কুড়িয়ে পাওয়া শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ১৩ মার্চ, ২০১৭, ১১:৫৪:১১ রাত
চলতে ফিরতে দুচোখের সামনে কতকিছুইনা ভেসে উঠে। হাঁটার সময় পদদলিত হয় বহু আবর্জনা। যদিও অপ্রয়োজনীয় বলে বর্তমান নাম হয়েছে আবর্জনা। কিন্তু এই আবর্জনা হয়তো মিনিট পূর্বে বা ফেলে দেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় ভিন্ন নামের সেবকপ্রকৃতির কোন জিনিস। সেবক বলায় কারো দ্বিমত থাকার কথা নয় কারণ সকল প্রকারের জিনিসপত্র মানুষের কাজে আসে। এটাও সত্য কিছু বস্তু ক্ষেত্র বিশেষে মানুষের জীবিনে ক্ষতিকারক যেমন বন্ধুক, চাপাতি ইত্যাদি। বলা বাহুল্য অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস আবর্জনা হয়ে যায়। এইতো গেল কয়েকমাস পূর্বে আমার একটি ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ঘরের মধ্যেই হারিয়ে যায় কিচ্ছুক্ষণ পর খুঁজতে গিয়ে আমার পায়ের নিচেই পিষ্ট হয়ে আবর্জনা নামের উপাধি পেয়ে ডাস্টবিনে চলে যায়। সকল মানুষেরই একই ভাবে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস আবর্জনা হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে। এমন কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আছে যা হারিয়ে যাওয়ার ফলে বিপদ হয়, চাকুরী চলে যায়, ব্যবসায় ক্ষতি হয়। সে যাইহোক আবর্জনার কিছুই যায় আসেনা বরং যা হওয়ার মানুষেরই হয়।
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে সকল প্রকারের আবর্জনা থেকে তৈরি করা হয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মজা করে বলতে পারি মরে গিয়ে শান্তি নাই। আবর্জনা হয়েও রক্ষা হয়না পুনরায় সেবক হয়ে ফিরতে হয়। আবর্জনা থেকে শুরুতেই যে লাভবান হয় সে হচ্ছে বিশ্বের অবহেলিত কিছু মানুষ। অবহেলিত এই মানুষদের শিক্ষিত সমাজ নাম দিয়েছে 'টোকাই'। যদিও উন্নত দেশে টোকাই পদ্ধতি নেই আছে সরকারের নিয়োজিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী। আমাদের দেশে রয়েছে টোকাই পাশাপাশি রয়েছে সরকারি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী। রাস্তাঘটের আবর্জনা তাদের মাধ্যমেই কারখানায় যায়। যে কারখানায় আবর্জনা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয়। কারখানার মাধ্যমে রাস্তাঘাটের আবর্জনা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে মানব সেবায় ফিরে আসে । আবর্জনা হওয়ার আগে যেই বস্তু ছিল জোতা সেই বস্তু আবর্জনা হওয়ার পর তৈরি হয়ে আসে পোশাক। এভাবেই পরিবর্তন হয় সকল জিনিসপত্র।
মানুষের জীবনে আবর্জনার মত অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। দুঃখকষ্ট, গ্লানি, দুর্দশা, অবমূল্যায়ন, অবহেলা,অহংকার আবর্জনা হয়ে যাওয়া কাম্য। কিন্তু অনিচ্ছাসত্ত্বে অনেক কিছু হারায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সময় তারপর আপনজন, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি। সময়কেই সবচেয়ে গুরুত্ব হিসেবে মানতে হয়। শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল এভাবেই মৃত্যুর কাছাকাছি চলে আসতে হয়।কিন্তু আমাদের ফেলে আসা জীবন থেকে আমরা কি শিখলাম সেই প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা কি পেরেছি পরিত্যক্ত আবর্জনা থেকে যেভাবে পুনরায় প্রয়োজনীয় জিনিস বানানো হয় নিজের হারানো জীবন থেকে সেভাবে কিছু বানাতে? আমরা আমাদের চারপাশের হাসি কান্না থেকে যদি কিছু শিখতে না পারি টোকাইয়ের সমান হতে পারবোনা।
সময় থেকে শিখতে হবে। সময়ের ব্যাবহার থেকে শিখতে হবে। কুড়িয়ে নিতে হবে সময়ের ফেলে যাওয়া নিত্যদিনের পরিত্যক্ত বিষয়। কুড়িয়ে নিতে হবে অবহেলিত মানুষের অবহেলার কারণ। মজলুমের আর্তনাদ আর জালিমের জুলুমের শক্তির উৎস। এসব কুড়িয়ে নিয়ে নতুন করে তৈরি করতে হবে সুন্দর এবং সঠিক সমাজ ব্যবস্থা। সমাজের সকল রকমের অপরাধ কুড়িয়ে নিয়ে মনের কারখানায় ভালোকরে ঝালানোর মাধ্যমে উপকারী হিসেবে সৃষ্টি করে সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজ থেকে ঘৃণা কুড়িয়ে নিয়ে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করে বিলিয়ে দিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা কুড়ানোর কাজে এগিয়ে আসতে হবে। ফেলে যাওয়া দিন থেকে নতুনত্ব আবিষ্কার করে সমাজের উপকারে আসতে হবে। ফেলা আসা সময়ের আবর্জনাকে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারলেই সমাজ থেকে অসঙ্গতি দূর হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন