গল্পঃ নামাজ

লিখেছেন লিখেছেন এ কিউ এম ইব্রাহীম ২০ মার্চ, ২০১৭, ০৮:৩১:৫১ সকাল

--ক্রিকেট মাঠ। গৌধুলীর রক্তিম আভা ফিকে হয়ে আসছে।

--লাষ্ট ওভারের আরো তিন বল হাতে বাকী। একটু দম নিল আবিদ।

-বল হাতে উইকেট কিপার আসিফকে একনজর দেখে নিল ও।

--আবিদ বল করার জন্য দৌড়াচ্ছে….!

-ঐ প্রান্তে তারেক সজোরে আঘাত করেছে ব্যাটে, -কিন্তু কানায় লেগেছে বলটি !

--চোখেমুখে বিরক্তির ভাব ফুটে উঠলো তার! ‘ধ্যাত’ শব্দটি বের হলো মুখ থেকে!! -‘বিরক্তি নিয়ে ব্যাটটিকে শূণ্যে একপাক ঘুরিয়ে নিল সে।’

-চেয়েছিলো চার, কিন্তু এই বলে কোন রানই সংগ্রহ হলো না তার!!

-জেতার জন্য আরো চার চারটি রান করতে হবে!

-এপ্রান্তে আবিদ মারমুখী বল করছে, কিন্তু তারেককে আউট করতে পারছেনা!

অন্যপ্রান্তে তারেকও চাচ্ছে একটি বাউন্ডারী হাঁকিয়ে কোনমতে খেলাটা শেষ করতে।

-এই মূহুর্তে ওদের দুজনের ভাবনায় মাগরীবের আজান।

-আজান শোনামাত্র অন্যন্য দিনের মত ওরা খেলা ছেড়ে চলে যাবে।

এ নিয়ে অন্যদের সাথে ওদের দুজনের বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটিও হয়েছে।

-ওদের সবাই যে মসজিদে যায়না, ব্যাপারটি এমনও নয়।

-ওদের কেউ কেউ মসজিদে নামাজ আদায় করে, কখনো জামায়াতে, কখনো আবার একাএকা।

আবিদ ও তারেকের সাথে অন্যদের ঝগড়াঝাটি যাই হোক না কেন, ওদের দুজনকে ওরা দলে না নিয়েও পারেনা!!

-কারন, আবিদ খুব ভালো মানের পেসার, আর তারেক তো এককথায় উইকেটের আঠা!!

একবার ব্যাটহাতে গিয়ে দাড়াতে পারলে তো হয়েছে! লাষ্ট বলটি না পিটিয়ে ও উইকেট ছাড়বেইনা!

-এবার একটু দূর থেকে দৌড়ে এসে, পরের বলটি সজোরে ডেলিভারী করলো আবিদ।

ওপ্রান্তে তারেকও চেয়েছিলো বাউন্ডারী হাঁকানোর খায়েশটা পূরন করতে। কিন্তু, না। ব্লোল্ড হয়ে গেল সে। খেলা শেষ। মূহুর্তেই মাঠ খালি হয়ে গেল। মসজিদ থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে...।

নামাজ শেষ।

আবিদ ও তারেক মসজিদ থেকে বের হয়ে হোষ্টেলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

-এপথে আসিফদের বাসা। ওদের বাসা পার হয়ে আরেকটু সামনে একটি চায়ের দোকান।

-আসিফ, সাকিবসহ ওদের কয়জনকে প্রায় সময় ওখানে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

-আবিদ ও তারেককে এপথে দেখলে তাদেরকেও আড্ডায় যোগ দিতে বলে ওরা।

-এরা দুজন আড্ডায় যোগ দেয়না, তবে পড়া আছে বলে টেকনিক্যালী কেটে পড়ে!!

ওরা হাটতে হাটতে আসিফদের বাসা ক্রস করতেই, পেছন থেকে আসিফের গলার আওয়াজ!

--আবিদ….এই আবিদ, দাড়া কথা আছে!

-আবিদ মাথা ঘুরিয়ে আসিফকে দেখতে পায়।

--দোস্ত, ‘আজ তোর ষ্ট্যাম্পিংটা সেইরম হইছে! আয় ঠান্ডা খাওয়াই তোকে…,আসিফ বললো।’

-আবিদঃ -‘না দোস্ত, এখন ঠান্ডা খাবোনা, আরেকদিন।’

--আসিফ একটু চেপে বলে- ‘আরে আয় না…, অন্তত এককাপ চা খেয়ে যা!’

