিচারে খুন করা হচ্ছে নিরীহ নির্বিবাদী মানুষগুলোকে। গণহত্যা আর গণলাশের মিছিলে ভারী হয়ে উঠেছে নির্মল বাতাস। অসহায় নারী ও শিশুরা মুক্তির জন্য হাহাকার করছে দেশের প্রতিটি প্রান্তরে। তবুও কি তুমি জাগবে না হে তরুণ? তবুও কি তুমি মুখোশের আড়ালে ঢেকে রাখবে অনাগত নব বসন্তকে?
বিষয়: বিবিধ
১৬০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন