রুহানি ব্যাধি

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ০৪:৫৭:৩১ বিকাল

মানুষের রুহানি ব্যাধির প্রথমটাই হচ্ছে হিংসা। যে ব্যক্তি পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতিতে লিপ্ত হয় সেই ব্যক্তি আর শান্তিতে থাকতে পারেনা সব সময় অশান্তিতে ভোগে। তার মনের মধ্যে নিজের সৃষ্টি করা কষ্ট কাজ করে। চতুর্দিক থেকে হিংসার এক প্রকারের হাওয়া এসে নাকে লাগে।তখন হিংসুক ব্যক্তিটি সেই হাওয়ায় মুগ্ধ হয়ে পাগলের মত হিংসার প্রতিফলন ঘটাতে থাকে । হিংসার প্রতিফলের রূপ হচ্ছে গ্রাস। হিংসা করে কিছু করা হয় গ্রাসের লক্ষ্যে অর্থাৎ অন্যের ক্ষতিসাধন করার জন্য। কিন্তু লক্ষ্য তার স্থানে থেকে যায় শুধু গ্রাসটা স্থান পরিবর্তন করে। মানে হলো হিংসার মাধ্যমে ক্ষতি বা অন্যকে ছোট করার যে প্রয়াস বা ফাঁদ তৈরি করা হয়েছিল তা পরাজিত হয়। এমনকি যে ফাঁদ বা প্রয়াস চালানো হয়েছিল সেই ফাঁদ বা প্রয়াস বিশাল বড় হয়ে নিজের পেছনে ছোটতে থাকে।

মহান আল্লাহ দুনিয়া এবং আখেরাতের প্রতিপালক। আল্লাহ যা বান্দার জন্য ভালো মনে করেন তা দেন। আল্লাহ'র সেই দান দেখে কষ্ট লাগার স্পর্ধা কি করে মনিবের গোলাম দেখায়? হিংসা-বিদ্বেষ ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি বলেই ইসলামে হিংসাকে প্রশ্রয় দেয়নি। একজন ব্যক্তি তখন হিংসুক হয় যখন হীন মনমানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, সম্পদের মোহ, পদমর্যাদার লোভ-লালসা তার মনে লালন করে। কারও জ্ঞান, বুদ্ধি, সম্পদ, মান-ইজ্জত, সুখ-স্বাচ্ছন্দ ইত্যাদি ভাল কিছু দেখে মনে কষ্ট লাগার মত বোকামি করে নিজেকে কেন বিপদগ্রস্ত করতে যাবো? আমার ক্ষমতা আছে তবুও আমি পারিনা, আমার টাকা আছে তবুও আমি পারিনা,আমার শিক্ষা আছে তবুও আমি পারিনা অথচ যার ক্ষমতা নেই, টাকা নেই, শিক্ষা নেই সে পারে! এসব চিন্তা ভাবনা করা ভালো নয়। এসব চিন্তা করে নিজে অশান্তিতে নিপাতিত হওয়া ছাড়া ভিন্নতা নেই।

হিংসুকের হিংসা থেকে ঈমানদার সহজে পার পেয়ে যায়। কারণ সে সব সময় মাথায় রাখে আমি যা করি একজন মুসলিম মনে করেই করি। আমার ভুলত্রুটি যা হচ্ছে তার জন্য আমি আমার মনিবের দরবারে ক্ষমা চাই। সুতরাং আমার কাজে মহান রব সন্তুষ্ট কি না সেটাই দেখার বিষয়। কে কি ভাবে তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমার ক্ষমতা নেই তবে বিবেক আছে । আমি চেষ্টা করি মনিবকে খুশি করার। আমি চেষ্টা করি সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে চলার। এই নীতিতে ঈমানদার ব্যক্তি হিংসুকের হিংসাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের সৎ কর্মকে তার অজান্তেই আড়াল করে ফেলে তার । হিংসা-বিদ্বেষ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পারস্পরিক সম্পর্ক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট করে মারামারির পরিবেশ সৃষ্টি করে। রাসুলে পাক (সা.) হিংসা নিয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। কেননা, হিংসা মানুষের নেক আমল এবং নেকি এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ (আবু দাউদ) মহাগ্রন্থ আল কুরআন হিংসাকে নিন্দা জানানো হয়েছে, এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে"। (সূরা ফালাক : ৫)।

আল্লাহ আমাদের হিংসার মত জঘন্য ব্যাধি থেকে রক্ষা করুন। আমরা যেন ভালো কে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলতে পারি, আমরা যেন ভালো মানুষ এবং ভালো কাজকে উৎসাহ দিতে পারি, গরু কিংবা ছাগল রাখালের ভালো কাজকে সম্মান দিতে পারি, দেশের সকল মতের, সকল ধর্মের, সকল স্তরের মানুষের ভালো কাজে উৎসাহ দিয়ে তার কাজকে এগিয়ে নিতে পারি সেই তাওফিক কামনা করি। আমার দেশের সকল মানুষের মন থেকে সকল রকমের বড়াই দূর করে হিংসার কবর রচনা করে দাও.... আমীন ইয়া রব।।

বিষয়: বিবিধ

১৩০৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379989
২৩ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। এই লেখা পড়ে মানুষের হিংসা দুর করুন আল্লাহ্। আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমিন।
380002
২৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:৩৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু সুপ্রিয় ছোট ভাই।


মহান রব আমাদেরকে হিংসামুক্ত রাখার তৌফিক দান করুণ। আমীন।



অনেক দিন পর গুরুত্বপূর্ণ একটি লিখা নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
380005
২৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য। এই ব্যাধিথেকে অনেক উচ্চ স্তরের জ্ঞানি ব্যাক্তি ও মুক্ত নন।
380013
২৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৫৭
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের হিংসার মত জঘন্য ব্যাধি থেকে রক্ষা করুন। আমরা যেন ভালো কে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলতে পারি, আমরা যেন ভালো মানুষ এবং ভালো কাজকে উৎসাহ দিতে পারি ।

ধন্যবাদ ভাইয়া
380024
২৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:৪৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : কলহ-বিবাদ প্রভৃতিতে যারা লিপ্ত হয় সেই ব্যক্তি আর শান্তিতে থাকতেই পারেনা সব সময় অশান্তিতেই ভোগে অনেক ভালো লাগলো লেখাটি অনেক দিন পর গুরুত্বপূর্ণ একটি লিখা নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
380032
২৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৪:১৭
স্বপন২ লিখেছেন :
ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ
381433
২৪ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০১:১৯
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, শাহিন ভাই, আপনার চমৎকার লিখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
হিংসুক কখনো জয়ী হতে পারেনা, বরণ সে সব সময় মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File