--আচ্ছা, -‘চা খাওয়া যেতে পারে, চল…., আবিদ বললো।’

তিনটা চা’র অর্ডার দিয়ে ওরা দোকানের এককোনে গিয়ে দাড়াল।

--প্রথমে কথা শুরু করে আসিফ।

তোরা কিছু মনে করিসনা একটি কথা বলবো, -‘তোদের হুজুরদের একটা সমস্যা কি জানিস?’

-মুখে হাসি টেনে নিয়ে আসিফের কৌতুকমিশ্রিত প্রশ্ন।

--আসিফের এমন প্রশ্ন শুনে প্রথমেই একটু চমকে উঠলো আবিদ!

তবে, পরক্ষনেই নিজকে ভাবলেশমুক্ত করে নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিল, কি সমস্যা?

আসিফঃ ‘-তোরা হুজুররা সবকিছুতে একটু বাড়াবাড়ি করিস, এটা আমার পছন্দ না।

যেমন? ফের পাল্টা প্রশ্ন আবিদের!

আসিফঃ এই যেমন ধর, আমরাও তো নামাজ পড়ি,

তো মাঝে মাঝে নামাজ না পড়লে কি এমন ক্ষতি?

এছাড়া জামায়াতেই সব নামাজ পড়তে হবে, এমন কঠোরতা কেন?

আসিফের কথা শেষ। আবিদ কিছু বলার জন্য একটু কেশে নিল।

ইতিমধ্যে সবার হাতে চা চলে এসেছে।

চায়ের পেয়ালায় এক চুমুক দিয়েই আবার রেখে দিল আবিদ।

এবার একটু সটান হয়ে দাড়ালো সে।

ক্ষনিকের জন্য আসিফের চোখে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল সে।

এবার আবিদ বলতে শুরু করলো- ‘দেখ আসিফ, কোনটাকে বাড়াবাড়ি বলছিস তুই?'

নিয়মতান্ত্রিকভাবে রুটিনমাপিক কোন কাজকরা বাড়াবাড়ি, নাকি ভূল পন্থায়ক করা?

প্রতিদিন রুটিন মাপিক আমাদেরকে তিন/চারবেলা আহার গ্রহন করতে হয়। যা আমাদের দৈহিক ক্ষুধা নিবারন করে দেয়। এটা হলো দেহের খোরাক।

ধর, তুই সকালের ব্রেকফার্ষ্ট সকালে না নিয়ে দুপুরে গ্রহন করলি, এটা কি স্বাস্থ্য সম্মত হবে?

তা তো স্বাস্থ্যসম্মত হবেইনা, বরং এসিডিটি তৈরী করবে। আর এসিডিটি জন্ম দেয় আলসারের!

তদ্রুপ, আল্লাহ যেমনি আমাদেরকে নামাযের বিধান দিয়েছেন,

তেমনি তিনি তার একটি সুনির্দিষ্ট রুটিনও করে দিয়েছেন।

যদি আমরা রুটিন অনুসারে নামাজ আদায় না করি, আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।

জানিস? পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়েই আদেশ এবং নিষেধ করেছেন। মানুষ ক্ষুধার্ত হলে নিজে খাবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তবুও আল্লাহ মানুষকে আদেশ করেছেন এই বলে-‘তোমরা খাও এবং পান করো’।

সে হিসেবে খাওয়াও এক প্রকার আল্লাহর নির্দেশ পালন।

আর নামাজ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ সমূহের মধ্যে অন্যতম।

যদি নামাজের ব্যাপারে আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ না করতেন,

হয়তো আমরা নামাজ আদায় করতাম, অথবা করতামনা।

কিন্তু খাওয়ার মতোই তা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলেই এই আদেশ।

খাদ্য না খেলে যেমন আমাদের শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দিবে, রোগাক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে যাবে। তেমনি নামাজে শামিল না হলে আমাদের ক্বলব অসুস্থ হয়ে যাবে।

আমাদের ক্বলবে কুফরী নামক এক রোগ বাসা বাধবে, যা আমাদেরকে স্রষ্টার অবাধ্যতায় ধাবিত করবে

চলবে.....।

বিষয়: বিবিধ

৯৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File