একজন আস্তিকের দৃষ্টিতে মহাবিশ্ব বনাম হংসডিম্ব!
লিখেছেন লিখেছেন এ কিউ এম ইব্রাহীম ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০০:৩৬ রাত
পবিত্র কুরআনের মর্মশ্পর্শী আয়াত এবং রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর হাদীসের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ভাবার্থ যে কোন ধর্মের একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের চিন্তা- চেতনা পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট। যারা কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ অর্থ জানেনা কিংবা মর্ম অনুধাবন করার চেষ্টা করেনা তারা সত্যিই অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। আর যারা অন্তত তিলাওয়াত করেনা, হাদিস পাঠ করেনা তাদের দূর্ভাগ্যের কথা আর নাইবা বললাম।
হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি আল্লাহর নিকট দুনিয়ার মূল্য মাছির ডানার সমানও থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তাঁর (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।” (তিরমিযী ২৩২০, ইবনে মাজাহ ৪১১০)
উপরোক্ত হাদিসটির ভাবার্থ অনুসন্ধান করলে আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য সবার কাছে পরিস্কার হবে।
কূল-কিনারা বিহীন বিশাল এক সমুদ্রের তীরে একটি হাসের ডিম রাখলে সমুদ্রের সঙ্গে ডিমটির যে আনুপাতিক তূলনা করা যায় তদ্রুপ মহাবিশ্বের সঙ্গে আমাদের ছোট্র এই পৃথিবীর তূলনা করা চলে । অবশ্য আধুনিক বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে সে তূলনায় পৃথিবী আরো আরো ক্ষুদ্রতর এবং নগণ্য। এখন প্রশ্ন দাড়ায় পৃথিবী ব্যতীত বাকী সব কিছু কি কারনে সৃষ্টি করা হয়েছে? "মহান আল্লাহ কোন কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি" একথা কুরআনে বলেছেন। এই মহাবিশ্বের তুলনায় ডিম্বাকার কিংবা ক্ষুদ্রাকার বালিকনা সদৃশ একটি পৃথিবীর আমরা একেকজন বাসিন্দা কেবল পৃথিবীর তুলনায়ই কত ক্ষুদ্র এবং নগণ্য যাকে মহাবিশ্বের সঙ্গে তুলনা আর নাইবা করলাম ।
বিশ্ব পরিচালক মহান আল্লাহ মানব সৃষ্টির শুরুতেই ফেরেশতাদের ডেকে বলেছিলেন, “আমি ধরাপৃষ্ঠে মানুষ প্রেরন করতে চাই। এ কথা শুনে ফেরেশতারা আপত্তি করে বলল, হে প্রভূ এমন জাতি কেন সৃষ্টি করবেন যারা পৃথিবীতে ফেৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করবে। আল্লাহ বললেন আমি যা জানি তোমরা তা জাননা।” (সুরা বাকারা:৩০)
পৃথিবীর সবকিছুই রহস্যাবৃত এমনকি মানব সৃষ্টিও, যার কূল কিনার বের করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ গোপনই রাখলেন, ফেরেশতাদের বললেননা।
মহান আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষ বসবাসের উপযোগী করে দিলেন, সুনির্মল বাতাস এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছেন। ফুলে-ফলে সুশোভিত করলেন পাহাড় বন-বনানী। নানান স্বাদের শষ্যরাজীও দিলেন মানুষকে। মানুষকে দিয়েছেন বিধান যাতে দুনিয়ায় সে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে পারে তৎসঙ্গে তার স্রষ্টাকে চিনতে পারে এবং স্রষ্টা নির্দেশিত বিধি নিষেধ সমূহ মেনে চলার মাধ্যমে পরকালীন সাফল্যতা অর্জন করতে পারে । সর্বশেষ সেই বিধান হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন যা সমগ্র বিশ্বে ভারসাম্যপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে গৃহিত হয়েছে।
এই কোরআন আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকবর্তীকা হয়ে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে। বিজ্ঞানীরা যতই অগ্রসর হচ্ছে কুরআনের প্রতিটি বাক্যের সত্যতার দ্বার তাদের সম্মুখে নতুনরূপে উন্মোচিত হচ্ছে।
মহান আল্লাহর নিকট পৃথিবী এবং আমরা যতই মূল্যহীন হইনা কেন তাঁরই কথায়, প্রত্যেকটি মানুষকে আল্লাহ নিয়ন্ত্রন করছেন আর আল্লাহর নির্দেশে এই নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন লাখো-কোটি ফেরেশতা।
মাঝে মধ্যে খুব ভাবি ছোট্ট এই পৃথিবী এবং কেবল এর মধ্যকার সকল মানুষের জন্যই কি আল্লাহ এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন? মনে একাধিক প্রশ্ন উপপ্রশ্ন তৈরী হয়। আবার ভাবি আল্লাহ কি এই পৃথিবীর ন্যায় পৃথিবী সদৃশ আরো বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ সৃষ্টি করেছেন? আর সেসব গ্রহে মানুষের মতো প্রাণীও সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরও খাদ্য পানীয়ের ব্যবস্থা করেছেন? নিজকে নিজে উত্তর দেই, সেটা করা আল্লাহর পক্ষে সহজ আর তা মানুষকে জানানোর প্রয়োজন আল্লাহ করবেন কেন? কুরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন ইঙ্গিত নেই যদিও বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে ব্যাপক কল্পকথা রচনা করেছে।
আর যদি ধরে নেই মহাবিশ্বের সবকিছুই কেবল পৃথিবী এবং মানুষ কেন্দ্রিক তাহলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলে। যেমন পৃথিবী নামক ছোট এই গ্রহটিকে আলোক, উত্তাপ প্রদানের জন্য সূর্য গ্রহের সৃষ্টি। রাতের অন্ধকারে মৃদু আলোক প্রদান করে পথিকের সহায়তার জন্য চন্দ্র গ্রহের সৃষ্টি।
তাহলে বুঝা গেল পৃথিবী স্বনির্ভর নয়, তার প্রয়োজনে বিভিন্ন গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি মহাশূন্যের বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ সমূহ হয়ত পৃথিবী গ্রহের কোন না উপকার করে যাচ্ছে যা আমাদের দৃষ্টিগোচর নয়।
আমাদের যা দৃষ্টি গোচর হয় যেমন সূর্য, সুনিয়ন্ত্রিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ আলো আমাদের পৃথিবীটাকে উজ্জ্বল করে দেয়। পৃথিবীকে ভারসাম্যর্পূর্ণ উত্তাপকরনের কাজটিও সূর্য করে থাকে। রাতের চন্দ্র আমাদের কাছে বাসার ডিম লাইটের মত। আল্লাহ রাতকে আরামদায়ক বিশ্রামের জন্য নির্ধারন করে দিয়েছেন আবার প্রয়োজনে পথিক যাতে পথভ্রষ্ট না হয় সে জন্য চন্দ্রের মৃদু আলো পথিকের পথনির্ণয়ে সহায়তা করে।
মনিবের কি খেয়াল এই সৃষ্টির পেছনে? নিছক শখই কি এর পেছনে মূল কারন? এতো আয়োজন আমাদের জন্য আমরা কি এসব ভাবি? কেন আমাদের ঘিরে এতো আয়োজন? স্রষ্টা আমাদের কি দিয়েছেন আর আমাদের থেকে তিনি কি চেয়েছেন, আমরাইবা তাকে কি দেওয়ার স্বামর্থ রাখি?
যার বাতাসে আমি শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি, তাঁর পানি পান করে পিপাসা নিবারন করি, তাঁর ফলফলাদি শষ্যরাজী খেয়ে বেঁচে আছি, তাঁর সৃষ্ট শিমুল তুলার পোষাক পরিধান করি। আমার দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তাঁর সৃষ্ট।
আমি পৃথিবীতে একা এসেছি। আমায় লালন পালনের জন্য আমার মা-বাবাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি। আমায় সহযোগীতার জন্য বহু আত্নীয় স্বজন, পাড়া-পড়শী সৃষ্টি করেছেন। আমার থাকার বন্দোবস্ত করেছেন। এতকিছু তিনি আমার জন্য সৃষ্টি করলেন প্রতিদান হিসেবে শুধু চেয়েছেন আমি যেন তাঁর অবদান স্বীকার করি। কি আশ্চর্য কথা!
একজন আমাকে দিচ্ছে আমি পাচ্ছি স্বীকার করছি কিন্তু যিনি দিচ্ছেন তাকে দাতা হিসেবে স্বীকৃতি কেন দিতে পারব না? তিনি এই স্বীকৃতি দানের জন্য পুরস্কারও ঘোষনা করেছেন, আবার তা অমান্য করার জন্য কঠিন তীরস্কারের সতর্কতাও করেছেন। তিনি এই স্বীকৃতি দানকে ঈমান বলে সম্বোদন করেছেন। তিনি এও বলেছেন, আমার এই স্বীকৃতি কি সত্যি সত্যি নাকি ছলছাতুরী তা পরীক্ষা করার জন্য আমাকে মাঝে মধ্যে বিপদ মুসিবতও দিবেন তিনি। তিনি আমাকে সতর্ক করেছেন আমার এক শত্রু আছে যে কিনা আমাকে সেই স্বীকৃতির কথা ভূলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তীরস্কারপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা করবে, আমার মনে আমার সেই মহান দাতার অস্তীত্ব সম্পর্কে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিবে। আর সে একবার সফল হলে আমার মহান দাতার কথা আমি ভূলে যাব। তখন আমি হয়ে যাব অপরাধী এবং আমার স্থান হবে দোযখে।
সে অদৃশ্য মহাশত্রুর নাম হচ্ছে ইবলিশ।
আমার শত্রু আমার মনে সর্বদা মহান দাতা সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে আমাকে তাঁর অবাধ্য করতে চায় এবং তাঁর নির্দেশিত পথ থেকে সরিয়ে বিপদগামী করতে চায়। সে যতই আমাদে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করুক আমি মহান দাতার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবো। আমি জানি আমাকে একদিন মরে যেতে হবে, তাই আমার শক্রু যাতে আমাকে ধোঁকা না দিকে পারে আমি আমার মহান দাদার স্মরনে মশগুল থাকবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। যেহেতু আমি একদিন সত্যিই নিঃশেষ হয়ে যাব তবে মহান দাতাকে অস্বীকৃতি দিয়ে কেন নিঃশেষ হব। যদি মহান দাতার সেই তীরস্কারের ভবিষ্যদ্বানী সত্যি হয় তখন কি হবে আমার? আমিতো আগুনের অঙ্গার হয়ে জ্বলবো আজীবন। কিসে আমাকে বাধা দেয় সে মহান দাতাকে স্বীকৃতি দিতে? কিংবা তাকে স্বীকৃতি দিলে আমার কি এমন ক্ষতি? ক্ষতিতো নেই বরং পুরস্কৃত হবার সম্ভাবনাইতো রয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
২২৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন