Hello শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৩:২৮:৫৯ দুপুর
গেল কয়েকদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইংরেজি শব্দ hello বলা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে বলা যায় আন্দোলন চলছে। আমাকেও আমার কয়েকজন বন্ধু সেটা বলেছেন। একজন ডাক্তার বন্ধু hello না বলার আন্দোলন হিসেবে আমাকে একটি পিকচারও ট্যাগ করেছেন। ট্যাগকৃত পিকচারে যুক্তি ছিল hell অর্থ জাহান্নাম আর সেই hell থেকে hello এসেছে সুতরাং আমরা hello পরিহার করতেই হবে নয়তো ঈমান থাকবেনা।
আমি সেই পিকচারে কমেন্ট করিনি শুধু তাই নয় উনার ট্যাগকৃত পিক রিমোভ করে দিয়েছি। সম্মানিত ডাক্তার বন্ধু হয়তো রাগ করেছেন। উনি বয়সে বাবার সমান তাই সরাসরি কিছু বলিনি।
যখন hello নিয়ে ফেসবুকে এতো কিছু চলছে তখনই আমি এই বিষয়ে আলোচনার জন্য কল দেই ব্রিটেনে বসবাসরত আইনজীবী, ইসলামের দায়ী জনাব Musthak Ahmed মামাকে । উনি আমাকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন এটা একরমের বিভ্রান্তি এবং ধর্মান্ধতা। ওয়াটসঅ্যাপে hello এর ব্যাবহারের ইংলিশ লিনক দিলেন। সেই লিনকে যা দেখলাম তাতে মামার কথায় এবং লিনকের বার্তায় সমানে সমান।
Hello জার্মানি শব্দ। যা প্রথমে holo, hallo ছিল তখন ১৭৯৭ সন। holo বা hallo বাংলায় এই বা ঐ অর্থে ব্যাবহার হয়। ১৮৮৬ সালে জার্মানিতে মাঝিকে ডাকার লক্ষেই ব্যাবহার শুরু হয়।তা পরবর্তিতে সময়ের পালাবদলে holo, hallo থেকে hello হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে কাউকে ডাকা বা সম্বোধনের জন্য hello শব্দ ইউজড হয়।
স্বাভাবিক সম্বোধনের পাশাপাশি যোগ হয় টেলিফোনে hello ব্যাবহার। ১৮৭০ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। একজন এক্সচেঞ্জার টমাস এডিসন প্রথমে তিনিই Ahoi তারপর hoilo টেলিফনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে ডাকতেন বা সাড়াশব্দ শুনার জন্য ব্যাবহার করতেন। সেটা সব শেষে Hello তে এসে স্থির হয়।
ভাষাগত দিক বিশ্লেষিত উপরের লিখায় hello শব্দের অর্থ জাহান্নামের বুঝানোর জন্য ব্যাবহার হয়নি। শুরুতে মাঝি পরবর্তিতে টেলিফনের সাড়াশব্দ পাওয়ার জন্য আধুনিক যুগে ডাকার জন্য ব্যাবহার হচ্ছে। তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে এই বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে? hell একদম আলাদা শব্দ যার অর্থ জাহান্নাম। ধরেই নিলাম hello অর্থ জাহান্নাম তাই বলে কি উনারা জানেন না শব্দের ব্যাবহারের ক্ষেত্রে অনেক সময় আসল অর্থ অনর্থক হয়ে যায়। ভাষা এবং স্থাংত কারণে একেক শব্দ একেক ভাষায় একেক স্থানে একেক অর্থ দাঁড়ায়।
তাছাড়া ইসলাম কচু পাতার উপর পানির বিন্দু নয় যে নাড়ালেই শেষ হয়ে যাবে। যে বা যারা এসব মিথ্যে রটায় তারা এনজয় করে। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কিছু একটা দিয়ে মজা নেওয়া। বিশেষ করে ধর্মকে ব্যাবহার করে দূর্বলতার সুযোগ নেয়। অযথা সময় নষ্ট করে মজা নেওয়ায় ওদের লক্ষ। যারা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উস্কানির জগতে কেবল তারাই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের এই বিভ্রান্তির ফলে সাধারণ মুসলমানের মধ্যে সৃষ্টি হয় পার্ট। সমাজের সর্বস্তরের সাধারণ মুসলমান না বুঝে এসব বিভ্রান্তিতে নাক গলায়।আমরা এমন মুসলমান কেউ যদি আরবিতে বুঝিয়ে দেয় অন্যায় কাজ করা যাবে। আমরা সেই আরবির সত্যতা যাচাই না করে মজে যাই। দু চার লাইন আরবি বলার পর আল - হাদিস বললেই সেটা আমাদের প্রাণ প্রিয় রাসুল মোহাম্মদ মুস্তফা (স এর হাদিস কিনা সেটা যাচাই না করেই সঠিক বলে মেনে নেই।
ইসলাম জানার বিষয় বুঝার বিষয়। জানতে হলে বুঝতে হলে ডিগ্রিধারী হতে হয়না বড় মুফতি হতে হবে তা নয় বরং ইচ্ছে থাকতে হয়, পড়তে হয়, শুনতে হয়, সার্চ করতে হয়ে। আলেম সমাজের কথাবার্তা যাচাই করে নিতে হয়। ইসলাম সহজ কঠিন নয়। কারো মুখের কথায় ঈমান আসেনা আবার যায়ও না। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝার ক্ষমতা দান করুন, আমীন!
বিষয়: বিবিধ
৩৫৩০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সচেতন করার জন্যে মুবারাকবাদ।
দ্বিধায় ছিলাম আমিও না জানার কারণে!
অনেক উপকারে আসল জানায়!
জাযাকাল্লাহ!
ইতিমধ্যে ফেসবুকের ঐটা নিয়ে যে কতজনকে জবাব দিতে হলো....
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন