পিপড়া!
লিখেছেন লিখেছেন এ কিউ এম ইব্রাহীম ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪১:০৮ রাত
পিপড়া নামে পবিত্র কুরআনে একটি সুরা রয়েছে। আরবীতে পিপড়াকে বলা হয় 'নমল'। এই সুরাটির তাফসীর পড়েছি বেশ অনেকদিন আগে। সেদিন এক ওয়াজে এই সুরাটির উপর আলোচনা শুনে খুব মুগ্ধ হলাম। এরপর বাসায় সুরাটির তাফসীর পড়লাম। সুরাটির তাফসীর পড়ে সমগ্র জগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর কুতরতি শক্তির নিকট মাথা নুইয়ে গেল।
মনে অনেক প্রশ্নও তৈরী হলো- কেন আল্লাহ হযরত সোলাইমান (আঃ) কে এত শক্তি দান করেছেন? পরে আমার মনকে আমিই উত্তর দিলাম এই ভেবে- যেহেতু মানুষসহ সকল জীব-জন্ত্রুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রনের মধ্যে। আর সেটা প্রমাণ করার জন্যই আল্লাহ হযরত লোকমান (আঃ) কে কিছু ক্ষমতা দিয়ে তা দেখালেন।
.........................
"আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তাঁরা বলে ছিলেন, আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে তাঁর অনেক মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।"
........................
সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘হে লোক সকল, আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকূলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব।
..............
সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল।
..............
যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।
.............
তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।
...............
সুলায়মান পক্ষীদের খোঁজ খবর নিলেন, অতঃপর বললেন, কি হল, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত?
..............
আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব অথবা সে উপস্থিত করবে উপযুক্ত কারণ।
...............
কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ এসে বলল, আপনি যা অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি। আমি আপনার কাছে সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি।
................
আমি এক নারীকে সাবাবাসীদের উপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে।
...............
আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।
..................
তারা আল্লাহকে সেজদা করে না কেন, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের গোপন বস্তু প্রকাশ করেন এবং জানেন যা তোমরা গোপন কর ও যা প্রকাশ কর।
....................
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি মহা আরশের মালিক।
.............
সুলায়মান বললেন, এখন আমি দেখব তুমি সত্য বলছ, না তুমি মিথ্যবাদী।
..............
তুমি আমার এই পত্র নিয়ে যাও এবং এটা তাদের কাছে অর্পন কর। অতঃপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় এবং দেখ, তারা কি জওয়াব দেয়।
...............
বিলকীস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে একটি সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে।
...............
সেই পত্র সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং তা এইঃ অসীম দাতা, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে শুরু;
...............
আমার মোকাবেলায় শক্তি প্রদর্শন করো না এবং বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।
...............
বিলকীস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে আমার কাজে পরামর্শ দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে আমি কোন কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।
.................
তারা বলল, আমরা শক্তিশালী এবং কঠোর যোদ্ধা। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই। অতএব আপনি ভেবে দেখুন, আমাদেরকে কি আদেশ করবেন।
.............
সে বলল, রাজা বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে অপদস্থ করে। তারাও এরূপই করবে।
..............
আমি তাঁর কাছে কিছু উপঢৌকন পাঠাচ্ছি; দেখি প্রেরিত লোকেরা কি জওয়াব আনে।
..........
অতঃপর যখন দূত সুলায়মানের কাছে আগমন করল, তখন সুলায়মান বললেন, তোমরা কি ধনসম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে প্রদত্ত বস্তু থেকে উত্তম। বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে সুখে থাক।
................
ফিরে যাও তাদের কাছে। এখন অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার মোকাবেলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যই তাদেরকে অপদস্থ করে সেখান থেকে বহিষ্কৃত করব এবং তারা হবে লাঞ্ছিত।
.............
সুলায়মান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্নসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে বিলকীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?
.................
জনৈক দৈত্য-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত।
..............
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল।
...............
সুলায়মান বললেন, বিলকীসের সামনে তার সিংহাসনের আকার-আকৃতি বদলিয়ে দাও, দেখব সে সঠিক বুঝতে পারে, না সে তাদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের দিশা নেই ?
.............
অতঃপর যখন বিলকীস এসে গেল, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলল, মনে হয় এটা সেটাই। আমরা পূর্বেই সমস্ত অবগত হয়েছি এবং আমরা আজ্ঞাবহও হয়ে গেছি।
.................
আল্লাহর পরিবর্তে সে যার এবাদত করত, সেই তাকে ঈমান থেকে নিবৃত্ত করেছিল। নিশ্চয় সে কাফের সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
.................
তাকে বলা হল, এই প্রাসাদে প্রবেশ কর। যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল সে ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ। বিলকীস বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্নসমর্পন করলাম।
.................
বিষয়: বিবিধ
১৬১২ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সোলাইমান (আঃ) দাউদ (আঃ) এর সন্তান ছিলেন । সোলাইমান (আঃ) লাঠিতে ভর দিয়ে বসে থাকা অবস্থায় মারা যান । কেউ তা টের পায় নি অনেক দিন পর্যন্ত । পরে ঘুনে পোকা যখন তার লাঠিটি খেয়ে ফেলেছিল তখন তার শরীরটি ঢলে পরে । পরে তার অধীনে থাকা মানুষ ও জীনেরা বুঝতে পারে যে সোলাইমান (আঃ) মারা গেছেন । অথচ তারা সোলাইমান (আঃ)জীবিতই আছেন বুঝে তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছিল ।
এই সূরাতে শেষের দিকে সম্ভবত জুলকার নাইনের কথা বলা আছে যিনি ছিলেন সোলাইমান (আঃ) এর একজন সেনাপতি । তিনি কিভাবে আল্লাহর মেহেরবানীতে ইয়াজুজ মাজুজকে গিরিখাদের মধ্যে লোহা ও তামার প্রাচীরে আটকে রেখেছেন সেটার কথা বলা আছে ।
সোলাইমান (আঃ) দাউদ (আঃ) এর সন্তান ছিলেন । সোলাইমান (আঃ) লাঠিতে ভর দিয়ে বসে থাকা অবস্থায় মারা যান । কেউ তা টের পায় নি অনেক দিন পর্যন্ত । পরে ঘুনে পোকা যখন তার লাঠিটি খেয়ে ফেলেছিল তখন তার শরীরটি ঢলে পরে । পরে তার অধীনে থাকা মানুষ ও জীনেরা বুঝতে পারে যে সোলাইমান (আঃ) মারা গেছেন । অথচ তারা সোলাইমান (আঃ)জীবিতই আছেন বুঝে তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছিল ।
এই সূরাতে শেষের দিকে সম্ভবত জুলকার নাইনের কথা বলা আছে যিনি ছিলেন সোলাইমান (আঃ) এর একজন সেনাপতি । তিনি কিভাবে আল্লাহর মেহেরবানীতে ইয়াজুজ মাজুজকে গিরিখাদের মধ্যে লোহা ও তামার প্রাচীরে আটকে রেখেছেন সেটার কথা বলা আছে ।
(আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন , আল্লাহ সর্বজ্ঞানী)
অনেক ভাল লাগল।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন